-
*এক*
প্রায় বছরখানেক আগে পাশ করে গেলেও, নজরুল ইসলাম হলের মায়াটা কাটাতে পারিনি এখনও! চান্স পেলেই হলে চলে যাই হলে, আমার পুরনো রুমে। মনে হয়, দুয়েকটা সাবজেক্টে ল্যাগ খেয়ে আরো কিছুদিন ওখানে কাটাতে পারলে বেশ হত!
এক জুনিয়রের সংগে দেখা, “ভাইয়া, কেমন আছেন?”
“ওয়াআলাইকুমুস-সালাম!”, জবাব দিলাম!
“ওহ! স্লালামালেকুম, ভাইয়া!” একটু লজ্জা পেলো বোধহয় ছেলেটা।
খোঁজখবর নিই ওর, “কি অবস্থা তোমার?”
“অদূর ভবিষ্যতে মেধাবী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ আসতেছে!”করুণ স্বরে বলে ও!
“মানে ভালো স্টুডেন্টের মুখে একথা বেমানান, “মানে?!”
“শরীর খুব বেশি ভালোনা! কখন মরে-টরে যাই, তার ঠিক নেই! আর, জানেনই তো, ছাত্র অবস্থায় মরলেই “মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যু”!”
আমি বলি, “অ!”
*দুই*
রিকশাওয়ালা কলিমুদ্দির রোজগার বেশ কম। কিন্তু ও একটু বেশিই খায়!
সবাই ওর দোষ দেখে, “পেটুক”!
শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক নাকি খুবই ভালো খেতে পারতেন।
তিনি ছিলেন “ভোজনরসিক”!
*তিন*
অনেকেই নিজের বাবাকে নিয়ে খুবই গর্বিত! বন্ধুদের কাছে নিজের বাবার এত প্রশংশা!
একসময় বলেই ফেলে, “My father is a hero!”
কিন্তু নিজের ‘মা’ কে নিয়ে কেউই বলেনা, “My mother is a heroine!”
*চার*
একদিন বিকেলে মননকে দেখি মাঞ্জা মেরে কোথায় যেন যাচ্ছে?
কোথায় যাও?
“টিউশনী তে”
“কোন ক্লাসের টিউশনি?”
“HSC দেবে এবার”
“ছাত্র না স্টুডেন্ট?”
“স্টুডেন্ট!”
একটু আগেই জিমওয়ার্ক সেরে বাথ নিয়ে সুগন্ধি মেখে ফ্রেশ হয়েছে সে!
*পাঁচ*
অপব্যবহার ... অপকীর্তি ... অপযশ ... অপবাদ…অপসংস্কৃতি!
উফ! এত ‘অপ’!?
যেকোন বাংলা শব্দের আগে ‘অপ’ বসলেই শব্দটার বারোটা বেজে যায়! নেগেটিভ সেন্স হয়ে যায় শব্দটা!
কিন্তু এমন একটা শব্দ আছে, যেটার আগে ‘অপ’ উপসর্গ লাগালে শব্দটার অর্থটা আরো খোলতাই হয় মানে আরো ভালো হয়!
কে কে জানো, বল তো দেখি?
*ছয়*
ঠান্ডায় সব জমে গেছে!
মস্তিষ্কের কোষগুলোও জমে গেছে! এর চেয়ে ভালো কিছু বেরুলো না মাথা থেকে!
বৃষ্টিতে সব ধুয়ে গেছে!
মাথা থেকে সব বেরিয়ে গেছে! মাথাটা একদম ফাঁকা!
***
শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০০৮
ছয়মিশালি ব্লগ!
রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০০৮
বিয়ে!
বিশেষ করে দ্বিতীয় ‘ওয়েডিং’ টার পর তো মনটা ভীষণ খারাপ!
নিশাতের বিয়ে ছিলো!
একজন আমার এই অবস্থা দেখে থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললো, “তুমি কি ওকে খুব পছন্দ করতে? এজন্য মন খারাপ?!”
আমি চমকে উঠি! এভাবে তো ভাবিনি! হায়রে, কী সব ভেবে বসে আছে সবাই! মন খারাপের কারণ যে অন্য! আগে বুয়েটে মেয়ে ভর্তি হত খুব কম! সবেধন নীলমনির মত! বড়ভাইরা ভয়েই তাকাতো না ‘ওনাদের’ দিকে! কোন এক ‘বুয়েটিয়ান’ বড়ভাই এর ডাইরীতে পড়েছি, তাদের ক্লাসমেট মেয়েগুলোকে “টিচারদের খাদ্য” বলে সম্মান দিতেন তারা! তারা নাকি পাস করেই যেকোন ফাস্ট-সেকেন্ড হওয়া ইয়ং টিচারের গলায় ‘আপোষে’ ঝুলে পড়তো! কিন্তু এখন মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বুয়েটে! পুরনো ফরমুলা ফলছে আবার ... “কোয়ান্টিটি বাড়লে কোয়ালিটি কমে”! তাই এখন আর সবার জন্য টিচার-পাত্র ‘সুলভ’ নয়! কিন্তু অনাবাসী পিএইচডি ধারীরা হাতের নাগালে এখনও! দেশে আসে ছুটিতে আর ‘ছোঁ’ মেরে নিয়ে যায়! আর ‘বেবাক মাইয়াগুলান’ এর নজর ও মাশাআল্লাহ খুবই উঁচা! বিয়ে করতে গেলে পিএইচডি পাত্র মোটামুটি প্রি-রিকুইজিট! আর আমার মত ক্লাসে ‘পোলাগুলান’ চাকরী বাকরী নিয়ে হয়রান! নিজেদের গার্লফ্রেন্ড গুলারে ঠিক মত গিফট দিতেও পারছেনা অনেকে! মেসের মিল-রেট বেড়ে গেছে। কারণ চালের দাম আকাশ পাড়ি দিয়ে এখন মহাশুন্যগামী! মানিব্যাগের ওজন যে কম! আমার অবশ্য ওইসব হাংগামা নাই! কিন্তু, আমারও যে পিএইচডি বিয়ে করতে ইচ্ছা হইতেছে একটু একটু! জ্ঞানের আলোয় ঘর আলো করে রাখবে সে! আলোকিত ঘরে ইলেক্ট্রিসিটি বিল কম! তাই, সম-অধিকারের এই যুগে ওরা পিএইচডি ‘hubby’ পেলে আমরা কেন পিএইচডি ‘honey’ পাইনা! so sad! একই ক্লাস থেকে পাস করে একই ডিগ্রী পেলাম সবাই! তারপরও...!?
দুপুরে ইশতিয়াক বেচারা ফোন দিয়েছিলো। বেচারা! তার জব ঢাকার বাইরে! এইখানে কি ঘটে সেই সবের সাথে আপটুডেট থাকতে পারেনা প্রায়ই! আমই ওর বিবিসি, “খবর কি কও”
বললাম, “মাইয়াগো বিয়া হইয়া যাইতেছে! আর আমাগো টাক পইড়া যাইতেছে”
ইশতি ও আমার মত একই গোয়ালের গরু! আমার দুঃখ ও বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে!
“কার কার বিয়ে হলো?”, অনুসন্ধিতসু ইশতিয়াক
সঠিক জবাব, “রোল ১ আর রোল ০০-৬০ এর!”
“হমম! বাকি মেয়েদের কি খবর? ওদের বিয়েটিয়ে হবেনা?” আরো গভীরতর অনুসন্ধান ওর!
“আহা! বিবাহ একপ্রকার সংক্রামক ব্যাধি বিশেষ! বাকিদেরও খুব শীঘ্রই হবে” মতামতের মোড়ক খুলি আমি!
“বিয়ের মড়ক লেগেছে!” ফোন রাখার আগে এই ব্যাপারে ইশতিয়াকের শেষ মন্তব্য!
এই ব্লগটা ৩৬০ এর ‘প্রয়াত-সৈনিক’ দের প্রতি উতসর্গকৃত !
