“জ্ঞান থাকতে ওই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা। তাই জ্ঞান হারাইছিলাম...”
অনেক আগে একটা ধারাবাহিক নাটকে এক গ্রাম্য লোকের মুখে এই ডায়ালগটা শুনেছিলাম।
ধন্ধে পড়ে গেছি, এই বাক্যটা বিয়েতে সম্মতি না অসম্মতি?
“জ্ঞান থাকতে ওই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা। তাই জ্ঞান হারাইছিলাম...”
অনেক আগে একটা ধারাবাহিক নাটকে এক গ্রাম্য লোকের মুখে এই ডায়ালগটা শুনেছিলাম।
ধন্ধে পড়ে গেছি, এই বাক্যটা বিয়েতে সম্মতি না অসম্মতি?
জামাল ভাইয়ের বঊ মানে আমাদের জামালভাবী ঘরে বসে থাকতে থাকতে একটু টায়ার্ড। তাই বাড়তি কাজ হিসাবে তিনি শুরু করেছেন ফতুয়ার ডিজাইন।
ফর্মুলা অনুযায়ী প্রথম ফতুয়াটা অবশ্যই জামাল ভাইয়েরই হওয়া উচিত। আর সেটাই তিনি অফিসে পরে এসেছেন!
ফতুয়াটা ভালোই। হাতের কাজের প্রশংসা কুড়োচ্ছে দেদারসে ওটা! আমাদের মুখে বউয়ের প্রশংসা শুনে জামাল ভাই নিজেই ফুলে যাচ্ছেন! (কানে কানে একটা কথা বলে রাখি, একটু বয়স্করা টি-শার্ট অথবা ফতুয়া পড়লে, তাদের ভুড়িটা সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। সেই জন্যই ফুলে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক! )
ফতুয়াটা আসলেই দেখতে ভালো। যার যা প্রাপ্য সেটা দিতে আমি কখনই কার্পণ্য করিনা, “ওহ জামাল ভাই! ফতুয়াতে আপনাকে দারুন লাগছে! মনে হচ্ছে আপনার বয়স পাক্কা তিন দিন কমে গেছে!”
জামাল ভাই আমার উপর একটু বিরক্ত হলেন মনে হয়, “মাত্র তিনদিন?! ভেবেছিলাম বলবেন, ১০ বছর!”
মাঈনুল ভাই তাকে খুশি করার জন্য ঝটপট বললেন, “জোস! আপনি যেই স্টাইলে দাঁড়িয়েছেন... যেন একটা scare-crow!”
আশ্চর্যজনকভাবে শব্দটার অর্থ তিনি জানেন না! তাই ইংরেজী প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে আরেকটা পোজ দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এবার কেমন লাগছে?”
“কঠিন! আপনাকে এবার ফুরফুরে মেজাজের Traffic-Police এর মতই লাগছে!” ... এবার ইংরেজীটা তিনি ঠিকই বুঝলেন।
আর আবার বিরক্ত হলেন আমার উপর!
***
গণ অসন্তোষের কারণে কোথায় যেন পুলিশকে মোলায়েম লাঠিচার্জ করতেই হয়েছিলো। তাতেও যখন কাজ হলোনা, তখন ভরসা রাবার বুলেট ! ঘটনা একটু ভয়াবহ!
তাই পরেরদিন স্থানীয় সংবাদপত্রে জব্বর একখানা হেডলাইন জায়গা করে নিলো,
“পুলিশের গুতে তিনজন আহত!”
চারিদিকে হৈচৈ... ব্যাপার কি? এবার ঘটনা একটু আকর্ষণীয়!
পরেরদিন পত্রিকায় সংশোধনী দিতেই হলো,
“পাছার ভুলের কারণে গুলি ‘গু’ হয়ে যাওয়ায় আমরা দুঃখিত।”
তৃতীয় সংশোধনীতে কি এসেছিলো সেটা আর জানা যায়নি!
[প্রকৃত শব্দদ্বয় যে ‘গুলি’ ও ‘ছাপা’, সেটা বলাই বাহুল্য!]
***
আচম্বিতে জ্ঞানতাপস জিজ্ঞাসা করিলেন, “মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিতে কি বুঝিয়া থাকো?”
ভরদুপুরে এইরুপ প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হইয়াও নিজেকে সামলাইয়া কহিলাম, “যেই বিষাদময় মূহুর্তে দুটি যান সম্মুখসমরে আলিঙ্গন করিয়া উদরস্ত যাত্রীদিগের প্রাণোৎপাটন, অন্ততপক্ষে অঙ্গহানি, করিয়া থাকে, তাহাকেই মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিয়া সংজ্ঞায়িত করা হয়।”
ইহাতে তাহার বিশেষ সন্তুষ্টি লাভ হইলোনা বলিয়া বোধ হইলো।
বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তিদিগের অসন্তুষ্টি নিতান্তই কাম্য নহে। এতদকারণে তাহার চিত্তবিনোদনকল্পে তাহাকে ‘পূতপবিত্র-অরণ্যে’ তৈয়ারীকৃত সবাক চলচ্চিত্র উপভোগ করিবার স্পষ্ট আহবান করিলাম। তিনি সানন্দে ইচ্ছা পোষণ করিলেন। জমকালো শব্দানুভুতি ও দৃশ্যাবলীর অব্যবহিত পরেই প্রধান পাত্রাপাত্রী প্রেমাঙ্কুর দৃশ্যে অবতরণ করিলেন। ঘটনাসমূহ আরও প্রগাঢ় ও অন্তরঙ্গ হওয়া পূর্বক ওষ্ঠাধরসমূহ অতীব নিকটবর্তী হইতেই অক্ষিযুগল তৎক্ষণাত করাবৃত করিয়া তাহাকে বলিলাম , “ইহাকেই হয়তো প্রকৃতপক্ষে মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিয়া থাকে!”
মুদিত নয়নেও তাহার স্মিতহাস্য অনুভব করিলাম।
বুঝিলাম, তিনি আশাপ্রদ সদুত্তর পাইয়াছেন!
রুমে এসে কলিগদের সামনে আকস্মিক একটা ঘোষণা দিলাম, “এডমিনিস্ট্রেশন অফিসার স্যার আজ আর আমাদের মাঝে নেই!”
ঘুমের মৌতাত লাগা কলিগদের মধ্যে একটা মৃদু আলোড়ন বয়ে গেলো! “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আহা, দুপুরেই তো দেখলাম সুস্থ্য মানুষটা। কি হয়েছিলো? আমরা টের পেলাম না কেন?” উৎসুক চোখ সবার!
“হুম... উনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। আজকে একটু আগেই ছুটি নিয়ে বেরিয়ে গেছেন!” সবাইকে আশ্বস্ত করি।
সবার মাঝে একটা হাসির রোল বয়ে গেলো। শেষ বিকালের তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা কাটিয়ে কাজের পরিবেশ ফেরাতে এই ছোট্ট মজাটা যথেষ্ট ছিলো সেদিনের জন্য!
অফিসে, অন্যদের কাজ দিলে অনেকেই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সেটা শেষ করতে ১ ঘন্টার উপর লাগিয়ে ফেলে!
আর আমাকে দিলে সেটা ২০ মিনিটে শেষ করে আধাঘন্টার মত টেবিলে মাথা রেখে চট করে ঘুমিয়ে নিই!
তবুও কেন আমার বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকি দেয়ার এন্তার অভিযোগ?
কারণ তো বুঝলাম না!
***
উফ্! শুধু কাজ, কাজ আর কাজ! জীবনে কি আর কিছুই নেই?
আছে তো!
কী?
কাজ থেকে ক’দিনের ছুটি পেলাম যে!
কেন?
কারণ? ...
ঈদ মোবারক!*
* শর্ত প্রযোজ্য
* কি শর্ত? ঈদের আনন্দ ও শিক্ষা শুধুমাত্র একদিনের জন্য সীমাবদ্ধ না রেখে আজীবনের জন্য বলবৎ রাখতে হবে! অন্তত পক্ষে চেষ্টা করতে হবে!