-
আবার বুয়েট! এইখান থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর ভেবেছিলাম, যাক বাঁচছি! কিন্তু অনেকদিন খেতে না পেয়ে মনের ভিতর ঘুমিয়ে থাকা পড়াশুনার ভুতটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। আরেকধাপ পড়তে ইচ্ছা হলো! কিন্তু অফিসের বস ছুটি দিতে চায়না! বলে, এইখানে তোমার ভবিষ্যত গড়ে নাও! তাই একরকম জোর করেই বেরিয়ে পড়লাম!
রেজিস্ট্রেশন করার সময় যায় যায় অবস্থা! দুপুরের পর স্যারের আসার কথা! কিন্তু বউয়ের হাতের ‘ঝালফ্রাই’ খেয়ে স্যার বোধহয় সাড়ে তেপ্পান্ন ডিগ্রী এংগেলে একটু হেলান দিয়েছিলেন! তাই “সামান্য” দেরী হলো উনার! “স্যার এসেছেন! স্যার এসেছেন!”...যেন বিয়ের বর এসেছে... এই চিৎকার করতে করতে আমরা দৌড় দিলাম স্যারের রুমে। মুখ দেখেই বুঝলেন, আমরা পুরনো পাপী ... আর নাক সিটকানো দেখে আমরাও বুঝলাম যে, তিনি কি বুঝেছেন! কলমের এক খোঁচা দিয়েই রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ করে দিলেন! আমার পরে লাইনে ছিলো একটা মেয়ে! ফিরে চলে আসার সময় পিছনের আওয়াজ কানে লাগে...আহ! কী উপদেশ ... “এইটা করো, ওইটা করো...ভালো হবে”...আরো যেন কী কী ...! পুরুষপ্রধান সমাজে মেয়েরা এইরকম বাড়তি সুবিধা পেয়েই থাকে। নারীতান্ত্রিক সমাজ হলে হয়তো সেই সুবিধাগুলো ছেলেরাই পেতো! যেমন, বাসার পাশে কলেজের এক ম্যাডাম থাকতেন...তিনি ক্লাসে ঢুকেই বলতেন... “এই মেয়েরা! কিচিরমিচির থামাও। আমাকে ক্লাস নিতে দাও। তোমাদের যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে গেলাম!” মেয়েদের দুঃখগুলো অকৃত্রিম, “ম্যাডাম পচা, স্যাররা কত ভালো! ক--ত্--তো আদর করেন আমাদের”! আমরাও বেসুরো সুর মেলাতাম... “ম্যাডাম চমতকার মানুষ!” আবার নেটেও যেহেতু মেয়েদের সংখ্যা একটু কম তাই তাদের কথার গুরুত্বও একটু বেশি! নেভার মাইন্ড!
আরো কিছু কাজ সারতে গিয়ে বিকাল চারটার ক্লাসে পৌছাতে দেরী হয়ে গেলো। ডঃ ফিরোজ আহমেদ স্যার ক্লাস নেবেন...তাই একটু ভরসা পেলাম! উনি আসেন দেরীতে আর চলে যান একটু আগেই! একেবারে আমার মনের মত মানুষ! ঠিক তাই হলো। আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলের প্রায় পুরা সময়টাই আমরা কতিপয় জ্ঞানীব্যক্তি বসেছি মেয়েদের পিছন বেঞ্চে! উহু! ভুরু কুচকিয়ো না বন্ধুসকল! প্রথম সেমিস্টারে আমাদের সম্মিলিত গবেষণার ফলাফল থেকেই আমরা এই “মহাগুরুত্বপূর্ণ” সিদ্ধান্তে উপনীত হই! দেখা গিয়েছে, সিনিয়র স্যারেরা সাধারণত মেয়েদের দিকে তাকাননা as well as মেয়েদের পিছন বেঞ্চেও না! ফলে খুব সহজেই আমরা আমাদের মনোযোগটা ঘুমের দিকে দিতে পারি কিংবা আমি আর মনি গোল্লা কাটাকাটি খেলতে করতে পারি! তবে জুনিয়র টিচার হলে ব্যাপারটার পুরো বিপরীত ঘটনা ঘটতো! আর মাঝে মাঝে ইম্পোর্টেন্ট ক্লাসের লেকচার তুলতে গেলে পাঁচফুট দুই ইঞ্চির মনির একটু প্রব্লেম হতো বৈকি! সাড়ে পাচঁফুটি মনা নামের মেয়েটাকে বলতে হতো, “কাইন্ডলী একটু সরে বসবে? আমাদের মনি বোর্ড দেখতে পারছেনা!”
যাইহোক, দৌড়ে ক্লাসে গিয়ে দেখি, স্যার আসেননি! পুরা ক্লাস ছাত্রে গিজগিজ! শুধু মেয়েদের পিছন বেঞ্চটাই খালি! মনি ফোড়ন দিলো, “দেখ আল্লাহ ও চায় আমরা যেন মেয়েদের পিছনেই বসি! এত দেরী করে আসলাম তার পরও...”! ফিরোজ স্যার আমাদের বিশ্বাসের মান-সম্মান রাখলেন! উনি ক্লাসে পৌছালেন আমাদেরও ১০ মিনিট পর! ক্লাসে ঢুকেই স্যার অবাক! প্রথম বাণী, “এত ছাত্র!” মাস্টার্সে তো আগে ১০-১২ জনের বেশি স্টুডেন্ট ক্লাস করতোনা। আর তোমরা ফিফটি আপ!
স্যাররা কী অদ্ভুত মানুষ! প্রথম ক্লাস! তারপরও পড়ানো লাগবে? ধুর...চোখ খোলা রেখেই ঘুম দিলাম! আর তন্দ্রা কাটলে... বিকালে কি দিয়ে নাস্তা করবো, কার পয়সায় করবো ...ইত্যাদি দুনিয়াবী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোরও ফয়সালা সেরে নিলাম! হঠাত স্যারের লেকচারের একটা কথা খুব কানে এসে বাজলো... ”তাহলে আজ আর বেশি কিছু পড়াবোনা” ... কথাটা খুব পছন্দও হলো ... ক্লাসে মনোযোগও দিলাম...! কিন্তু ক্লাস শেষ হয়ে গেলো খুব তাড়াতাড়ি!
এইভাবে আমার বুয়েটে মাস্টার্স জীবন শুরু হলো আবার!
আমার জন্য দোয়া করবেন...কিংবা আমার মঙ্গল কামনায় স্লোগান দিলেও আপত্তি করবো না!
“আরাফাত ভাই এর চামড়ামেকাপ দেবো আমরা! ”
চিয়ার্স!
মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০০৭
Masters!
সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০০৭
মিনিমাম গ্রেড !
-
মনি ছাত্র হিসাবে ভালোই। আমার চেয়ে ভাল তো বটেই। ক্লাস এর অনেক High-CGPA ধারীদের চেয়ে এর ব্যাসিক নলেজ অনেক বেশি ক্লিয়ার। কিন্তু এত কিছু থাকলে কি হবে। লেভেল ৩ টার্ম ১ তে ওর একটা উইকেট পড়ে গেলো, মানে এক সাবজেক্টে ‘ল্যাগ’ খেয়ে বসলো! RCC-I ...ব্যাসিক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স। যেটার উপর নির্ভর করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সবকিছু। ওর মত ছাত্রের এই হাল, সাইকোলজিকাল হজমী সেবন করেও এটা হজম করতে সময় লেগেছে আমার! গ্রেডশীট না দেখে আমার বিশ্বাস ই হচ্ছিলোনা ব্যাপারটা।
যাহোক, এখানে ফেল করলেও পরের সেমিস্টার ওঠা যায়। আর প্রত্যেককেই নিজ নিজ ‘Advisor’ স্যার এর কাছে গিয়ে ভর্তি হতে হয়। তাই লেভেল ৩ টার্ম ২ এর রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আমরা একই গুরুর শিষ্য ক’জন “জ্ঞানীব্যক্তি” আমাদের Advisor ডঃ কবিরুল ইসলাম স্যারের কাছে গেলাম রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য!
স্যার প্রথমে টের পাননি যে তার ই এক ‘সুযোগ্য’ ছাত্র ‘অকাম’ ঘটিয়ে এসেছে। লেভেল ৩ টার্ম ২ তে RCC-II আছে, যেটার pre-requisite course সাবজেক্ট হলো RCC-I। সেটাতেই ফুটো! গলার স্বর প্রায় শুন্যের কাছে নামিয়ে মনি নিজেই জানালো স্যারকে! স্যার বাঁজখাই গলায় বলেন, “না, তোমাকে RCC-II দেয়া যাবেনা। RCC-I আগে কমপ্লিট থাকতে হবে। ক্ষণিক চুপসে গেলেও, মনি তখন ততক্ষনাৎ যুক্তিবিদ্যা হাজির করলো, “কোর্সটা pre-requisite বটে , কিন্তু ওটাতে মিনিমাম F থাকতে হবে!” এই কথা শুনে স্যার তো জায়গায় ফ্লাবারগাস্টেড! এটা কি ধরনের কথা! মিনিমাম F থাকতে হবে! ফেল করেও যদি পরবর্তী কোর্স নেয়া যায় তাহলে pre-requisite লেখার কি দরকার?!
স্যার মনির কথা বিশ্বাস করেননি। আমি স্যারের জায়গায় থাকলে নিজেও করতাম না! স্যার এর আর কী দোষ! স্বয়ং ভিসি আসলেও এখানে খাবি খেতেন! কারণ, সিভিল এর কোর্স বইতে স্পষ্ট করেই লেখা আছে ব্যাপারটা … “pre-requisite কোর্সে মিনিমাম ‘F’ acceptable”! অগত্যা স্যার মনিকে বাধ্য হয়েই কোর্সটা নিতে দেন! পরে ব্যপারটা আমাদের কাছেও খোলাসা হয়েছে! পরীক্ষা দিয়ে কেউ যদি F পায়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কেউ পরীক্ষাই না দেয়, তাকে RCC-II দেয়া হবেনা! এই নিয়মের সুক্ষ ফাঁকে মনি পগার পার হলো!!
নিয়ম থাকলে তার ফাঁক থাকবেই! এজন্যই বোধহয় দেশে এতো উকিল!
পুনশ্চঃ মনি পরে RCC-II আবার নিয়েছিলো শেষ সেমিস্টারে! কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে সেবার!
রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০০৭
আনন্দবার্তা!
-
মোড়ের কাছে বাঁক ঘুরতে মিষ্টি একটা গানের গলা রফিক সাহেবের মনটাকে একটা স্নিগ্ধ শীতল আবেশে ভরিয়ে দিলো। মধ্যবিত্ত জীবনে আর মধ্যবর্তী বয়সে... সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয় নিজের রুজি রোজগারের অনন্ত কঠিন প্রচেষ্টায়। এরই মাঝে বিনোদন নেহাতই সীমিত। সারাদিন পর অফিস থেকে ফিরে বাসায় ফিরে টিভি ছেড়ে নিয়ম করে নাটক দেখাটাই হয়ে ওঠে! কিন্তু দো’তলা থেকে ভেসে আসা গানটা যেন তার চলন্ত পৃথিবীটাকে স্থির করে হৃদয়ে স্বর্গীয় পরশ বুলিয়ে দিলো।
বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে শুনলেন তিনি। যেন সুর লহরীর প্রতিটা ভাঁজকে একান্ত আপণ করে নিতে ইচ্ছা হয়! অফিসে যাবার তাড়া! তবুও দো’তলার সিড়ি ভেংগে উপরে উঠে এসে তিনি নক করলেন সংগীতমহলে! মাঝবয়সী অপর একলোক দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলো।
“একটা গান শুনলাম নিচে দাঁড়িয়ে”, রফিক সাহেব কথা পাড়লেন।
“আমার মেয়ে”, গৃহকর্তা জবাব দিলেন।
“গানটা শুনে এত ভালো লাগলো যে, কন্ঠশিল্পীকে দেখার ইচ্ছে হলো। যদি কিছু মনে না করেন তবে মেয়েটাকে একটু দেখে যেতাম।”
রফিক সাহেবের সহজ চাওয়ার অনুমতি মেলে, “আসুন”।
সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ এক মেয়ে। যেন স্রষ্টার নিজ হাতে গড়া এক অপূর্বসুন্দর প্রতিমা! মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন তিনি, “মা, তুই অনেক বড় হবি, অনেক বড় শিল্পী হবি। তোর গান শুনে আমার এত ভালো লেগেছে যে, তোকে একটু সম্মানী দিতে হচ্ছে হৃদয় থেকে। তোর জন্যই দিলাম। ভাল থাকিস মা।” এই বলেই দ্রুত বাইরের দিকে পা বাড়ালেন তিনি।
সহজ গল্পটার এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু...
“দাঁড়ান”, মেয়ের বাবার গলা!
“বলুন”, রফিক সাহেব থমকে দাঁড়ালেন।
“এত কম টাকায় আমার মেয়ের অপমান করা হয়। আপনাকে আরো টাকা ছাড়তে হবে!”
স্তম্ভিত রফিক সাহেব!
কিন্তু নিজেকে খুব দ্রুতই সামলে নিয়ে বললেন তিনি, “আমার কাছে এর চেয়ে বেশি টাকা নেই। তবে যদি আপনি আমার সাথে এক জায়গায় যেতে রাজী থাকেন, তবে আমি আপনাকে আরো কিছু দিতে পারবো। যাবেন?”
গৃহকর্তা রাজী হলেন।
দুজনে চলতে লাগলেন। গৃহকর্তার কন্ঠে অনুরোধের প্রশ্ন, “রিকশা নেবেন না?”
“এইতো কাছেই”, রফিক সাহেব সেই অনুরোধ এড়িয়ে গেলেন, “হেটে গেলে বেশিক্ষণ লাগবেনা”।
অফিস টাইমের কোমল রোদ চড়ে গেছে অনেক। এরই মাঝে সঙগীকে নিয়ে রফিক সাহেবে এ গলি সে গলি করে এগিয়ে গেলেন। সঙগীর গলায় গুনগুন করে বেজে ওঠে পরিচিত ক্ল্যাসিকাল রোমান্টিক গানের কলি! রফিক সাহেবের ঠোঁটে ধূর্ত মুচকি হাসি।
ঘন্টাখানেক যাবার পরও সেই আকাঙ্খিত জায়গার কোন নিশানা না পেয়ে অসহিষ্ণু গৃহকর্তার মুখে প্রশ্ন, “আর কত দূর?”
“এই তো সামনে”, ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর রফিক সাহেবের, “আর ১০ মিনিট!”
অবশেষে আরো কিছুক্ষণ পর রফিক সাহেব ঘোষণা করলেন, “চলেই এসেছি। এবার তাহলে আপনি আসতে পারেন!”
আশ্চর্য হয়ে গেলেন, “মানে?”
“মানে খুব সহজ, আপনি এবার যেতে পারেন”
“কিন্তু আপনি যে বলেছিলেন এখানে এসে আমাকে আরো টাকা দেবেন!”
“হ্যাঁ, সেজন্যই আপনাকে এখানে এনেছি!”
“তাহলে দিচ্ছেন না কেন?”
“কারণ আপনার টাকা ইতোমধ্যেই শোধ হয়ে গেছে!”
“কিভাবে?”
“খুব সহজে। আপনার মেয়ের গান শুনে মনটা আনন্দে ভরে গিয়েছিলো। তাই আনন্দের প্রতিদান হিসাবে তাকে সামান্য কিছু উপহার দিয়েছি। আর... আপনি আমার কাছে থেকে আরো টাকা পাবেন, এজন্যই তো এখানে এসেছেন, তাইনা? টাকা পাবার চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে? সারাটা পথই আপনার আনন্দে কেটেছে এই ভেবে যে, আমার সাথে আসলে আপনি কিছু টাকা পাবেন। এতটা সময় ধরে আপনাকে আনন্দ দিলাম! তাই আপনার কাছে আমারও কিছু টাকা পাওনা হলো। এবার আপনার পাওনা টাকা আর আমার পাওনা টাকা শোধ-বোধ হয়ে গেলো! ”
অফিসে আজ এমনিই অনেক দেরী হয়ে গেছে। কথা আর না বাড়িয়ে সঙগীর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা দৃষ্টির সামনে দিয়ে রফিক সাহেব অফিসের দিকে পা বাড়ালেন!
শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০০৭
ঘুমকুমার!
মা আমাকে ডাকে কুম্ভকর্ণ । না ডেকেই বা কি করবে? ঘুমের মাঝে কিংবা ঘুম থেকে জেগে উঠার ইমিডিয়েট পর কিছুই মাথায় ঢোকেনা আমার! মা না ডাকলে সকালের নাস্তা তো বটেই, মাঝে মাঝে দুপুরের খাওয়ার কথাও মনে থাকেনা। এই ‘অকাতর’ ঘুমের মাঝে কোন ফোন এলে অবস্থা কি হয় তা সহজেই অনুমেয়। একবার মোবাইলে ‘রিসিভড কল লিস্ট’ ঘেটে দেখি, ৩ দিন আগে রাত ৩ টায় এক বন্ধুর কল। কিছুতেই মনে করতে পারলাম না, ওর সাথে কি কথা বলেছিলাম, তাই আবার ফোন করে জেনে নিলাম! মূল ঘটনা ২০০৩ সালের মাঝামাঝি। তখনও মোবাইল নিইনি। এই নেবো নেবো করছি। আমার বাসা থেকে ফোন আসতো সিফাতের মোবাইলে। আরো অনেক ছেলেরই ফোন ইনকামিং স্টেশন ছিলো ও তখন! বাড়তি ভাব ওর!
একদিন সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে আছি। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে সিফাতের আগমন। ‘আরাফাত তোমার ফোন, তোমার আব্বা লাইনে’। ঘুমের ঘোর না ভাংতেই ফোনটা কানে লাগাই।
হেলো, আসসালামু-আলাইকুম।
ওয়া-আলাইকুমুস-সালাম, শরীর কেমন এখন?
ভালো।
জ্বর কত এখন?
১০০ এর নিচে।
শরীরের যত্ন নিও।
আচ্ছা।
পড়ালেখা কেমন হচ্ছে?
ভালোই।
টাকা লাগবে আরো?
না।
বাড়ি কবে আসবা?
শীঘ্রই।
আসার সময় নলছিটি হয়ে আসবা?
নলছিটি!?
হ্যাঁ
আচ্ছা ঠিক আছে।
(এতক্ষণে ঝিম কাটতে শুরু করে আমার। )
ফোনটা রেখে দিই। নলছিটি ... নলছিটি ... নলছিটি ... নামটা পরিচিত মনে হয়! ‘পিতা-পরমাত্মা’ তো সেখানে যেতে বললেন! কিন্তু কোথায় সেটা? আমার দেশের বাড়ি তো কুষ্টিয়া। আশেপাশে কি কোথাও এমন জায়গা আছে? সহসাই মনে পড়লো নলছিটি বৃহত্তর বরিশালে! ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার অপোজিট ডিরেকশনে! কিন্তু ‘পিতাজী’ কেন ওখানে যেতে বলবেন? ওখানে তো আমাদের কোন আত্মীয় থাকেনা!
ধোঁয়াশা কেটে গিয়ে আলো ফুটতে শুরু করে আস্তে আস্তে! শংকিত ও বিব্রত হই একই সাথে! এতক্ষণ আমি আসলে বন্ধু শাওনের বাবার সাথে কথা বলেছি!!! বাসায় শাওনকে ‘আরাফাত’ নামে ডাকে। সিফাতের কাছে ওর বাবা ফোন করে আরাফাতকে চাওয়ায় সিফাত নিজের অজান্তেই ফোনটা দিয়েছে আমাকে! ফলে যা হবার তাই হয়েছে! পৌনে দুই আর সোয়া তিন মিলে পাঁচ হয়েছে!
আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুমিয়ে থাকলে আমার কি অবস্থা হয় সেটা তো আগেই বলেছি! আমাকে না হয় মাফ করা যায়। কিন্তু আংকল তো জেগেই ছিলেন! নিজের ছেলে না অন্যের ছেলে চিনতে পারলেননা!? অবশ্য ঘুমিয়ে থাকলেও আমার একটু একটু সন্দেহ হচ্ছিলো...ওপাশে হয়তো আমার আব্বা নেই!
কিন্তু আপনিই বলুন, কখনও কি জিজ্ঞাসা করা যায়, “আপনি কি আমার আব্বা বলছেন???”