শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০০৮

আজকের ব্লগ


অফিসে অন্যান্য সিনিয়রদের পেটের সম্মুখগামী স্তরীভুত চর্বির অবস্থান দেখে আমার ডিরেক্ট-বস মাঈনুল ভাই ডায়েট কন্ট্রোলে মনোযোগী হবার আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছেন! প্রায়ই সকালের নাস্তা বাদ দেন তিনি! অফিসে এসে, বাকি সবাইকে শর্করা জাতীয় খাবারে নিরুতসাহিতকরণও ইদানিং তার একটা শখ ! সেদিন আবার দেখলাম, নিমগ্নচিত্তে হার্বাল ওষুধের উপর পড়াশুনাও করছেন! আমি সকালে পরোটা-কেক খাই!

ইস্‌শিরে! এই সব জাংক ফুড যে মানুষ কেমনে খায়! তিনি আমাদের অজ্ঞতায় উষ্মা প্রকাশ করেন, ফ্রুটস খাও!

আপনি সকালে কি খেয়েছেন? সন্দেহ প্রকাশ করতেই হয়, কারণ উপদেশদাতার নিজের অবস্থান জানাটাও অত্যন্ত জরুরী!

আজ কিছুই খাইনি, আশ্বস্ত করেন তিনি, তবে কাল থেকে আঁশযুক্ত ফল খাবো! পেটও ভরবে, আবার স্বাস্থ্যকরও!

নারকেলের ছোবড়া খেয়ে দেখতে পারেন! আঁশগুলো মজবুত!, আমার বুদ্ধিটা বোধহয় তার খুব একটা পছন্দ হয়নি!

***

চাকরী সুবাদে এখন ব্যস্ততা বেড়েছে! আবার উত্তরার মত গ্রামাঞ্চলে থাকার কারণে অন্যদের সংগে যোগাযোগ অনেকটাই কমে গেছে! তাই বেশ কিছুদিন পর পর আত্মীয়স্বজন-বন্ধুদের সঙ্গে মোলাকাত হয়!

হায় হায়! তুমি দেখি শুকিয়ে একেবারে কাঠি হয়ে গেছো!, আমাকে দেখে সবারই প্রাথমিক প্রতিফলন এরকম!

কই? না তো? আমার তো মনে হয়, আমি ঠিকই আছি!, জবাবটাও আমার মুখস্ত!

না না! তুমি খুব শুকিয়ে গেছো। ওজন কত এখন? কত কমেছে?, প্রত্যেকেই কেন যেন হুবহু একই প্রশ্ন করে!

আমার ওজন কমেনি। আগে যা ছিলো তা-ই আছে! এখন ৭২ কেজি, নির্লিপ্ত গলায় বলার চেষ্টা করি! আর প্রশ্নকর্তাকেও চমকে দিই, আর, BMI ২৫ এর আশেপাশে!

হায় হায়! তুমি দেখি মোটা হয়ে যাচ্ছো! শীঘ্রই ওজন কমাও!, মিনিটখানেকের মধ্যেই প্রশ্নকর্তার বুঝি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বাগধারাটা স্মরণে আসে!

মুটিয়ে শুকনো কাঠি হয়ে যাচ্ছি আমি!

কি করি উপায়?

বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০০৮

বেগে-আবেগে-ভীষণবেগে...




কে নাকি একবার বলেছিলো, কোন দেশ কতটা উন্নত সেটা নাকি বোঝা যায় তার পাবলিক টয়লেটের অবস্থা দেখে! একেবারে ‘ফর্মালিনযুক্ত’ খাঁটি কথা! এই দেশের কথা আর নতুন করে বলার দরকার আছে কি? পুরো ঢাকা শহরে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা মাত্র ৩৪! আর সেগুলোর যা অবস্থা! “দূর্গম গিরি, কান্তার মরু” ও হয়তো পার হওয়া যায়কিন্তু ওইগূলোতে ঢুকতে হলে বুকে ‘হিম্মত’ লাগে আর নাকে এক বক্স সুগন্ধী রুমাল! তবে অবস্থা এখন অনেক ভালো ... শপিং এর ভান ধরে মার্কেটগুলোতে ঢু মেরে কাজটা সেরে আসা যায়! এত্তো এত্তো মার্কেট ঢাকা শহরে! সব আমাদেরই জন্য! তবুও, বুঝিনা... এর পরেও কেন যে “প্রকৃতির সন্তানেরা” এই ‘সিমেন্টের জঙ্গলে’ও “বাঁশঝাড়-থিওরী” এপ্লাই করে অকুস্থলেই “কম্মো” করে?! আল্লাহ তাদের সুমতি দিন! আর ... দয়া করে সায়েন্সল্যাব ফুটওভারব্রিজের উপরেই থাকবেন সবসময়!

ভাবছেন, এত বিষয় থাকতে এইটা নিয়ে ব্লগ লিখতে চাচ্ছি কেন? উহু! ব্যাপারটাকে হালকা করে নিলেই খাবেন ধরা! এজন্যই হয়তো, প্রখ্যাত টিভি উপস্থাপক ‘হানিফ সংকেত’ একবার তার ‘ইত্যাদি’তে একজন রাজনৈতিক নেতাকে দিয়ে পাবলিক টয়লেট উদ্বোধন করিয়েই ছাড়লেন! বিষয়টার হিউজ হাইজিনিক কনসার্ন তো একেবারেই অবিভাজ্য!

ফাইনাল ইয়ারে থিসিস করার সময় সবাই চমতকার সব বিষয় নিয়ে থিসিসে ঝাঁপিয়ে পড়লো! কিন্তু এক ছেলে, ম্যাডামের কাছে গোঁ ধরলো, “পাবলিক টয়লেটের উপরই কাজ করতে চাই!” ম্যাডাম তো মহা খুশি, “হমম! এই ব্যাপারে কাজ হয়েছে একটু কমতোমার আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে। তো লেগে পড় ঝটপট!” ‘চাল্লু’টার উপর ম্যাডাম এতই খুশি ছিলেন যে, প্রেজেন্টেশনের দিন ‘রাগ্‌ড-ক্যাজুয়াল’ ড্রেসের প্রেজেন্টারও আয়েশে A+ বাগিয়ে নিলো! ছেলেটা নেট খুঁজে ‘আস্ত’ একটা থিসিসপেপার পেয়ে গিয়েছিলো এর উপর! আমাদের আফসোসটা ও বাড়লো সমানুপাতে! অন্য অনেক ‘উন্নত’ বিষয় নিয়ে থিসিস করে অনেক অনেক বেশি শ্রম দিয়েও গ্রেড ঊঠাতে বেগ পেতে হয়েছে আমাদের!

এদিকে অনেকে আবার ব্যস্ত সময়ে এই ‘প্রিয়’ জায়গাটাতে অনেক সময় কাটিয়ে দেন

অফিসে আমরা জামাত করে নামায আদায় করিজামাতের ওয়াক্ত এলেই একযোগে সবাই ‘একদিকেই’ সশরীরে ধাবিত হই! কিন্তু শরীফ সাহেব আগে ঢুকলেই কাহিনী প্যাঁচ খেয়ে যায় তখনি! বাইরে অপেক্ষা করতে হয় ... টাইম ডায়ালেশন ঘটে তখন! অস্বীকার করা অবান্তর, মাঝে মাঝে দরজাটা ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করে!

আমার পিছনে লাইনে থাকা মোস্তফা ভাই প্রায়ই অসহিষ্ণু, “ভিতরে কে?”

আমি তড়িত জবাব দিই, “বার্লিন প্রাচীরের ওইপাশে শরীফ ভাই!”

“আসো! আমরা বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠা করি!” বিপ্লবের ডাক তার কন্ঠে!

সভ্য সমাজ নাকি অনেক ভালো! কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মত চমতকার সভ্য জায়গার অবস্থা শোচনীয় এরও নিচে! ‘ঢাবি’র কোন হলের টয়লেট নাকি এমনই অন্ধকার যে, আমার এক বন্ধু বললো, আগে টয়লেটে ঢুকে হাতড়িয়ে ইট খুঁজে তার উপর আলতোভাবে পা রাখতে হয়! এদিকের হলগুলোর কমন টয়লেটও মাঝে মাঝে ‘দূর্গম’ অঞ্চল হয়ে উঠতো “পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ”--- এই ধরণের চমতকার কোটেশন দেয়ালে মেরে রেখেও যখন কিছু হচ্ছিলোনা, তখন সমস্যার আশু সমাধানে এক ‘গুনী’ টয়লেটের দরজার ভিতর দিকে প্রিন্ট-আউট কাগজে চিকা মেরে দিলো,

“কিছু ফেলে গেলেন কি?”

***

কার্টুনটা উন্মাদে সৌজন্যে

***

পুনশ্চঃ বুয়েটে এইসব নিয়ে ঢের পড়াশুনা করতে হয়েছে! ইঞ্জিনিয়ার হবার ঝক্কি অনেক! অনেক রকম ল্যাট্রিনের গঠন নিয়েও পড়তে হয়েছে! তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা হলো, VIP-ল্যাট্রিনবলুন তো, VIP এর অর্থ কি হতে পারে? ১০-১২টা কমেন্টস এর পরেই উত্তরটা না হয় দিই?!

মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০০৮

বাসে...

অফিস থেকে বেরোতে বেরোতে প্রায়ই সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। ফিরতি পথে লোকাল বাসের ঝাকুনির বদলে কাউন্টার সার্ভিস বাসে উঠলে চমতকার একটা ঝিমুনিভাব চলে আসে! কিন্তু ঘুমানোর সাহস হয়না! আশেপাশে না জানি কত ধরণের পার্টি ঘুরে বেড়ায়! সর্বস্ব এমনকি জানটা ও সুলভে নেবার জন্য ওদের ব্যপক পরিচিতি আছে। তাছাড়া ঘুমিয়ে পড়লে আরো প্রবলেম হয়! অদ্ভুতুড়ে শারীরিক পরিস্থিতিতে ঘুমালে ঘাড়ে ব্যথা হওয়াটা একেবারেই বিল্ট-ইন! আর আচমকা যদি বাস ব্রেক করে, তাহলে ঘুমন্ত ব্যক্তি সামনের সিটের রডে আচমকা ধাক্কা খেলে বিভৎস অবস্থার সৃষ্টি হওয়াও বিচিত্র নয়! সেদিনও, হঠাত করেই বাধ্যতামূলক বাস ব্রেক করার পর, রড ধরে ঝুলে থাকা লোকটা এক হাত দিয়ে আরেক হাত ধরে ত্রাহি চিতকার দিলো, আল্লাহ রে! আমার হাত ভেঙ্গে গেছে! লোকটার হাত যদিও ভাঙ্গেনি, একটু মচকা লেগেছে! কিন্তু এ ঘটনা দেখে আরেকজন সিটে বসে থেকেই ফিট হয়ে গেলো!

ঝিমিয়ে পড়েছিলাম এই দিনও!

হঠাত দেখি কোলের উপর দুইটা চকলেট পড়লো! বাসের ছাদের দিকে তাকালাম, ছাদ ফুটো হয়ে চকো-রেইন হলো কিনা কে জানে! ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা আকর্ষণীয় কাহিনীর সুত্রপাতের ইঙ্গিত! ছাদের ফুটো-টুটো কিছু নয়, একটা মধ্য-বিশের একটা মেয়ে! ধূলিমলিন দৈন্য জর্জরিত পোষাকে মোটামুটি আকর্ষণীয় গড়ন। সে-ই সবার উপরে চকোলেট ছুড়ে দিচ্ছে! কোন কথা না বলেই! কিছুলোক বিভ্রান্ত, কিছু নির্বিকার আর আমার মত কিছুলোক চিন্তাশীল!

প্রথম থেকে চকোলেট দেয়া শুরু করে সর্বশেষের সিটে এসে সে মুখ খুললো, ভাইয়েরা, এবার আমার চকোলেটের দামটা দেন!মেয়েটির বিজনেস পলিসি সিম্পল এবং কার্যকর! কারণ, আমরা বাংগালীরা কাজের সময় একটু মুখচোরা, তবে ঝগড়ার সময় মনের বদ্ধ-অর্গল খুলতে অনেক অকৃপণ! ফলে চকোলেট ফেরত দেবার ইচ্ছে থাকলেও ফেরত দিতে লজ্জা পায় অনেকেই! তাই, পকেট থেকে দুটি টাকা বের করাটাকেই তুলনামূলক সহজ মনে হয় অনেকের কাছে! মোটামুটি সবাই কিনলো তার চকোলেট!

মেয়েটি ঝটপট টাকা কুড়িয়ে নেমে গেলো বাস থেকে!

মেয়েটার প্রতি একটু বিরক্ত হলাম! এইভাবে চকলেট বিক্রি করার কারণে! খানিকটা ইমোশনাল ব্লাকমেইলিং এর ছোঁয়া! কিন্তু বাস থেকে নেমে যাবার পরই আবছা আলোতে মেয়েটাকে দেখেই মনে হল, এ বয়সী মেয়েরা অভাব-অনটনের কারণে আবছা নয়, একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকারে পা বাড়াতে বাধ্য হয়! কিন্তু এ তো নিজের চেষ্টাতেই ভাগ্য ফেরানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে!

ওঁর জন্য শ্রদ্ধা জাগলো মনে!

***

“OPTION” শব্দটার বাংলা অর্থ কি? খুঁজে পাচ্ছিনা! কেউ কি জানেন?

***

photo-courtesy: http://www.charliesbirdblog.com/~charlie/DAC04oct05/zoo_entrance.jp