-
আমার এক মামা আছে... মায়ের দূরসম্পর্কের ফুফাত ভাই... তার নাম ‘হবু’। যখন অপরিচিত কারো সামনে হবুমামাকে নিয়ে আলোচনা করা হয়...তখন সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে...মামা আবার হবু হয় কিভাবে? হবু ভাবী...হবু মামী...হবু খালু...হবু জামাই এমনকি হবু শ্বশুর-শাশুড়ি ও হয়! তাই বলে মামা-খালা কি হবু হয়?
তবে মূল কাহিনী হল তার ‘ভালো’ নামে মানে ‘কেতাবী’ নামে!
গোড়া থেকে ‘সাফসুতরো’ করেই বলি। ছোট বেলায় তিনি নাকি খুবই হাবাগোবা টাইপের ছিলেন। তাই সমবয়সীরা তাকে ডাকতো... ‘হাবলুম মীমমাসাদ’! হাবা থেকে ‘হাবলুম মীমমাসাদ’! ফাজলামো করে ডাকতে ডাকতে ওটাই হয়ে গেলো আসল নাম! তার পন্ডিত-অজ্ঞ ‘পিতা-প্রাতঃস্মরণীয়’ ... স্কুলে ভর্তির সময় নাম দিলেন ‘মোহাম্মাদ মীমমাসাদ’! কি চমৎকার নাম! নামের উৎস পবিত্র কোর’আন শরিফ! ‘সুরা লাহাব’ থেকে ডাইরেক্ট কপি-পেস্ট! ‘সহি’ আরবী নামে ছেলের নামকরণ! মারহাবা!!
হবুমামা এখন অনেক বড় হয়েছেন। বোকাসোকা সেই নাদুনুদুস ছেলেটি আর নেই। তিনি একজন BCS ক্যাডার! তবে মীমমাসাদ নামটা রয়েই গেছে! ‘মীমমাসাদ’ কি বস্তু? খায় না পিন্দে? শব্দটার মানে ‘খেজুরকাঁটা দিয়ে তৈরী দড়ি’ যেটা প্রাচীন আরবে কাউকে শাস্তি দেবার জন্য ব্যবহৃত হতো!
আমার বন্ধু ...রাশেদ। প্রাইমারী স্কুলে ভর্তির খাতায় নাম এন্ট্রির সময় স্যার জিজ্ঞাসা করলেন,
নাম কি?
রাশেদ।
রাশেদ কি?
রাশেদ কিছুনা।
কিছুনা মানে?
স্যার, শুধু রাশেদ। আগে পিছে কিছু নাই।
তাহলে তো তোকে একটা ভালো নাম দিতে হয়। যা, তোর নাম দিলাম রাশেদুল ইসলাম।
স্যার?
কি?
স্যার, আমার নাম দেন রাশেদ খান মেনন!
দেয়া যাবেনা
তাহলে স্যার, রাশেদ চৌধুরী?
উঁহু, তাও দেয়া যাবেনা
কেন, স্যার?
আগে দুইজনকে ওই দুইটা নাম দিয়ে দিয়েছি। একই নাম দিলে পরে আবার গ্যানজাম বেঁধে যাবে। যা এখন ভাগ। ওই পরে কে আসিস? সামনে আয়...!
রাশেদ এখন মাঝে মাঝে মজা করে বলে...ইস, কিছুক্ষণ আগে স্কুলে গেলে রাশেদ বিশ্বাস নামের ছেলেটা রাশেদ খান সাহেব হয়ে যেতো! হে হে হে!
আমার এক দূরসম্পর্কের খালার স্কুলের নাম ছিলো......
মোছাম্মাত খালেদা খাতুন, পিতা আব্দুল খালেক বিশ্বাস।
একই ক্লাসের তার এক বান্ধবীর নাম ছিলো......
মোছাম্মাত খালেদা খাতুন, পিতা আব্দুল খালেক বিশ্বাস!
এই নিয়ে প্রায়ই গোলমাল বেধে যেতো! একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা! দেখা গেলো, পরীক্ষায় দুজনের কেউ শুন্য পেলে আরেকজন ঝাড়ি খেতো! আবার একজনের বয়ফ্রেন্ডের চিঠি আরেকজন খুলে লজ্জায় লাল হয়ে যেতো! এরকম অবস্থায় দু’জনেই অস্থির! নামের এই আজন্ম ‘পাপ’ খন্ডানোর সুযোগ এলো ক্লাস নাইনে SSC পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময়!
রেজিস্ট্রেশন শেষে টিফিনের সময় দুই বান্ধবী মিলে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো। খালা বললো, “খালেদা, প্রব্লেম সলভ’ড। রেজিস্ট্রেশনের সময় আমার নাম চেঞ্জ করে দিয়েছি!” বান্ধবীর চোখে আতঙ্কের ছাপ, “কি দিয়েছিস?”
“খালেদা পারভীন!”
বান্ধবীর হাত থেকে মুড়ি মাখানো প্যাকেটটা পড়ে গেলো!
ঠিক একই চিন্তা করে বান্ধবীও নাম চেঞ্জ করেছে! আর নামও নিয়েছে খালেদা পারভীন! একেই হয়তো বলে টেলিপ্যাথি! বাপের নামটা চেঞ্জ করে দিলেও হয়তো মিলে যেতো আবার!!
আমার নিজের নামটার উৎপত্তিটাও বেশ মজার। ৮ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তির সময় দাদার পছন্দ করা একটা ‘গতানুগতিক’ নাম দিতে যাচ্ছিলেন আব্বা! ভর্তির ঠিক আগ মুহুর্তে আমি ‘ভেটো’ দিলাম! এই ‘মান্ধাত্বা’ নাম আমাকে ঠিক ‘স্যুট’ করছেনা! আমার কান্নাকাটি আর জোরাজুরির ফলে আব্বা একটা নাম ইন্সটান্টলী প্রোডিউস করলেন! সেটাই এখন আমার নাম!
শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০০৭
নাম রহস্য
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন