-
পাশ-টাশ করে সবাই কি করে? Job এ ঢোকে।
সবার মত আমি ও চাকরীতে জয়েন করলাম সময়মত। তবে আমার কাজটা অন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়ে একটু আলাদা। আমেরিকা থেকে Email Attachment মাধ্যমে Project আসে, আর সেটা টাইমলি complete করে আমরা পাঠিয়ে দিই আবার ওখানে। কাজের প্রেশার একেবারে কম নয়! যখন Project সাবমিশনের ডেডলাইন ঘনিয়ে আসে, তখন নাক-মুখ গুঁজে কাজ করি নিজের ডেস্কে! কিন্তু অন্য সময়?
অনেকের হাতে কাজ থাকলেও, এই অক্টোবর মাসে আমার কাজের চাপ একদমই নেই! সকালে অফিসে যাই ... সারাদিন ঝিমাই ... আড্ডা দেই ... ঝিমাই ... মাঝে মাঝে মোবাইল দিয়ে ইয়াহু মেসেঞ্জারে ঢুকি ... অফিসের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি ওইটা ‘স্লো’ চলছে কিনা... এভাবেই চলছে! অবশ্য সময় কাটানোর জন্য অনেকের অন্য পদ্ধতি আছে... পিসিতে ‘Snooker-147’ খেলা। কিন্তু এই ব্যাপারটায়... অফিসে এনভাইরোনমেণ্টে আমার সাহসের ব্যারোমিটারটা খুব বেশি উপরে ওঠেনা! কিন্তু অবশেষে কাজ না পেয়ে আমিও... ‘কাঁছাখোলা’ অর্থাৎ গেমারুদের দলে যোগ দেবার প্রস্তুতি নিলাম।
আর্জি পেশ করলাম, "ভাই, আমি ও খেলবো!"
"যাও যাও, আগে বাছাই পর্ব পার হয়ে এসো। তারপর আমাদের সাথে খেলতে এসো!" জবাবটা যিনি দিলেন, তিনি সবার কাছেই বিপুল ব্যবধানে হেরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন!
"প্লিইইইজ ...আপনি কত ভালো... মাত্র একবার খেলার সুযোগ দিন...", অযাচিত তেল মালিশ করি।
সুযোগ মিললো! আর দু’দিনের মধ্যেই ‘Defending Champion’ কে "অফিস রেকর্ড" ব্যবধানে হারিয়ে দিলাম! কিন্তু ব্যাপারটা বোধহয় ভালো হলনা। বাকি সবাই অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাকে বয়কট করলো Snooker-147 খেলা থেকে! আবার আমি বেকার!
তারপর?
আমার ‘নমস্য’ সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, "যে বাঙালী আড্ডা দিতে জানেনা, তার জন্ম পরিচয়কে আমি সন্দেহের চোখে দেখি"! তাই একপ্রকার ‘বাধ্য’ হয়েই ... ধুমায়িত চায়ের কাপে আড্ডা জমাই আবার!
আমাদের মধ্যে অরুপ আবার Career নিয়ে খুবই চিন্তাশীল! সবরকম খবরাখবরই ওর কাছে ‘বরফ দেয়া ইলিশের’ মত টাটকা! কী করলে কী হবে...কোন চাকরীর বেতন ভালো...কোন কোর্সে কী সুবিধা... ইত্যাদি ইত্যাদি!
সেদিন হঠাত অরুপ কথা তোলে, "আসো আরাফাত, সবাই মিলে বাপের জায়গা জমি সব বিক্রি করে টাকা পয়সা দিয়ে একটা হাইফাই-লেটেস্ট-দামী Mercedes গাড়ি কিনি!"
"কিনে? তারপর?" আমি আশ্চর্য!
"কিনে বিজনেস শুরু করি", অরুপ বলে।
"একটা গাড়ি কিনে গাড়ির ব্যবসা?" আমি আরো সন্দিহান।
"ধুর, তুমি কিছুই বোঝনা! গাড়ি কিনে ভাড়া দেবো। যারা নতুন বিয়ে করতে যাবে, তাদের কাছে গিয়ে বলবো...", অরুপের চোখে সোনালী ভবিষ্যতের আভা, "ভাই, জীবনে তো বিয়ে একবারই করবেন। ফাটাফাটি রকম একটা গাড়ি চড়ে বিয়েতে গেলে কেমন হয়? নেন ভাই নেন, আমার এই Mercedes গাড়ি। বুড়ো বয়সে নাতি নাতনীর কাছে গল্প করতে পারবেন! ...আমাকে একটু খুশি করে দিলেই চলবে...!"
এই কথা শুনেই আমার আশা-ভরসার ল্যাম্পুর তেল শেষ হয়ে যায় নিমেষে!
"আরে, তুমি বুঝলেনা!" অরুপ হতাশ হয়, "আমি বলে রাখলাম, আজ থেকে ৫ বছর পর ঢাকা শহরে কেউ না কেউ এই ধান্ধায় নেমে অনেক টাকা কামাবে! তখন তুমি বলবে ... ইশ! এই অরুপ একদিন তোমাকে একজন সফল বিজনেসম্যান হবার বুদ্ধি বাতলে দিয়েছিলো। তখন... It’s too late! "
কিংবা আবার গত পরশু বিকালে...
"নাহ, আরাফাত! চাকরী-বাকরী করে কিছুই হবেনা। Business is the root of all উন্নতি! এমন ব্যবসা করতে হবে, যেন নিজের পকেটেও পয়সা আসে, আবার দেশ-দশের উপকারেও আসে। "
এইবার আমি একটু উতসাহ বোধ করি!
"আমাদের দেখে লোকে বলবে, দেখো দেখো !!...আমাদের সোনার ছেলেরা...আমাদের অরুপ...আমাদের আরাফাত...আমাদের প্রমথেশ...আমাদের......!"
আমাদের নিচতলার রুমটাতে দোতলার ‘চিরসুখীজন’ রহিম ভাই এর অনুপ্রবেশে অরুপের স্বরভঙ্গ ঘটে! কিন্তু এবার ‘বাঁশঝাড়-সমান উচ্চতার’ উতসাহ আমার মধ্যে, "রহিম ভাই! যোগ দেবেন নাকি আমাদের সাথে?"
"কি করতে চাও?" রহিম ভাইয়ের আগ্রহের মাত্রাটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা।
"এমন কিছু করতে চাই যেন ..."
"দেশের আর দেশের মানুষের উপকার হয়?" কথা কেড়ে নেন রহিম ভাই!
খুশিতে সাড়ে আটখানা হয়ে উঠি, "ঠিক, আপনি তো না বলতেই আমার মনের কথা ধরতে পেরেছেন। আপনি আসলে মেগা-BOSS! বলেন তো কি করা যায়?" এবার উতসাহের মাত্রাটা আকাশের প্লেনটা ছুঁয়ে যায়!
"সত্যিই মহতী কিছু করতে চাও?" রহিম ভাইয়ের সন্দেহ দেখে আবার শংকিত হই।
"হ্যাঁ", আমি পজিটিভ।
"তাহলে মরে যাও!", এক ঝটকায় রহিম ভাই আমাদের হৃদয় ভেঙেগ দেন, "তোমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ভালোই ধারণা আছে। কিছুই করতে পারবেনা! বরং তার চেয়ে মরে গেলে, বেঁচে যাওয়া অক্সিজেন-খাবার দিয়ে আরো কিছু লোক ভালো ভাবে বাঁচতে পারবে! এটাই হবে দেশের আর সমাজের জন্য তোমাদের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ!"
আশার বেলুনটা চুপসে যায় তখনই।
কিন্তু...বেলুনটা কষ্ট করে আবার ফুলিয়েছি আমরা...বিশেষ করে অরুপ...! But we are short of ideas, right now! আছে কি তেমন যুতসই আইডিয়া তোমার কাছে?
শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০০৭
উদ্যোগ!
রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০০৭
ভালো কাজ!
-
ভালো ভালো কাজগুলো কি সবসময় করা ভালো?
রাস্তাঘাটে বেরুলেই নিঃস্ব মানুষগুলোকে সাহায্য করা নিঃসন্দেহে একটা ভালো কাজ! অনেকেই তাই ভিখারীর ধাতব থালার উপর দুটো পয়সা ফেলার শব্দের সাথে বেহেশতী দরজার তালা খোলার শব্দের মিল খুঁজে পান! আমিও ভিক্ষা দিই! তবে একবার, সত্যিকারের অভাবী একজনকে কিছু দান খয়রাত করার পর দেখি কোথা থেকে যেন মূহুর্তেই এক ঝাঁক ‘প্রফেশনাল’ ভিখারী এসে আমাকে ঘিরে ধরলো প্রবল আক্রোশে! প্রাণ-মান বাঁচাতে লেজ তুলে পালানোই ছিলো সে মুহুর্তের অবশ্য কর্তব্য কাজ!
কিংবা ইবাদত-বন্দেগী বা পুজা-অর্চনা-প্রার্থনা ভালো একটা পদক্ষেপ! কিন্তু সবসময়?১
আমার তাই ধারণা ছিলো...কিন্তু সর্বশেষ রোজার মাসে একটা ছোট্ট ঘটনায় আমার একটু মতিভ্রম ঘটলো!
রোযার শেষ দিকে। রোযা রাখার ফলে মনে ক্রমশ ‘ঈমানী-জোশ’ ফিরে পেলেও শেষের দিকে এসে অনেকের শরীরে দূর্বলতা চলে আসে। এবারতো ছিলো আবার প্রচন্ড গরমের মৌসুম! দুয়েকদিন তো আমার নিজেরই হাঁসফাঁস করতে হয়েছে রোদে পুড়ে পানির পিপাসায়! আধাঘন্টা আগে থেকেই ইফতারী সাজিয়ে বসে থাকি। মসজিদ থেকে আজান ভেসে এলেই শাস্ত্র মোতাবেক দ্রুত রোজা পূর্ণ করি!
