শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০০৯

টনক

সন্ধ্যাবেলায় মায়ের সাথে গল্প করছিলাম। সাম্প্রতিক পড়া বা শোনা কোন হালকা চালের গল্প কিংবা অন্য কোন চমকপ্রদ ঘটনার সাথে মায়ের ঘর গেরস্থালীর ‘সাজানো-গোছানো’ গল্পগুলো বেশ ভালোই মিশ খায়। বরাবর যেটা করি, কৌতুকপূর্ণ কাহিনীর প্রাধান্য টানি আড্ডায়। সবধরণের শ্রোতার হাসি সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে হয়। :) ক্ষেপাতেও মন্দ লাগেনা। :P ‘সর্দারজী’ আমার বেশ প্রিয়। আজও ঘোর লাগা সন্ধ্যায় তাকেই স্মরণ করছিলাম। প্রচলিত একটি ম্যাগাজিনের ঈদ সংখ্যায় তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি কৌতুকপূর্ণ গল্প ছাপা হয়েছে।

মানুষের ‘মৃত্যু’ বা বড় ধরণের কোন ‘ক্ষতি’ সংক্রান্ত কৌতুকগুলোকে বলে ‘সিক জোকস’। গভীর হিউমারে পরিপূর্ণ সেরকম-ই একটা আওড়াই,

জাহাজ ডুবছে। যাত্রীরা সব ছোটাছুটি করছে, কাঁদছে, চিৎকার করছে, স্রষ্টার নাম নিচ্ছে।

এমন সময়, নিস্পৃহভাবে সর্দারজীকে বাদাম চিবুতে দেখে এই ইউরোপিয়ান যাত্রী তাকে জিজ্ঞাসা করলো, “এখান থেকে মাটি কতদূর?”

সর্দারজী বললেন, “দুইমাইল”।

ইউরোপিয়ান অবাক হয়ে বললেন, “মাত্র দু’মাইল? তার জন্য এত হইচই কেন? দু’মাইল তো সাঁতরেও যাওয়া যায়। যতসব আহাম্মক ভ্রমণকারী! আমি তো টানা পাঁচ মাইল সাঁতার কেটেছি।”

সর্দারজী বললেন, “তাহলে তো কথাই নেই।”

সর্দারজী বাদাম হাতে করে রেলিং পর্যন্ত গেলেন। আর সাঁতারু ডাইভ দিলেন মহাসাগরে।

একডুব দিয়ে তার মনে হলো, ডিরেকশনটা তো নেয়া হয়নি। তিনি চেঁচিয়ে সর্দারজীকে জিজ্ঞেস করলেন, “দু’মাইল এখান থেকে কোনদিকে?”

নির্বিকার সর্দারজী বললেন, “নিচের দিকে!”


মা’দের মন নরম। হেসে ওঠার পাশাপাশি তলিয়ে যাওয়া মানুষের জন্য মন খারাপ করে ফেলে। অথচ, আমরা আধুনিক মানুষেরা এ সবে মজা পাই! ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করা মানবমৃত্যুর ‘লাইভ’ দৃশ্য ‘উপভোগ’ করি। শরীরের বেশিরভাগ অংশ উড়ে যাওয়া আত্মঘাতি মানুষটির বিভৎস ছবি দেখে ‘পুলকিত’ হই। মৌখিক স্বীকারোক্তি-তে অসম্ভব রকমের দ্বিধা থাকলেও, এক ধরণের অনির্বচনীয় আনন্দ উপভোগ করি প্রায় সবাই। খবরের কাগজের প্রধান শিরোনামে ‘এইগুলো’ বড় ‘ফন্ট’ পায়। সংবাদপাঠক এগুলোকেই সবার আগে বলে। চাহিদা আর যোগান এর মহাজাগতিক সম্পর্কটা যেন সবাই জানে!

“মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে, কেউ এমন শান্তভাবে কথা বলতে পারে?” মা কৌতুকটার ব্যবচ্ছেদ করে।

কে যেন বলেছিলো, “রসিকতা হলো সিরিয়াস কিছু বলার সবচেয়ে ভালো উপায়!” কৌতুকের কাটাছেঁড়ায় তাই বেরিয়ে পড়ে অনেক সময় অদ্ভুত সব সত্য!

“পারে তো,” – আমি বলি, “আমরা নিজেরা-ই তো তাই ...”

“মানে কী?”... মা আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেনা।

“এই যে, ভূমিকম্পের ভয়াবহ আশঙ্কার মুখে দাঁড়িয়েও আমরা নির্বিকার রয়েছি। আড্ডা দিচ্ছি। একটা কৌতুকও বললাম তোমাকে। তুমিও হাসলে...” আমার দুইপয়সার তত্ত্বকথার ঝনঝনানি ভালোই বাজে।

মা অবাক হয়েও, আমার কথা মেনে নেয়!


ভূমিকম্পে সব নড়ে। বাড়ি-ঘর-গাড়ি-রাস্তা সব নড়ে। এমনকি পুকুরও নড়ে!

নড়েনা শুধু আমাদের ‘টনক’!


স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ ও দূর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিয়ে তেমন কোন গা নেই কারও। আমারও।



পুনশ্চঃ

১. আমাদের দেশের পটভূমিতে, ভূমিকম্প ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি স্বাস্থকর আলোচনা আছে এখানে।
http://www.sachalayatan.com/tanveer/17193

২. অভিধান না দেখে বলুন তো, ‘টনক’ মানে কী?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন