বুধবার, ১৩ মে, ২০০৯
♫ ♫ ♫ [সুমন চট্টোপাধ্যায় এর গান। ]
তোমার পাশে বসেছি
বলো তোমার কথা শুনবো আজ
শুনবো বলে তাই রাখিনি কাজ
তোমার কথাহারা গান
যার ঠিকানা জানা নেই- জানা নেই
স্তব্দতার গান শুনো...
প্রতিটি ঘরে ঘরে আর দেয়ালে প্রতি রাস্তার
দেখেছি কথা বলে দার্শনিক
শুনেছি কথা ভরা মাঙ্গলিক
মানুষ মানুষের হাত ধরে
মুখর হতে চায় প্রাণ ভরে
তবু সে মুখরতার বুকে বাসা বাধে স্তব্ধতা - নীরবতা
স্তব্ধতার গান শুনো...
মানুষ কথা বলে যায়
কথার কথা বলে যায়
কথা বলে কথা না শুনেই
কথা শুনে কথা না শুনেই
কথার মানে থাকে না
থাকে না তার কোন দাম- কোন দাম
স্তব্ধতার গান শুনো...
আমার চোখে রাখো চোখ
কথার অবসান হোক
এখন আর কোন শব্দ নয়
এখন তুমি আমি আর কোন কথায় বাধা নেই - বাধা নেই
স্তব্ধতার গান শুনো...
সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০০৯
হঠাৎ করিয়া বিবাহের শখ জাগিলো, যেই কারণে...
বিয়ে বাড়িতে যেতে ভালো লাগেনা। সবাই হেসে-কুঁদে কত কী করে। আমি হাঁদারাম, চুপচাপ চেয়ার টেনে এক কোনায় বসে থাকি! বরের মুখে একরাজ্যের চিন্তার রেখা গুনি আর কণের মুখের খলখলিয়ে উঠা হাসির উজ্জ্বলতা মাপি! আর খাওয়ার দাওয়ার পর হেলেদুলে প্যাভেলিয়নে ফিরি। তাই, পারলেই ‘না’ বলে দিই। কিন্তু 'ত' বললো যেতেই হবে, “খুব বেশি ছেলেকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। তোমাদের মত খুব কাছের ক’জন বন্ধুকে!”। প্রস্তাবটা রোমাঞ্চকর না অপমানের সেটাই বুঝতে সময় লাগলো! এক দঙ্গল ‘হাওয়া’র মাঝে খুচরো ক’জন ‘আদম’! সংখ্যালঘু সমাচার!
তবুও যাওয়া হলো! বন্ধু ‘র’ এর সঙ্গে! ভোজটাও ছিলো ‘একটু’ অন্যরকম! পুরোটাই ‘চিকেনায়িত’! প্রথমে এলো চিকেন কাচ্চি - সঙ্গে চিকেন রোস্ট! পরে গলাগলি করে এলো, চিকেন কারী আর চিকেন কাবাব! পাশে বসা গোল চশমাধারী ‘র’ এর চোখ আরও গোল হয়ে উঠে! ওকে আশ্বস্ত করি, ‘আমি মেরিডিয়ান চিকেন ফ্লেভার চিপস ও আশা করছি!’
মনে হয়, আমাদের দোয়া-আশির্বাদে বিয়ে ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো। দে লিভ হ্যাপিলি এভার আফটার!
বিয়ের পর প্রথম জন্মদিন পড়লো জুনে! প্রতিবারের মতই উইশ ভাসাই এসএমএস এ, “শুভ জন্মদিন... ইত্যাদি ইত্যাদি...”
জবাব এলো, “থ্যাঙ্ক ইউ ফর ইয়োর উইশ। ‘স’ এখন অফিসে!”
দু’দিন পর মেসেঞ্জারে পেয়ে জিজ্ঞাসা করি, “কী খবর কেমন আছো ‘ত’?”
বেশ খানেকক্ষণ পর মেসেঞ্জারের রঙ পালটায়, “আমি ভালো আছি। ‘স’ এখন অফিসে দারুন ব্যস্ত ... !”
আবার গত সপ্তাহে, “শরীর ভালো তো, ‘ত’?”
“এই তো আছি মোটামুটি। ওর শরীরটাও ভালো। ‘স’ আগামী সপ্তাহে মালয়েশিয়া যাচ্ছে! ...”
অল রোডস লিড টু রোম!
মনে কী সাধ আহ্লাদ জাগেনা? নাহয় আমি ‘আবিবাহ-চিরকুমার’! নেই কী কোন অ-আ-ক-খ-প-ফ-ব-ভ-ম-বিসর্গ-অনুস্বার? যে বলবে, ‘আ’ সবসময়ই অফিসে!
তবুও, ভয় লাগে! কারণ, একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না!
শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০০৯
চালশে
ছোটবেলা থেকেই,
আড্ডায়-গল্পে-আসরে
বন্ধুদের আনন্দে ভাসানো
মানুষটি
যখন
মধ্য চল্লিশে এসে, আবার
বন্ধুদের আড্ডায়
মুখ ভার করে বলে,
“ঘরে চাল নেই
বাচ্চারা অভুক্ত।”
বন্ধুরা তখনও হেসে ওঠে।।
চালশে তে আসতে-
এখানে এখনও ঢের বাকি।।
তবুও...
শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০০৯
স্মৃতির ছড়া
শার্লক হোমসে পড়েছিলাম, মানুষের মস্তিষ্ক অনেকটা সাজানো ঘরের মত...খুলিটা একটা ঘর, ব্রেইনসেলগুলো আসবাবপত্রের মত! ঝকঝকে নতুন আসবাবকে জায়গা দিতে পুরনোগুলোর ঠাঁই মেলে জঞ্জাল ঘরে, পুরনো দোকানে পেরেক ঠুকে নতুন হবার ভয় কিংবা ভাগ্য আরো খারাপ হলে নিখাঁদ লাকড়ি! সেভাবেই নতুন জ্ঞানে, নতুন স্মৃতির থরে থরে সাজানোর মহাপরিকল্পনায় পুরনোগুলোর ঠাঁই মেলে বিস্মৃতির আস্তাকুড়ে। কিন্তু সেগুলোও হঠাৎ করে চমকে দেয়। আজ যেমন দিলো!
এমন একটা ছড়া ছড়িয়ে দিলাম সে সুযোগে।
“অমুক মিয়া দারোগা
ডিম পাড়িছে* বারোডা,
একটা ডিম নষ্ট,
অমুকের বউয়ের কষ্ট!”
‘অমুক’ নামটার বদলে যেকোন একটা নাম বসিয়ে নিলেই।
তখন এসব শুনলেই সারা শরীর রাগে-ক্ষোভে জ্বলতো! এখন হাসি পাচ্ছে!
আমার নামটা বসাতে ইচ্ছে হয়? মন্দ কী?
ছেলেবেলাটা না হয় অন্যভাবেই ফিরে এলো!
* আঞ্চলিক ভাষায়, ‘পেড়েছে’ >> ‘পাড়িছে’ আর বারোটা>>বারোডা!
সোমবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০০৯
মূর্খ
উচ্চশিক্ষার ভারী ভারী সার্টিফিকেট কারো কারো মূর্খতার পূর্ণতা দান করে।
দেখে শুনে জেনে বুঝে আমি খানিকটা হতাশ।
হয়তো তোমাকেই বলছি।
কিংবা নিজেই দাঁড়িয়ে আছি আয়নার সামনে!শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০০৮
আজকের ডায়রী
টিউব লাইট এর দুধ-সাদা আলো জ্বলতে থাকে। জ্বলুক। কোন কোন দিন মাঝরাতে ঘুম ভাঙেগ। বিরক্ত চোখে আলোটাকে জন্ম জন্মান্তরের শত্রু মনে হয়। আলুথালু বেশে নীলচে-সবুজ মশারীর দেয়ালের নিচ দিয়ে উঠে আলোটাকে হত্যা করি। ভালো লাগে। তারপর আবার সেই ঘুম। কে যেন বলেছিলো, “ঘুমাতে এত ভালো লাগে কেন? না জানি, চিরদিনের ঘুম কতই না মজার।” মাঝে মাঝে কথাটার সত্যাসত্য নির্ণয়ের সাধ জাগে। শোনা কথায় কান দিতে নেই যে! কখনও শত্রুর মত সামনে ভেসে থাকা আলোটাকে নিজ হাতে বধ করতে ইচ্ছা জাগেনা। কিংবা সহজ ভাষায় বললে, মাঝরাতে আর ঘুম ভাঙেনা। কৃত্রিম আলোটা প্রভাত সূর্যের সংগে তেজ দেখাতে চায়। কিন্তু পারেনা। পারতে দেইনা। খট করে নিভিয়ে দিই।
এখন কবিগুরুর ‘গল্পগুচ্ছ’ পড়ছি আবার। তাঁর প্রতিটা শব্দের দ্যুতি আমাকে আলোকিত করে। নগন্য এই আমার পক্ষে তার লেখার আলোচনা-সমালোচনা করা তো অতিদূরের ব্যাপার, প্রশংসা করাও একপ্রকার নিকৃষ্টতম ধৃষ্টতার সমতুল্য। একটা মানুষ সারাটা জীবন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে নিজ লেখার মাধ্যমে মানব চিত্তকে আলোড়িত করে গেছেন, এখনও করছেন। ভাবতেও শিহরণ জাগে। তার নামে গোঁড়ামী প্রসূত অপবাদ শুনলে কপালের পাশের অনুভুতির শিরাটা দপ দপ করে আন্দোলিত হয়। মুষ্টি অনমনীয় হয় দূর্বিনীত আক্রোশে। বলা হয়, ধনী পরিবারের সন্তানের পক্ষে খুবই সম্ভব ছিলো সাহিত্য রচনায় বাঁধনহীন নিমগ্ন থাকা। খাওয়া পরার তেমন চিন্তা ছিলোনা তাঁর। জীবনটাকে উপভোগ করেছেন আর লিখেছেন। খুবই সহজ হিসাব! সমকালীন কিংবা পরবর্তীকালের অনেক সাহিত্য-পথিকের মত জীবন সংগ্রামের ময়দানে তাকে নামতে হয়নি। তিনি একান্ত সময় কাটানোর ছলেইই তার কলমের নিবে ছত্র লিখে দিন গেছে তাঁর! শুনলে হাসি পায়। কান্নাও পায়। রবীন্দ্র সমসাময়িক অনেকেই ছিলেন অর্থবিত্তে সমকক্ষ কিংবা আরো অনেক বেশি। তাদের ক’জন আমাদের মানসপটে বিরাজমান আজও? তাদেরও তো সে সুযোগ ছিলো। কিন্তু কবিগুরু আছেন, থাকবেন। তাঁর নিজের সৃষ্টিতে, কীর্তিতে।
তাঁর সবগুলো কাহিনী বিন্যাস-ই যে কালোত্তীর্ণ, সেটা বলা নিরপেক্ষতার পরিচয় হবেনা। কিন্তু আগের মত আবার বলছি, তাঁর ব্যবহৃত প্রতিটা শব্দের আলোকছটা নক্ষত্রের চেয়েও প্রখর। গল্পের মাঝে মাঝে নিজস্ব জীবনবোধ থেকে উতসারিত কিছু শব্দ, কিছু বাক্য আমাকে বজ্রাহতের মত চমকে দেয়। কাহিনী পিছে পড়ে রয়। মনচক্ষু খুঁজে বেড়ায় এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা সেসব মুক্তার খনি।
কাল একটা গল্প পড়ছিলাম। প্রথম কয়েক ছত্র পড়েই পড়েই উপসংহারের ধরণ কল্পনা করে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু সেটা আমার ক্ষতিবৃদ্ধির কারণ নয়। আদতে কোন ক্ষতি-ই নেই এখানে। একটা প্যারাতে চোখ আটকে গেলো...
“একটা পাখিকে সুবিধামত ডালের উপর বসিয়া থাকিতে দেখিলেই শিকারীর ইচ্ছা করে তাহাকে গুলি বসাইয়া দিতে, পাহাড়ের গায়ে প্রস্তর পতনোন্মুখ থাকিতে দেখিলেই বালকের ইচ্ছা করে এক লাথি মারিয়া তাহাকে গড়াইয়া ফেলিতে - যে জিনিষটা প্রতি মুহূর্তে পড়ি-পড়ি করিতেছে, অথচ কোনো একটা কিছুতে সংলগ্ন হইয়া আছে, তাহাকে ফেলিয়া দিলেই তবে যেন তাহার সম্পূর্ণতা সাধন এবং দর্শকের মনে তৃপ্তিলাভ হয়।”
আজ এই পর্যন্তই।
অনেক দিন কিছু লেখা হয়না। শুধুমাত্র লেখার আনন্দেই লিখে ফেললাম এতটুকু!
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০০৮
VISA

মোটামুটি নিষ্পাপ আচরণ। এফেয়ার করতে খুব একটা প্রবলেম হলোনা ওর। মেয়েও আমাদেরই ক্লাসের। সোনায় সোহাগা! পরিনতি ভালোই। সরাসরি পারিবারিক ভাবে বিবাহ! প্রেমের কাহিনীতে ভিলেন না থাকলে কী চলে? এইখানে ভিলেন হলো, মেয়েটার পাওয়া জাপানী স্কলারশিপ। যে নারীর স্বামী বিদেশে ত্থাকে... ব্যকরণ বইতে এর একটা এককথায় প্রকাশ আছে... প্রষিতভর্তৃকা! মফিজ হলো 'প্রষিতভর্তৃক’! (জানিনা, আদৌ এরকম শব্দ বাংলা ভাষায় আছে কিনা!) বাংলা সিনেমার ‘টেরাজিডি' কে হার মানিয়ে নববধু ঈদের আনন্দ-সকালে কান্নাকাটি করে উড়াল দিলো সূর্যোদয়ের দেশে। দিলো অনেক প্রতিশ্রুতি। তোমাকে শীঘ্রই নিয়ে যাবো... ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিশ্বাসভঙ্গের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে? উহু! নাহ!
মেয়েটা কাগজপত্র সবই পাঠালো। কিন্তু বাগড়া দিলো জাপানী এমবাসী! সব ডকুমেন্টস ঠিক আছে। তবে প্রতিদিনই নতুন নতুন কাগজপত্রের আবদার করে তারা। ব্যাংক স্টেটমেন্ট, নিকাহনামা এইরকম উল্টোসোজা যাবতীয় সিলমোহরযুক্ত কাগজ দেখানোর পরও তাদের খায়েশ মেটেনা! সর্বশেষ বার বলেছে, বিয়ের আগে তোমার বউ এর সংগে কিভাবে পরিচয় হয়েছে, সেটার উপর একটা রচনা লিখে জমা দাও! ফার্স্টক্লাস গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করে দিতে হবে কিন্তু!
কাল সন্ধ্যায় বেচারাকে দেখালাম, কাগজ কলম নিয়ে বসেছে!
উপদেশ দিই, “কষ্ট করে লিখে আর কী করবি? অন্তরঙ্গ ভিডিও দেখাইয়া দে ওদের!”
“ওইটা তো বিয়ার পর। কিন্তু এবার তো চাইছে, বিয়ার আগের কাহিনী!”
“তাইলে আর কী করবি? রেফারেন্স হিসাবে আমার ফোন নাম্বার দিস ওদের! ফোন করলে বলবো, সন্ধার পর তোদের প্রায়ই আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছি!”
হা হা হা!
বেচারা আজ দুপুরে গেছে আবার এমবাসীতে...।
দেখি কী হয় এবার...!