সোমবার, ১৮ জুন, ২০০৭

বৃষ্টিমুখর দিনে এক অলসের রোজনামচা!


আমি এমনই মহা আলসে যে, যদি বলি, ব্যাস্ত আছি তাহলে অনেকেই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়! কিন্তু সত্যি সত্যিই আমি গত ৩ দিন ধরে ব্যস্ত!! কি নিয়ে ব্যাস্ত? গুড কোয়েশ্চেন! গত ১০ তারিখ আমার ফাইনাল সেমিস্টারের রেজাল্ট হয়ে গেছে। সেই হিসাবে এখন আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার!। কিন্তু এমন সময় পাস করে বেরুচ্ছি যে, সময়টাই খারাপ! চাকরী বাকরীর অবস্থা একদম ই বেহাল! অভাগা যেদিকে তাকায় সেদিকেই সাগর শুকিয়ে যায়! এই নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকার আসার কারণে দূর্নীতিবাজরা বাড়িঘর-ফ্লাট কেনা কাটা বাদ দিয়েছে! আর ইম্প্যাক্ট পড়েছে আমাদের উপর, যারা মাত্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলাম! এখন মনে হচ্ছে এই সব ২-নাম্বার মানুষগুলোই এতদিন আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলো! যাইহোক, সময় তো আর বসে থাকেনা। এই অলস সময়ে আমার চিরাচরিত প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে সারাদিনই ঘুমিয়ে থাকতে পারতাম! তা না করে আমি এখন সেই সুদূর টঙ্গি তে যাই কামলা খাটতে! সকাল থেকে সন্ধ্যা। সেটা নিয়েই ব্যাস্ত!

তবে আজ যাইনি। সকালে গিয়েছিলাম একটা চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে! এই দূর্যোগের দিনে একটা আশার আলো বটে! উত্তরা তে অফিস। গত পরশু ফোন করে বলে, আপনি একটা আমেরিকান কোম্পানিতে আপ্লাই করেছিলেন অনলাইন এ, ইন্টারভিউ এ স্বাগতম! কিন্তু আমি মনেই করতে পারলাম না কোথায় করেছিলাম। যাই হোক, ডাকলোই যখন, গিয়েই দেখি কি হয়! গেলাম আর চাকরী হয়ে গেলো! কিন্তু নানা কারণেই চাকরিটা আমি করবোনা হয়ত!!

আমার বাবার দিকের আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর নেইনা। এমন বদনাম আমার সবসময়ই ছিলো!এখনো আছে। তাই উত্তরা থেকে ফেরার পথে নিকুঞ্জ নামলাম চাচাত ভাই এর বাসায়। তা প্রায় বছর খানেক এর বেশি হয়ে গেল তার সাথে আমার যোগাযোগ নেই! বছর খানেক আগে প্রথম সন্তানের পিতা হওয়াতে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম, তারপর আজ এই! রাস্তাঘাট মনে রাখার ক্ষেত্রে আমি আবার সাক্ষাত আইনস্টাইন! কিছুতেই মনে রাখতে পারিনা ঠিকানা। তার বাসার সামনে দাঁড়িয়েই তাকে ফোন করলাম, ভাই, আপনার বাসা খুঁজে পাচ্ছিনা!

ওখান থেকে বিকালে আমার হলে ফিরে আবার কাউরানবাজার! রাস্তা পার হচ্ছি, ট্রাফিক আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় হঠাত করে কঠিন বৃষ্টি! কাউরানবাজার এ রাস্তা পার হবার অভিজ্ঞতা থাকলে বুঝতে পারবেন, রাস্তা পার হউয়া কি কঠিন কাজ! আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভিজছি কিন্তু অগনিত গাড়ির কারণে রাস্তা পার হতে পারছিনা! একেবারে কাক ভেজা হয়ে গেলাম নিমেষেই!

ওখান থেকে মৌচাক গেলাম, ভিজে ভিজেই বলা যায়! কাউরানবাজারের বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য শেল্টার নিয়েছিলাম লোকাল বাসের ভিতর। সেটাই আমাকে নামিয়ে দিলো শাহবাগে! বাস থেকে নেমেই এক দৌড়ে বারডেমের ভিতর! কিছুক্ষণ বসে থেকে আবার মৌচাকের দিকে রিকশা করে! সাইফুরস এ যখন পৌছালাম, তখন আর শরীরে শুকনো জায়গা নেই! বলতেই পারেন, আরে বাপু! এত কষ্ট করে আজই যাবার কি দরকার ছিলো! পরে গেলেও তো চলতো! কথা ঠিক! কোন সময়ই ঠিক মত লক্ষ্যে পৌছাতে পারিনা, এমন বদনাম আমার। এই কারণেই ভেবেছিলাম যে করেই হোক, আজই আমাকে ভর্তি হতেই হবে ওখানে। কিন্তু কে জানতো এমন হবে!

রাত সাড়ে আটটায় যখন আজিমপুরের বাস ধরলাম তখন আমি ক্লান্ত-অবষন্ন! হঠাত করেই দেখি টিকিট চেকার! কিন্তু ততক্ষনে আমি টিকিট দলা পাকিয়ে ছিড়ে অর্ধেক ফেলে দিয়েছি! যাইহোক, চেকার সাহেব আমার ছেড়া টিকিটেই সন্তুষ্ট হলেন! বাঁচলাম! আজিমপুরে এসে আবার বৃষ্টি! এতই যখন ভিজলাম, আরেকটা না হয় ভিজি! ওখান থেকে হলের পথের আধাকিলো রাস্তা প্রচন্ড বৃষ্টিতে হেঁটেই চলে আসলাম!

তারপর কোন রকমে খেয়েদেয়েই দশটায় একটা আরামের ঘুম!

এখন রাতদুটোয় উঠে এই ব্লগটা লিখছি!

1 টি মন্তব্য: