বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০০৮

বেগে-আবেগে-ভীষণবেগে...




কে নাকি একবার বলেছিলো, কোন দেশ কতটা উন্নত সেটা নাকি বোঝা যায় তার পাবলিক টয়লেটের অবস্থা দেখে! একেবারে ‘ফর্মালিনযুক্ত’ খাঁটি কথা! এই দেশের কথা আর নতুন করে বলার দরকার আছে কি? পুরো ঢাকা শহরে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা মাত্র ৩৪! আর সেগুলোর যা অবস্থা! “দূর্গম গিরি, কান্তার মরু” ও হয়তো পার হওয়া যায়কিন্তু ওইগূলোতে ঢুকতে হলে বুকে ‘হিম্মত’ লাগে আর নাকে এক বক্স সুগন্ধী রুমাল! তবে অবস্থা এখন অনেক ভালো ... শপিং এর ভান ধরে মার্কেটগুলোতে ঢু মেরে কাজটা সেরে আসা যায়! এত্তো এত্তো মার্কেট ঢাকা শহরে! সব আমাদেরই জন্য! তবুও, বুঝিনা... এর পরেও কেন যে “প্রকৃতির সন্তানেরা” এই ‘সিমেন্টের জঙ্গলে’ও “বাঁশঝাড়-থিওরী” এপ্লাই করে অকুস্থলেই “কম্মো” করে?! আল্লাহ তাদের সুমতি দিন! আর ... দয়া করে সায়েন্সল্যাব ফুটওভারব্রিজের উপরেই থাকবেন সবসময়!

ভাবছেন, এত বিষয় থাকতে এইটা নিয়ে ব্লগ লিখতে চাচ্ছি কেন? উহু! ব্যাপারটাকে হালকা করে নিলেই খাবেন ধরা! এজন্যই হয়তো, প্রখ্যাত টিভি উপস্থাপক ‘হানিফ সংকেত’ একবার তার ‘ইত্যাদি’তে একজন রাজনৈতিক নেতাকে দিয়ে পাবলিক টয়লেট উদ্বোধন করিয়েই ছাড়লেন! বিষয়টার হিউজ হাইজিনিক কনসার্ন তো একেবারেই অবিভাজ্য!

ফাইনাল ইয়ারে থিসিস করার সময় সবাই চমতকার সব বিষয় নিয়ে থিসিসে ঝাঁপিয়ে পড়লো! কিন্তু এক ছেলে, ম্যাডামের কাছে গোঁ ধরলো, “পাবলিক টয়লেটের উপরই কাজ করতে চাই!” ম্যাডাম তো মহা খুশি, “হমম! এই ব্যাপারে কাজ হয়েছে একটু কমতোমার আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে। তো লেগে পড় ঝটপট!” ‘চাল্লু’টার উপর ম্যাডাম এতই খুশি ছিলেন যে, প্রেজেন্টেশনের দিন ‘রাগ্‌ড-ক্যাজুয়াল’ ড্রেসের প্রেজেন্টারও আয়েশে A+ বাগিয়ে নিলো! ছেলেটা নেট খুঁজে ‘আস্ত’ একটা থিসিসপেপার পেয়ে গিয়েছিলো এর উপর! আমাদের আফসোসটা ও বাড়লো সমানুপাতে! অন্য অনেক ‘উন্নত’ বিষয় নিয়ে থিসিস করে অনেক অনেক বেশি শ্রম দিয়েও গ্রেড ঊঠাতে বেগ পেতে হয়েছে আমাদের!

এদিকে অনেকে আবার ব্যস্ত সময়ে এই ‘প্রিয়’ জায়গাটাতে অনেক সময় কাটিয়ে দেন

অফিসে আমরা জামাত করে নামায আদায় করিজামাতের ওয়াক্ত এলেই একযোগে সবাই ‘একদিকেই’ সশরীরে ধাবিত হই! কিন্তু শরীফ সাহেব আগে ঢুকলেই কাহিনী প্যাঁচ খেয়ে যায় তখনি! বাইরে অপেক্ষা করতে হয় ... টাইম ডায়ালেশন ঘটে তখন! অস্বীকার করা অবান্তর, মাঝে মাঝে দরজাটা ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করে!

আমার পিছনে লাইনে থাকা মোস্তফা ভাই প্রায়ই অসহিষ্ণু, “ভিতরে কে?”

আমি তড়িত জবাব দিই, “বার্লিন প্রাচীরের ওইপাশে শরীফ ভাই!”

“আসো! আমরা বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠা করি!” বিপ্লবের ডাক তার কন্ঠে!

সভ্য সমাজ নাকি অনেক ভালো! কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মত চমতকার সভ্য জায়গার অবস্থা শোচনীয় এরও নিচে! ‘ঢাবি’র কোন হলের টয়লেট নাকি এমনই অন্ধকার যে, আমার এক বন্ধু বললো, আগে টয়লেটে ঢুকে হাতড়িয়ে ইট খুঁজে তার উপর আলতোভাবে পা রাখতে হয়! এদিকের হলগুলোর কমন টয়লেটও মাঝে মাঝে ‘দূর্গম’ অঞ্চল হয়ে উঠতো “পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ”--- এই ধরণের চমতকার কোটেশন দেয়ালে মেরে রেখেও যখন কিছু হচ্ছিলোনা, তখন সমস্যার আশু সমাধানে এক ‘গুনী’ টয়লেটের দরজার ভিতর দিকে প্রিন্ট-আউট কাগজে চিকা মেরে দিলো,

“কিছু ফেলে গেলেন কি?”

***

কার্টুনটা উন্মাদে সৌজন্যে

***

পুনশ্চঃ বুয়েটে এইসব নিয়ে ঢের পড়াশুনা করতে হয়েছে! ইঞ্জিনিয়ার হবার ঝক্কি অনেক! অনেক রকম ল্যাট্রিনের গঠন নিয়েও পড়তে হয়েছে! তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা হলো, VIP-ল্যাট্রিনবলুন তো, VIP এর অর্থ কি হতে পারে? ১০-১২টা কমেন্টস এর পরেই উত্তরটা না হয় দিই?!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন