বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮

কোনটা??




অফিসে এখন একটা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে!

মোস্তফা ভাই কোথা থেকে যেন শুনে এসেছেন, বিয়ের সময় মেয়েরা নাকি কবুল বলেনা!

তারা নাকি বলে, আলহামদুলিল্লাহ!

ততক্ষণাত দ্বিমত-ত্রিমত হাজির! মধ্যমতের লোক ও ছিলো...!

বিয়ে বাড়িতে যাবার অভিজ্ঞতা আমার কম! তাই জ্ঞানীর ভান ধরে চুপ থাকি!

বিতর্কটা হচ্ছিলো এমন দিনে, যেদিন মোস্তফা ভাই বিগতদিনের দাওয়াত পাওয়া বিয়েবাড়ির ভুরিভোজনের ওজন দিচ্ছিলেন আর সুরাইয়া আপা আচমকা অনুপস্থিত থেকে ফোনে জানিয়ে দিলেন, আজ আমার বিয়ে, তাই আমি অফিসে আসতে পারবোনা!

মোস্তফা ভাইয়ের মতে, মেয়েরা আলহামদুলিল্লাহ বললেই নাকি ছেলেরা কবুল বলে!

আর... আরো আশার বাণী তার ব্যাচেলর মুখ থেকে নিঃসৃত হয়, হাঁচি দেয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়। তাই, কোন অপরুপা যদি হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তখনই সঙ্গে সঙ্গে কবুল বলা উচিত! তাহলেই... ইয়াহ-হু...কেল্লা ফতে!

(আমাদের মত অনেক ব্যাচেলরই তখন মোলায়েম পাখির পালক কেনার কথা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে! নাকের নিচে পাখির পালক দিয়ে আলতো ছোঁয়া দিলে নাকি হাঁচি ত্বরান্বিত হয়!)

কিন্তু দ্বিমত এলো...নাটক সিনেমায় নায়িকারা চোখের পানিতে নতুন শাড়ি নষ্ট করে কবুলই বলে... তার অপোজিশন মাঈনুল ভাই ও শক্ত পার্টি!

ধুর মিয়া, সিনেমায় কত কিছু হয়! নায়ক নায়িকার মধ্যে ইশকু-ইশকু ঘটলেই আশেপাশে জ্বীন-ভুতের দল বাদ্যবাজনা বাজায় আর তারা গোলাপডালের পাশে নাচতে থাকে! যতসব আজগুবী!

বিতর্কের বিষয়বস্তু অন্যদিকে মোড় নেয়।

আমি তখনও চুপ!

কোথায় যেন পড়েছিলাম, বোকারা তর্ক করে আর জ্ঞানীরা প্রশ্ন করে!

তাই, অনলাইনে প্রাণোচ্ছল এক বালিকাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম,

কেন? কবুল বলে তো!,মেয়েটার জ্ঞানের গভীরতা প্রকাশ পায়!

তুমি নিজে কি বলেছিলে?, আরো স্পেসিফিক হই!

আমার তো বলার সুযোগ আসেনি এখনও, মেয়েটার আফসোস হৃদয় ছুঁয়ে যাবার মত!

আহা! তোমার প্রাণভোমরা যখন তোমাকে সম্মোহনী প্রস্তাব দিলো, তখন কি বলেছিলে?,জানার কোন শেষ নাই!

তখন? তখন একটু অন্যভাবে হেসেছিলাম! যার যা বোঝার, বুঝে নিলো। আহা! প্রতিদিন কতইনা নতুন জ্ঞান বাড়তে থাকে আমার!

পরেরদিন অফিসে সুরাইয়া আপাকেই প্রশ্ন কামান দাগালাম, আপনি কি বলেছিলেন, আপু?

আলহামদুলিল্লাহ, কবুল!

***


জানার আছে অনেক কিছু ...

বাংলা সিনেমায় নায়ক আর সাব-নায়করা অবারিত গুলি খেয়েও না মরে, নিজেরাই পুরা গুন্ডাদলকে নাস্তানাবুদ করার পর আখেরি পোচ দেবার ঠিক আগে শেষদৃশ্যে পুলিশ কেন বলে, আইনের হাত অনেক লম্বা, তাই আইন নিজের হাতে তুলে নেবেননা? পুলিশ কেন কখনই আগে আসেনা?

কারণ, আইনের হাত অনেক বড় হলেও পা একটু ছোট! তাই আসতে একটু দেরী হয়ে যায়!

তাহলে লম্বা হাতে অপরাধীদের আটকালেও তারা প্রায়ই ছাড়া পেয়ে আবার অপকর্মে নিয়োজিত হয় কেন?

কারণ, কোন জিনিষ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি লম্বা হলে তার শক্তি খানেকটা কমে যায়! তাই মাঝে মাঝে হাতছাড়া হয়ে যায়!

***

বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮

ভালো রকম বাসার ব্লগ!



বাসা ভালো? হমম! বড়মামা বিয়ে করবে বলে বড়বাসায় উঠবে। সেজন্য বাসা খুঁজতে গিয়ে নানারকম অভিজ্ঞতা হয়ে গেলো। ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া শক্ত! কিন্তু এই ভালো-বাসা নাকি সেই ভালোবাসা না! সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, ভালোবাসা-খারাপবাসার সম্পর্কে কিছু জ্ঞান রাখি! কিন্তু শুধু ভালোবাসা...? ব্যাপারটা বরাই আমার কাছে অবোধগম্য! কিন্তু আহা, অমোঘ চিত্তচাঞ্চল্যে ভার্সিটি এলাকাটা তো ভাসাভাসি-বাসাবাসির ন্যাশনাল হেরিটেজ-অভয়াশ্রম হয়ে গেলো! সন্ধ্যার পর ওই এলাকা দিয়ে আসতে হলে রিক্সাওয়ালার প্যাডেল এর সৌন্দর্য অবলোকন করে ঈমান-আকিদা ঠিক রাখতে হয়!

যাইহোক, গায়ক নচিকেতা বলেছে,

ভালোবাসা হলো পিটুইটারির খেলা,

আমরা বোকারা বলি প্রেম!

সাধু সাধু! বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে ব্যাখ্যাটা পুরোটাই গ্রহনযোগ্য! মস্তিষ্কের ভিতর বহুবিধ গ্রন্থির অযাচিত ক্ষরণেই এই প্রেমরোগের জীবাণু মনে বাসা বাধে! ব্যাপার না! জীবানুর ভ্যাক্সিনেশন করা আছে আমার! কিন্তু আবার, রাস্তাঘাটে কেউ একটু নমনীয় হাসি দিলেই মনে হয়, অর্ধেক ভালোবাসা হয়ে গেছে! কিন্তু বাকি অর্ধেকের জন্য যে একটু মেহনত করতে হয়, সেটা আর ইচ্ছা করেনা! বুয়েটে পড়ে আলসের শিরোমনি হয়ে গেছি! সকালে উঠলে নাস্তা করতে দোতলা থেকে নিচে নামতে হবে বলে, জোর করে চোখ বন্ধ করে আবার ঘুমিয়েছি! গন্তব্যঃ একবারে দুপুরের ডাইনিং!

কিন্তু এদিকে আবার, পোলাপান তো স্কুলেই ভালোবাসার প্রথম পাঠ নিয়ে ফেলে। হাইস্কুলে উঠার পর দেখলাম, বন্ধুরা আশেপাশে মিসকল দেয়! কিন্তু নিজের আর প্রেমপত্র লেখার সাহসে কুলোয় না! সুযোগ এলো অচিরেই ... এক পাড়াতো বড়ভাই বললো, তার জন্য একটা প্রেমপত্র লিখে দিতে! বেচারা এক মেয়ের প্রেমে বুঁদ! আর আমি তখন ইঞ্জিনিয়ার হবার বাসনা নিয়ে অংকে টেনেটুনে পাশ করে বাংলায় ছক্কা হাকাই! দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর বাসনায় সানন্দে রাজী হলাম! নিজের হাতেই ইনিয়ে বিনিয়ে নানা-প্যাচাল পাড়ার পর ভুল করে নিজের পরিচয় দিতে যাচ্ছিলাম ... ইতি বাপের একমাত্র ছেলে আরাফাত! কিন্তু আচমকা খেয়ালে সামলে নিলাম সবকিছু, পত্রখানি আমার না! বড়ভাইয়ের! তাই লিখলাম, ইতি বাপের একমাত্র বড়ছেলে রুশো! আহা! নব্য প্রেমিকের এহেন উপস্থাপনশৈলীর নমুনা পেয়ে বালিকা স্বাভাবিক আবহাওয়াতেই গলে গেলো। আর আমি পারিশ্রমিক হিসাবে কিঞ্চিত আপ্যায়িত হলাম! সুবহানাল্লাহ!