সেদিনও বসে আছি ইফতারীর আয়োজন সামনে রেখে। হাদিসে বলে, ইফতারী সামনে বসে থাকাটা অত্যন্ত মূল্যবান সময়। এ সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দোয়া কবুল হয়। তাই অনেকেই আমরা জিকির-আযকার করে সময়টা গুজরান করি। বাইরের পরিবেশটা তখনও আলোকিত সেদিন। ‘কমনসেন্স’ এপ্লাই করে বুঝলাম ইফতারীর এখনও মিনিমাম ১৫ মিনিটের উপর বাকি! চুপচাপ দোয়া কালাম পড়তে থাকি।
এমন সময় আজান!
পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে তাকাই ঘড়ির দিকে! পাক্কা ১৫ মিনিট বাকি! অন্য ঘড়ি দেখি...ওইটাও বলে, এখনও ১৫ মিনিট সবুর করো। তৃতীয় ঘড়ি? সেটাও একই সুরে কথা বলে! সব ঘড়ি একসাথে নষ্ট হলো? আজব! মুখে পানি দেবো? কিংবা খেজুর?
কিন্তু কারোরই সাহসে কুলোয়না! আমরা বিভ্রান্ত অথচ ব্যতিব্যস্ত! ইফতারী দেরী করে করাও ভালো কাজ নয়! সময় হলেই তাড়াতাড়ি করে ফেলাই সুন্নাত! কিন্তু এ সিচুয়েশন যেন ‘কান্ডজ্ঞান’ এর সাথে শাস্ত্রের মুখোমুখি বিরোধ! যেটা মোটেও হবার কথা নয়!
ব্যাপার কি? খোঁজ খোঁজ খোঁজ! শেষটায় তদন্তে জানা গেলো...নিচের তলায় এক ‘গুণী’ সে সময় জোর গলায় আজান দেয়ার প্রাকটিশ করছিলেন!
আর এ কাজে তিনি সময়টা বেছেছিলেন চমতকার!
***
পাদটিকা ১- স্বয়ং খোদাতা’আলা ও দু’টি বিশেষ সময়ে নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন... সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তে!
পাদটিকা ২- “ঈদ মুবারক”
শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০০৭
স্মৃতিভ্রংশ!
গুটিকয়েক বন্ধু ছাড়া স্কুল কলেজের বন্ধুদের তেমন খোঁজ খবর নেইনা, এমন অপবাদ আমার আড়ালে আবডালে সবসময়ই দেয়া হতো! কিন্তু এখন আর সে বদনাম নেই! কারণ ওদের খোঁজখবর না নিতে নিতে ওরা একরকম ভুলেই গেছে যে আরাফাত নামে কেউ একজন ছিলো!
অথচ বুয়েটের প্রতি অনুভূতিগুলো খুবই একচোখা-অদ্ভুত! এখানকার প্রায় সবকিছুই ভালো লাগে আমার! যে কাকটা আমার জন্য গাছের ডালে দাঁড়িয়ে তার ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নিয়ে অপেক্ষা করে... বিশেষ বিশেষ সময়ে তাকেও ভালো লাগে! ক্লাসের যে ছেলেটাকে দেখলেই হাতটা নিশপিশ করে উঠতো, পাস করে যাবার পর, তাকে দেখলেই বুকে জড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে, “দোস্ত, তোকে খুব মিস করছি!”
আর যে মেয়েটার সাথে ৮ সেমিস্টারে মাত্র দু’বার কথা হয়েছে, এখন তার সংগে নেটে বা বাস্তবে দেখা হলে ‘কন্যাদায়গ্রস্থ ক্লাসমেট’ হিসাবে তার কাছে আক্ষেপমিশ্রিত-দুঃখ প্রকাশ করি আর উপযাচক হয়ে তার জন্য ঘটকালি করে শুরু করে দেই!
কিন্তু মেয়েটা ভেবে বসলো, আমিই বুঝি ঘটক কাম পাত্র! তাই শঙ্কিত অথচ তড়িত জবাব দিলো, “But the groom is not of my religion!”
আমি তাকে আশ্বস্ত করি, “I am not going to violate the innate right of my Hindu friends! There are lots of handsome Hindu guys around here who feel their heartbeats as they look at you! So it appears to a ‘Multiple Choice Question (MCQ)’ for you! Choose the best and right one!”
কথাবার্তা এতক্ষণ ইংরেজিতেই হচ্ছিলো! কিন্তু ভাব প্রকাশে এবার বাংলার সাহায্য নিতেই হলো তাকে, “কার পাল্লায় পড়লাম রে, বাপ!”
তবুও এই রহস্যময় ঢাকা শহরের পথে প্রান্তরে খুলনার সেই হারিয়ে যাওয়া পরিচিত মুখগুলোর মধ্যে দুয়েকজনের সাথে কখনও-সখনও দেখা হয়ে যায়। কিন্তু আমার দূর্বল স্মৃতিশক্তি তখনই খেই হারিয়ে ফেলে! যদুকে মধু ডাকে, মধুকে কদু আর কদুর জন্য বরাদ্দকৃত নাম থাকে যদু! কিংবা কোন নামই মনে থাকেনা! প্রায় ক্ষেত্রেই পুরনো বন্ধু আমার নাম ধরে সম্ভাষন জানালেও আমি ভাববাচ্যে কথা বলতে একপ্রকার বাধ্য হই! স্বভাবত কেউই আমার দূরাবস্থাকে আমলে না নিয়ে আমার সম্পর্কে ভাবে, ছেলেটা অহংকারে মাটি থেকে পৌণে তিন ইঞ্চি উপরে দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু আমি নিরুপায়! ইরান-তুরান-আফ্রিকার জাতীয় ইতিহাস আমার নখদর্পণে থাকলেও মানুষের নাম মাথা থেকে খুব সহজেই বাষ্পীভবণ হয়ে যায়!
এই তো সেদিনও, সাইফুর’স, মৌচাক শাখায় কোচিং করতে গিয়ে... খুলনায় আমার সংগে কলেজে পড়া এক মেয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো।! ভয়াবহ প্রমাদ গুনলাম! যথারীতি নামটা মনে নেই!
আমাকে দেখেই উচ্ছসিত হয়ে বললো, “আরে! আরাফাত যে! কেমন আছো? কতদিন পর দেখা তোমার সাথে! ৬ বছর, না? খুলনায় যাওনা আর, আরাফাত?”
স্মৃতিভ্রংশের আবর্তে পড়া আমার জবাবগুলো এরকম, “এইতো, তুমি? হ্যাঁ, অনেক দিন পর। খুলনায় যাইনা! আচ্ছা, ক্লাস শেষে কথা বলি!”
ক্লাস শুরু হলো। কিন্তু মনোযোগ গোল্লায় গেলো! “কি নাম তার...নাম কি তার...!” মাথার উপর হাতের তালু দিয়ে বিভিন্ন এংগেলে মৃদু আঘাত করেও মাথাটা খুললোনা! মরচে পড়া তালার মতোই আটকে থাকলো! অবশেষে স্মৃতিশক্তির সাহায্যে নাম উদ্ধার প্রকল্পে ব্যর্থ হয়ে চিন্তাশক্তির দ্বারস্থ হলাম! একেবারে নিচ্ছিদ্র পরিকল্পনা! বুয়েটেরই কোন এক বন্ধুকে মেয়েটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো…. এভাবে, “এ হলো আমার বুয়েটের ফ্রেন্ড আর এ হলো আমার কলেজ ফ্রেন্ড। এবার তোমরা পরস্পর পরিচিত হও!” হমমম...নিজের নাম বলতে বাধ্য হবে মেয়েটা...এইবার! নিশ্চিত! এই ‘চমতকার’ পরিকল্পনা নিজের মাথা থেকে বের হওয়ার খুশিতে নিজের পিঠ চাপড়ে নিজেরই বাহবা দিতে ইচ্ছা হচ্ছিলো!
কিন্তু...ক্লাস শেষে হাতের নাগালে বুয়েটের কাউকেই পেলাম না!
তাই সেদিন কোনরকম মেয়েটাকে পাশ কাটিয়ে বাসায় এসে বিভিন্ন সুত্র ধরে নাম উদ্ধারের চেষ্টায় নামলাম! এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না! “এক দফা এক দাবী, বন্ধুদের নাম তুই মনে রাখবি!” অনেকক্ষণ পর খুশিতে আলোকিত হয়ে উঠলাম! ইউরেকা ইউরেকা...বুম বুম চেকা চেকা!
পরের দিন ক্লাসে... আমিই আগে কাছে এগিয়ে গিয়ে দন্ত বিকশিত করে বললাম, “কি খবর, দোলা? কেমন আছো?”
জবাবটা ছিলো মর্মান্তিক, “আমার নাম কেয়া!”
শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
গোছগাছ!
পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে! তালে তালে মেয়েরাও এগিয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালী ছেলেরাও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার অস্থির গতি দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে! বিহবলতা কাটলেই আবার ‘দৌড়ে’ ফিরে আসবে! ছেলেদের একান্ত জগতটা ক্রমশ হাতছাড়া! সবকিছুর স্বাদই মেয়েরা নিয়ে নিচ্ছে। বিজ্ঞাপণেও তাই মিনমিনে পুরুষকন্ঠের পাশে জোর মহিলা কন্ঠ হাঁক দিয়ে ওঠে, “স্ট্যান্ডার্ড লুঙ্গি, আসল লুঙ্গি!” কিন্তু অপরপক্ষে? না থাক...আমার ‘বাক স্বাধীনতা’ মুখ থুবড়ে পড়ুক এইবার!
তবে ভাবতে ভালো লাগে... মেয়েরা এখনও তাদের সবটুকু সহজাত বৈশিষ্ট্য ছেড়ে ‘জাতে’ ওঠেনি! একালেও ঘর গোছানোর দ্বায়িত্বটা মা-বোনের উপরই ছেড়ে দিই। জানি, আমার ‘কর্মদক্ষতার’ অসীম প্রয়োগেও...তাদের মত চমতকার ভাবে কখনই সাজাতে-গোছাতে পারবোনা! সব মেয়েই কিভাবে যেন এটা আয়ত্ত করে ফেলে! আমার বোনের পরিপাটি গোছানো ঘরটা দেখলে খুবই সাবধানে নড়াচড়া করতে ইচ্ছা হয়...মনে হয় আমার মুহুর্তের অসাবধান অসতর্কতায় সাজানো বাগানটা নিমেষেই ধসে পড়তে পারে!