শুক্রবার, ৪ জানুয়ারী, ২০০৮
রুটি
-
রাস্তাঘাটে বের হলেই মোড়ে মোড়ে ‘দরবারে-মা-শেফা’ কিংবা ‘খাজাবাবা আজমিরী’ এ ধরণের অনেক রকম সাইনবোর্ড ই নজরে পড়ে! কী হয় ওখানে? আবার বোরখাপরা মহিলারা বাসের জানালার ভিতর দিয়ে যাত্রীদের সিটের উপর ছুঁড়ে মারে অনেক কেরামতি- প্রতিশ্রুত কাগজগুলো! প্রথম প্রথম ভয় পেতাম খুব! তখন আবার বোমাবাজির মৌসুম ছিলো কিনা! তাই কাগজ ছুঁড়ে মারার ভঙগীতে চমকে উঠতাম, যেন গ্রেনেড ছুঁড়ে মারছে! বিচিত্র সব সমস্যার আরো বিচিত্র সমাধান ওইখানে! কিছুদিন গভীর আনালাইসিস করে দেখলাম, সবাই একই রকম সমস্যার সমাধান করে! শুধু ব্রান্ড আলাদা!
কেউ কেউ একবাক্যে সব বিশ্বাস করে।
আবার কেউ কেউ একবাক্যে সব অবিশ্বাস করে।
আমি পড়ি বিপদে! বিজ্ঞানের ছাত্র। বিজ্ঞানে এই সব বুজুরুগি বিশ্বাস করেনা। পুরাপুরি যে অবিশ্বাস করে, তা নয়। বিজ্ঞানের মধ্যেও ভাঁওতাবাজি আছে! ফুটনোট পাওয়া যায় বেশ। ‘সাইকোলজীকাল ট্রিটমেন্ট’ কিংবা ‘টেলিপ্যাথি’...এইসব শব্দ/শব্দগুচ্ছের সহমূল সায়েন্স এর ভিতরই!
আমার পাশেই একজন থাকেন যিনি এ ধরণের কাজে ‘proসিদ্ধ’-হস্ত!
তথাস্তু..তার কাছেও এই ধরণের অনেক মক্কেল আসে! তিনি কি কি বিষয়ে এলেম দান করেন? যেসব বিষয়ের ক্যাপসুল-ট্যাবলেট বাজারে সুল্ভ না...সেই সব বিষয়েরই! তবে সেই সব লিস্টি ‘ঊদগীরণ’ করে বিরক্তি উতপাদন করার ‘সদিচ্ছা’ আপাতত আমার নাই এখন! সাম্প্রতিক একটা ঘটনা আমার কানে এলো। এক ‘আম-পাবলিক’ তার কাছে এসেছে চোর ধরার জন্য! চোর ধরার সহজ সলুশন হলো, সন্দেহভাজন মানুষদের একটা তালিকা তৈরী...তারপর সেই তালিকায় দো’আ তাবিজের প্রয়োগ! এবং থানা-পুলিশের-আদালতের গুরুভার লাঘবকরণ! জনাচল্লিশেক রুটি নিয়ে বাদী হাজির! চল্লিশ-সন্দেহভাজন! প্রত্যেকের ভাগে এক-পিস করে। রুটিগুলোর উপর কী সব যেন লেখা...! অকাট্য সমাধান...যে চোর, সে এই দোয়া-কালামের রুটি ‘ফাস্টোকেলাস’ জ্যামজেলি দিয়েও গিলতে অক্ষম...!
দু’দিন পর উনার হাতে নতুন মোবাইল...
চোর ধরা পড়েছে...এভাবেই...! ফলশ্রুতিতে সামান্য কিছু উপঢৌকণ দৃশ্যমান...!
***
ভাগ্যিস, ওই রুটি আমাকে খেতে বলা হয়নি!
আমার গলায় বেধে যেত নিশ্চিত!
আমি-ই হতাম চোর।
লোকে বলে, আমার নাকি ‘রসকষ’ একটু কম! আমি অতিসাধারণ ‘রাইস-ইটিং’ বাঙালী! স্বাভাবিক সময়েই আমার গলা দিয়ে মোলায়েম রুটিও নিচে নামতে চায়না!
আর ওইরকম ‘টেনশিত’ মুহুর্তে রুটি গিলতে হলে?!
“ধর, বেটারে ধর!
কইষা বাইন্ধা চড়!”