পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে! তালে তালে মেয়েরাও এগিয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালী ছেলেরাও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার অস্থির গতি দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে! বিহবলতা কাটলেই আবার ‘দৌড়ে’ ফিরে আসবে! ছেলেদের একান্ত জগতটা ক্রমশ হাতছাড়া! সবকিছুর স্বাদই মেয়েরা নিয়ে নিচ্ছে। বিজ্ঞাপণেও তাই মিনমিনে পুরুষকন্ঠের পাশে জোর মহিলা কন্ঠ হাঁক দিয়ে ওঠে, “স্ট্যান্ডার্ড লুঙ্গি, আসল লুঙ্গি!” কিন্তু অপরপক্ষে? না থাক...আমার ‘বাক স্বাধীনতা’ মুখ থুবড়ে পড়ুক এইবার!
তবে ভাবতে ভালো লাগে... মেয়েরা এখনও তাদের সবটুকু সহজাত বৈশিষ্ট্য ছেড়ে ‘জাতে’ ওঠেনি! একালেও ঘর গোছানোর দ্বায়িত্বটা মা-বোনের উপরই ছেড়ে দিই। জানি, আমার ‘কর্মদক্ষতার’ অসীম প্রয়োগেও...তাদের মত চমতকার ভাবে কখনই সাজাতে-গোছাতে পারবোনা! সব মেয়েই কিভাবে যেন এটা আয়ত্ত করে ফেলে! আমার বোনের পরিপাটি গোছানো ঘরটা দেখলে খুবই সাবধানে নড়াচড়া করতে ইচ্ছা হয়...মনে হয় আমার মুহুর্তের অসাবধান অসতর্কতায় সাজানো বাগানটা নিমেষেই ধসে পড়তে পারে!
তাই অগোছালো রুমই আমার জন্য ভালো। বাসায় থাকলে... মা যখন আমার এলোমেলো খাতাপত্র দেখতেন, তখন আর স্থির থাকতে পারতেন না! নিমেষেই সাজিয়ে সেটাকে ফুলের বাগান বানিয়ে ফেলতেন! কিন্তু অর্বাচীন আমি গোছানো খাতাবইয়ের মাঝে কখনই প্রয়োজনীয় নোটটা সময়মত খুঁজে পেতামনা! তাই মা’কে ডেকে হয়তো ফিজিক্স নোটটা খুঁজে পেতে হত!
হলে এসে অবাধ স্বাধীনতা! খাটের নিচে চার বছরের জঞ্জাল একবারে বিদায় হয় যখন পুরনো কেউ চলে গিয়ে নতুন কেউ আসে। আবার সে চলে গেলে আবার নতুন কেউ এলে! ডাল-চচ্চরির মত বই-খাতা এলোমেলো পড়ে থাকে। তার মাঝেই সঠিক সময়ে সঠিক জিনিষটা খুজে পেয়েছি! বিছানায় শুয়ে থাকলে মাকড়সার জাল চোখে পড়ে! কত সুন্দর মাকড়সা! আসলে সৌন্দর্য্য-পিয়াস এর বালাই টালাই নেই। আলস্যে ওগুলো পরিষ্কার করতে ইচ্ছে হয়না, তাই! ঘরদোর ঝাড়ু দেবার জন্য মোখলেস ভাই প্রতিদিন সকালে আসেন। ঘুমিয়ে থাকতাম! দুই-এক ঘা ঝাঁটার বাড়ি দিয়ে তার কাজ খালাস! কিছুই মনে করিনি!
আবার, শ্বাসের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি দলবেঁধে! ডাক্তার রুম পরিষ্কার করার পরিষ্কার উপদেশ দিতেন! ‘বুয়েট পাশ করা ডাক্তার’ বলে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছি!
একবার তাই উপদেশ মত ইশতিয়াক তার রুম পরিষ্কার করলো, ঘন্টাখানেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে! সব শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বারান্দায় হাত মুছছিলো সে...তখন দেখে... বুয়েটের একজন ডাক্তার তার পাশের রুম থেকে বের হচ্ছেন! কৌতুহলী ডাক্তার ওর রুমে ঢুকেই ছিটকে বের হয়ে আসলেন…
“এমন অপরিষ্কার রুমে মানুষ থাকলে, সে তো দুইদিনেই অসুস্থ্য হয়ে পড়বে!”
‘আক্কেলগুড়ুম’ ফেল অন ইশতিয়াক!
তবুও তখন আমরা বলতাম, “এই বেশ ভালো আছি!”
শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
গোছগাছ!
শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
ছাগল!
-
আমি একটা আস্ত ছাগল...কিংবা আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে... রামছাগল, ভদ্র ভাষায় যমুনাপাড়ি! বিশাল আকারের যেসব স্বাস্থ্যবান কালচে-দাড়ি বিশিষ্ট ছাগল দেখি... যেগুলোকে ইংরেজিতে বলে ‘ব্লাক-বেংগল-গোট’, সেগুলোকে সাহিত্যমনষ্ক প্রাণিবিদেরা (ছাগলবিদ?) নাম দিয়েছেন যমুনাপাড়ি! আর ছুটিতে বাড়ি যেতে হলে আমাকে তো যমুনা পাড়ি দিতেই হয়!
নিজের ছাগলামীর কাহিনী লুকোছাপা করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি ‘ব্লাক বেংগল গোট’ এর নামভূমিকায় আছি … তাই প্রানবন্ত অভিনয় করে যাওয়াই ভালো। ভাগ্য ভালো থাকলে কিছু ফ্রেশ কাঁঠালপাতাও জুটে যেতে পারে!
ঘটনাটা আমার এক পুরনো বান্ধবীকে নিয়ে। আগেই বলে দেই, তিনি কিন্তু ছাগলিনী নন। উচ্চ পর্যায়ের মনুষ্য-শ্রেণীরই একজন! বুয়েট লাইফের শেষে এসে তিনি মনের দুঃখে বলেছিলেন, তাকে সবাই ভুলে যাবে! আমিও ধনুকের মত লাফিয়ে উঠে প্রকৃত বন্ধুর ইমোশন ফুটিয়ে তখন বলেছিলাম, সবাই ভুলতে পারে কিন্তু এ বান্দা তার বন্ধুদের ভুলবেনা! তাই এখনও পনর-বিশ দিন পর পর ফোন করে তার হাল-হকিকত জেনে নিই! তিনিও ফোন করেন। ১০ মিনিট কথা হলে ৯ মিনিটই তার ‘টুকটাক’ কথা শুনে যাই আর বাকি এক মিনিটে আমি আমার ‘দৈনন্দিন’ বর্ণনা করি!
প্রতিবারের মত সেদিনও...একথা সেকথার ডালপালা ছড়িয়ে পড়লো চারপাশে, সেই ডালপালা কুড়াতে আমার ত্রাহি-মধুসূদন অবস্থা! বাক-পরম্পরায় তিনি বললেন, আগামী শুক্রবার তার সিস্টার কাজিনের শুভ বিবাহ! এমন ভাবে উইশ করলাম যেন বিয়েটা তারই! তিনি বোধহয় খোঁচাটা বুঝতে পেরেছিলেন... তাই ভারী গলায় বললেন, কাজিন তার চেয়ে জুনিয়র! জীবনে বিয়ে বাড়িতে গিয়েছি খুব কমই। দুয়েকবার যা গিয়েছি, এয়সা মত খাওয়া দাওয়া শেষে আর অন্য অনুষ্ঠানের দিকে ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারিনি! আপন চাচাত বোনের বিয়েটা খুব কাছ থেকে দেখার শখ ছিলো...সামনে নিজের বেলায় যেন ‘চিরায়ত’ ফর্মুলাতে ভজঘট না পাকিয়ে ফেলি। কিন্তু বর আসার পর আব্বা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “বাবা, বাসায় যাও, বাসাটা পাহারা দাও। খাওয়া শুরু হলে ডাক দেবো তোমাকে!”
এই যে আমার পুরনো বাজে অভ্যেস... কি কথা বলতে গিয়ে কোন কথায় চলে যাই! অনেকটা রাজনীতিবিদদের মত, মাইক হাতে পেলে মনে করে যেন নিজের বউয়ের কব্জী চেপে ধরেই বসে আছে, ছাড়তেই চায়না!
গলার ফ্রিকোয়েন্সীতে উতসাহ আর কৌতুহল মিশিয়ে বেতারবাণী ছাড়লাম, “তোহ, বিয়েতে কী প্লান তোমার?”
ফ্রিকোয়েন্সী দ্বিগুন উতসাহে ফিরে এলো, “শপিং করতে হবে!”
আহা, বিয়ে বাড়ি বলে কথা। কত কী কেনাকাটা করতে হয়! কণের স্নো...রুজ-পাউডার... সাবান...গয়না...চুরি... জামদানি আমদানি কত কী! বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত না থাকলেও বই পড়ে পড়ে এসব অনেক জ্ঞান হয়েছে! কিন্তু কথায় আছে না? “গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন...নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন!”
তাই শিশুসুল্ভ সরলতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কার জন্য শপিং?”
ওপাশে কথার চাবুক ছুটলো, “কার জন্য আবার? আমার জন্য! বিয়ে বাড়িতে যাবো, সাদামাটা পোষাকে যাবো নাকি?...” ইত্যাদি ইত্যাদি!
“না...মানে ইয়ে ...আমি ভেবেছিলাম....তোমার কাজিনের জন্য…ইয়ে...!”
প্রথমেই বলেছিলাম, আমি আস্ত একটা রামছাগল। নাহলে কেউ এমন প্রশ্ন করে? আহা! মেয়েটাও ভাবলো, আমি রামছাগলের ‘প্রোটোটাইপ’...নাহলে এমন ‘উত্তর-জানা’ প্রশ্ন করে ‘অপমান’ করি?
এখন তোমরাই বলো...নর্মাল ছাগল যদি ৩৩ হয় আর রামছাগল যদি হয় ৮০, তাহলে ১০০ এর মধ্যে আমার কত পাওয়া উচিত??
শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
একটি ভাবগম্ভীর ব্লগ!
দেখতে দেখতে আবার পবিত্র ‘মাহে রামাদান’ এসে হাজির আমাদের মাঝে! সবাইকে তাই পাক-পবিত্র শুভেচ্ছা!
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে এই মাস আসে আমাদের মাঝে! মসজিদে ‘seasonal’ নামাজীর সংখ্যা বেড়ে যায় বিপুল হারে! বেড়ে যায় আতর-টুপির বিক্রি! তাই ভাবলাম, স্রোতের টানে কলম ভাসিয়ে একটা seasonal blog ও লেখা যাক! কিন্তু কথায় আছে না, ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে? কিন্তু আমি এখনও ‘স্বর্গত’ই হইনি; তাই নিশ্চিন্ত মনে ধান ভানতেই পারি মানে একটা হালকা মানের লেখা পত্রস্থ থুড়ি ব্লগস্থ করতেই পারি! আমার আর কী দোষ! বিধাতা আমাকে বানিয়েছেনই এভাবে! নামায শেষে মুনাজাতে যখন ইমাম সাহেব চোখের পানিতে বুকের কাপড়ের দফারফা করে দেন তখনও ‘কেলানোর’ সুযোগ খুঁজতে থাকি! ‘বউ-বাচ্চার’ রহমতের জন্য দোয়া চেয়ে বসলে ছেলে-বুড়ো সবাই যখন “আমীন আমীন” হাঁক তোলে, তখন আর শেষ রক্ষা হয়না! পাশের বন্ধুকে কনুই দিয়ে খোঁচা দিয়ে হেসে উঠি, “এই বেটা, তোর তো এখনও বিয়েই হয়নি, এখনই “আমীন” বলছিস? চুপ থাক! দুই বছর পরে বলিস!”
মসজিদে শুনেছি, রোযার মাসে প্রতি ওয়াক্তে নামাযের নাকি ৭০ গুন সওয়াব! তাই আমার এক ‘বন্ধুস্থানীয়’ সারা রোযার মাসে নামায পড়ে বাকি বছর মসজিদের ছায়া মাড়ান ঠিকই তবে ঢোকেননা! তার হিসাবও খুব সহজ! সারা রামাদান মাস নামায পড়ার ফলে ৭০ মাস নামায পড়া হলো আর বাকি ১১ মাস না পড়ার ফলে সর্বমোট কেটেকুটে থাকলো ৫৯ মাস! বছর শেষে ৫৯ বিয়োগ ১২ মাস অর্থাৎ ৪৭ মাসের নামায surplus থাকে!
আহা নামায! ওলি আউলিয়ারা বলতেন, নামাযে দাড়ালে মনে অনাবিল প্রশান্তি আসে। আর আমরা? নামাযে দাঁড়িয়ে কখন কাকে ‘পূর্ণবয়স্ক কঞ্চি’ উপহার দেবো... সেই ‘প্ল্যান’ও সেরে ফেলি! কেয়ামত বোধহয় চলেই এলো! কোন এক যুদ্ধে, হযরত ওমর (রাঃ) এর পায়ে এক তীর বিধে! সেই তীর টেনে বের করতে গেলেই তিনি বারেবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন! অবশেষে বিজ্ঞজনের পরামর্শে তিনি নামাযে দাড়ালেন! নামাযে দাঁড়িয়ে তিনি আল্লাহ তাআলার মেরাজে বরাবরের মত এমনই মশগুল হয়ে গেলেন যে, সে সুযোগে তার আত্মীয়রা তার পা থেকে তীর বের করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। তিনি টেরই পেলেননা!১
আর এখনকার দিনের একটা কাহিনী বলি...
কোন এক মসজিদে... এশার চার রাকাত ফরজ নামায শেষে ইমাম সাহেবের সন্দেহ হলো, তিনি বোধহয় চার রাকাতের জায়গায় ভুল করে তিন রাকাত পড়িয়ে ফেলেছেন! তাই তিনি পিছনে ফিরে মুসল্লীদের কাছে জানতে চাইলেন আসলে কত রাকাত নামায পড়ানো হয়েছে! এ দেশে সবসময় যা হয়... তা-ই হলো। মুসল্লীরা দুভাগে ‘চার-রাকাত’ আর ‘তিন-রাকাত’ এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে গেলো! কেউ কারো কথা শুনতে নারাজ! কেউ বলে আবার নতুন করে নামায পড়া হোক আবার কেউ বলে ‘সহি’ নামায আবার পড়া নাজায়েয! ইমাম সাহেব গ্যাঁড়াকলে!
এমন সময় মুরুব্বী গোছের ‘সর্বজন-শ্রদ্ধেয়’ এক ব্যক্তি এই গুরুতর সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন! তিনি এসে বললেন, “নামায হয়েছে তিন রাকাত!” ‘চার-রাকাত’-গ্রুপ তার কাছে এ কথার প্রমান চাইলো! তিনি বললেন, “আমার একটা দোকানের হিসাব পাচ্ছিনা!”
“মানে?” সর্বস্বরে প্রশ্নবাণ তার দিকে!
বললেন তিনি, “আমার দোকান চারটা। এশার চার রাকাতে আমার আমার চার দোকানের হিসাব করে ফেলি! কিন্তু আজ মাত্র তিনটা দোকানের হিসাব মিলছে! কাজেই.........!”
অন্য লোকের দোষ দিয়ে আর কি হবে!
এই ব্লগটার আইডিয়া যখন মাথায় এলো তখন আমি জুমু’আর সময় ইমাম সাহেবের ‘ওয়াজ’ শোনার চেষ্টা করছি!
পাদটিকা ১ঃ শাস্ত্রে বলে, নামায প্রত্যেক মুমিন মুসলিমের মেরাজ স্বরুপ!
পাদটিকা ২ঃ ব্লগটার নাম দিতে গিয়েছিলাম...“একটি ভাবগম্ভীর ব্লগ লেখার অপচেষ্টা!”
মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
বুজুর্গ !
-
মানুষ হিসাবে আমি একদম মাঝামাঝি। সুকুমার রায়ের সেই ছড়াটার মত ... “যদি কোন পাজি, বসে ঠিক মাঝামাঝি”! অর্থবিত্তে মধ্যবিত্ত! ‘তারামার্কা’ হোটেলে খেতে যাবার প্লান করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী ‘সঞ্চয় প্রকল্প’ হাতে নিতে হবে, আবার রাস্তাঘাটে কাবাব-বিরিয়ানী দেখলেই পকেটের মূল্যবান ‘কাগজের’ সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে! রাজনৈতিক মতাদর্শেও মধ্যপন্থি! ‘ধর্মহীন মৌলবাদী’ মানে কট্টর বামপন্থি কিংবা ‘ধর্মান্ধ মৌলবাদী’ অর্থাৎ কড়া ডানপন্থি, গোপনে দুইপক্ষকেই কষে গালাগাল দেই...অবশ্য প্রকাশ্যে অত সাহস দেখাতে পারিনা...শুধু এড়িয়ে চলি!
ছোটবেলায় অনেক ধর্মীয় কিতাবাদি পড়েছি। এখন পড়া হয় কম। কত বুজুর্গের আশ্চর্য কারামত পড়ে শিহরিত হয়েছি...নিজেই পীর-দরবেশ-বুজুর্গ হবার বাসনা নিয়ে রাতে শুতে গিয়েছি...আর স্বপ্নে ইবলিশ শয়তানের পিঠে চাবুক চালাতে গিয়ে ‘লেজেগোবরে’ অবস্থায় পড়েছি বহুবার! বড় হবার সাথে সাথে মধ্যপন্থায় দীক্ষিত হলাম। কিছু বিশ্বাস করলাম আবার কিছু একেবারেই উড়িয়ে দিলাম!
কিন্তু নিজের চোখে একজন কারামত-এ-মাওলা বুজুর্গের সাক্ষাতের ইচ্ছা অনেকদিনের! সেদিন বোধহয় এক বুজুর্গের দেখা পেয়েই গিয়েছিলাম!
কাহিনীর খোসাটা ছাড়িয়েই ফেলি...
অফিসে প্রথম মাসের বেতন পেয়ে ভাবলাম, ‘হালকা’ ভারী পকেটটা আরো হালকা করে আসি। বাফ্রুকে নিয়ে গেলাম চয়েস করতে সুবিধার জন্য। আমার কিছুই পছন্দ হলোনা। ফাঁকে আমার প্ররোচনায় বাফ্রুর নিজেরই বড় অংকের টাকা খসে গেলো! :P. ছেলেটা আমার উপর খেপে ফায়ার! হলদেটে ‘মারমা’ মুখটা লাল হবার অবস্থা! যাইহোক মাগরিবের আযান পড়াতে আমি মসজিদের সন্ধানে বেরোলাম। নর্থ টাওয়ারের ৯ তলায় মসজিদ! শবে-বরাতের রাত। লোকসমাগম একটু বেশিই অন্য দিনের তুলনায়। যথানিয়মে নামায শেষ করে পরম-করুনাময়ের কাছে হাত বাড়িয়ে দিলাম যদি ভাগে কিছু জোটে!
ডান কানে ধ্বণীত হলো, “ভাই, আপনার বাড়ি কি কুষ্টিয়াতে?”
ঢাকা শহরে আমার মত ‘কুষ্টিয়ামূল’ তুলনামূলক রেয়ার স্পেসিমেন! তাও আবার এমন জায়গায়?
আমার কোটরাগত অক্ষি ভাসিয়ে তুলে জিজ্ঞাসা করলাম, “আমি কি আপনাকে চিনি?”
“না”
“আপনি আমাকে চেনেন?”
“না, আমিও আপনাকে চিনিনা!”
আমার বুজুর্গ থিওরীতে ক্ষীণ আলোর আভাস! ইচ্ছাপূরণ হতে চললো এতদিনে বোধহয়! কিন্তু তাকে দেখে কিঞ্চিত হতাশ হয়ে গেলাম! ইয়া লম্বা দাড়ির সংগে মাথায় পাগড়ি আর আলখাল্লা না থাকলে কি কাউকে বুজুর্গ বলে মনে হয়!? আমার মত বয়স আর আমার মতই প্যান্ট শার্ট পরা! মুখে দাড়ির ম্যাক্সিমাম দৈর্ঘ্য এক মিলিমিটার হতে পারে! তবুও আশাবাদী মনে অপেক্ষা করে থাকলাম, হয়তো তিনি আরো কিছু বলবেন! আমার আগত-অনাগত ফোরটিন জেনারেশনের কোষ্ঠীঠিকুজী সম্পর্কেও আলোকপাত করবেন!
মুনাজাত শেষ হলো। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে বললেন, “আপনার শার্টের বামপকেটের পাশে কুষ্টিয়ার সবচেয়ে ভালো টেইলরিং শপের ছোট্ট একটা লোগো দেখতে পাচ্ছি!” বলেই তিনি প্রস্থান নিলেন!
ভেবেছিলাম, বুজুর্গ-দর্শন বুঝি এই বেলায় হয়ে গেলো। কিন্তু তার বদলে শার্লক হোমসের মামাতো ভাইয়ের দুই নম্বর শ্যালিকার শ্বশুর বাড়ির তৃতীয় পক্ষের ছোট জামাইয়ের বিদেশী বন্ধুর পাড়াতো ভাইয়ের ভাইরা-ভায়ের দুলাভাইয়ের অষ্টম বংশধরের দেখা পেয়ে গেলাম!