মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০০৮

VISA


এমবাসী’তে ভিসা পাওয়া যা-তা ব্যাপার নয়। অনেক রকম হ্যাপা পোহাতে হয়। নাকের জল, চোখের জল .. কার্যক্ষেত্রে আরো অনেক কিছুর সংগে এই দুইটার ও প্রয়োজন হয়। ভুক্তভুগী মাত্রই জানেন। আমি ভুক্তভুগী নয়। ব্যাপারটা আমার এককালের সহপাঠী আর বর্তমানের কলীগ মফিজ এর! তবে ভার্সিটিতে মেয়েরা ওকে ডাকতো ‘মুস্তাফিজ’। সবখানেই কেন জানি জেন্ডার-অসমতা!

মোটামুটি নিষ্পাপ আচরণ। এফেয়ার করতে খুব একটা প্রবলেম হলোনা ওর। মেয়েও আমাদেরই ক্লাসের। সোনায় সোহাগা! পরিনতি ভালোই। সরাসরি পারিবারিক ভাবে বিবাহ! প্রেমের কাহিনীতে ভিলেন না থাকলে কী চলে? এইখানে ভিলেন হলো, মেয়েটার পাওয়া জাপানী স্কলারশিপ। যে নারীর স্বামী বিদেশে ত্থাকে... ব্যকরণ বইতে এর একটা এককথায় প্রকাশ আছে... প্রষিতভর্তৃকা! মফিজ হলো 'প্রষিতভর্তৃক’! (জানিনা, আদৌ এরকম শব্দ বাংলা ভাষায় আছে কিনা!) বাংলা সিনেমার ‘টেরাজিডি' কে হার মানিয়ে নববধু ঈদের আনন্দ-সকালে কান্নাকাটি করে উড়াল দিলো সূর্যোদয়ের দেশে। দিলো অনেক প্রতিশ্রুতি। তোমাকে শীঘ্রই নিয়ে যাবো... ইত্যাদি ইত্যাদি।

বিশ্বাসভঙ্গের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে? উহু! নাহ!

মেয়েটা কাগজপত্র সবই পাঠালো। কিন্তু বাগড়া দিলো জাপানী এমবাসী! সব ডকুমেন্টস ঠিক আছে। তবে প্রতিদিনই নতুন নতুন কাগজপত্রের আবদার করে তারা। ব্যাংক স্টেটমেন্ট, নিকাহনামা এইরকম উল্টোসোজা যাবতীয় সিলমোহরযুক্ত কাগজ দেখানোর পরও তাদের খায়েশ মেটেনা! সর্বশেষ বার বলেছে, বিয়ের আগে তোমার বউ এর সংগে কিভাবে পরিচয় হয়েছে, সেটার উপর একটা রচনা লিখে জমা দাও! ফার্স্টক্লাস গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করে দিতে হবে কিন্তু!

কাল সন্ধ্যায় বেচারাকে দেখালাম, কাগজ কলম নিয়ে বসেছে!

উপদেশ দিই, “কষ্ট করে লিখে আর কী করবি? অন্তরঙ্গ ভিডিও দেখাইয়া দে ওদের!”

“ওইটা তো বিয়ার পর। কিন্তু এবার তো চাইছে, বিয়ার আগের কাহিনী!”

“তাইলে আর কী করবি? রেফারেন্স হিসাবে আমার ফোন নাম্বার দিস ওদের! ফোন করলে বলবো, সন্ধার পর তোদের প্রায়ই আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছি!”

হা হা হা!

বেচারা আজ দুপুরে গেছে আবার এমবাসীতে...।

দেখি কী হয় এবার...!

বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০০৮

মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০০৮

লস!


কয়েক দিন আগে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে ব্লাড ডোনেট করতে গিয়েছিলাম। এই নিয়ে মোটে নয় বার হলো! :(

পাশের টেবিলে শুয়ে থাকা আরেক ডোনারকে আক্ষেপ করতে শুনলাম এভাবে, "সেদিন শরীরটা বেশি ভালো ঠেকছিলো না। তাই ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তারের কথামত ১০ হাজার টাকা খরচ করে অনেক রকম টেস্ট করালাম। কিছুই পাওয়া গেলোনা। পুরো টাকাটা-ই লস! "

মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০০৮

সম্মতি না অসম্মতি?

জ্ঞান থাকতে ওই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা। তাই জ্ঞান হারাইছিলাম...

অনেক আগে একটা ধারাবাহিক নাটকে এক গ্রাম্য লোকের মুখে এই ডায়ালগটা শুনেছিলাম।

ধন্ধে পড়ে গেছি, এই বাক্যটা বিয়েতে সম্মতি না অসম্মতি?

আবার অফিস...




জামাল ভাইয়ের বঊ মানে আমাদের জামালভাবী ঘরে বসে থাকতে থাকতে একটু টায়ার্ড। তাই বাড়তি কাজ হিসাবে তিনি শুরু করেছেন ফতুয়া ডিজাইন।

ফর্মুলা অনুযায়ী প্রথম ফতুয়াটা অবশ্যই জামাল ভাইয়েরই হওয়া উচিত। আর সেটাই তিনি অফিসে পরে এসেছেন!

ফতুয়াটা ভালোই। হাতের কাজের প্রশংসা কুড়োচ্ছে দেদারসে ওটা! আমাদের মুখে বউয়ের প্রশংসা শুনে জামাল ভাই নিজেই ফুলে যাচ্ছেন! (কানে কানে একটা কথা বলে রাখি, একটু বয়স্করা টি-শার্ট অথবা ফতুয়া পড়লে, তাদের ভুড়িটা সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। সেই জন্যই ফুলে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক! )

ফতুয়াটা আসলেই দেখতে ভালো। যার যা প্রাপ্য সেটা দিতে আমি কখনই কার্পণ্য করিনা, ওহ জামাল ভাই! ফতুয়াতে আপনাকে দারুন লাগছে! মনে হচ্ছে আপনার বয়স পাক্কা তিন দিন কমে গেছে!

জামাল ভাই আমার উপর একটু বিরক্ত হলেন মনে হয়, মাত্র তিনদিন?! ভেবেছিলাম বলবেন, ১০ বছর!

মাঈনুল ভাই তাকে ুশি করার জন্য ঝপট বললেন, জোস! আপনি যেই স্টাইলে দাঁড়িয়েছেন... যেন একটা scare-crow!

আশ্চর্যজনকভাবে শব্দটার অর্থ তিনি জানেন না! তাই ইংরেজী প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে আরেকটা পোজ দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেসলেন, এবার কেমন লাগছে?

কঠিন! আপনাকে এবার ফুরফুরে মেজাজের Traffic-Police এর মতই লাগছে! ... এবার ইংরেজীটা তিনি ঠিকই বুঝলেন।

আর আবার বিরক্ত হলেন আমার উপর!

***

গণ অসন্তোষের কারণে কোথায় যেন পুলিশকে মোলায়েম লাঠিচার্জ করতেই হয়েছিলো। তাতেও যখন কাজ হলোনা, তখন ভরসা রাবার বুলেট ! ঘটনা একটু ভয়াবহ!

তাই পরেরদিন স্থানীয় সংবাদপত্রে জব্বর একখানা হেডলাইন জায়গা করে নিলো,

পুলিশের গুতে তিনজন আহত!

চারিদিকে হৈচৈ... ব্যাপার কি? এবার ঘটনা একটু আকর্ষণীয়!

পরেরদিন পত্রিকায় সংশোধনী দিতেই হলো,

পাছার ভুলের কারণে গুলি গু হয়ে যাওয়ায় আমরা দুঃখিত।

তৃতীয় সংশোধনীতে কি এসেছিলো সেটা আর জানা যায়নি!

[প্রকৃত শব্দদ্বয় যে গুলিছাপা, সেটা বলাই বাহুল্য!]

***

রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০০৮

অবসর

আজ দুপুরে একা একা অনেকটা পথ হেঁটেছি। কোন সুনির্দিষ্ট কিছু করার ছিলো না তাই। বেশ খানিকটা পথ। কতটা পথ? মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে টেকনিকাল মোড়। সেখান থেকে বাসে চেপে আবার শেওড়াপাড়া। এক বন্ধুর বাসায় প্রয়োজনে যাবার দরকার ছিলো। কিন্তু আগেই পৌছে যাওয়াতে সময়টা কাটানোর প্রয়োজন ও ছিলো। কিন্তু সেটা অন্য কাহিনী।

বাসায় ফিরে একটু আত্মস্থ হয়ে চেখভ পড়ছিলাম। বাংলা অনুবাদে। গল্পগুলো বেশ ঝরঝরা,সাধারণ। ভালোই লাগে পড়তে। পুরনো দিনের রাশিয়ান দৈনন্দিন জীবন। আমাদের চেয়ে বেশ আলাদা। তবুও মিশে গিয়েছিলাম খানেকক্ষণের জন্য। তারপরই ডুবে গেলাম আমার চিরপ্রিয় সৈয়দ মুজতবা আলী-তে। হালকা রস মিশিয়ে জীবনের নিগূঢ়তম সত্যগুলো কেমন যেন মূর্ত হয়ে ওঠে তার লেখায়। মুগ্ধতার কখনও শেষ হয়না আমার।

