মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০০৭

Masters!




আবার বুয়েট! এইখান থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর ভেবেছিলাম, যাক বাঁচছি! কিন্তু অনেকদিন খেতে না পেয়ে মনের ভিতর ঘুমিয়ে থাকা পড়াশুনার ভুতটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলোআরেকধাপ পড়তে ইচ্ছা হলো! কিন্তু অফিসের বস ছুটি দিতে চায়না! বলে, এইখানে তোমার ভবিষ্যত গড়ে নাও! তাই একরকম জোর করেই বেরিয়ে পড়লাম!

রেজিস্ট্রেশন করার সময় যায় যায় অবস্থা! দুপুরের পর স্যারের আসার কথা! কিন্তু বউয়ের হাতের ঝালফ্রাইখেয়ে স্যার বোধহয় সাড়ে তেপ্পান্ন ডিগ্রী এংগেলে একটু হেলান দিয়েছিলেন! তাইসামান্যদেরী হলো উনার! স্যার এসেছেন! স্যার এসেছেন!”...যেন বিয়ের বর এসেছে... এই চিকার করতে করতে আমরা দৌড় দিলাম স্যারের রুমেমুখ দেখেই বুঝলেন, আমরা পুরনো পাপী ... আর নাক সিটকানো দেখে আমরাও বুঝলাম যে, তিনি কি বুঝেছেন! কলমের এক খোঁচা দিয়েই রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ করে দিলেন! আমার পরে লাইনে ছিলো একটা মেয়ে! ফিরে চলে আসার সময় পিছনের আওয়াজ কানে লাগে...আহ! কী উপদেশ ... এইটা করো, ওইটা করো...ভালো হবে”...আরো যেন কী কী ...! পুরুষপ্রধান সমাজে মেয়েরা এইরকম বাড়তি সুবিধা পেয়েই থাকেনারীতান্ত্রিক সমাজ হলে হয়তো সেই সুবিধাগুলো ছেলেরাই পেতো! যেমন, বাসার পাশে কলেজের এক ম্যাডাম থাকতেন...তিনি ক্লাসে ঢুকেই বলতেন... এই মেয়েরা! কিচিরমিচির থামাওআমাকে ক্লাস নিতে দাওতোমাদের যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে গেলাম!মেয়েদের দুঃখগুলো অকৃত্রিম, “ম্যাডাম পচা, স্যাররা কত ভালো! ক--ত্‌--তো আদর করেন আমাদের”! আমরাও বেসুরো সুর মেলাতাম... ম্যাডাম চমতকার মানুষ!আবার নেটেও যেহেতু মেয়েদের সংখ্যা একটু কম তাই তাদের কথার গুরুত্বও একটু বেশি! নেভার মাইন্ড!


আরো কিছু কাজ সারতে গিয়ে বিকাল চারটার ক্লাসে পৌছাতে দেরী হয়ে গেলোডঃ ফিরোজ আহমেদ স্যার ক্লাস নেবেন...তাই একটু ভরসা পেলাম! উনি আসেন দেরীতে আর চলে যান একটু আগেই! একেবারে আমার মনের মত মানুষ! ঠিক তাই হলোআন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলের প্রায় পুরা সময়টাই আমরা কতিপয় জ্ঞানীব্যক্তি বসেছি মেয়েদের পিছন বেঞ্চে! উহু! ভুরু কুচকিয়ো না বন্ধুসকল! প্রথম সেমিস্টারে আমাদের সম্মিলিত গবেষণার ফলাফল থেকেই আমরা এই মহাগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হই! দেখা গিয়েছে, সিনিয়র স্যারেরা সাধারণত মেয়েদের দিকে তাকাননা as well as মেয়েদের পিছন বেঞ্চেও না! ফলে খুব সহজেই আমরা আমাদের মনোযোগটা ঘুমের দিকে দিতে পারি কিংবা আমি আর মনি গোল্লা কাটাকাটি খেলতে করতে পারি! তবে জুনিয়র টিচার হলে ব্যাপারটার পুরো বিপরীত ঘটনা ঘটতো! আর মাঝে মাঝে ইম্পোর্টেন্ট ক্লাসের লেকচার তুলতে গেলে পাঁচফুট দুই ইঞ্চির মনির একটু প্রব্লেম হতো বৈকি! সাড়ে পাচঁফুটি মনা নামের মেয়েটাকে বলতে হতো, “কাইন্ডলী একটু সরে বসবে? আমাদের মনি বোর্ড দেখতে পারছেনা!


যাইহোক, দৌড়ে ক্লাসে গিয়ে দেখি, স্যার আসেননি! পুরা ক্লাস ছাত্রে গিজগিজ! শুধু মেয়েদের পিছন বেঞ্চটাই খালি! মনি ফোড়ন দিলো, “দেখ আল্লাহ ও চায় আমরা যেন মেয়েদের পিছনেই বসি! এত দেরী করে আসলাম তার পরও...”! ফিরোজ স্যার আমাদের বিশ্বাসের মান-সম্মান রাখলেন! উনি ক্লাসে পৌছালেন আমাদেরও ১০ মিনিট পর! ক্লাসে ঢুকেই স্যার অবাক! প্রথম বাণী, “এত ছাত্র!মাস্টার্সে তো আগে ১০-১২ জনের বেশি স্টুডেন্ট ক্লাস করতোনাআর তোমরা ফিফটি আপ!


স্যাররা কী অদ্ভুত মানুষ! প্রথম ক্লাস! তারপরও পড়ানো লাগবে? ধুর...চোখ খোলা রেখেই ঘুম দিলাম! আর তন্দ্রা কাটলে... বিকালে কি দিয়ে নাস্তা করবো, কার পয়সায় করবো ...ইত্যাদি দুনিয়াবী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোরও ফয়সালা সেরে নিলাম! হঠাত স্যারের লেকচারের একটা কথা খুব কানে এসে বাজলো... তাহলে আজ আর বেশি কিছু পড়াবোনা” ... কথাটা খুব পছন্দও হলো ... ক্লাসে মনোযোগও দিলাম...! কিন্তু ক্লাস শেষ হয়ে গেলো খুব তাড়াতাড়ি!


এইভাবে আমার বুয়েটে মাস্টার্স জীবন শুরু হলো আবার!


আমার জন্য দোয়া করবেন...কিংবা আমার মঙ্গল কামনায় স্লোগান দিলেও আপত্তি করবো না!


আরাফাত ভাই এর চামড়া

মেকাপ দেবো আমরা!



চিয়ার্স!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন