(সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ বুয়েট বিষয়ক ব্লগগুলো মূলত আমার নিজের জন্যই লেখা। অনেক দিন পর নিজেই যখন নিজের ব্লগ প্ড়বো, তখন খুব ভালো লাগবে! মনে পড়ে যাবে সবকিছু। তবুও কেউ যদি নিজ-উদ্যোগে এই নিরস ব্লগগুলো পড়ে থাকো , সেটা আমার জন্য বোনাস! )
স্কুল জীবনে সারাদিনে মাত্র একবার ই রোল কল হত, সকালে, প্রথম পিরিওডে। মাঝে মাঝে অবশ্য ক্লাসত্যাগী ছাত্রদের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখিয়ে টিফিন শেষে আরেক দফা হতো রোলকল। কিন্তু বুয়েট লাইফ এর প্রতি ক্লাসেই হয় রোল কল! তা নিয়েও হয় অনেক কাহিনী! রোল কল এর উত্তর দেবার ভঙগী একেক জনের একেকরকম। কারো সঙ্গেই কারো মেলেনা। কেউ আস্তে বলে, “ইয়েস স্যার”। আবার কেউ এত জোরে ‘ইয়েস স্যার’ বলে যে, সেটা শুনে কানের সুড়ঙ্গটা একটু বড় হয়ে যায়! যাই হোক, আমাদের রোল ‘১’ তাশফিনা তৌফিক। ওকে অনেকেই আড়ালে আবডালে ‘T-square’ বা ‘টিটি’ ডাকে। আমরা অবশ্য ওকে বলতাম Indicator! Indicator যৌগ রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় ব্যবহার হয় যা বিক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার শেষ অথবা শুরু Indicate করে। আমাদের Indicator ও ক্লাসের গ্যাপে অন্য মেয়েদের থেকে সবসময়ই দূরত্ব বজায় রেখে বারান্দায় হাঁটাহাটিঁ করতো আর স্যার আসলেই এক নিমিষে ক্লাসে হাজির হয়ে যেত! যেন ‘teacher-presence-indicator’। ওকে ক্লাস এর দিকে আসতে দেখলেই আমরা ঝটপট সুবোধ বালকদের মত চুপচাপ ক্লাসে চলে আসতাম! ওর আবার নাম প্রেজেন্ট দেবার স্টাইলটা আলাদা, “প্রেজেন্ট প্লিজ!” একদিন বসুনিয়া স্যার একটু ঝাড়ি দিয়ে ওকে বললেন, “তোমার নাম যিনি ডাকেন তিনি একজন স্যার । তাকে সম্মান দেয়া তোমার উচিৎ। ‘ইয়েস স্যার’ বলবে!” তারপর দু’দিন ‘ইয়েস স্যার’ কলরব! এবং সপ্তাহান্তে আবার “প্রেজেন্ট প্লিজ!”
আমাদের জয় এর রোল ফিফটি। ক্লাসের অনেকেই ওকে ভয় পেতো। আমাদের বুয়েট এ থাকা অবস্থায় স্টুডেন্টদের মাঝে সবচেয়ে বড় ধরণের মারামারি হয়েছে তার উদ্যোক্তা ও ! আর আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, নাম প্রেজেন্ট করার সময় ও প্রায় সময়ই অন্যমনষ্ক থাকতো, ফলে ঠিক সময়ে ওর নাম প্রেজেন্ট হতোনা। পরে, ও উঠে দাঁড়িয়ে বলতো, “ফিফটি, স্যার!” ঘন ঘন এই কান্ড ঘটার ফলে ওর নামই হয়ে গেল ‘ফিফটি, স্যার’!শেষে এমন অবস্থা হলো যে, ওর নাম প্রেজেন্ট দিতে মিস হয়ে গেলে বাকিরা একসাথে বলে উঠতো, “ফিফটি, স্যার!”
নাম প্রেজেন্ট দিতে মিস হলে রাশেদ বলতো, “স্যার, থার্টি সিক্স, স্যার।” আগে পিছে দুই বারই স্যার! ও বলে, ‘অনেক বারই ট্রাই করেছি, কিন্তু হয়না! আগে পিছে ‘স্যার’না বললে মনে হয় স্যার নাম প্রেজেন্ট দেবেনা!’ রাশেদ আরেকটা মজার কাজ করতো। কোন কোন ক্লাসে নাম মুখে প্রেজেন্ট না দিয়ে রোল-শীটে সাইন করতে হয়। রাশেদ প্রায়ই বিশাল বড় করে নাম সাইন করে ওর আগের রোল পার্সা’র আলোটেড বক্সে ঢুকে পড়তো সন্দেহজনকভাবে! আরেকবার ইশতিয়াক এত আস্তে ইয়েস স্যার বলেছিল যে, জাকারিয়া স্যারের কানে ঠিক মত পৌছায়নি! স্যার ওকে দাঁড় করিয়ে বলেছিলেন, “কি? ‘ইয়েস স্যার’ নাকি ‘নো স্যার’?”। আবার অদিতি “ইয়েস, স্যার” বললে একই সংগে পিছন থেকে কয়েকটা মনুষ্যরুপী বেড়াল সুর মেলাতো!
http://blog.360.yahoo.com/blog-oPGOt88waae8kIbwdjyZBl0-?cq=1&p=111
উত্তরমুছুন