তাই অগোছালো রুমই আমার জন্য ভালো। বাসায় থাকলে... মা যখন আমার এলোমেলো খাতাপত্র দেখতেন, তখন আর স্থির থাকতে পারতেন না! নিমেষেই সাজিয়ে সেটাকে ফুলের বাগান বানিয়ে ফেলতেন! কিন্তু অর্বাচীন আমি গোছানো খাতাবইয়ের মাঝে কখনই প্রয়োজনীয় নোটটা সময়মত খুঁজে পেতামনা! তাই মা’কে ডেকে হয়তো ফিজিক্স নোটটা খুঁজে পেতে হত!
হলে এসে অবাধ স্বাধীনতা! খাটের নিচে চার বছরের জঞ্জাল একবারে বিদায় হয় যখন পুরনো কেউ চলে গিয়ে নতুন কেউ আসে। আবার সে চলে গেলে আবার নতুন কেউ এলে! ডাল-চচ্চরির মত বই-খাতা এলোমেলো পড়ে থাকে। তার মাঝেই সঠিক সময়ে সঠিক জিনিষটা খুজে পেয়েছি! বিছানায় শুয়ে থাকলে মাকড়সার জাল চোখে পড়ে! কত সুন্দর মাকড়সা! আসলে সৌন্দর্য্য-পিয়াস এর বালাই টালাই নেই। আলস্যে ওগুলো পরিষ্কার করতে ইচ্ছে হয়না, তাই! ঘরদোর ঝাড়ু দেবার জন্য মোখলেস ভাই প্রতিদিন সকালে আসেন। ঘুমিয়ে থাকতাম! দুই-এক ঘা ঝাঁটার বাড়ি দিয়ে তার কাজ খালাস! কিছুই মনে করিনি!
আবার, শ্বাসের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি দলবেঁধে! ডাক্তার রুম পরিষ্কার করার পরিষ্কার উপদেশ দিতেন! ‘বুয়েট পাশ করা ডাক্তার’ বলে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছি!
একবার তাই উপদেশ মত ইশতিয়াক তার রুম পরিষ্কার করলো, ঘন্টাখানেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে! সব শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বারান্দায় হাত মুছছিলো সে...তখন দেখে... বুয়েটের একজন ডাক্তার তার পাশের রুম থেকে বের হচ্ছেন! কৌতুহলী ডাক্তার ওর রুমে ঢুকেই ছিটকে বের হয়ে আসলেন…
“এমন অপরিষ্কার রুমে মানুষ থাকলে, সে তো দুইদিনেই অসুস্থ্য হয়ে পড়বে!”
‘আক্কেলগুড়ুম’ ফেল অন ইশতিয়াক!
তবুও তখন আমরা বলতাম, “এই বেশ ভালো আছি!”
শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
ছাগল!
-
আমি একটা আস্ত ছাগল...কিংবা আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে... রামছাগল, ভদ্র ভাষায় যমুনাপাড়ি! বিশাল আকারের যেসব স্বাস্থ্যবান কালচে-দাড়ি বিশিষ্ট ছাগল দেখি... যেগুলোকে ইংরেজিতে বলে ‘ব্লাক-বেংগল-গোট’, সেগুলোকে সাহিত্যমনষ্ক প্রাণিবিদেরা (ছাগলবিদ?) নাম দিয়েছেন যমুনাপাড়ি! আর ছুটিতে বাড়ি যেতে হলে আমাকে তো যমুনা পাড়ি দিতেই হয়!
নিজের ছাগলামীর কাহিনী লুকোছাপা করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি ‘ব্লাক বেংগল গোট’ এর নামভূমিকায় আছি … তাই প্রানবন্ত অভিনয় করে যাওয়াই ভালো। ভাগ্য ভালো থাকলে কিছু ফ্রেশ কাঁঠালপাতাও জুটে যেতে পারে!
ঘটনাটা আমার এক পুরনো বান্ধবীকে নিয়ে। আগেই বলে দেই, তিনি কিন্তু ছাগলিনী নন। উচ্চ পর্যায়ের মনুষ্য-শ্রেণীরই একজন! বুয়েট লাইফের শেষে এসে তিনি মনের দুঃখে বলেছিলেন, তাকে সবাই ভুলে যাবে! আমিও ধনুকের মত লাফিয়ে উঠে প্রকৃত বন্ধুর ইমোশন ফুটিয়ে তখন বলেছিলাম, সবাই ভুলতে পারে কিন্তু এ বান্দা তার বন্ধুদের ভুলবেনা! তাই এখনও পনর-বিশ দিন পর পর ফোন করে তার হাল-হকিকত জেনে নিই! তিনিও ফোন করেন। ১০ মিনিট কথা হলে ৯ মিনিটই তার ‘টুকটাক’ কথা শুনে যাই আর বাকি এক মিনিটে আমি আমার ‘দৈনন্দিন’ বর্ণনা করি!
প্রতিবারের মত সেদিনও...একথা সেকথার ডালপালা ছড়িয়ে পড়লো চারপাশে, সেই ডালপালা কুড়াতে আমার ত্রাহি-মধুসূদন অবস্থা! বাক-পরম্পরায় তিনি বললেন, আগামী শুক্রবার তার সিস্টার কাজিনের শুভ বিবাহ! এমন ভাবে উইশ করলাম যেন বিয়েটা তারই! তিনি বোধহয় খোঁচাটা বুঝতে পেরেছিলেন... তাই ভারী গলায় বললেন, কাজিন তার চেয়ে জুনিয়র! জীবনে বিয়ে বাড়িতে গিয়েছি খুব কমই। দুয়েকবার যা গিয়েছি, এয়সা মত খাওয়া দাওয়া শেষে আর অন্য অনুষ্ঠানের দিকে ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারিনি! আপন চাচাত বোনের বিয়েটা খুব কাছ থেকে দেখার শখ ছিলো...সামনে নিজের বেলায় যেন ‘চিরায়ত’ ফর্মুলাতে ভজঘট না পাকিয়ে ফেলি। কিন্তু বর আসার পর আব্বা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “বাবা, বাসায় যাও, বাসাটা পাহারা দাও। খাওয়া শুরু হলে ডাক দেবো তোমাকে!”
এই যে আমার পুরনো বাজে অভ্যেস... কি কথা বলতে গিয়ে কোন কথায় চলে যাই! অনেকটা রাজনীতিবিদদের মত, মাইক হাতে পেলে মনে করে যেন নিজের বউয়ের কব্জী চেপে ধরেই বসে আছে, ছাড়তেই চায়না!
গলার ফ্রিকোয়েন্সীতে উতসাহ আর কৌতুহল মিশিয়ে বেতারবাণী ছাড়লাম, “তোহ, বিয়েতে কী প্লান তোমার?”
ফ্রিকোয়েন্সী দ্বিগুন উতসাহে ফিরে এলো, “শপিং করতে হবে!”
আহা, বিয়ে বাড়ি বলে কথা। কত কী কেনাকাটা করতে হয়! কণের স্নো...রুজ-পাউডার... সাবান...গয়না...চুরি... জামদানি আমদানি কত কী! বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত না থাকলেও বই পড়ে পড়ে এসব অনেক জ্ঞান হয়েছে! কিন্তু কথায় আছে না? “গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন...নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন!”
তাই শিশুসুল্ভ সরলতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কার জন্য শপিং?”
ওপাশে কথার চাবুক ছুটলো, “কার জন্য আবার? আমার জন্য! বিয়ে বাড়িতে যাবো, সাদামাটা পোষাকে যাবো নাকি?...” ইত্যাদি ইত্যাদি!
“না...মানে ইয়ে ...আমি ভেবেছিলাম....তোমার কাজিনের জন্য…ইয়ে...!”
প্রথমেই বলেছিলাম, আমি আস্ত একটা রামছাগল। নাহলে কেউ এমন প্রশ্ন করে? আহা! মেয়েটাও ভাবলো, আমি রামছাগলের ‘প্রোটোটাইপ’...নাহলে এমন ‘উত্তর-জানা’ প্রশ্ন করে ‘অপমান’ করি?
এখন তোমরাই বলো...নর্মাল ছাগল যদি ৩৩ হয় আর রামছাগল যদি হয় ৮০, তাহলে ১০০ এর মধ্যে আমার কত পাওয়া উচিত??
শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
একটি ভাবগম্ভীর ব্লগ!
দেখতে দেখতে আবার পবিত্র ‘মাহে রামাদান’ এসে হাজির আমাদের মাঝে! সবাইকে তাই পাক-পবিত্র শুভেচ্ছা!
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে এই মাস আসে আমাদের মাঝে! মসজিদে ‘seasonal’ নামাজীর সংখ্যা বেড়ে যায় বিপুল হারে! বেড়ে যায় আতর-টুপির বিক্রি! তাই ভাবলাম, স্রোতের টানে কলম ভাসিয়ে একটা seasonal blog ও লেখা যাক! কিন্তু কথায় আছে না, ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে? কিন্তু আমি এখনও ‘স্বর্গত’ই হইনি; তাই নিশ্চিন্ত মনে ধান ভানতেই পারি মানে একটা হালকা মানের লেখা পত্রস্থ থুড়ি ব্লগস্থ করতেই পারি! আমার আর কী দোষ! বিধাতা আমাকে বানিয়েছেনই এভাবে! নামায শেষে মুনাজাতে যখন ইমাম সাহেব চোখের পানিতে বুকের কাপড়ের দফারফা করে দেন তখনও ‘কেলানোর’ সুযোগ খুঁজতে থাকি! ‘বউ-বাচ্চার’ রহমতের জন্য দোয়া চেয়ে বসলে ছেলে-বুড়ো সবাই যখন “আমীন আমীন” হাঁক তোলে, তখন আর শেষ রক্ষা হয়না! পাশের বন্ধুকে কনুই দিয়ে খোঁচা দিয়ে হেসে উঠি, “এই বেটা, তোর তো এখনও বিয়েই হয়নি, এখনই “আমীন” বলছিস? চুপ থাক! দুই বছর পরে বলিস!”
মসজিদে শুনেছি, রোযার মাসে প্রতি ওয়াক্তে নামাযের নাকি ৭০ গুন সওয়াব! তাই আমার এক ‘বন্ধুস্থানীয়’ সারা রোযার মাসে নামায পড়ে বাকি বছর মসজিদের ছায়া মাড়ান ঠিকই তবে ঢোকেননা! তার হিসাবও খুব সহজ! সারা রামাদান মাস নামায পড়ার ফলে ৭০ মাস নামায পড়া হলো আর বাকি ১১ মাস না পড়ার ফলে সর্বমোট কেটেকুটে থাকলো ৫৯ মাস! বছর শেষে ৫৯ বিয়োগ ১২ মাস অর্থাৎ ৪৭ মাসের নামায surplus থাকে!
আহা নামায! ওলি আউলিয়ারা বলতেন, নামাযে দাড়ালে মনে অনাবিল প্রশান্তি আসে। আর আমরা? নামাযে দাঁড়িয়ে কখন কাকে ‘পূর্ণবয়স্ক কঞ্চি’ উপহার দেবো... সেই ‘প্ল্যান’ও সেরে ফেলি! কেয়ামত বোধহয় চলেই এলো! কোন এক যুদ্ধে, হযরত ওমর (রাঃ) এর পায়ে এক তীর বিধে! সেই তীর টেনে বের করতে গেলেই তিনি বারেবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন! অবশেষে বিজ্ঞজনের পরামর্শে তিনি নামাযে দাড়ালেন! নামাযে দাঁড়িয়ে তিনি আল্লাহ তাআলার মেরাজে বরাবরের মত এমনই মশগুল হয়ে গেলেন যে, সে সুযোগে তার আত্মীয়রা তার পা থেকে তীর বের করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। তিনি টেরই পেলেননা!১
আর এখনকার দিনের একটা কাহিনী বলি...
কোন এক মসজিদে... এশার চার রাকাত ফরজ নামায শেষে ইমাম সাহেবের সন্দেহ হলো, তিনি বোধহয় চার রাকাতের জায়গায় ভুল করে তিন রাকাত পড়িয়ে ফেলেছেন! তাই তিনি পিছনে ফিরে মুসল্লীদের কাছে জানতে চাইলেন আসলে কত রাকাত নামায পড়ানো হয়েছে! এ দেশে সবসময় যা হয়... তা-ই হলো। মুসল্লীরা দুভাগে ‘চার-রাকাত’ আর ‘তিন-রাকাত’ এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে গেলো! কেউ কারো কথা শুনতে নারাজ! কেউ বলে আবার নতুন করে নামায পড়া হোক আবার কেউ বলে ‘সহি’ নামায আবার পড়া নাজায়েয! ইমাম সাহেব গ্যাঁড়াকলে!
এমন সময় মুরুব্বী গোছের ‘সর্বজন-শ্রদ্ধেয়’ এক ব্যক্তি এই গুরুতর সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন! তিনি এসে বললেন, “নামায হয়েছে তিন রাকাত!” ‘চার-রাকাত’-গ্রুপ তার কাছে এ কথার প্রমান চাইলো! তিনি বললেন, “আমার একটা দোকানের হিসাব পাচ্ছিনা!”
“মানে?” সর্বস্বরে প্রশ্নবাণ তার দিকে!
বললেন তিনি, “আমার দোকান চারটা। এশার চার রাকাতে আমার আমার চার দোকানের হিসাব করে ফেলি! কিন্তু আজ মাত্র তিনটা দোকানের হিসাব মিলছে! কাজেই.........!”
অন্য লোকের দোষ দিয়ে আর কি হবে!
এই ব্লগটার আইডিয়া যখন মাথায় এলো তখন আমি জুমু’আর সময় ইমাম সাহেবের ‘ওয়াজ’ শোনার চেষ্টা করছি!
পাদটিকা ১ঃ শাস্ত্রে বলে, নামায প্রত্যেক মুমিন মুসলিমের মেরাজ স্বরুপ!
পাদটিকা ২ঃ ব্লগটার নাম দিতে গিয়েছিলাম...“একটি ভাবগম্ভীর ব্লগ লেখার অপচেষ্টা!”
মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
বুজুর্গ !
