মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০০৮

সম্মতি না অসম্মতি?

জ্ঞান থাকতে ওই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা। তাই জ্ঞান হারাইছিলাম...

অনেক আগে একটা ধারাবাহিক নাটকে এক গ্রাম্য লোকের মুখে এই ডায়ালগটা শুনেছিলাম।

ধন্ধে পড়ে গেছি, এই বাক্যটা বিয়েতে সম্মতি না অসম্মতি?

আবার অফিস...




জামাল ভাইয়ের বঊ মানে আমাদের জামালভাবী ঘরে বসে থাকতে থাকতে একটু টায়ার্ড। তাই বাড়তি কাজ হিসাবে তিনি শুরু করেছেন ফতুয়া ডিজাইন।

ফর্মুলা অনুযায়ী প্রথম ফতুয়াটা অবশ্যই জামাল ভাইয়েরই হওয়া উচিত। আর সেটাই তিনি অফিসে পরে এসেছেন!

ফতুয়াটা ভালোই। হাতের কাজের প্রশংসা কুড়োচ্ছে দেদারসে ওটা! আমাদের মুখে বউয়ের প্রশংসা শুনে জামাল ভাই নিজেই ফুলে যাচ্ছেন! (কানে কানে একটা কথা বলে রাখি, একটু বয়স্করা টি-শার্ট অথবা ফতুয়া পড়লে, তাদের ভুড়িটা সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। সেই জন্যই ফুলে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক! )

ফতুয়াটা আসলেই দেখতে ভালো। যার যা প্রাপ্য সেটা দিতে আমি কখনই কার্পণ্য করিনা, ওহ জামাল ভাই! ফতুয়াতে আপনাকে দারুন লাগছে! মনে হচ্ছে আপনার বয়স পাক্কা তিন দিন কমে গেছে!

জামাল ভাই আমার উপর একটু বিরক্ত হলেন মনে হয়, মাত্র তিনদিন?! ভেবেছিলাম বলবেন, ১০ বছর!

মাঈনুল ভাই তাকে ুশি করার জন্য ঝপট বললেন, জোস! আপনি যেই স্টাইলে দাঁড়িয়েছেন... যেন একটা scare-crow!

আশ্চর্যজনকভাবে শব্দটার অর্থ তিনি জানেন না! তাই ইংরেজী প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে আরেকটা পোজ দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেসলেন, এবার কেমন লাগছে?

কঠিন! আপনাকে এবার ফুরফুরে মেজাজের Traffic-Police এর মতই লাগছে! ... এবার ইংরেজীটা তিনি ঠিকই বুঝলেন।

আর আবার বিরক্ত হলেন আমার উপর!

***

গণ অসন্তোষের কারণে কোথায় যেন পুলিশকে মোলায়েম লাঠিচার্জ করতেই হয়েছিলো। তাতেও যখন কাজ হলোনা, তখন ভরসা রাবার বুলেট ! ঘটনা একটু ভয়াবহ!

তাই পরেরদিন স্থানীয় সংবাদপত্রে জব্বর একখানা হেডলাইন জায়গা করে নিলো,

পুলিশের গুতে তিনজন আহত!

চারিদিকে হৈচৈ... ব্যাপার কি? এবার ঘটনা একটু আকর্ষণীয়!

পরেরদিন পত্রিকায় সংশোধনী দিতেই হলো,

পাছার ভুলের কারণে গুলি গু হয়ে যাওয়ায় আমরা দুঃখিত।

তৃতীয় সংশোধনীতে কি এসেছিলো সেটা আর জানা যায়নি!

[প্রকৃত শব্দদ্বয় যে গুলিছাপা, সেটা বলাই বাহুল্য!]

***

রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০০৮

অবসর

আজ দুপুরে একা একা অনেকটা পথ হেঁটেছি। কোন সুনির্দিষ্ট কিছু করার ছিলো না তাই। বেশ খানিকটা পথ। কতটা পথ? মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে টেকনিকাল মোড়। সেখান থেকে বাসে চেপে আবার শেওড়াপাড়া। এক বন্ধুর বাসায় প্রয়োজনে যাবার দরকার ছিলো। কিন্তু আগেই পৌছে যাওয়াতে সময়টা কাটানোর প্রয়োজন ও ছিলো। কিন্তু সেটা অন্য কাহিনী।

বাসায় ফিরে একটু আত্মস্থ হয়ে চেখভ পড়ছিলাম। বাংলা অনুবাদে। গল্পগুলো বেশ ঝরঝরা,সাধারণ। ভালোই লাগে পড়তে। পুরনো দিনের রাশিয়ান দৈনন্দিন জীবন। আমাদের চেয়ে বেশ আলাদা। তবুও মিশে গিয়েছিলাম খানেকক্ষণের জন্য। তারপরই ডুবে গেলাম আমার চিরপ্রিয় সৈয়দ মুজতবা আলী-তে। হালকা রস মিশিয়ে জীবনের নিগূঢ়তম সত্যগুলো কেমন যেন মূর্ত হয়ে ওঠে তার লেখায়। মুগ্ধতার কখনও শেষ হয়না আমার।

হুবহু, সেখান থেকেই তুলে দিলাম কিছু অংশ।

***
রুশ কবি পুশকিনের রচিত একটি কবিতার সারমর্ম এই-

‘হে ভগবান, আমার প্রতিবেশীর যদি ধনজনের অন্ত না থাকে, তার গোলাঘর যদি বারো মাস ভর্তি থাকে, তার সদাশয় সচ্চরিত্র ছেলেমেয়ে যদি বাড়ি আলো করে রয়, তার খ্যাতি প্রতিপত্তি যদি দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে, তবুও তাতে আমার কণামাত্র লোভ নেই, কিন্তু তার দাসীটি যদি সুন্দরী হয় তবে- তবে, হে ভগবান, আমাকে মাপ করো, সে অবস্থায় আমার চিত্ত-চাঞ্চল্য হয়।’

পুশকিন সুশিক্ষিত, সুপুরুষ ছিলেন এবং খানদানী ঘরের ছেলে ছিলেন।, কাজেই তার ‘চিত্তদৌর্বল্য’ কি প্রকারের সেকথা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হয়না। এইবারে সবাই চোখ বন্ধ করে ভেবে নিন কোন্‌ জিনিষের প্রতি কার দূর্বলতা আছে।

আমি নিজে বলতে পারি, সাততলা বাড়ি, ঢাউস মোটরগাড়ি, সাহিত্যিক প্রতিপত্তি, রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এ সবের প্রতি আমার কণামাত্র লোভ নেই।

আমার লোভ কেবল একটি জিনিষের প্রতি- অবসর। যখনই দেখি, লোকটার দু’পয়সা আছে অর্থাৎ পেটের দায়ে তাকে দিনের বেশির ভাগ সময় এবং সর্বপ্রকারের শক্তি এবং ক্ষমতা বিক্রি করে দিতে হচ্ছেনা, তখন তাকে আমি হিংসে করি। এখানে আমি বিলাস ব্যসনের কথা ভাবছিনে।, পেটের ভাত ‘-’র কাপড় হলেই হল।

অবসর বলতে কুঁড়েমির কথা ও ভাবছিনে। আমার মনে হয়, প্রকৃত ভদ্রজন অবসর পেলে আপন শক্তির সত্য বিকাশ করার সুযোগ পায় এবং তাতে করে সমাজের কল্যাণলাভ হয়।

***

কিন্তু ব্যাস্ত সময়ে অবসর মেলে কই?
আজকে না হয় আচমকা পেয়ে গিয়েছিলাম সেটা।
আজকে দিনটা হয়তো একটু বেশিই লাকি।

বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০০৮

মুখোমুখি সংঘর্ষ


আচম্বিতে জ্ঞানতাপস জিজ্ঞাসা করিলেন, মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিতে কি বুঝিয়া থাকো?

ভরদুপুরে এইরুপ প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হইয়াও নিজেকে সামলাইয়া কহিলাম, যেই বিষাদময় মূহুর্তে দুটি যান সম্মুখসমরে আলিঙ্গন করিয়া উদরস্ত যাত্রীদিগের প্রাণোৎপাটন, অন্ততপক্ষে অঙ্গহানি, করিয়া থাকে, তাহাকেই মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিয়া সংজ্ঞায়িত করা হয়।

ইহাতে তাহার বিশেষ সন্তুষ্টি লাভ হইলোনা বলিয়া বোধ হইলো।

বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তিদিগের অসন্তুষ্টি নিতান্তই কাম্য নহে। এতদকারণে তাহার চিত্তবিনোদনকল্পে তাহাকে পূতপবিত্র-অরণ্যে তৈয়ারীকৃত সবাক চলচ্চিত্র উপভোগ করিবার স্পষ্ট আহবান করিলাম। তিনি সানন্দে ইচ্ছা পোষণ করিলেন। জমকালো শব্দানুভুতি ও দৃশ্যাবলীর অব্যবহিত পরেই প্রধান পাত্রাপাত্রী প্রেমাঙ্কুর দৃশ্যে অবতরণ করিলেন। ঘটনাসমূহ আরও প্রগাঢ় ও অন্তরঙ্গ হওয়া পূর্বক ওষ্ঠাধরসমূহ অতীব নিকটবর্তী হইতেই অক্ষিযুগল তৎক্ষণাত করাবৃত করিয়া তাহাকে বলিলাম , ইহাকেই হয়তো প্রকৃতপক্ষে মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিয়া থাকে!

মুদিত নয়নেও তাহার স্মিতহাস্য অনুভব করিলাম।

বুঝিলাম, তিনি আশাপ্রদ সদুত্তর পাইয়াছেন!

রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০০৮

অন্তর্ধান।


বিকাল বেলায় অফিসে একটা ঝিমুনী চলে এসেছিলো! কোন ইঞ্জিনিয়ারেরই কাজে তেমন মনোযোগ নেই ! এই সময়টা অফিসের সিনিয়র এডমিনিস্ট্রেশন অফিসার ও নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমানবয়স হয়েছে তো! পিয়নরা অবশ্য বলে, তিনি রেস্টনিচ্ছেনআমার বসার জায়গাটা তার রুমের দেয়াল লাগোয়াআমিও সেই সুযোগে তার মতই একটু ঝিমিয়ে নেবার সুযোগটা নিইঅন্যরা তাই আমাকে বলে, আমি নাকি তারমিরর ইমেজ’! একদিন বিকালে দেখি তার রুমের দরজাটা খোলাপিয়ন নুরুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সে ব্যাপারটা আমাকে বুঝিয়ে বললো


রুমে এসে কলিগদের সামনে আকস্মিক একটা ঘোষণা দিলাম, “এডমিনিস্ট্রেশন অফিসার স্যার আজ আর আমাদের মাঝে নেই!

ঘুমের মৌতাত লাগা কলিগদের মধ্যে একটা মৃদু আলোড়ন বয়ে গেলো! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনআহা, দুপুরেই তো দেখলাম সুস্থ্য মানুষটাকি হয়েছিলো? আমরা টের পেলাম না কেন?” উৎসুক চোখ সবার!

হুম... উনি আজ আর আমাদের মাঝে নেইআজকে একটু আগেই ছুটি নিয়ে বেরিয়ে গেছেন!সবাইকে আশ্বস্ত করি

সবার মাঝে একটা হাসির রোল বয়ে গেলোশেষ বিকালের তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা কাটিয়ে কাজের পরিবেশ ফেরাতে এই ছোট্ট মজাটা যথেষ্ট ছিলো সেদিনের জন্য!

বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০০৮

হিসাব মেলেনা।




অফিসে, অন্যদের কাজ দিলে অনেকেই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সেটা শেষ করতে ১ ঘন্টার উপর লাগিয়ে ফেলে!

আর আমাকে দিলে সেটা ২০ মিনিটে শেষ করে আধাঘন্টার মত টেবিলে মাথা রেখে চট করে ঘুমিয়ে নিই!

তবুও কেন আমার বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকি দেয়ার এন্তার অভিযোগ?

কারণ তো বুঝলাম না!

***

উফ্‌! শুধু কাজ, কাজ আর কাজ! জীবনে কি আর কিছুই নেই?

আছে তো!

কী?

কাজ থেকে কদিনের ছুটি পেলাম যে!

কেন?

কারণ? ...

ঈদ মোবারক!*

* শর্ত প্রযোজ্য

* কি শর্ত? ঈদের আনন্দ ও শিক্ষা শুধুমাত্র একদিনের জন্য সীমাবদ্ধ না রেখে আজীবনের জন্য বলব রাখতে হবে! অন্তত পক্ষে চেষ্টা করতে হবে!