সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০০৯

মহিষের ডানা

হঠাত করেই আতিকের ফোন, “চাকরী পার্মামেন্ট হইছে। সংগে প্রোমোশনও ফ্রি দিছে! তোমারে খাওয়াবো। মিশু ও আসবে।” খাওয়াদাওয়ার এমন প্রস্তাব এপ্রিশিয়েট না করাটা একরকম গুরুতর অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। তার উপর নাকি হাসিবুল-মিশুও আসবে। সেই স্কুলের পর আবার দেখা হবে। বছর দশেক হবে। না করার উপায়ই নেই।

ভেন্যু ঢাকার বাইরে। উত্তরায়! তাতে কী? বেদুইনরা মরুভূমি পাড়ি দেয় আর আমিতো খাবার জন্যে মঙ্গলে যেতেও রাজী! কেউ যখন খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয়, তখন একটা স্বাভাবিক প্রবনতা থাকে একটু বেশি খসানোর! হুমকিটা তাই আগেই দিয়ে রাখলাম ওকে। অভয় দিলো - মোহাফেজখানা ওর সংগেই আছে।

রেস্টুরেন্ট বাছাই করাও একটা প্রকট সমস্যা বটে। সবগুলোতেই চেখে দেখতে ইচ্ছ করে। কোনটায় ঢুকবো সেটা ঠিক করে হেঁটে হেঁটে ৫ নম্বর পেরিয়ে ১১ তে এসে হাজির। অবশেষে ক্লান্ত পা’গুলি ডানে মোচড় দিয়ে কোন একখানে থিতু হলো!

ইচ্ছা মত অর্ডার দেয়ার পর মেন্যুকার্ডটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলাম। হঠাত একটা আইটেম নজরে এলো- ‘Buffalo Wings’। মনের ভিতর ধুলোপড়া ‘ডিকশনারি’টার পাতা উলটে ‘মহিষ’ ছাড়া আর কিছুই ভাসেনা! মহিষ বড় দূর্ভাগা প্রাণী! মৃত্যুর পর জাত হারায় ওরা। গরু হয়ে আমাদের প্লেটে আসে! বেচারাদের গায়ের রঙ কালো। তাই কালো গরু নামেও ওরা পরিচিত। ঘোরানো শিংগুলোও বেশ রোমান্টিক! কিন্তু কখনও কোন মহিষের wing তথা পাখা গজিয়েছে, এমনটি শুনেছি বলে মনে পড়েনা। ঘোড়া হলেও উইনিকর্ন বলে চালিয়ে দেয়া যেতো। তাই বলে মহিষাসুর?

পরিবেশনকারীকে তলব করি। অমায়িক হাসি দিয়ে জানায়, “স্যার ওইটা আমাদের ‘ইশপিশাল’ আইটেম!”
“কিন্তু মহিষের পাখনা পাইলেন কই?”
“ওইটা মুরগী দিয়ে তৈরী! মুরগীর পাখা।”
“মহিষ সাইজের মুরগী?! কত্ত বড়? এত দাম কম? কিন্তু আবার দেখি লেভেল ১ থেকে লেভেল ১০ পর্যন্ত! এর মানে কী? বসুন্ধরার মত লেভেল ১ খাইলে দাম কম, লেভেল ১০ এ খাইলে বেশি?”
“স্যার, ওটা হলো ঝাল এর মাত্রা! কোন মাত্রায় ঝাল খেতে চান, সেটার উপর নির্ভর করে! প্রতিলেভেল মাত্র ১০ টাকা!”

মনে পড়লো, শুরুতে ঝাল-কোক নিয়েছিলাম। এটাও নাকি ওদের ইশপিশাল মেনু! শা----, কোকের ভিতর একগামলা গোলমরিচ! প্রতি চুমুকেই নাকের ভিতর চুলকানী!

“ঠিক আছে ভাই, আমাদের জ্ঞান বাড়লো! প্রয়োজ়ন পড়লো ডাক দেবো। আহেম!”


খাওয়ার শেষে পরিবেশনকারী আবার এসে মুখে ‘ড্রাইওয়াশ মার্কা’ হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞাসা করে, “স্যার, খাওয়া কেমন লাগলো?”

এসব ক্ষেত্রে মনে হয় ভদ্রতা করে বলতে হয়, “ভালো ভালো, অসাধারণ!” কিন্তু এত দাম দিয়ে এত অল্প সাধারণ মানের খাবার চেখে মেজাজ এমনিতেই টং! তার উপর ঝাল কোক! সেটাই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো অবলীলায় , “যত আশা করে ঢুকেছিলাম, ততটা ভালো লাগেনি।” বলেই নিজের হাতের দিকে নজর গেলো, ছুরি-চামচের ‘ওএসডি’ অবস্থা দেখে ওয়েটার যেন আবার ‘খ্যাত’ মনে না করে তাই আবার যোগ করলাম, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় খেয়ে খাবারের মান দেখি। যদিও হাত দিয়েই খাই!”

মিশু আমার মত অত রূঢ় নয়, “না ভাই, মিনারেল ওয়াটারটা দারুন মজা লাগছে!”


***
[ বিয়ে বাড়িতে রান্না ভালো না লাগলে আমাদের মধ্যে বলার চল আছে, “রান্না অসাধারণ হইছে, বিশেষ করে কোক রান্না তো অতুলনীয়!”]