মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০০৭

"KISS"

সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। অফিসে যাই। ডিজাইন করি। ডিটেইল করি। এতদিন AutoCAD এ কাজ করতাম। কিন্তু এখন একটা নতুন সফটয়্যারে কাজ শুরু করেছি। SDS/2----STEEL DETAILING SYSTEM.

সফটওয়্যারটা ঠিক Windows-based নয়! এখনও DOS এর ভিতরেই এর মূল ব্যাপারগুলো। অন্যান্য গ্রাফিক্স সফটওয়্যারগুলো খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিলেও, এইটাকে মোটেও কব্জা করতে পারছিনা! আমার ‘কেরেস-ত্যাল’ অবস্থা দেখে বস বললো, কয়েকদিন এটাতে ‘গুতোগুতি’ করে একটু সুইফট হয়ে নাও! এরপর তোমাকে কাজ দেবো! এইটার আবার Cracked-ভার্শন কোথাও পাওয়া যায়না! Pen-drive এর মত Hard-key সবসময় USB পোর্টে না লাগিয়ে রাখলে তিনি মুখ খোলেননা! Hard-key টার দাম আবার ২২ লাখ টাকা মাত্র! তাই একটু ভয় ও লাগে নাড়াচাড়া করতে! আবার নেটওয়ার্কে কাজ করি বলে, মুহূর্তের DELETE প্রেস করে বসের সারা সপ্তাহের কাজ মুছে দিয়ে চাকরী খোওয়ানোর ভয় তো আছেই!

তাই অতিসাবধানে মাউস ক্লিক করি উইনডোতে! যেন মাউসটা ব্যাথা না পায় একটুও! অনেক নতুন জিনিষ শিখলাম সপ্তাহ খানেকের ভিতরেই! অনেক মেনুর ব্যবহার শিখলাম!

কিন্তু একটা টার্মে চোখ আটকে গেলো, “KISS!”

এটা আবার কি?

ক্লিক করেও কিছু বুঝলাম না! ইঞ্জিনিয়ারিং এ এসব তো কখনই শিখিনি!ছাদ ঢালাই দেবার আগে কি ইট-বালিতে চুমো-টুমো খেতে হয় নাকি? এইটাই প্রথম জব! তাই সাইটে তো কখনই যাইনি! কী জানি?

বসকে জিজ্ঞাসা করতে ঠিক একটা সাহস করেনা। কিন্তু সামনের মেনুতে যাবার আগেও ওই মেনুতেই চোখ আটকে থাকে!

বসকে তাই বলতেই হলো, “ইয়ে মানে...KISS মানে কি?”

বস এর তো চোখ কপালে আর ভয়ে ঢোক গিলতে গিয়ে আমার ‘Adam’s Apple’ টা প্রায় পেটের ভিতর!

“হায় হায় হায়... এসব তুমি কি বলছো?”

“না মানে ... শব্দটার অর্থ খুজে পাচ্ছিনা!”

“অর্থ খুঁজে না পেলে Dictionary দেখো। আমাকে Disturb করছো কেন?”

“ইয়ে মানে... দেখেছি, কিন্তু ওই অর্থের সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন মিল পাচ্ছিনা!”

“আররে! Youngman! এত বড় হয়েছো কি বাতাসে? জীবনে কি কোন মেয়ে -টেয়ে আসেনি? এই শব্দের অর্থ বোঝনা! So sad!”

আমি পুকুর থেকে ভু-মধ্যসাগরে পড়ি! জিব্রাল্টার প্রণালী দিয়ে আটলান্টিকে যেতে একটু বাকি!

অবশেষে তিনি বললেন, Keep It Simple Steel এর Acronym শব্দ হলো KISS!

“সব বুঝতে পেরেছি!” মাথা চুলকিয়ে একটা দেঁতো হাসি দিয়ে নিজের স্টেশনে ফিরে এসে আবার সফটওয়্যারটার কান চুলকাই!

রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৭

বিক্ষিপ্ত




মাঝে মাঝেই আমার মন খারাপ হয়। এমনি-ই। কোন সুনির্দিষ্ট কারণ নেই মন খারাপের। ব্যাপারটা আসলে মন খারাপ কিনা, তাই বুঝতে পারিনা। মনটা বিক্ষিপ্ত থাকে...কোন কিছুতেই ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারিনা। কিছুই ভালো লাগেনা। মেজাজ টাও খিঁচড়ে থাকে তখন! সবাইকে গালাগালি দিতে ইচ্ছে হয়! কিন্তু কখনও গালাগালি দেইনি কাউকে। এই জিনিষটা শেখা উচিত ছিলো বোধহয়! মনে হয় পৃথিবীতে যদি আর কেউ না থাকতো তবে বেশ হত! অদ্ভুত এক কনফিউজড স্টেট!

আজও সেই অবস্থা...

এই সময় তিতলী তে গাওয়া শ্রীকান্ত আচার্য্যের গাওয়া একটা গান আমাকে সঙ্গ দেয়। গানটা শেয়ার করলাম সবার জন্য!

****

মেঘ পিওনের ব্যাগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা

মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা।

মন খারাপের খবর আসে বন পাহাড়ের দেশে

চৌকোণ সব বাকসে , যেথায় যেমন থাক সে

মন খারাপের খবর পড়ে দারুণ ভালোবেসে...

মেঘের ব্যাগের ভিতর ম্যাপ রয়েছে মেঘ পিওনের পাড়ি

পাকদন্ডী পথ বেয়ে তার বাগান ঘেরা বাড়ি।

বাগান শেষে সদর দূয়ার, বারান্দাতে আরাম চেয়ার।

গালচে পারা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি

সেথায় এসে মেঘ পিওনের সমস্ত ব্যাগ খালি।

দেয়াল জুড়ে ছোট্ট রোদের ছায়া বিশালকায়

নিষ্পলকে ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছে ঠায়!

কিসের অপেক্ষায়...?

রোদের ছুরি ছায়ার শরীর কাটছে অবিরত, রোদের বুকের ভিতর ক্ষত!

সেই বুকের থেকে টুকটুকটুক নীল কুয়াশা ঝরে

আর মন খারাপের খবর আসে আকাশে মেঘ কোরে

সারা আকাশ জুড়ে...

মেঘের দেশে রোদের বাড়ি পাহাড় কিনারায়

যদি মেঘ পিওনের ডাকে, সেই ছায়ার হদিস থাকে

রোদের ফালি তাকিয়ে থাকে আকুল আকাঙ্ক্ষায়

কবে মেঘের পিঠে আসবে খবর বাড়ির বারান্দায়।

ছোট্ট বাগানটায়...

******

সবাই ভালো থেকো...

রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০০৭

৭৫


এটা আমার ৭৫ তম ব্লগ! (যখন ইয়াহু ৩৬০ সরগরম ছিলো, তখনকার ঘটনা)

কখনই ভাবিনি এতগুলো লেখা আমাকে দিয়ে সম্ভব! লেখালেখি করার শখ ছিলো। কিন্তু কাগজ কলমে কখনই তা হয়ে উঠেনি। আর সবার মত আমিও অল্পবয়সে অমর কবিতা-গল্প লেখার ট্রাই করেছি। কিন্তু কাগজের সংগে আমার হাতে থাকা কলমের তেমন সখ্যতা হয়নি কখনই! যেমন, পরীক্ষার হলে... ৩ ঘন্টা কষ্ট করে খাতায় কলম পেষা একটা পেইন। তবুও কলম চালাতে হয়েছে। কিন্তু অভ্র আসার পর থেকে এ হাত দিয়ে কিছু বেরিয়েছে (লক্ষণীয়, হাত দিয়ে...মাথা দিয়ে নয়!) থ্যাঙ্কস অভ্র!

যখন ছাত্র ছিলাম তখন মনে হত, ডেইলি একটা করে ব্লগ দেই। আর এখন চোখের সামনে কত না আকর্ষণীয় টপিকস ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু সময় করে লিখতে পারিনা! সময়টা বড় অদ্ভুত!

সবসময়ই চেষ্টা করেছি মৌলিক ব্লগ দেবার। কিন্তু আজ আর দেবোনা। আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর থেকেই চুরি করলাম। আমার দূর্ভাগ্য ... আমার জন্মের আগে থেকেই তিনি পরলোকে পায়চারী শুরু করেছেন। তার সেন্স অব হিউমার আমাকে প্রতি মুহুর্তে মোহিত করে। চেষ্টা করি, তার সব লেখা বুঝতে...কিন্তু আমার জ্ঞান সীমিত! তবুও চেষ্টা করি...তার কথা মতই...

যদ্যপি মোর গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়

তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়

***

তারপর চোখ বন্ধ করে বললেন...

চীনা-গুণী আচার্য সু তাঁর প্রামাণিক শাস্ত্রগ্রন্থে লিখেছেন, একদা চীন দেশের পেপিং শহরে অত্যাচার জর্জরিত স্বামীরা এক মহতী সভার আহবান করেন। সভার উদ্দেশ্য, কি প্রকারে নিপীড়িত স্বামী-কুলকে তাদের খান্ডার গৃহিণীদের হাত থেকে উদ্ধার করা যায়?

সভাপতির সম্মানিত আসনে বসানো হলো সবচেয়ে জাঁদরেল দাড়িওয়ালা অধ্যাপক মাওলীকে। ঝাড়া ষাটটি বছর তিনি তার দজ্জাল গিন্নীর হাতে অশেষ অত্যাচারে ভুঞ্জেছেন সে কথা সবারই জানা ছিলো।

ওজস্বিনী ভাষায় গম্ভীর কন্ঠে বজ্রনির্ঘোষে বক্তার পর বক্তা ঘন্টার পর ঘন্টা আপন আপন অভিজ্ঞতা বলে যেতে লাগলেন। স্ত্রীলোকের অত্যাচারে দেশ গেল, ঐতিহ্য গেল, ধর্ম গেল, সব গেল। চীন দেশ হটেনটটের মুল্লুকে পরিণত হতে চলল, এর একটা প্রতিকার করতেই হবে। ধন-প্রাণ, সর্বস্ব দিয়ে এ অত্যাচার ঠেকাতে হবে। এস ভাই, এক জোট হয়ে---

এমন সময় বাড়ির দারোয়ান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলল, হুজুররা এবার আসুন। আপনাদের গিন্নীরা কি করে এ সভার খবর পেয়ে ঝাঁটা, ছেড়া জুতো, ভাঙ্গা ছাতা ইত্যাদি যাবতীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এদিকে ধাওয়া করে আসছেন।

যেই না শোনা, আর যাবে কোথায়? জানলা দিয়ে, পেছনের দরজা দিয়ে, এমনকি ছাত ফুটো করে, দেয়াল কানা করে দে ছুট! দে ছুট! তিন সেকেন্ডে মিটিং বিলকুল সাফ--বিলকুল ঠান্ডা!