-
মানুষ হিসাবে আমি একদম মাঝামাঝি। সুকুমার রায়ের সেই ছড়াটার মত ... “যদি কোন পাজি, বসে ঠিক মাঝামাঝি”! অর্থবিত্তে মধ্যবিত্ত! ‘তারামার্কা’ হোটেলে খেতে যাবার প্লান করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী ‘সঞ্চয় প্রকল্প’ হাতে নিতে হবে, আবার রাস্তাঘাটে কাবাব-বিরিয়ানী দেখলেই পকেটের মূল্যবান ‘কাগজের’ সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে! রাজনৈতিক মতাদর্শেও মধ্যপন্থি! ‘ধর্মহীন মৌলবাদী’ মানে কট্টর বামপন্থি কিংবা ‘ধর্মান্ধ মৌলবাদী’ অর্থাৎ কড়া ডানপন্থি, গোপনে দুইপক্ষকেই কষে গালাগাল দেই...অবশ্য প্রকাশ্যে অত সাহস দেখাতে পারিনা...শুধু এড়িয়ে চলি!
ছোটবেলায় অনেক ধর্মীয় কিতাবাদি পড়েছি। এখন পড়া হয় কম। কত বুজুর্গের আশ্চর্য কারামত পড়ে শিহরিত হয়েছি...নিজেই পীর-দরবেশ-বুজুর্গ হবার বাসনা নিয়ে রাতে শুতে গিয়েছি...আর স্বপ্নে ইবলিশ শয়তানের পিঠে চাবুক চালাতে গিয়ে ‘লেজেগোবরে’ অবস্থায় পড়েছি বহুবার! বড় হবার সাথে সাথে মধ্যপন্থায় দীক্ষিত হলাম। কিছু বিশ্বাস করলাম আবার কিছু একেবারেই উড়িয়ে দিলাম!
কিন্তু নিজের চোখে একজন কারামত-এ-মাওলা বুজুর্গের সাক্ষাতের ইচ্ছা অনেকদিনের! সেদিন বোধহয় এক বুজুর্গের দেখা পেয়েই গিয়েছিলাম!
কাহিনীর খোসাটা ছাড়িয়েই ফেলি...
অফিসে প্রথম মাসের বেতন পেয়ে ভাবলাম, ‘হালকা’ ভারী পকেটটা আরো হালকা করে আসি। বাফ্রুকে নিয়ে গেলাম চয়েস করতে সুবিধার জন্য। আমার কিছুই পছন্দ হলোনা। ফাঁকে আমার প্ররোচনায় বাফ্রুর নিজেরই বড় অংকের টাকা খসে গেলো! :P. ছেলেটা আমার উপর খেপে ফায়ার! হলদেটে ‘মারমা’ মুখটা লাল হবার অবস্থা! যাইহোক মাগরিবের আযান পড়াতে আমি মসজিদের সন্ধানে বেরোলাম। নর্থ টাওয়ারের ৯ তলায় মসজিদ! শবে-বরাতের রাত। লোকসমাগম একটু বেশিই অন্য দিনের তুলনায়। যথানিয়মে নামায শেষ করে পরম-করুনাময়ের কাছে হাত বাড়িয়ে দিলাম যদি ভাগে কিছু জোটে!
ডান কানে ধ্বণীত হলো, “ভাই, আপনার বাড়ি কি কুষ্টিয়াতে?”
ঢাকা শহরে আমার মত ‘কুষ্টিয়ামূল’ তুলনামূলক রেয়ার স্পেসিমেন! তাও আবার এমন জায়গায়?
আমার কোটরাগত অক্ষি ভাসিয়ে তুলে জিজ্ঞাসা করলাম, “আমি কি আপনাকে চিনি?”
“না”
“আপনি আমাকে চেনেন?”
“না, আমিও আপনাকে চিনিনা!”
আমার বুজুর্গ থিওরীতে ক্ষীণ আলোর আভাস! ইচ্ছাপূরণ হতে চললো এতদিনে বোধহয়! কিন্তু তাকে দেখে কিঞ্চিত হতাশ হয়ে গেলাম! ইয়া লম্বা দাড়ির সংগে মাথায় পাগড়ি আর আলখাল্লা না থাকলে কি কাউকে বুজুর্গ বলে মনে হয়!? আমার মত বয়স আর আমার মতই প্যান্ট শার্ট পরা! মুখে দাড়ির ম্যাক্সিমাম দৈর্ঘ্য এক মিলিমিটার হতে পারে! তবুও আশাবাদী মনে অপেক্ষা করে থাকলাম, হয়তো তিনি আরো কিছু বলবেন! আমার আগত-অনাগত ফোরটিন জেনারেশনের কোষ্ঠীঠিকুজী সম্পর্কেও আলোকপাত করবেন!
মুনাজাত শেষ হলো। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে বললেন, “আপনার শার্টের বামপকেটের পাশে কুষ্টিয়ার সবচেয়ে ভালো টেইলরিং শপের ছোট্ট একটা লোগো দেখতে পাচ্ছি!” বলেই তিনি প্রস্থান নিলেন!
ভেবেছিলাম, বুজুর্গ-দর্শন বুঝি এই বেলায় হয়ে গেলো। কিন্তু তার বদলে শার্লক হোমসের মামাতো ভাইয়ের দুই নম্বর শ্যালিকার শ্বশুর বাড়ির তৃতীয় পক্ষের ছোট জামাইয়ের বিদেশী বন্ধুর পাড়াতো ভাইয়ের ভাইরা-ভায়ের দুলাভাইয়ের অষ্টম বংশধরের দেখা পেয়ে গেলাম!