আহা! আমাদের বায়েজিদ! বেচারা যে মেয়ের দিকেই ভালোবাসার চাতক চক্ষু দিয়ে চায়, তার ভাগ্য খুলে যায়! কিছুদিনের মধ্যেই সে সুপাত্রে গমন করে! বেচারা একটা বিজনেস এজেন্সী খুললে কণ্যাদায়গ্রস্থ মেয়ের বাবাদের কাছ থেকে টু-পাইস কামাতে পারতো! বাবা! আমার মেয়েটার দিকে একটু নেকনজর ফেলো তো, মেয়েটার একটু গতি হোক!

মনন বেচারা ফোনে ফাইট দিতো এক অল্পবয়সী সুহাসিনী এর সংগে! মেয়েটা গানে মিনিপ্যাক রুনা লায়লা! একবার যদি ‘Play’ করতে বললে ‘Pause’ বাটন প্রেস করেও থামানো দূষ্কর। রাত বারোটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত ফোন ফাইট! তারপর দেখা করতে যাওয়া! গভীররাতে পড়াশুনার ফাে টায়ার্ড হয়ে গেলে, আমি আর সিফাত যেতাম ওর রুমে! বেচারা মনন আর্জি জানাতো, উফফ! গান শুনতে শুনতে কান গরম হয়ে গেলো, এখন তোমরা একটু শোন তো! তখন তো আর FM রেডিও চ্যানেলের এত চল ছিলোনা। মেয়েটাই ছিলো আমাদের লেট-নাইট FM সুরলহরী!

প্রেমের ব্যাপারটা অনেকটা অর্থনীতির মত! ধণী আর গরীবের বিস্তর ব্যবধান! ধনীরা শুধু কামিয়েই যাচ্ছে আর গরীবরা প্রকারান্তরে আরো গরীব! গ্রামাঞ্চলে গরীবদের জন্য VGF কার্ডের ব্যবস্থা আছে! আমাদের মত যাদের কোন গতি নেই , তাদেরও VGF কার্ড দেয়া উচিত! VGF মানে হলো Vulnerable Group Feeding!

সবশেষে, সফল ভালোবাসার পরিণতি কি?

ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ুন...

বিবাহের পূর্বে তাহাদের বয়স হইয়াছিলো...!

যাইহোক, বেকন বলেছেন, একই সঙ্গে প্রেমিক আর জ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়!

নো ডাউট... আমি বরাবরই একজন যথার্থ জ্ঞানী ব্যক্তি!

(image courtesy: http://femiadi.files.wordpress.com/2006/11/p1080802.JPG)

সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮

দুইটি অফিসিয়াল ব্লগ!


কয়েকদিন বেশ নাস্তার ম্যানেজারী করলাম অফিসে!

সপ্তাহওয়ারী ম্যানেজমেন্ট নাস্তার টাকা ধরিয়ে দেয় আর আমাদের ভিতরই একজন সেটার সঠিক বন্টন করে!

জানুয়ারী মাসে দ্বায়িত্বটা ছিলো আমার।

কিন্তু বার্ড-ফ্লু এর ভয়ে মুরগী ও ডিমজাত নাস্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের হিড়িক! নাস্তার আইটেমের ভেরিয়েশনের অবশ্যম্ভাবী সংকোচন! আমার নিজের অবশ্য ডিম-মুরগীতে আপত্তি ছিলোনা।

কিন্তু জামাল ভাই বলেন, বার্ড-ফ্লু তে মরতে চাইনা! এই রোগে মরলে আর মানসন্মান আর থাকবেনা! গ্রেভইয়ার্ডে আমার এপিটাফে থাকবে-- এইখানে মুরগী-হৃদয়ামাল শুয়ে আছেন যিনি মুরগি রোগেই ইন্তেকাল ফরমাইয়াছিলেন!

তার দাবী যৌক্তিক! মেনে নিয়ে আমি বলি, তাহলে আপনার জন্য টাইগার-ফ্লু তে মরার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হত! আই আম সরি, সে ব্যবস্থা আপনার জন্য আপাতত করতে পারছিনা! বাকিদের পুডিং খেতে প্রবলেম নেই। আপনার জন্য কি ইন্তেজাম করবো? সমমূল্যে আপনার জন্য গোটা আষ্টেক সিংগাড়া হয়! আনাবো?

জামাল ভাইয়ের জবাবের আগেই আশিক ফোড়ন কাটে, অন্য পশুপাখির ফ্লুতে মইরা আর কি হইবো? তার চেয়ে নিজের নামের ফ্লু-তেই মরেন। কাউ-ফ্লু রোগে মৃত্যু!

***

এখানে কি স্বামী মারা থাকেন?

জি?!” :O

বলছি, এখানে কি স্বামী মারা বেগম নামে কেউ থাকেন?

নাহ! এইরকম অদ্ভুত নামে এখানে কেউ থাকেনা

পোস্টম্যানের এই রকম অদ্ভুত ইনকোয়ারীতে আশ্চর্য হওয়া অতীব প্রয়োজনীয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাঞ্চনীয়!

আমাদের অফিসের পিয়নের ও চোয়াল ঝুলে গিয়েছিলো আশংকাজনকভাবে!

কিন্তু খামের গায়ে যে লেখা আছে, স্বামী মারা বেগম, সামি ইনজিনিয়ারিং; সেক্টর ৬ রোড... উত্তরা, পোস্টম্যান নিজের মতাদর্শে অটুট।

দেখি?! অফিস-স্টাফ কিছুটা মোলায়েম।

পোস্টম্যান খামটা এগিয়ে দেয়...

সেখানে জাজ্বল্যমান... SHAMI-MARA-BEGUM!

দেখছেন? স্পষ্ট লেখা স্বামী মারা বেগম! আত্মবিশ্বাসের চূড়ামনি ডাক-ভাই!

শেষে চিফ-ইঞ্জিনিয়ারের শরণাপন্ন হতেই হলো ...

তিনি শুধু হাইফেনটার ক্রমবিচ্যুতি ঘটালেন... “SHAMIM-ARA-BEGUM!”

আইভি আপার কেতাবী নাম শামীম আরা বেগম!

বাকি ঘটনা বুঝিয়ে বলতে হবে আর?

***

রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮

চুক্তি




কোন এক উদ্ভাসিত বিকালে অনিবার্য কারণে মনির মনটা খুবই উল্লসিত।

এইবেলা এই সুযোগে আমিও তাকে আঁকশি দিয়ে আটকালাম, দোস্ত! তোর মনটাতো এখন খুবই ভালো। আয়, সেলিব্রেট করি! ফালুদা খাওয়া!

মনি আবার কোন ব্যাপারেই না করতে পারেনা। মাঝেমাঝে মনে হয়, যদি কখনও বিরাট লাশ কোন আফ্রিকান জাঙ্গল কুইন এসেও স্লাইটলি আবোভ পাঁচফুটি মনিকে পার্মামেন্ট বাহুডোরে থাকার প্রস্তাব দেয় তাহলেও হয়তো ও না করতে পারবেনা!

তবুও মনির মনটা একটু দ্বিধাগ্রস্থ, তুই যদি রিকশাভাড়া দিস, তাহলে খাওয়াবো

মনির হিসাবটা নামতা পড়ার মত খুবই সহজ। আমরা সাধারণঠাঠারিবাজারের হোটেল স্টারেই ফালুদা খেয়ে থাকি। অসাধারণ সুস্বাদু সেই অমৃত ফালুদা! আমার রিকশাভাড়া আপ-ডাউন ৪০ টাকা আর ওর পকেট খালাস দুই বাটি ফালুদা ২২ দুগুনে ৪৪! নেয়ারলি ইকুয়াল ডিস্ট্রিবিউশন অফ মানি!

আমি রাজী।

অলিখিত দ্বিপাক্ষিক পলাশীবাজার চুক্তি সম্পাদিত হলো!

রিকশা নিলাম।

কিন্তু রিকশার ডিরেকশন দিলাম উলটাদিকে এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগনাল! হোটেল খুশবু!

আয়েশে আমরা ফালুদা সমাপ্ত করলাম! আর বিল দেবার সময় প্রতিবারের মত আমি কাচের জানালা ভেদ করে প্রকৃতি দর্শনে মনোযোগ দিলাম! ওই কাজটা তাই যথারীতি মনি ই সারলো!

মনির মনটা একটু ভার!

আবার রিকশাযোগেই ব্যাক টু দ্য খোয়াড় মানে বুয়েট!

আপডাউন মিলিয়ে আমার খরচ ৮x২=১৬!

আর ফালুদাতে মনির খরচ ৪০x২=৮০!

পৃথিবীতে খুব কম চুক্তিই ঠিক মত সম্পাদিত হয়। কিন্তু...

এই চুক্তিটা সফল হলো।

(হাততালি প্লিজ!)

(ইহা একটি বুয়েটস্য স্মৃতিগদ্য বিশেষ!)

***

অপ্রাসংগিক প্রশ্ন... আদেশ আর নির্দেশ এর মধ্যে পার্থক্য কি?

শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০০৮

ছয়মিশালি ব্লগ!




*এক*

প্রায় বছরখানেক আগে পাশ করে গেলেও, নজরুল ইসলাম হলের মায়াটা কাটাতে পারিনি এখনও! চান্স পেলেই হলে চলে যাই হলে, আমার পুরনো রুমে। মনে হয়, দুয়েকটা সাবজেক্টে ল্যাগ খেয়ে আরো কিছুদিন ওখানে কাটাতে পারলে বেশ হত!

এক জুনিয়রের সংগে দেখা, ভাইয়া, কেমন আছেন?

ওয়াআলাইকুমুস-সালাম!, জবাব দিলাম!

“ওহ! স্লালামালেকুম, ভাইয়া! একটু লজ্জা পেলো বোধহয় ছেলেটা।

খোঁজখবর নিই ওর, কি অবস্থা তোমার?

অদূর ভবিষ্যতে মেধাবী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ আসতেছে!”করুণ স্বরে বলে ও!

মানে ভালো স্টুডেন্টের মুখে একথা বেমানান, “মানে?!”

শরীর খুব বেশি ভালোনা! কখন মরে-টরে যাই, তার ঠিক নেই! আর, জানেনই তো, ছাত্র অবস্থায় মরলেই মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যু!

আমি বলি, অ!

*দুই*

রিকশাওয়ালা কলিমুদ্দি রোজগার বেশ কম। কিন্তু ও একটু বেশিই খায়!

সবাই ওর দোষ দেখে, পেটুক!

শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক নাকি খুবই ভালো খেতে পারতেন।

তিনি ছিলেন ভোজনরসিক!

*তিন*

অনেকেই নিজের বাবাকে নিয়ে খুবই গর্বিত! বন্ধুদের কাছে নিজের বাবার এত প্রশংশা!

একসময় বলেই ফেলে, “My father is a hero!”

কিন্তু নিজের মা কে নিয়ে কেউই বলেনা, “My mother is a heroine!”

*চার*

একদিন বিকেলে মননকে দেখি মাঞ্জা মেরে কোথায় যেন যাচ্ছে?

কোথায় যাও?

টিউশনী তে

কোন ক্লাসের টিউশনি?

“HSC দেবে এবার

ছাত্র না স্টুডেন্ট?

স্টুডেন্ট!

একটু আগেই জিমওয়ার্ক সেরে বাথ নিয়ে সুগন্ধি মেখে ফ্রেশ হয়েছে সে!

*পাঁচ*

অপব্যবহার ... অপকীর্তি ... অপযশ ... অপবাদঅপসংস্কৃতি!

উফ! এত অপ!?

যেকোন বাংলা শব্দের আগে অপ বসলেই শব্দটার বারোটা বেজে যায়! নেগেটিভ সেন্স হয়ে যায় শব্দটা!

কিন্তু এমন একটা শব্দ আছে, যেটার আগে অপ উপসর্গ লাগালে শব্দটার অর্থটা আরো খোলতাই হয় মানে আরো ভালো হয়!

কে কে জানো, বল তো দেখি?

*ছয়*

ঠান্ডায় সব জমে গেছে!

মস্তিষ্কের কোষগুলোও জমে গেছে! এর চেয়ে ভালো কিছু বেরুলো না মাথা থেকে!

বৃষ্টিতে সব ধুয়ে গেছে!

মাথা থেকে সব বেরিয়ে গেছে! মাথাটা একদম ফাঁকা!

***

রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০০৮

বিয়ে!

আমার মেয়ে-ক্লাসমেট গুলোর একে একে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে! এই জানুয়ারীর প্রথমার্ধেই দুইজনের ‘ঘটনা’ ঘটে গেলো! আমার মন-টন বাসি তরকারীর মতই খুব খারাপ!

বিশেষ করে দ্বিতীয় ‘ওয়েডিং’ টার পর তো মনটা ভীষণ খারাপ!

নিশাতের বিয়ে ছিলো!

একজন আমার এই অবস্থা দেখে থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললো, “তুমি কি ওকে খুব পছন্দ করতে? এজন্য মন খারাপ?!”

আমি চমকে উঠি! এভাবে তো ভাবিনি! হায়রে, কী সব ভেবে বসে আছে সবাই! মন খারাপের কারণ যে অন্য! আগে বুয়েটে মেয়ে ভর্তি হত খুব কম! সবেধন নীলমনির মত! বড়ভাইরা ভয়েই তাকাতো না ‘ওনাদের’ দিকে! কোন এক ‘বুয়েটিয়ান’ বড়ভাই এর ডাইরীতে পড়েছি, তাদের ক্লাসমেট মেয়েগুলোকে “টিচারদের খাদ্য” বলে সম্মান দিতেন তারা! তারা নাকি পাস করেই যেকোন ফাস্ট-সেকেন্ড হওয়া ইয়ং টিচারের গলায় ‘আপোষে’ ঝুলে পড়তো! কিন্তু এখন মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বুয়েটে! পুরনো ফরমুলা ফলছে আবার ... “কোয়ান্টিটি বাড়লে কোয়ালিটি কমে”! তাই এখন আর সবার জন্য টিচার-পাত্র ‘সুলভ’ নয়! কিন্তু অনাবাসী পিএইচডি ধারীরা হাতের নাগালে এখনও! দেশে আসে ছুটিতে আর ‘ছোঁ’ মেরে নিয়ে যায়! আর ‘বেবাক মাইয়াগুলান’ এর নজর ও মাশাআল্লাহ খুবই উঁচা! বিয়ে করতে গেলে পিএইচডি পাত্র মোটামুটি প্রি-রিকুইজিট! আর আমার মত ক্লাসে ‘পোলাগুলান’ চাকরী বাকরী নিয়ে হয়রান! নিজেদের গার্লফ্রেন্ড গুলারে ঠিক মত গিফট দিতেও পারছেনা অনেকে! মেসের মিল-রেট বেড়ে গেছে। কারণ চালের দাম আকাশ পাড়ি দিয়ে এখন মহাশুন্যগামী! মানিব্যাগের ওজন যে কম! আমার অবশ্য ওইসব হাংগামা নাই! কিন্তু, আমারও যে পিএইচডি বিয়ে করতে ইচ্ছা হইতেছে একটু একটু! জ্ঞানের আলোয় ঘর আলো করে রাখবে সে! আলোকিত ঘরে ইলেক্ট্রিসিটি বিল কম! তাই, সম-অধিকারের এই যুগে ওরা পিএইচডি ‘hubby’ পেলে আমরা কেন পিএইচডি ‘honey’ পাইনা! so sad! একই ক্লাস থেকে পাস করে একই ডিগ্রী পেলাম সবাই! তারপরও...!?

দুপুরে ইশতিয়াক বেচারা ফোন দিয়েছিলো। বেচারা! তার জব ঢাকার বাইরে! এইখানে কি ঘটে সেই সবের সাথে আপটুডেট থাকতে পারেনা প্রায়ই! আমই ওর বিবিসি, “খবর কি কও”
বললাম, “মাইয়াগো বিয়া হইয়া যাইতেছে! আর আমাগো টাক পইড়া যাইতেছে”
ইশতি ও আমার মত একই গোয়ালের গরু! আমার দুঃখ ও বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে!
“কার কার বিয়ে হলো?”, অনুসন্ধিতসু ইশতিয়াক
সঠিক জবাব, “রোল ১ আর রোল ০০-৬০ এর!”
“হমম! বাকি মেয়েদের কি খবর? ওদের বিয়েটিয়ে হবেনা?” আরো গভীরতর অনুসন্ধান ওর!
“আহা! বিবাহ একপ্রকার সংক্রামক ব্যাধি বিশেষ! বাকিদেরও খুব শীঘ্রই হবে” মতামতের মোড়ক খুলি আমি!
“বিয়ের মড়ক লেগেছে!” ফোন রাখার আগে এই ব্যাপারে ইশতিয়াকের শেষ মন্তব্য!

এই ব্লগটা ৩৬০ এর ‘প্রয়াত-সৈনিক’ দের প্রতি উতসর্গকৃত !

শুক্রবার, ৪ জানুয়ারী, ২০০৮

রুটি



রাস্তাঘাটে বের হলেই মোড়ে মোড়ে দরবারে-মা-শেফা কিংবা খাজাবাবা আজমিরী এ ধরণের অনেক রকম সাইনবোর্ড ই নজরে পড়ে! কী হয় ওখানে? আবার বোরখাপরা মহিলারা বাসের জানালার ভিতর দিয়ে যাত্রীদের সিটের উপর ছুঁড়ে মারে অনেক কেরামতি- প্রতিশ্রুত কাগজগুলো! প্রথম প্রথম ভয় পেতাম খুব! তখন আবার বোমাবাজির মৌসুম ছিলো কিনা! তাই কাগজ ছুড়ে মারার ভঙগীতে চমকে উঠতাম, যেন গ্রেনেড ছুড়ে মারছে! বিচিত্র সব সমস্যার আরো বিচিত্র সমাধান ওইখানে! কিছুদিন গভীর আনালাইসিস করে দেখলাম, সবাই একই রকম সমস্যার সমাধান করে! শুধু ব্রান্ড আলাদা!

কেউ কেউ একবাক্যে সব বিশ্বাস করে।

আবার কেউ কেউ একবাক্যে সব অবিশ্বাস করে।

আমি পড়ি বিপদে! বিজ্ঞানের ছাত্র। বিজ্ঞানে এই সব বুজুরুগি বিশ্বাস করেনা। পুরাপুরি যে অবিশ্বাস করে, তা নয়। বিজ্ঞানের মধ্যেও ভাওতাবাজি আছে! ফুটনোট পাওয়া যায় বেশ। সাইকোলজীকাল ট্রিটমেন্ট কিংবা টেলিপ্যাথি...এইসব শব্দ/শব্দগুচ্ছের সহমূল সায়েন্স এর ভিতরই!

আমার পাশেই একজন থাকেন যিনি এ ধরণের কাজে proসিদ্ধ-হস্ত!

তথাস্তু..তার কাছেও এই ধরণের অনেক মক্কেল আসে! তিনি কি কি বিষয়ে এলেম দান করেন? যেসব বিষয়ের ক্যাপসুল-ট্যাবলেট বাজারে সুল্ভ না...সেই সব বিষয়েরই! তবে সেই সব লিস্টি ঊদগীরণ করে বিরক্তি উতপাদন করার সদিচ্ছা আপাতত আমার নাই এখন! সাম্প্রতিক একটা ঘটনা আমার কানে এলো। এক আম-পাবলিক তার কাছে এসেছে চোর ধরার জন্য! চোর ধরার সহজ সলুশন হলো, সন্দেহভাজন মানুষদের একটা তালিকা তৈরী...তারপর সেই তালিকায় দোআ তাবিজের প্রয়োগ! এবং থানা-পুলিশের-আদালতের গুরুভার লাঘবকরণ! জনাচল্লিশেক রুটি নিয়ে বাদী হাজির! চল্লিশ-সন্দেহভাজন! প্রত্যেকের ভাগে এক-পিস করে। রুটিগুলোর উপর কী সব যেন লেখা...! অকাট্য সমাধান...যে চোর, সে এই দোয়া-কালামের রুটি ফাস্টোকেলাস জ্যামজেলি দিয়েও গিলতে অক্ষম...!

দুদিন পর উনার হাতে নতুন মোবাইল...

চোর ধরা পড়েছে...এভাবেই...! ফলশ্রুতিতে সামান্য কিছু উপঢৌকণ দৃশ্যমান...!

***

ভাগ্যিস, ওই রুটি আমাকে খেতে বলা হয়নি!

আমার গলায় বেধে যেত নিশ্চিত!

আমি-ই হতাম চোর।

লোকে বলে, আমার নাকি রসকষ একটু কম! আমি অতিসাধারণ রাইস-ইটিং বাঙালী! স্বাভাবিক সময়েই আমার গলা দিয়ে মোলায়েম রুটি নিচে নামতে চায়না!

আর ওইরকম টেনশিত মুহুর্তে রুটি গিলতে হলে?!

ধর, বেটারে ধর!

কইষা বাইন্ধা চড়!