হুবহু, সেখান থেকেই তুলে দিলাম কিছু অংশ।

***
রুশ কবি পুশকিনের রচিত একটি কবিতার সারমর্ম এই-

‘হে ভগবান, আমার প্রতিবেশীর যদি ধনজনের অন্ত না থাকে, তার গোলাঘর যদি বারো মাস ভর্তি থাকে, তার সদাশয় সচ্চরিত্র ছেলেমেয়ে যদি বাড়ি আলো করে রয়, তার খ্যাতি প্রতিপত্তি যদি দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে, তবুও তাতে আমার কণামাত্র লোভ নেই, কিন্তু তার দাসীটি যদি সুন্দরী হয় তবে- তবে, হে ভগবান, আমাকে মাপ করো, সে অবস্থায় আমার চিত্ত-চাঞ্চল্য হয়।’

পুশকিন সুশিক্ষিত, সুপুরুষ ছিলেন এবং খানদানী ঘরের ছেলে ছিলেন।, কাজেই তার ‘চিত্তদৌর্বল্য’ কি প্রকারের সেকথা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হয়না। এইবারে সবাই চোখ বন্ধ করে ভেবে নিন কোন্‌ জিনিষের প্রতি কার দূর্বলতা আছে।

আমি নিজে বলতে পারি, সাততলা বাড়ি, ঢাউস মোটরগাড়ি, সাহিত্যিক প্রতিপত্তি, রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এ সবের প্রতি আমার কণামাত্র লোভ নেই।

আমার লোভ কেবল একটি জিনিষের প্রতি- অবসর। যখনই দেখি, লোকটার দু’পয়সা আছে অর্থাৎ পেটের দায়ে তাকে দিনের বেশির ভাগ সময় এবং সর্বপ্রকারের শক্তি এবং ক্ষমতা বিক্রি করে দিতে হচ্ছেনা, তখন তাকে আমি হিংসে করি। এখানে আমি বিলাস ব্যসনের কথা ভাবছিনে।, পেটের ভাত ‘-’র কাপড় হলেই হল।

অবসর বলতে কুঁড়েমির কথা ও ভাবছিনে। আমার মনে হয়, প্রকৃত ভদ্রজন অবসর পেলে আপন শক্তির সত্য বিকাশ করার সুযোগ পায় এবং তাতে করে সমাজের কল্যাণলাভ হয়।

***

কিন্তু ব্যাস্ত সময়ে অবসর মেলে কই?
আজকে না হয় আচমকা পেয়ে গিয়েছিলাম সেটা।
আজকে দিনটা হয়তো একটু বেশিই লাকি।

বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০০৮

মুখোমুখি সংঘর্ষ


আচম্বিতে জ্ঞানতাপস জিজ্ঞাসা করিলেন, মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিতে কি বুঝিয়া থাকো?

ভরদুপুরে এইরুপ প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হইয়াও নিজেকে সামলাইয়া কহিলাম, যেই বিষাদময় মূহুর্তে দুটি যান সম্মুখসমরে আলিঙ্গন করিয়া উদরস্ত যাত্রীদিগের প্রাণোৎপাটন, অন্ততপক্ষে অঙ্গহানি, করিয়া থাকে, তাহাকেই মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিয়া সংজ্ঞায়িত করা হয়।

ইহাতে তাহার বিশেষ সন্তুষ্টি লাভ হইলোনা বলিয়া বোধ হইলো।

বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তিদিগের অসন্তুষ্টি নিতান্তই কাম্য নহে। এতদকারণে তাহার চিত্তবিনোদনকল্পে তাহাকে পূতপবিত্র-অরণ্যে তৈয়ারীকৃত সবাক চলচ্চিত্র উপভোগ করিবার স্পষ্ট আহবান করিলাম। তিনি সানন্দে ইচ্ছা পোষণ করিলেন। জমকালো শব্দানুভুতি ও দৃশ্যাবলীর অব্যবহিত পরেই প্রধান পাত্রাপাত্রী প্রেমাঙ্কুর দৃশ্যে অবতরণ করিলেন। ঘটনাসমূহ আরও প্রগাঢ় ও অন্তরঙ্গ হওয়া পূর্বক ওষ্ঠাধরসমূহ অতীব নিকটবর্তী হইতেই অক্ষিযুগল তৎক্ষণাত করাবৃত করিয়া তাহাকে বলিলাম , ইহাকেই হয়তো প্রকৃতপক্ষে মুখোমুখি সংঘর্ষ বলিয়া থাকে!

মুদিত নয়নেও তাহার স্মিতহাস্য অনুভব করিলাম।

বুঝিলাম, তিনি আশাপ্রদ সদুত্তর পাইয়াছেন!