কেবলমাত্র সভাপতি বসে আসেন সে শান্ত গম্ভীর মুখ নিয়ে-- তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হন নি। দারোয়ান তাঁর কাছে ছুটে গিয়ে বারবার প্রণাম করে বলল, হুজুর যে সাহস দেখাচ্ছেন তাঁর সামনে চেঙ্গিস খানও তসলীম ঠুকতেন, কিন্তু এ তো সাহস নয়, এ হচ্ছে আত্মহত্যার শামিল। গৃহিণীদের প্রসেশনের সক্কলের পয়লা রয়েছেন আপনারই স্ত্রী। এখনো সময় আছে। আমি আপনাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।ভাপতি তবু চুপ। তখন দারোয়ান তাঁকে তুলে ধরতে গিয়ে দেখে তাঁর সর্বাঙ্গ ঠান্ডা। হার্টফেল করে মারা গিয়েছেন।

(পঞ্চতন্ত্র থেকে)

***

This is just a joke.

Take care, all!

***

মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০০৭

বাস-সার্ভিস

অফিস শেষে উত্তরা থেকে রামপুরা যেতে অনেক রকম বাসই দাঁড়িয়ে থাকে আমাকে নেবার জন্য! আমিও প্রজাদের প্রার্থনা মোতাবেক প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে প্রশ্রয় দেই! ঊঠে পড়ি যেকোন একটা বাস সার্ভিসে!ফাল্গুনকিংবাশক্তিতে ঊঠলে আমার বেশ সুবিধা হয়। যদি অন্য কোন সার্ভিসে ঊঠি, তাহলে রামপুরায় এসে পড়লে... সিংহাসন থেকে রাস্তায় নামতে অনেক কষ্ট করতে হয়। কারণ, বাসের ভিতরে আমার মতই অনেকরাজাধিরাজঠাসাঠাসি করেস্বর্গসুখেমত্ত থাকেন। কেউ-ই কারো রাজ্যপরিধির সুচাগ্রপরিমান ভূমি ছাড় দিতে বে-মওকুফ! এই অবস্থায় গেট পর্যন্ত পৌছাতে পৌছাতেনাদিয়া কোমোনেচিকে স্মরণ করি! তাই ওই দুটো সার্ভিসই সই!

তবুও সিট খালি থাকলে ...তাশিকোতেও উঠে পড়ি।

তাশিকোর সুনাম সমস্ত রাস্তা জুড়েই! সিটগুলোও বেশ ভালো! কিন্তু এটি আমার চেয়ে আরো বেশি স্বাধীনতা প্রিয়! কাউন্টারে একবার থামলে আর নড়তেই চায়না। হেলপারের সুরেলা-আবেগী আহবানে যাত্রীর বান ঊঠে গাড়িতে! তবুও আরো যাত্রী ঊঠানোর জন্য হাহাকার! পিছন থেকে প্রায়ই যাত্রীদের প্রার্থনা শোনা যায়, “ড্রাইভার সাহেব, বাসা থেইক্যা ও যাত্রী ডাইক্যা নিয়া আসেন, আমরা আছি...ঘুমাইতেছিড্রাইভার স্বাচ্ছন্দ বোধ করে আরো! তবে খেলা একটু জমে উঠলেই... মাঝেমাঝেই পুলিশ এসে এই প্রার্থনানাদে যোগদান করে মজাটাই নষ্ট করে দেয়!

এই তো গত সপ্তাহেই...

তাশিকোর প্রতি রুচি হলো। সন্ধার পর...বাসটা সাঁইসাঁই করে ছুটে চলে দাড়ালো খিলখেতে! স্টপ্‌ড! জিরো পাওয়ারের চাঁদের আলোয় ড্রাইভারকে দেখলাম, প্রকৃতির ভিতরই কোথায় যেন হারিয়ে যেতে! When nature calls, everything halts! গাড়ির স্টার্ট বন্ধ! হেলপার নিজেও বাসায় থাকা যাত্রীদের ডাকতে ডাকতেটাইরেড’! প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম! ড্রাইভার অনন্তকাল লাপাত্তা! হেলপার হেলমেট-বর্মেরপ্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এসময়! অনেকক্ষণ পরেই চালকের চালিকা শক্তি ফিরে আসে! ড্রাইভিং সিটে এসে বসে সে!

শুরু হয়, “ওই মিয়া তোমার কি আক্কেল জ্ঞান নাই? এতগুলা যাত্রীরে আটকায় রাখছো?”

পাশের জনই ড্রাইভারের হয়ে পিচে ব্যাট করে, “ভাই, এইসবব্যাপারেও আর কি করবে? যাক, আর কিছু কইয়েন না। ব্যাটারে সাবধানে গাড়ি চালাইতে দেন!

তৃতীয় কন্ঠ, “... ‘ইয়ের বাচ্চারা গাড়ি নিয়ে বের হবার আগে ঠিকমত চেকাপ করে বের হয়না। কখন কি হয়ে যায় কে জানে? দেখছেন, আমরা কত রিস্ক নিয়ে যাতায়াত করি?”, পাশের যাত্রীর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা।

“... ‘বধুভ্রাতা’! তুই গাড়ি চেকাপ কইরা বাইর হসনাই ! ভালা কথা! তাই বইলা নিজেও কি চেকাপ হইয়া বের হইবিনা?” চতুর্মাত্রা পূর্ণ হয়।

বোধহয় ড্রাইভারের পূর্বপুরুষের সংগেডারউইনএর পূর্বপুরুষেরখাতিরছিলো একটু কম ।হয়তো তারা ছিলোভদ্রবংশীয়গন্ডার! তাই সে ছিলো চুপ। কিন্তু উস্তাদেরমনোকষ্টসহ্য করতে না পেরে গাড়ি নিজেই জবাব দিলো।

কুড়িল রেলগেটে এসে পিছনের একটা চাকা বিকল হলো!

৪৫ মিনিটের রামপুরার রাস্তা তখন অন্তত দেড় ঘন্টার ধাক্কা!

*****

অবধারিত প্রশ্ন...

লোকাল বাসে মহিলা সিটগুলো সামনে বামের দিকে থাকে কেন?”

*****

মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০০৭

Masters!




আবার বুয়েট! এইখান থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর ভেবেছিলাম, যাক বাঁচছি! কিন্তু অনেকদিন খেতে না পেয়ে মনের ভিতর ঘুমিয়ে থাকা পড়াশুনার ভুতটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলোআরেকধাপ পড়তে ইচ্ছা হলো! কিন্তু অফিসের বস ছুটি দিতে চায়না! বলে, এইখানে তোমার ভবিষ্যত গড়ে নাও! তাই একরকম জোর করেই বেরিয়ে পড়লাম!

রেজিস্ট্রেশন করার সময় যায় যায় অবস্থা! দুপুরের পর স্যারের আসার কথা! কিন্তু বউয়ের হাতের ঝালফ্রাইখেয়ে স্যার বোধহয় সাড়ে তেপ্পান্ন ডিগ্রী এংগেলে একটু হেলান দিয়েছিলেন! তাইসামান্যদেরী হলো উনার! স্যার এসেছেন! স্যার এসেছেন!”...যেন বিয়ের বর এসেছে... এই চিকার করতে করতে আমরা দৌড় দিলাম স্যারের রুমেমুখ দেখেই বুঝলেন, আমরা পুরনো পাপী ... আর নাক সিটকানো দেখে আমরাও বুঝলাম যে, তিনি কি বুঝেছেন! কলমের এক খোঁচা দিয়েই রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ করে দিলেন! আমার পরে লাইনে ছিলো একটা মেয়ে! ফিরে চলে আসার সময় পিছনের আওয়াজ কানে লাগে...আহ! কী উপদেশ ... এইটা করো, ওইটা করো...ভালো হবে”...আরো যেন কী কী ...! পুরুষপ্রধান সমাজে মেয়েরা এইরকম বাড়তি সুবিধা পেয়েই থাকেনারীতান্ত্রিক সমাজ হলে হয়তো সেই সুবিধাগুলো ছেলেরাই পেতো! যেমন, বাসার পাশে কলেজের এক ম্যাডাম থাকতেন...তিনি ক্লাসে ঢুকেই বলতেন... এই মেয়েরা! কিচিরমিচির থামাওআমাকে ক্লাস নিতে দাওতোমাদের যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে গেলাম!মেয়েদের দুঃখগুলো অকৃত্রিম, “ম্যাডাম পচা, স্যাররা কত ভালো! ক--ত্‌--তো আদর করেন আমাদের”! আমরাও বেসুরো সুর মেলাতাম... ম্যাডাম চমতকার মানুষ!আবার নেটেও যেহেতু মেয়েদের সংখ্যা একটু কম তাই তাদের কথার গুরুত্বও একটু বেশি! নেভার মাইন্ড!


আরো কিছু কাজ সারতে গিয়ে বিকাল চারটার ক্লাসে পৌছাতে দেরী হয়ে গেলোডঃ ফিরোজ আহমেদ স্যার ক্লাস নেবেন...তাই একটু ভরসা পেলাম! উনি আসেন দেরীতে আর চলে যান একটু আগেই! একেবারে আমার মনের মত মানুষ! ঠিক তাই হলোআন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলের প্রায় পুরা সময়টাই আমরা কতিপয় জ্ঞানীব্যক্তি বসেছি মেয়েদের পিছন বেঞ্চে! উহু! ভুরু কুচকিয়ো না বন্ধুসকল! প্রথম সেমিস্টারে আমাদের সম্মিলিত গবেষণার ফলাফল থেকেই আমরা এই মহাগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হই! দেখা গিয়েছে, সিনিয়র স্যারেরা সাধারণত মেয়েদের দিকে তাকাননা as well as মেয়েদের পিছন বেঞ্চেও না! ফলে খুব সহজেই আমরা আমাদের মনোযোগটা ঘুমের দিকে দিতে পারি কিংবা আমি আর মনি গোল্লা কাটাকাটি খেলতে করতে পারি! তবে জুনিয়র টিচার হলে ব্যাপারটার পুরো বিপরীত ঘটনা ঘটতো! আর মাঝে মাঝে ইম্পোর্টেন্ট ক্লাসের লেকচার তুলতে গেলে পাঁচফুট দুই ইঞ্চির মনির একটু প্রব্লেম হতো বৈকি! সাড়ে পাচঁফুটি মনা নামের মেয়েটাকে বলতে হতো, “কাইন্ডলী একটু সরে বসবে? আমাদের মনি বোর্ড দেখতে পারছেনা!


যাইহোক, দৌড়ে ক্লাসে গিয়ে দেখি, স্যার আসেননি! পুরা ক্লাস ছাত্রে গিজগিজ! শুধু মেয়েদের পিছন বেঞ্চটাই খালি! মনি ফোড়ন দিলো, “দেখ আল্লাহ ও চায় আমরা যেন মেয়েদের পিছনেই বসি! এত দেরী করে আসলাম তার পরও...”! ফিরোজ স্যার আমাদের বিশ্বাসের মান-সম্মান রাখলেন! উনি ক্লাসে পৌছালেন আমাদেরও ১০ মিনিট পর! ক্লাসে ঢুকেই স্যার অবাক! প্রথম বাণী, “এত ছাত্র!মাস্টার্সে তো আগে ১০-১২ জনের বেশি স্টুডেন্ট ক্লাস করতোনাআর তোমরা ফিফটি আপ!


স্যাররা কী অদ্ভুত মানুষ! প্রথম ক্লাস! তারপরও পড়ানো লাগবে? ধুর...চোখ খোলা রেখেই ঘুম দিলাম! আর তন্দ্রা কাটলে... বিকালে কি দিয়ে নাস্তা করবো, কার পয়সায় করবো ...ইত্যাদি দুনিয়াবী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোরও ফয়সালা সেরে নিলাম! হঠাত স্যারের লেকচারের একটা কথা খুব কানে এসে বাজলো... তাহলে আজ আর বেশি কিছু পড়াবোনা” ... কথাটা খুব পছন্দও হলো ... ক্লাসে মনোযোগও দিলাম...! কিন্তু ক্লাস শেষ হয়ে গেলো খুব তাড়াতাড়ি!


এইভাবে আমার বুয়েটে মাস্টার্স জীবন শুরু হলো আবার!


আমার জন্য দোয়া করবেন...কিংবা আমার মঙ্গল কামনায় স্লোগান দিলেও আপত্তি করবো না!


আরাফাত ভাই এর চামড়া

মেকাপ দেবো আমরা!



চিয়ার্স!

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০০৭

মিনিমাম গ্রেড !



মনি ছাত্র হিসাবে ভালোই। আমার চেয়ে ভাল তো বটেই। ক্লাস এর অনেক High-CGPA ধারীদের চেয়ে এর ব্যাসিক নলেজ অনেক বেশি ক্লিয়ার। কিন্তু এত কিছু থাকলে কি হবে। লেভেল ৩ টার্ম ১ তে ওর একটা উইকেট পড়ে গেলো, মানে এক সাবজেক্টে ল্যাগ খেয়ে বসলো! RCC-I ...ব্যাসিক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স। যেটার উপর নির্ভর করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সবকিছু। ওর মত ছাত্রের এই হাল, সাইকোলজিকাল হজমী সেবন করেও এটা হজম করতে সময় লেগেছে আমার! গ্রেডশীট না দেখে আমার বিশ্বাস ই হচ্ছিলোনা ব্যাপারটা

যাহোক, এখানে ফেল করলেও পরের সেমিস্টার ওঠা যায়। আর প্রত্যেককেই নিজ নিজ ‘Advisor’ স্যার এর কাছে গিয়ে ভর্তি হতে হয়। তাই লেভেল ৩ টার্ম ২ এর রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আমরা একই গুরুর শিষ্য কজন জ্ঞানীব্যক্তি আমাদের Advisor ঃ কবিরুল ইসলাম স্যারের কাছে গেলাম রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য!

স্যার প্রথমে টের পাননি যে তার ই এক সুযোগ্য ছাত্র অকাম ঘটিয়ে এসেছে। লেভেল ৩ টার্ম ২ তে RCC-II আছে, যেটার pre-requisite course সাবজেক্ট হলো RCC-Iসেটাতেই ফুটো! গলার স্বর প্রায় শুন্যের কাছে নামিয়ে মনি নিজেই জানালো স্যারকে! স্যার বাঁজখাই গলায় বলেন, না, তোমাকে RCC-II দেয়া যাবেনা। RCC-I আগে কমপ্লিট থাকতে হবে। ক্ষণিক চুপসে গেলেও, মনি তখন ততক্ষনাৎ যুক্তিবিদ্যা হাজির করলো, কোর্সটা pre-requisite বটে , কিন্তু ওটাতে মিনিমাম F থাকতে হবে! এই কথা শুনে স্যার তো জায়গায় ফ্লাবারগাস্টেড! এটা কি ধরনের কথা! মিনিমাম F থাকতে হবে! ফেল করেও যদি পরবর্তী কোর্স নেয়া যায় তাহলে pre-requisite লেখার কি দরকার?!

স্যার মনির কথা বিশ্বাস করেননি। আমি স্যারের জায়গায় থাকলে নিজেও করতাম না! স্যার এর আর কী দোষ! স্বয়ং ভিসি আসলেও এখানে খাবি খেতেন! কারণ, সিভিল এর কোর্স বইতে স্পষ্ট করেই লেখা আছে ব্যাপারটা … “pre-requisite কোর্সে মিনিমাম ‘F’ acceptable”! অগত্যা স্যার মনিকে বাধ্য হয়েই কোর্সটা নিতে দেন! পরে ব্যপারটা আমাদের কাছেও খোলাসা হয়েছে! পরীক্ষা দিয়ে কেউ যদি F পায়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কেউ পরীক্ষাই না দেয়, তাকে RCC-II দেয়া হবেনা! এই নিয়মের সুক্ষ ফাঁকে মনি পগার পার হলো!!

নিয়ম থাকলে তার ফাঁক থাকবেই! এজন্যই বোধহয় দেশে এতো উকিল!

পুনশ্চঃ মনি পরে RCC-II আবার নিয়েছিলো শেষ সেমিস্টারে! কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে সেবার!

রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০০৭

আনন্দবার্তা!



মোড়ের কাছে বাঁক ঘুরতে মিষ্টি একটা গানের গলা রফিক সাহেবের মনটাকে একটা স্নিগ্ধ শীতল আবেশে ভরিয়ে দিলো। মধ্যবিত্ত জীবনে আর মধ্যবর্তী বয়সে... সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয় নিজের রুজি রোজগারের অনন্ত কঠিন প্রচেষ্টায়। এরই মাঝে বিনোদন নেহাতই সীমিত। সারাদিন পর অফিস থেকে ফিরে বাসায় ফিরে টিভি ছেড়ে নিয়ম করে নাটক দেখাটাই হয়ে ওঠে! কিন্তু দোতলা থেকে ভেসে আসা গানটা যেন তার চলন্ত পৃথিবীটাকে স্থির করে হৃদয়ে স্বর্গীয় পরশ বুলিয়ে দিলো।

বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে শুনলেন তিনি। যেন সুর লহরীর প্রতিটা ভাঁজকে একান্ত আপণ করে নিতে ইচ্ছা হয়! অফিসে যাবার তাড়া! তবুও দোতলার সিড়ি ভেংগে উপরে উঠে এসে তিনি নক করলেন সংগীতমহলে! মাঝবয়সী অপর একলোক দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলো।

একটা গান শুনলাম নিচে দাঁড়িয়ে, রফিক সাহেব কথা পাড়লেন।

আমার মেয়ে, গৃহকর্তা জবাব দিলেন।

গানটা শুনে এত ভালো লাগলো যে, কন্ঠশিল্পীকে দেখার ইচ্ছে হলো। যদি কিছু মনে না করেন তবে মেয়েটাকে একটু দেখে যেতাম।

রফিক সাহেবের সহজ চাওয়ার অনুমতি মেলে, আসুন

সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ এক মেয়ে। যেন স্রষ্টার নিজ হাতে গড়া এক অপূর্বসুন্দর প্রতিমা! মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন তিনি, মা, তুই অনেক বড় হবি, অনেক বড় শিল্পী হবি। তোর গান শুনে আমার এত ভালো লেগেছে যে, তোকে একটু সম্মানী দিতে হচ্ছে হৃদয় থেকে। তোর জন্যই দিলাম। ভাল থাকিস মা। এই বলেই দ্রুত বাইরের দিকে পা বাড়ালেন তিনি।

সহজ গল্পটার এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু...

দাঁড়ান, মেয়ের বাবার গলা!

বলুন, রফিক সাহেব থমকে দাঁড়ালেন।

এত কম টাকায় আমার মেয়ের অপমান করা হয়। আপনাকে আরো টাকা ছাড়তে হবে!

স্তম্ভিত রফিক সাহেব!

কিন্তু নিজেকে খুব দ্রুতই সামলে নিয়ে বললেন তিনি, আমার কাছে এর চেয়ে বেশি টাকা নেই। তবে যদি আপনি আমার সাথে এক জায়গায় যেতে রাজী থাকেন, তবে আমি আপনাকে আরো কিছু দিতে পারবো। যাবেন?

গৃহকর্তা রাজী হলেন।

দুজনে চলতে লাগলেন। গৃহকর্তার কন্ঠে অনুরোধের প্রশ্ন, রিকশা নেবেন না?

এইতো কাছেই, রফিক সাহেব সেই অনুরোধ এড়িয়ে গেলেন, হেটে গেলে বেশিক্ষণ লাগবেনা

অফিস টাইমের কোমল রোদ চড়ে গেছে অনেক। এরই মাঝে সঙগীকে নিয়ে রফিক সাহেবে এ গলি সে গলি করে এগিয়ে গেলেন। সঙগীর গলায় গুনগুন করে বেজে ওঠে পরিচিত ক্ল্যাসিকাল রোমান্টিক গানের কলি! রফিক সাহেবের ঠোঁটে ধূর্ত মুচকি হাসি।

ঘন্টাখানেক যাবার পরও সেই আকাঙ্খিত জায়গার কোন নিশানা না পেয়ে অসহিষ্ণু গৃহকর্তার মুখে প্রশ্ন, আর কত দূর?

এই তো সামনে, ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর রফিক সাহেবের, আর ১০ মিনিট!

অবশেষে আরো কিছুক্ষণ পর রফিক সাহেব ঘোষণা করলেন, চলেই এসেছি। এবার তাহলে আপনি আসতে পারেন!

আশ্চর্য হয়ে গেলেন, মানে?

মানে খুব সহজ, আপনি এবার যেতে পারেন

কিন্তু আপনি যে বলেছিলেন এখানে এসে আমাকে আরো টাকা দেবেন!

হ্যাঁ, সেজন্যই আপনাকে এখানে এনেছি!

তাহলে দিচ্ছেন না কেন?

কারণ আপনার টাকা ইতোমধ্যেই শোধ হয়ে গেছে!

কিভাবে?

খুব সহজে। আপনার মেয়ের গান শুনে মনটা আনন্দে ভরে গিয়েছিলো। তাই আনন্দের প্রতিদান হিসাবে তাকে সামান্য কিছু উপহার দিয়েছি। আর... আপনি আমার কাছে থেকে আরো টাকা পাবেন, এজন্যই তো এখানে এসেছেন, তাইনা? টাকা পাবার চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে? সারাটা পথই আপনার আনন্দে কেটেছে এই ভেবে যে, আমার সাথে আসলে আপনি কিছু টাকা পাবেন। এতটা সময় ধরে আপনাকে আনন্দ দিলাম! তাই আপনার কাছে আমারও কিছু টাকা পাওনা হলো। এবার আপনার পাওনা টাকা আর আমার পাওনা টাকা শোধ-বোধ হয়ে গেলো!

অফিসে আজ এমনিই অনেক দেরী হয়ে গেছে। কথা আর না বাড়িয়ে সঙগীর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা দৃষ্টির সামনে দিয়ে রফিক সাহেব অফিসের দিকে পা বাড়ালেন!

শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০০৭

ঘুমকুমার!



মা আমাকে ডাকে কুম্ভকর্ণ । না ডেকেই বা কি করবে? ঘুমের মাঝে কিংবা ঘুম থেকে জেগে উঠার ইমিডিয়েট পর কিছুই মাথায় ঢোকেনা আমার! মা না ডাকলে সকালের নাস্তা তো বটেই, মাঝে মাঝে দুপুরের খাওয়ার কথাও মনে থাকেনা। এই অকাতর ঘুমের মাঝে কোন ফোন এলে অবস্থা কি হয় তা সহজেই অনুমেয়। একবার মোবাইলে রিসিভড কল লিস্ট ঘেটে দেখি, ৩ দিন আগে রাত ৩ টায় এক বন্ধুর কল। কিছুতেই মনে করতে পারলাম না, ওর সাথে কি কথা বলেছিলাম, তাই আবার ফোন করে জেনে নিলাম! মূল ঘটনা ২০০৩ সালের মাঝামাঝি। তখনও মোবাইল নিইনি। এই নেবো নেবো করছি। আমার বাসা থেকে ফোন আসতো সিফাতের মোবাইলে। আরো অনেক ছেলেরই ফোন ইনকামিং স্টেশন ছিলো ও তখন! বাড়তি ভাব ওর!

একদিন সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে আছি। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে সিফাতের আগমন। আরাফাত তোমার ফোন, তোমার আব্বা লাইনে। ঘুমের ঘোর না ভাংতেই ফোনটা কানে লাগাই।

হেলো, আসসালামু-আলাইকুম

ওয়া-আলাইকুমুস-সালাম, শরীর কেমন এখন?

ভালো।

জ্বর কত এখন?

১০০ এর নিচে।

শরীরের যত্ন নিও।

আচ্ছা।

পড়ালেখা কেমন হচ্ছে?

ভালোই।

টাকা লাগবে আরো?

না।

বাড়ি কবে আসবা?

শীঘ্রই।

আসার সময় নলছিটি হয়ে আসবা?

নলছিটি!?

হ্যাঁ

আচ্ছা ঠিক আছে।

(এতক্ষণে ঝিম কাটতে শুরু করে আমার। )

ফোনটা রেখে দিই। নলছিটি ... নলছিটি ... নলছিটি ... নামটা পরিচিত মনে হয়! পিতা-পরমাত্মা তো সেখানে যেতে বললেন! কিন্তু কোথায় সেটা? আমার দেশের বাড়ি তো কুষ্টিয়া। আশেপাশে কি কোথাও এমন জায়গা আছে? সহসাই মনে পড়লো নলছিটি বৃহত্তর বরিশালে! ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার অপোজিট ডিরেকশনে! কিন্তু পিতাজী কেন ওখানে যেতে বলবেন? ওখানে তো আমাদের কোন আত্মীয় থাকেনা!

ধোঁয়াশা কেটে গিয়ে আলো ফুটতে শুরু করে আস্তে আস্তে! শংকিত ও বিব্রত হই একই সাথে! এতক্ষণ আমি আসলে বন্ধু শাওনের বাবার সাথে কথা বলেছি!!! বাসায় শাওনকে আরাফাত নামে ডাকে। সিফাতের কাছে ওর বাবা ফোন করে আরাফাতকে চাওয়ায় সিফাত নিজের অজান্তেই ফোনটা দিয়েছে আমাকে! ফলে যা হবার তাই হয়েছে! পৌনে দুই আর সোয়া তিন মিলে পাঁচ হয়েছে!

আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুমিয়ে থাকলে আমার কি অবস্থা হয় সেটা তো আগেই বলেছি! আমাকে না হয় মাফ করা যায়। কিন্তু আংকল তো জেগেই ছিলেন! নিজের ছেলে না অন্যের ছেলে চিনতে পারলেননা!? অবশ্য ঘুমিয়ে থাকলেও আমার একটু একটু সন্দেহ হচ্ছিলো...ওপাশে হয়তো আমার আব্বা নেই!

কিন্তু আপনিই বলুন, কখনও কি জিজ্ঞাসা করা যায়, আপনি কি আমার আব্বা বলছেন???

শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০০৭

উদ্যোগ!



পাশ-টাশ করে সবাই কি করে? Job ঢোকে

সবার মত আমি চাকরীতে জয়েন করলাম সময়মত তবে আমার কাজটা অন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়ে একটু আলাদা আমেরিকা থেকে Email Attachment মাধ্যমে Project আসে, আর সেটা টাইমলি complete করে আমরা পাঠিয়ে দিই আবার ওখানে কাজের প্রেশার একেবারে কম নয়! যখন Project সাবমিশনের ডেডলাইন ঘনিয়ে আসে, তখন নাক-মুখ গুঁজে কাজ করি নিজের ডেস্কে! কিন্তু অন্য সময়?

অনেকের হাতে কাজ থাকলেও, এই অক্টোবর মাসে আমার কাজের চাপ একদমই নেই! সকালে অফিসে যাই ... সারাদিন ঝিমাই ... আড্ডা দেই ... ঝিমাই ... মাঝে মাঝে মোবাইল দিয়ে ইয়াহু মেসেঞ্জারে ঢুকি ... অফিসের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি ওইটাস্লোচলছে কিনা... এভাবেই চলছে! অবশ্য সময় কাটানোর জন্য অনেকের অন্য পদ্ধতি আছে... পিসিতেSnooker-147’ খেলা কিন্তু এই ব্যাপারটায়... অফিসে এনভাইরোনমেণ্টে আমার সাহসের ব্যারোমিটারটা খুব বেশি উপরে ওঠেনা! কিন্তু অবশেষে কাজ না পেয়ে আমিও... ‘কাঁছাখোলাঅর্থাৎ গেমারুদের দলে যোগ দেবার প্রস্তুতি নিলাম

আর্জি পেশ করলাম, "ভাই, আমি খেলবো!"

"যাও যাও, আগে বাছাই পর্ব পার হয়ে এসো তারপর আমাদের সাথে খেলতে এসো!" জবাবটা যিনি দিলেন, তিনি সবার কাছেই বিপুল ব্যবধানে হেরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন!

"প্লিইইইজ ...আপনি কত ভালো... মাত্র একবার খেলার সুযোগ দিন...", অযাচিত তেল মালিশ করি

সুযোগ মিললো! আর দুদিনের মধ্যেইDefending Champion’ কে "অফিস রেকর্ড" ব্যবধানে হারিয়ে দিলাম! কিন্তু ব্যাপারটা বোধহয় ভালো হলনা বাকি সবাই অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাকে বয়কট করলো Snooker-147 খেলা থেকে! আবার আমি বেকার!

তারপর?

আমারনমস্যসৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, "যে বাঙালী আড্ডা দিতে জানেনা, তার জন্ম পরিচয়কে আমি সন্দেহের চোখে দেখি"! তাই একপ্রকারবাধ্যহয়েই ... ধুমায়িত চায়ের কাপে আড্ডা জমাই আবার!

আমাদের মধ্যে অরুপ আবার Career নিয়ে খুবই চিন্তাশীল! সবরকম খবরাখবরই ওর কাছেবরফ দেয়া ইলিশেরমত টাটকা! কী করলে কী হবে...কোন চাকরীর বেতন ভালো...কোন কোর্সে কী সুবিধা... ইত্যাদি ইত্যাদি!

সেদিন হঠাত অরুপ কথা তোলে, "আসো আরাফাত, সবাই মিলে বাপের জায়গা জমি সব বিক্রি করে টাকা পয়সা দিয়ে একটা হাইফাই-লেটেস্ট-দামী Mercedes গাড়ি কিনি!"

"কিনে? তারপর?" আমি আশ্চর্য!

"কিনে বিজনেস শুরু করি", অরুপ বলে

"একটা গাড়ি কিনে গাড়ির ব্যবসা?" আমি আরো সন্দিহান

"ধুর, তুমি কিছুই বোঝনা! গাড়ি কিনে ভাড়া দেবো যারা নতুন বিয়ে করতে যাবে, তাদের কাছে গিয়ে বলবো...", অরুপের চোখে সোনালী ভবিষ্যতের আভা, "ভাই, জীবনে তো বিয়ে একবারই করবেন ফাটাফাটি রকম একটা গাড়ি চড়ে বিয়েতে গেলে কেমন হয়? নেন ভাই নেন, আমার এই Mercedes গাড়ি বুড়ো বয়সে নাতি নাতনীর কাছে গল্প করতে পারবেন! ...আমাকে একটু খুশি করে দিলেই চলবে...!"

এই কথা শুনেই আমার আশা-ভরসার ল্যাম্পুর তেল শেষ হয়ে যায় নিমেষে!

"আরে, তুমি বুঝলেনা!" অরুপ হতাশ হয়, "আমি বলে রাখলাম, আজ থেকে বছর পর ঢাকা শহরে কেউ না কেউ এই ধান্ধায় নেমে অনেক টাকা কামাবে! তখন তুমি বলবে ... ইশ! এই অরুপ একদিন তোমাকে একজন সফল বিজনেসম্যান হবার বুদ্ধি বাতলে দিয়েছিলো তখন... It’s too late! "

কিংবা আবার গত পরশু বিকালে...

"নাহ, আরাফাত! চাকরী-বাকরী করে কিছুই হবেনা Business is the root of all উন্নতি! এমন ব্যবসা করতে হবে, যেন নিজের পকেটেও পয়সা আসে, আবার দেশ-দশের উপকারেও আসে "

এইবার আমি একটু উতসাহ বোধ করি!

"আমাদের দেখে লোকে বলবে, দেখো দেখো !!...আমাদের সোনার ছেলেরা...আমাদের অরুপ...আমাদের আরাফাত...আমাদের প্রমথেশ...আমাদের......!"

আমাদের নিচতলার রুমটাতে দোতলারচিরসুখীজনরহিম ভাই এর অনুপ্রবেশে অরুপের স্বরভঙ্গ ঘটে! কিন্তু এবারবাঁশঝাড়-সমান উচ্চতারউতসাহ আমার মধ্যে, "রহিম ভাই! যোগ দেবেন নাকি আমাদের সাথে?"

"কি করতে চাও?" রহিম ভাইয়ের আগ্রহের মাত্রাটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা

"এমন কিছু করতে চাই যেন ..."

"দেশের আর দেশের মানুষের উপকার হয়?" কথা কেড়ে নেন রহিম ভাই!

খুশিতে সাড়ে আটখানা হয়ে উঠি, "ঠিক, আপনি তো না বলতেই আমার মনের কথা ধরতে পেরেছেন আপনি আসলে মেগা-BOSS! বলেন তো কি করা যায়?" এবার উতসাহের মাত্রাটা আকাশের প্লেনটা ছুঁয়ে যায়!

"সত্যিই মহতী কিছু করতে চাও?" রহিম ভাইয়ের সন্দেহ দেখে আবার শংকিত হই

"হ্যাঁ", আমি পজিটিভ

"তাহলে মরে যাও!", এক ঝটকায় রহিম ভাই আমাদের হৃদয় ভেঙেগ দেন, "তোমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ভালোই ধারণা আছে কিছুই করতে পারবেনা! বরং তার চেয়ে মরে গেলে, বেঁচে যাওয়া অক্সিজেন-খাবার দিয়ে আরো কিছু লোক ভালো ভাবে বাঁচতে পারবে! এটাই হবে দেশের আর সমাজের জন্য তোমাদের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ!"

আশার বেলুনটা চুপসে যায় তখনই

কিন্তু...বেলুনটা কষ্ট করে আবার ফুলিয়েছি আমরা...বিশেষ করে অরুপ...! But we are short of ideas, right now! আছে কি তেমন যুতসই আইডিয়া তোমার কাছে?