শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০০৯

আকবরীয় ইশটাইল

১.
সম্রাট আকবর নাকি সাধারণ মানুষের বেশে মাঝে মাঝে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াতেন।

বাজারে একবার এক সবজিওয়ালার সঙ্গে দেখা হলো তার। দারুণ খাতিরও হলো গল্পে গল্পে। সবজিওয়ালা তাকে জিজ্ঞাসা করলো, “পেটের ভাত খোরাকির জন্য কী করা হয়?”

আচমকা প্রশ্নে তিনি পড়লেন ফাঁপড়ে! B:-) কিন্তু তার মাথায় বুদ্ধি ‘হ্যাড’! মাথায় বুদ্ধি না থাকলে কী আর এত্তো বড় ভারতবর্ষ চালানো যায়?
বললেন, “আমি সম্রাট আকবরের তাজ এর রক্ষক!” :-0

সবজিওয়ালা ছদ্মবেশি আকবরের সৌভাগ্যে দারূণ খুশি হলেন, “বাহ, তোমার চাকরী তো খুব ভালো! সম্রাটের কাছাকাছি থাকতে পারো!”

২.
য়্যুনিভার্সিটির ‘বিগ’ ব্রাদারকে নিয়ে ‘বিগার’ ব্রাদার এর বাসায় গিয়েছিলাম বিশেষ কাজে। বিষমবয়সী এক অসাধারণ আড্ডা হলো সেখানে। :)

‘বিগার’ একফাঁকে ‘বিগ’-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার বাসার কী অবস্থা?”

তড়িৎ জবাব দিই আমিই। “উনি বিয়ে উপলক্ষ্যে বাসা পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন আগামী মাসে!” " style="border: 0pt none ;" width="23" height="22">

‘বিগার’ তার পিঠ চাপড়ে অভিনন্দন জানান, “এই কথা এতো দেরিতে বললে? মেয়ে কি করে? কবে, কোথায়, কী ভাবে হলো সবকিছু?”

‘বিগ’ এর মুখে রা কাড়ে না! কোনমতে আমাকে দেখিয়ে বলেন, “এইটারে ধরে পিটানি লাগান, খালি মিথ্যা বলে!” X(

আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করি, “আরে, ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে উনার বাড়িওয়ালা ফ্লাট নিজের জন্য নিচ্ছেন। তাই ‘বিগ’রা বাসা পরিবর্তন করছেন। এতে ভুল কী বললাম?”

৩.
যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, কাঁচপুর ব্রিজে কোন জ্যাম পড়েনা। তিনি নিজে দেখেছেন।

যেকোন সরকারের আমলেই ‘মন্ত্রী’ কোন পথ দিয়ে যাবার আগেই পুলিশ রাস্তা সাফ-সুতরো করে দেয়। ম্যাংগো পাবলিক সেখানে এমনিতেই কমে আসে! :|

৪.
ছোটবেলার একটা মজার ছড়া শেখা ছিলো,
“মিথ্যা বলা মহাপাপ
বইলা গেছে অমিতাভ!”

সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০০৯

“আমার বিয়াত না আইলে ভাবুম, তুমি আমার প্রতি দূর্বল ছিলা!”

মরশুম খারাপ। বয়স খারাপ। চিনাজানা আশেপাশের পুলাপান খালি বিয়া করতেছে! :(( (প্রত্যেকে কিন্তু একটা কইরাই করতেছে, আবার ভুল ধইরেন না।) প্রতিমাসেই একাধিক বিয়ার দাওয়াত। বিয়া জিনিসটা খারাপ না। খারাপ হইলো সেইখানে গিয়া আমার কুনো কাজকাম থাকেনা, এইটা আগেই কইছি। গিফট কিনতে ম্যালা হ্যাপা পোহাইতে হই। কমদামী না বেশি দামী হইলো? নিজের পকেটের সংগে সঙ্গতি পাইলো কিনা! ম্যালা কনসিডারেশনস। /:) তাই, পারলে বিচিত্র দোহাই দিয়া পিছাইয়া যাই! নামাযে বইসা দুআফাই কইরা দিই। অশেষ নেকি হাসিল হয়! B-)

কিন্তু সবসময় এক দাওয়াই কামে লাগেনা।

মেলাদিন বান্ধবীরে ফুনাইনাই। কাল দুপুরে ফুনাইলাম। ফুন ধইরাই কইলো, “তোমার লগে আমার জরুরী বাতচিত আছে!” :-*
টাশকিত হইলাম! কইলাম, “কী?”
“ধানমন্ডি ২৭ আসতে পারবা? জরুরী কাজ আছে!”, তাড়াতাড়ি কইয়া ফেললো!

খাওয়াইবো মনে হয়! কিন্তু আমার আইজকা রাতে গুরুত্বপূর্ণ কামআছে! একখান ডিজাইন কম্লিট করন লাগবো! টাইম নাই! কইলাম, “কও কী কাজ? মোবাইলে কইরা দেওন যায় কিনা। কুনো ব্যাপারে ইনফু লাগবো?”
“উঁহু! আসতেই হইবে”!
“ক্যালা?”
“আমার বিয়া! তুমারে কার্ড দিমু! কী খুশি!” :D
“ওহ! এই কথা? আর-রে মিয়া তুমি ডিজিটাল যুগে এনালগ হইয়াই থাকলা। ইমেইলে কার্ডের ছবি পাঠায়া দিও! আর, আমি গর্দভ ফুন কইরা তুমার বিয়ার দাওয়াত নিতাছি? এইডা হইবোনা। রাতে নিজে ফুন দিয়া আবার দাওয়াত দিবা!” আমি বাগড়া দিই!
“ওক্কে, বস রাইতে ফুনামুনে!” :)

রাইতে ফুন আইলো! কেতাবী ভাষায় অর্ডার দিলো, “আমার বিয়া। আইবা!”

ম্যালা ভুজুং-ভাজুং দিলাম। ম্যালা কাজ। ম্যালা প্রব্লেম! আইতে পারুমনা!

শেষকালে মোক্ষম অস্ত্র ছাড়লো সে! “আসছে শুক্কুরবার, আমার বিয়াত না আইলে ভাবুম, তুমি আমার প্রতি দূর্বল ছিলা! ছ্যাঁকা খাইছো! সবাইরে কইয়া দিমু!”:-/

এইবার কী করি? মাফ চাই, দু’আ-ও চাই! :((

মাথাও চুলকাই! কুনো বুদ্ধি দিতে পারেন? কী গিফট কিনুম?

অর্ধ-প্রাসঙ্গিক কাহানী: আগের অফিসের মালিক মাইনে প্রেসিডেন্টের বউ ছিলো কুম্পানীর সিইও! তাই বিয়েত্তা ভাইগো খেপাইতাম, “ভাই, আপনের সিইও কেমতে আছে?”

এই বান্ধবী পাশ কইরা দুস্তের কুম্পানীতে সিইও হিসাবে জয়েন দিছিলো একখানে। তারেও খেপাইছিলাম!

কিন্তু, বিয়া নাকি সেই মালিক-কাম-দুস্তের লগে!?

তাই ভাবতাছি, টিয়া পাখি আর লাল-সুতা নিয়া সুলেমানি পাথ্‌থরের বিজনিসে নামুম নাকি? কওয়া ভবিষ্যৎ তো 'ঝড়ে বক মারা ফকিরের' মত লাইগা যায়!!

হক মৌলা! :P

(পরিবর্ধিত অংশঃ ২২ নম্বরে রোবোট ভাইয়ের কমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে! )

তয় আমি তারে কী কইছিলাম সেইটা মূল ব্লগে পরথমে দেইনাই।

কইছিলাম, "ম্যালা লুকই তো তুমার বিয়াত আইবোনা! তাইলে সব্বাইরে তুমি ছ্যাকা দিছো! ছি ছি ছি, তুমি এত খারাপ! এত্তো পুরুষের সঙ্গে তুমার সম্পর্ক! "

এইবার তার মাপ চাওনের পালা! হে হে হে!
শেষ কথাঃ তার বিয়াত আমি যাইতে পারিনাই। সে আমারে দূর্বল করিতে না পারিলেও, আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর! টানা ৪ জ্বরে ভুগিয়া শয্যাশায়ী হইয়াই গুজরান করিয়াছি সেই দিন! :|


[অনটেস্টঃ ব্লগীয় ইয়ো বাতচিতে প্রথুম পুস্ট!] :|

শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০০৯

টনক

সন্ধ্যাবেলায় মায়ের সাথে গল্প করছিলাম। সাম্প্রতিক পড়া বা শোনা কোন হালকা চালের গল্প কিংবা অন্য কোন চমকপ্রদ ঘটনার সাথে মায়ের ঘর গেরস্থালীর ‘সাজানো-গোছানো’ গল্পগুলো বেশ ভালোই মিশ খায়। বরাবর যেটা করি, কৌতুকপূর্ণ কাহিনীর প্রাধান্য টানি আড্ডায়। সবধরণের শ্রোতার হাসি সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে হয়। :) ক্ষেপাতেও মন্দ লাগেনা। :P ‘সর্দারজী’ আমার বেশ প্রিয়। আজও ঘোর লাগা সন্ধ্যায় তাকেই স্মরণ করছিলাম। প্রচলিত একটি ম্যাগাজিনের ঈদ সংখ্যায় তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি কৌতুকপূর্ণ গল্প ছাপা হয়েছে।

মানুষের ‘মৃত্যু’ বা বড় ধরণের কোন ‘ক্ষতি’ সংক্রান্ত কৌতুকগুলোকে বলে ‘সিক জোকস’। গভীর হিউমারে পরিপূর্ণ সেরকম-ই একটা আওড়াই,

জাহাজ ডুবছে। যাত্রীরা সব ছোটাছুটি করছে, কাঁদছে, চিৎকার করছে, স্রষ্টার নাম নিচ্ছে।

এমন সময়, নিস্পৃহভাবে সর্দারজীকে বাদাম চিবুতে দেখে এই ইউরোপিয়ান যাত্রী তাকে জিজ্ঞাসা করলো, “এখান থেকে মাটি কতদূর?”

সর্দারজী বললেন, “দুইমাইল”।

ইউরোপিয়ান অবাক হয়ে বললেন, “মাত্র দু’মাইল? তার জন্য এত হইচই কেন? দু’মাইল তো সাঁতরেও যাওয়া যায়। যতসব আহাম্মক ভ্রমণকারী! আমি তো টানা পাঁচ মাইল সাঁতার কেটেছি।”

সর্দারজী বললেন, “তাহলে তো কথাই নেই।”

সর্দারজী বাদাম হাতে করে রেলিং পর্যন্ত গেলেন। আর সাঁতারু ডাইভ দিলেন মহাসাগরে।

একডুব দিয়ে তার মনে হলো, ডিরেকশনটা তো নেয়া হয়নি। তিনি চেঁচিয়ে সর্দারজীকে জিজ্ঞেস করলেন, “দু’মাইল এখান থেকে কোনদিকে?”

নির্বিকার সর্দারজী বললেন, “নিচের দিকে!”


মা’দের মন নরম। হেসে ওঠার পাশাপাশি তলিয়ে যাওয়া মানুষের জন্য মন খারাপ করে ফেলে। অথচ, আমরা আধুনিক মানুষেরা এ সবে মজা পাই! ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করা মানবমৃত্যুর ‘লাইভ’ দৃশ্য ‘উপভোগ’ করি। শরীরের বেশিরভাগ অংশ উড়ে যাওয়া আত্মঘাতি মানুষটির বিভৎস ছবি দেখে ‘পুলকিত’ হই। মৌখিক স্বীকারোক্তি-তে অসম্ভব রকমের দ্বিধা থাকলেও, এক ধরণের অনির্বচনীয় আনন্দ উপভোগ করি প্রায় সবাই। খবরের কাগজের প্রধান শিরোনামে ‘এইগুলো’ বড় ‘ফন্ট’ পায়। সংবাদপাঠক এগুলোকেই সবার আগে বলে। চাহিদা আর যোগান এর মহাজাগতিক সম্পর্কটা যেন সবাই জানে!

“মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে, কেউ এমন শান্তভাবে কথা বলতে পারে?” মা কৌতুকটার ব্যবচ্ছেদ করে।

কে যেন বলেছিলো, “রসিকতা হলো সিরিয়াস কিছু বলার সবচেয়ে ভালো উপায়!” কৌতুকের কাটাছেঁড়ায় তাই বেরিয়ে পড়ে অনেক সময় অদ্ভুত সব সত্য!

“পারে তো,” – আমি বলি, “আমরা নিজেরা-ই তো তাই ...”

“মানে কী?”... মা আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেনা।

“এই যে, ভূমিকম্পের ভয়াবহ আশঙ্কার মুখে দাঁড়িয়েও আমরা নির্বিকার রয়েছি। আড্ডা দিচ্ছি। একটা কৌতুকও বললাম তোমাকে। তুমিও হাসলে...” আমার দুইপয়সার তত্ত্বকথার ঝনঝনানি ভালোই বাজে।

মা অবাক হয়েও, আমার কথা মেনে নেয়!


ভূমিকম্পে সব নড়ে। বাড়ি-ঘর-গাড়ি-রাস্তা সব নড়ে। এমনকি পুকুরও নড়ে!

নড়েনা শুধু আমাদের ‘টনক’!


স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ ও দূর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিয়ে তেমন কোন গা নেই কারও। আমারও।



পুনশ্চঃ

১. আমাদের দেশের পটভূমিতে, ভূমিকম্প ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি স্বাস্থকর আলোচনা আছে এখানে।
http://www.sachalayatan.com/tanveer/17193

২. অভিধান না দেখে বলুন তো, ‘টনক’ মানে কী?