মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

বুজুর্গ !



মানুষ হিসাবে আমি একদম মাঝামাঝি। সুকুমার রায়ের সেই ছড়াটার মত ... যদি কোন পাজি, বসে ঠিক মাঝামাঝি! অর্থবিত্তে মধ্যবিত্ত! তারামার্কা হোটেলে খেতে যাবার প্লান করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় প্রকল্প হাতে নিতে হবে, আবার রাস্তাঘাটে কাবাব-বিরিয়ানী দেখলেই পকেটের মূল্যবান কাগজের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে! রাজনৈতিক মতাদর্শেও মধ্যপন্থি! ধর্মহীন মৌলবাদী মানে কট্টর বামপন্থি কিংবা ধর্মান্ধ মৌলবাদী অর্থাৎ কড়া ডানপন্থি, গোপনে দুইপক্ষকেই কষে গালাগাল দেই...অবশ্য প্রকাশ্যে অত সাহস দেখাতে পারিনা...শুধু এড়িয়ে চলি!

ছোটবেলায় অনেক ধর্মীয় কিতাবাদি পড়েছি। এখন পড়া হয় কম। কত বুজুর্গের আশ্চর্য কারামত পড়ে শিহরিত হয়েছি...নিজেই পীর-দরবেশ-বুজুর্গ হবার বাসনা নিয়ে রাতে শুতে গিয়েছি...আর স্বপ্নে ইবলিশ শয়তানের পিঠে চাবুক চালাতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছি বহুবার! বড় হবার সাথে সাথে মধ্যপন্থায় দীক্ষিত হলাম। কিছু বিশ্বাস করলাম আবার কিছু একেবারেই উড়িয়ে দিলাম!

কিন্তু নিজের চোখে একজন কারামত-এ-মাওলা বুজুর্গের সাক্ষাতের ইচ্ছা অনেকদিনের! সেদিন বোধহয় এক বুজুর্গের দেখা পেয়েই গিয়েছিলাম!

কাহিনীর খোসাটা ছাড়িয়েই ফেলি...

অফিসে প্রথম মাসের বেতন পেয়ে ভাবলাম, হালকা ভারী পকেটটা আরো হালকা করে আসি। বাফ্রুকে নিয়ে গেলাম চয়েস করতে সুবিধার জন্য। আমার কিছুই পছন্দ হলোনা। ফাঁকে আমার প্ররোচনায় বাফ্রুর নিজেরই বড় অংকের টাকা খসে গেলো! :P. ছেলেটা আমার উপর খেপে ফায়ার! হলদেটে মারমা মুখটা লাল হবার অবস্থা! যাইহোক মাগরিবের আযান পড়াতে আমি মসজিদের সন্ধানে বেরোলাম। নর্থ টাওয়ারের ৯ তলায় মসজিদ! শবে-বরাতের রাত। লোকসমাগম একটু বেশিই অন্য দিনের তুলনায়। যথানিয়মে নামায শেষ করে পরম-করুনাময়ের কাছে হাত বাড়িয়ে দিলাম যদি ভাগে কিছু জোটে!

ডান কানে ধ্বণীত হলো, ভাই, আপনার বাড়ি কি কুষ্টিয়াতে?

ঢাকা শহরে আমার মত কুষ্টিয়ামূল তুলনামূলক রেয়ার স্পেসিমেন! তাও আবার এমন জায়গায়?

আমার কোটরাগত অক্ষি ভাসিয়ে তুলে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি আপনাকে চিনি?

না

আপনি আমাকে চেনেন?

না, আমিও আপনাকে চিনিনা!

আমার বুজুর্গ থিওরীতে ক্ষীণ আলোর আভাস! ইচ্ছাপূরণ হতে চললো এতদিনে বোধহয়! কিন্তু তাকে দেখে কিঞ্চিত হতাশ হয়ে গেলাম! ইয়া লম্বা দাড়ির সংগে মাথায় পাগড়ি আর আলখাল্লা না থাকলে কি কাউকে বুজুর্গ বলে মনে হয়!? আমার মত বয়স আর আমার মতই প্যান্ট শার্ট পরা! মুখে দাড়ির ম্যাক্সিমাম দৈর্ঘ্য এক মিলিমিটার হতে পারে! তবুও আশাবাদী মনে অপেক্ষা করে থাকলাম, হয়তো তিনি আরো কিছু বলবেন! আমার আগত-অনাগত ফোরটিন জেনারেশনের কোষ্ঠীঠিকুজী সম্পর্কেও আলোকপাত করবেন!

মুনাজাত শেষ হলো। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে বললেন, আপনার শার্টের বামপকেটের পাশে কুষ্টিয়ার সবচেয়ে ভালো টেইলরিং শপের ছোট্ট একটা লোগো দেখতে পাচ্ছি! বলেই তিনি প্রস্থান নিলেন!

ভেবেছিলাম, বুজুর্গ-দর্শন বুঝি এই বেলায় হয়ে গেলো। কিন্তু তার বদলে শার্লক হোমসের মামাতো ভাইয়ের দুই নম্বর শ্যালিকার শ্বশুর বাড়ির তৃতীয় পক্ষের ছোট জামাইয়ের বিদেশী বন্ধুর পাড়াতো ভাইয়ের ভাইরা-ভায়ের দুলাভাইয়ের অষ্টম বংশধরের দেখা পেয়ে গেলাম!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন