শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০০৭

পালোয়ান !

আমি একটা মস্ত পালোয়ান। এ ধারণা দিনে দিনে আরো মজবুত হচ্ছে। শুয়ে শুয়ে এত বেশি বেশি হাতি ঘোড়া এমনকি বাঘ-ভাল্লুক মারছি যে, সেগুলোর হিসাব রাখতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি! গুদামঘর পূর্ণ হয়ে গেছে, আর রাখার জায়গা পাচ্ছিনা। তাই শিকার উতসব আপাতত বন্ধ। শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলাম। কারণ আর কিছুই না। মশার উতপাত। যতই হাতি-ঘোড়া মারিনা কেন, মশা মারতে আমার অতীত রেকর্ড মোটেও সমৃদ্ধ না। চোখের সামনে বোঁ-বোঁ আওয়াজ হওয়াতে সপাটে সেদিকে লক্ষ্য করে বিকট শব্দে তালি বাজালাম। উদ্দেশ্য ওই ক্ষুদাতিক্ষুদ্র জীবটির প্রাণহরণ! বিস্ফোরণ শেষে দেখি মশাটি বিছানার চাদরের উপর নিথর-নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে! কিন্তু শরীরটাকে অক্ষতই মনে হচ্ছে। চিমটি দিয়ে চ্যাংদোলা করে ওটাকে টেবিলের এককোণায় রাখলাম। রক্তচোষা-জীবাণুবাহক এই জীবটির উপর প্রাণঘাতি আক্রমন করতে পেরে খুবই করিতকর্মা মনে হচ্ছে নিজেকে! বারেবারে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম আমার সাফল্য-পালক এই নিশ্চল জীবকোষগুচ্ছকে!

হাতটা ধুয়ে আসলাম বাথরুম থেকে। এসে দেখি, ওমা! মশাটা স্ফিংস এর মত নবজন্ম লাভ করে টেবিল কভারের মসৃন রানওয়ে থেকে টেক-অফের প্রস্তুতি নিচ্ছে! চেষ্টা করলাম, রাজবন্দি পলায়ন ঠেকাতে, তবে ব্যর্থ হলাম আবারও!

ব্যাপারটা বোধগম্য হলো। বরাবরের মত আমি হাত চালিয়েও মশাটার টিকিটিও ছুঁতে পারিনি। তবে তালির বিকট শব্দে কানা তালা লেগে ওটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে! জ্ঞান ফিরতে কিছুক্ষণ সময় লেগেছে ওর! আমার অন্তরালে যাবার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছে। তারপরই ডানা মেলে দিয়েছে আকাশে!

সাফল্যগুলো এভাবে ব্যর্থতায় পর্যবশিত হওয়া খুবই হতাশাজনক!

তাই হাতি-ঘোড়া-বাঘ-ভাল্লুক মারাতেই মনোনিবেশ করলাম আবার!

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০০৭

অমুক বিরিয়ানী হাউস!


খাওয়া দাওয়াতে আর আগের মত রুচি পাচ্ছিনা। হলের ডাইনিং এ যখন খেতাম, তখন ডাইনিংকে শাপ-শাপান্ত করেই ডাইনিং এর দরজা দিয়ে ঢুকতাম! এক পিস মাছ অথবা মাংসের টুকরার সংগে আনলিমিটেড ভাত। ভালোর মধ্যে যা ছিলো, সেটা হলো ডাল! ওটা তখনও নিটোল-স্বচ্ছ-পানির ফোয়ারাতে পরিণত হয়নি। তাই রক্ষা! ডাইনিংকে আর দোষ দিয়ে কি হবে। এই দূর্মুল্যের বাজারে প্রতিবেলায় ১১ টাকা দিয়ে পেট পুরে খেতে পারার কথা একেবারে নিম্নবিত্তরাও চিন্তা করতে পারেনা এখন।

যাইহোক, গড়িয়ে গড়িয়ে বুয়েট-লাইফ শেষ হয়ে গেলো একদিন। ডাইনিং এ আমাদের পদচারণা এখন নিষিদ্ধ । ক্যান্টিনে খেতে যাবার পথে কাঁচের জানালার ভিতর দিয়ে সাজানো থালা-বাটি-ভাত-তরকারী চোখে পড়ে। ইস...ওখানে ফ্রী খেয়েছি, কতকাল! এখন ক্যান্টিনে খেতে গেলে সুড়সুড় করে পকেট থেকে টাকা বেরিয়ে যায়! এমন না যে, ক্যান্টিনে হররোজ মোগলাই খানা খাই আর রাজা উজির মারিডাইনিং এ যা খেতাম এখানেও তা-ই খাই, শুধু নিজের ইচ্ছেমত ভ্যারাইটি আনা যায় প্রতিদিনের খাবারে । মাঝেমাঝে একঘেয়েমি কাটাতে তেহারী-কাচ্চি-বিরিয়ানি-গ্রিল চিকেন এসবের দোকানে হামলা করি। স্বাদে একটু বৈচিত্র আসে!

ওদিকে, কতিপয় জ্ঞানী ব্যক্তি সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়ায় বসে বসে রসালাপ করেন। বেশিরভাগই প্রাক্তণ বুয়েট ছাত্র। সারাদিন যে যার কাজ শেষ করে চলে আসেন এখানে। অপকর্মসমুহ ই তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয়! হঠাত করেই তাদের মনে হল, দেশের জন্য কিছু একটা করা দরকার। তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ নিয়েও আপাতত ঝাঁপিয়ে পড়া স্থগিত রাখলেন!তবে এক গ্রুপ অগ্রণী ভুমিকা পালন করেই খুলে ফেললেন অমুক বিরিয়ানী হাউস। সেটার কথাই বলতে যাচ্ছি।

ভাবলাম, এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি না করে এদেরকেই উতসাহ দেই, ওদের নতুন খোলা দোকানে ভুরিভোজ করে! ও!দোকান পরিচালনার সম্পুর্ণ দ্বায়িত্ব তাদেরই পরিচিত এক পাড়াতো ভাইয়ের, তারা ফাইনান্সার মাত্র! তেহারী অর্ডার দিলাম। অনেকক্ষণ কোন খোঁজ নেই। কি অর্ডার দিয়েছিলাম সেটা ভুলে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তেই তেহারী এলো, সমসাময়িক কালে অর্ডার দেয়া কোক আসেনি। মশলাবিহীন আঠালো পোলাও এর উপর তিন-পিস মাংসের টুকরা সঙ্গীহীনতার লজ্জায় মুখ লুকানোর চেষ্টা করছে! ঘ্রাণং অর্ধ ভোজনং! কিন্তু তেহারীটার ঘ্রাণ নেই, তাই প্লেট শেষ করে উঠার পরও অর্ধেক পেট খালি পড়ে রইলো! কোন রকমে টাকা দিয়েই বের হলাম দোকান থেকে। বলতেই হলো, “The worst তেহারি ever!!”

তবে একটা বিশাল লাভ হয়েছে! এরপর থেকে যা-ই খাইনা কেন তা-ই ভালো লাগে! কোন কিছুতে অরুচি এলে মনকে বলি, চল, ওই তেহারি খেয়ে আসি! সঙ্গে সঙ্গে রুচি ফিরে আসে! ক্যাফেটেরিয়ার তেহারী গলা দিয়ে নামতো না আগে, এখন গিয়ে নিশ্চিন্তে ওটা অর্ডার দিতে পারি! নো প্রবলেম টু সোয়ালো!

খাওয়া দাওয়াতে আর কোন সমস্যা নেই এখন আমার!

পুনশ্চঃ কারো গুডউইল নষ্ট করার জন্য এই ব্লগটা লেখা হয়নি। অভিজ্ঞতার সামান্য প্রকাশ মাত্র! ওরা যদি ঠিকঠাক মত সার্ভ করতে পারে, তাহলে আবার আমাকে সবান্ধব দেখা যাবে ওদের ওখানে! তবে নির্ভরযোগ্য গুজবে প্রকাশ, উদ্যোক্তা-মহোদয়গণ নিজেরাই ওখানে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আমার আর কি দোষ!?

সোমবার, ২৫ জুন, ২০০৭

সায়েন্স-আর্টস-কমার্স !

ক্লাস নাইনে উঠেই হঠাত করে মনটা খারাপ হয়ে গেলো!

যারা এতদিন একসাথে একইরকম বইপত্তর নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছি, তাদের মধ্যে সেপারেশন হয়ে গেলো! কেউ নিলো সায়েন্স, কেউ আর্টস আর কেউবা পেলো কমার্স! ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবার শখ ছিলো গোপনে-প্রকাশ্যে, তাই সায়েন্সই নিতে হলো! ভালো ছাত্ররা নাকি সায়েন্স নেয়, তাই সায়েন্স যখন পেলামই, তখন ছেড়ে দিই কোন দুঃখে? নাম রেজিস্ট্রি করে আসলাম বিজ্ঞান বিভাগের খাতায়! ভালো ছাত্রদের মধ্যে খারাপ কিংবা খারাপ ছাত্রদের মধ্যে ভালো, এ ধরণের সুনাম/বদনাম আমার সবসময়ই। নিরেট মূর্খ ছিলাম তখন, তাই সায়েন্সের ছাত্র বলে মাঝে মাঝে ভাবও নিয়েছি বেশ কিছুদিন! সায়েন্স এ কি কি পড়তাম তখন? ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজী, ম্যাথ ইত্যাদি ইত্যাদি। পৌরনীতি, সোশিওলজি, হিস্ট্রি, একাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, ইকোনমিক্স... এসব পড়তো বাকিরা। আর্টস আর কমার্সের ছাত্ররা। ওইগুলা বিজ্ঞানের সাবজেক্ট না!

এস.এস.সি আর এইচ.এস.সি এভাবেই গেলো।

বুয়েটে এসে সেকেন্ড সেমিস্টারেই চমকে উঠলাম! ইকোনমিক্স এর ডঃ হাবিবুর রহমান সদর্পে ঘোষণা করলেন, “Economics is a basic science!”। শুধু সায়েন্স বললেই মেনে নেওয়া যেতো, তাই বলে ব্যাসিকায়েন্স?! ক্লাসের কোণাকাঞ্চিতে মৃদু আপত্তির গুঞ্জন! স্যারের কানেও গেলো তা। তিনি নানা রকম যুক্তি তর্ক দিয়ে আমাদের বোঝাতে চাইলেন যে অর্থনীতি এখন একটা বিজ্ঞান! এত কষ্ট করে কঠিন কঠিন সুত্র মুখস্ত করে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হয়ে পাশ করে অনেকের পক্ষেই উদারমনা হয়ে এটা হজম করা একটু দুষ্কর! ফলে যা হবার তাই হলো...উভয় পক্ষই নিজ নিজ মতে স্থির থেকে বিচার মেনে তালগাছটা নিয়ে বাড়ি ফিরলো!

আরো চমক অপেক্ষা করছিলো। একাউন্টিং এর ক্লাস টেস্টে প্রশ্ন-ই আসলো, “Explain….Accounting is an informative science!” আর সোশিওলজী ক্লাসে তো স্যারের সাথে আড়াআড়ি ই লেগে যাচ্ছিলো আরেকটু হলে...কোনটা সায়েন্স আর কোনটা নন-সায়েন্স...এই নিয়ে! স্যার শেষে খেপেই বললেন, তোমরা বিশ্বাস করো আর না করো...ইট ইজ সায়েন্স সায়েন্স এন্ড সায়েন্স!। বাঁকা হাসি ফুটলো অনেকেরই মুখে! ভাগ্যিস, ইংলিশের টিচার বলেননি, “English is a literature science!”. তাহলে হয়তো ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে সিট বুকিং দেয়া লাগতো!

বোমাটা ফাটালেন ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস ক্লাসে, ডঃ আব্দুল জব্বার! প্রথম দিন এসেই বললেন, “Civil Engineering is not science, it is art!”

খুব কষ্ট পেলাম মনে!

২৪ আর ২৪ যোগ করলে কত হয়? ৪৮? সায়েন্সের সাবজেক্ট গুলোতে ৪৮ ই সঠিক উত্তর! কিন্তু একজন ভালো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের উত্তর হওয়া উচিত ৫০!

এটাই আর্ট!



বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০০৭

সাহায্যপ্রার্থী!

টংগী থেকে আজিমপুর।

আমার এ কদিনের আসা যাওয়ার রুট!

সরাসরি অনীক পরিবহনের বাসে চড়লেই সিটে বসে আরামেই একটা ঘুম দিয়ে চলে আসা যায়। কিন্তু আজ আবার গরম পড়েছে! তাই একটু শখ জাগলো এসি বাসে যাওয়ার! কিন্তু টংগীর স্টেশন-রোডে বেভকোর এসি বাসের কোন কাউন্টার নেই! ভাবলাম, লোকাল বাসে করেই উত্তরা নেমে ওখান থেকেই উঠি। জ্ঞ্যানী ব্যক্তিদের মত চিন্তা আর কাজের মিল রাখলাম! ২৭ নম্বর মুড়ির টিনে উঠে পড়লাম!

একটু পরেই একলোক উঠলো বাসে। সাহায্যপ্রার্থী। চল্লিশের কাছাকাছি বয়স। ডানহাতটা অকেজো। দড়িতে আটকানো কাপড়ের মত ঝুলছে দেহের একপাশে। মোটামুটি পরিপাটি জামাকাপড়। কথা বলা শুরু করলো সে। সোনালী ব্যাংকে কি যেন একটা ছোটখাটো চাকরী করতো লোকটা। কোন এক অজানা কারণে তার সুস্থ্য ডানহাতটা ক্রমে অবশ হয়ে যেতে থাকে। দেশে বিদেশে ভালো ভালো অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি তার। শেষে একেবারেই অকেজো হয়ে যায় ওটা। ব্যাংকের চাকরী শেষ! তাই অক্ষম হাতটাকেই নিয়তি মেনে নিয়ে সে বাসের হেলপারী করা শুরু করে। কিন্তু সেখানেও দূর্ভাগ্য! বাসের এক্সিডেন্টে সক্ষম বামহাতটার ও দুটো আঙ্গুল কাটা যায় তার। এখন সে একরকম অথর্ব জীবন যাপন করছে। ঘরে বউ আছে। ছেলেটা স্কুলে পড়ে। সবার সাহায্য চায় সে, ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য! তার কাছে থাকা চকোলেট কিনলেই সে খুশি, তাকে সাহায্য করা হবে। চকোলেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দেয় সে সবার দিকে। অঝোর ধারায় চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে তার। দেখলেই মায়া হয়! অনেকেই টাকা দেয় তাকে। চকোলেট নিতে অনুরোধ করে সে। কিন্তু বেশিরভাগ বাসযাত্রীই টাকার বিনিময়ে চকোলেট নিতে অনীহা প্রকাশ করে। আমিও কিছু টাকা দিলাম, কিন্তু একটা চকোলেট ও নিলাম!

টাকা নিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সে নেমে পড়লো বাস থেকে!

এখন প্রশ্ন হলো, লোকটার কথাগুলো কতটুকু সত্য? এই ঢাকা শহরে প্রায় প্রতিটা মোড়ে এক বা একাধিক সাহায্যপ্রার্থীর দেখা মিলবে। সবাই কি সত্যিকারের দূর্ভাগা?অবশ্যই নয়!

ধরে নিই, আমাদের এ লোকটা ও একটা জোচ্চোর!...

চমতকার অভিনয় করে আমাদেরকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করেই টাকাগুলো বাগিয়ে নিলো সে। চকোলেট বিক্রি করার জন্য এত কান্নাকাটি করার দরকার ছিলোনা! টপ গ্রেড অভিনেতা সে। মঞ্চে-নাটকে-সিনেমায় কত গুণী শিল্পীদের অভিনয় দেখে আমরা হাততালি দিই। গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকিট কিনি। লোকটা যদি প্রতারক ও হয়ে থাকে, তাহলে ধরেই নিলাম তার অভিনয় দেখেই আমরা তাকে সম্মানী দিলাম!!!

আমার হাত থেকে খসে পড়া কাগজের নোটটা বিফলে যায়নি তাহলে !

পুনশ্চঃ আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় লোকটা আসলে কেমন। তাকে দেখে আমার যা মনে হয়েছে সেটাই লিখে ফেললাম ঝটপট! সে সত্যিকারের অভাবী হলে, সৃষ্টিকর্তা তাকে সাহায্য করুন। আর প্রতারক হলে......!?

সোমবার, ১৮ জুন, ২০০৭

বৃষ্টিমুখর দিনে এক অলসের রোজনামচা!


আমি এমনই মহা আলসে যে, যদি বলি, ব্যাস্ত আছি তাহলে অনেকেই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়! কিন্তু সত্যি সত্যিই আমি গত ৩ দিন ধরে ব্যস্ত!! কি নিয়ে ব্যাস্ত? গুড কোয়েশ্চেন! গত ১০ তারিখ আমার ফাইনাল সেমিস্টারের রেজাল্ট হয়ে গেছে। সেই হিসাবে এখন আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার!। কিন্তু এমন সময় পাস করে বেরুচ্ছি যে, সময়টাই খারাপ! চাকরী বাকরীর অবস্থা একদম ই বেহাল! অভাগা যেদিকে তাকায় সেদিকেই সাগর শুকিয়ে যায়! এই নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকার আসার কারণে দূর্নীতিবাজরা বাড়িঘর-ফ্লাট কেনা কাটা বাদ দিয়েছে! আর ইম্প্যাক্ট পড়েছে আমাদের উপর, যারা মাত্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলাম! এখন মনে হচ্ছে এই সব ২-নাম্বার মানুষগুলোই এতদিন আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলো! যাইহোক, সময় তো আর বসে থাকেনা। এই অলস সময়ে আমার চিরাচরিত প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে সারাদিনই ঘুমিয়ে থাকতে পারতাম! তা না করে আমি এখন সেই সুদূর টঙ্গি তে যাই কামলা খাটতে! সকাল থেকে সন্ধ্যা। সেটা নিয়েই ব্যাস্ত!

তবে আজ যাইনি। সকালে গিয়েছিলাম একটা চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে! এই দূর্যোগের দিনে একটা আশার আলো বটে! উত্তরা তে অফিস। গত পরশু ফোন করে বলে, আপনি একটা আমেরিকান কোম্পানিতে আপ্লাই করেছিলেন অনলাইন এ, ইন্টারভিউ এ স্বাগতম! কিন্তু আমি মনেই করতে পারলাম না কোথায় করেছিলাম। যাই হোক, ডাকলোই যখন, গিয়েই দেখি কি হয়! গেলাম আর চাকরী হয়ে গেলো! কিন্তু নানা কারণেই চাকরিটা আমি করবোনা হয়ত!!

আমার বাবার দিকের আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর নেইনা। এমন বদনাম আমার সবসময়ই ছিলো!এখনো আছে। তাই উত্তরা থেকে ফেরার পথে নিকুঞ্জ নামলাম চাচাত ভাই এর বাসায়। তা প্রায় বছর খানেক এর বেশি হয়ে গেল তার সাথে আমার যোগাযোগ নেই! বছর খানেক আগে প্রথম সন্তানের পিতা হওয়াতে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম, তারপর আজ এই! রাস্তাঘাট মনে রাখার ক্ষেত্রে আমি আবার সাক্ষাত আইনস্টাইন! কিছুতেই মনে রাখতে পারিনা ঠিকানা। তার বাসার সামনে দাঁড়িয়েই তাকে ফোন করলাম, ভাই, আপনার বাসা খুঁজে পাচ্ছিনা!

ওখান থেকে বিকালে আমার হলে ফিরে আবার কাউরানবাজার! রাস্তা পার হচ্ছি, ট্রাফিক আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় হঠাত করে কঠিন বৃষ্টি! কাউরানবাজার এ রাস্তা পার হবার অভিজ্ঞতা থাকলে বুঝতে পারবেন, রাস্তা পার হউয়া কি কঠিন কাজ! আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভিজছি কিন্তু অগনিত গাড়ির কারণে রাস্তা পার হতে পারছিনা! একেবারে কাক ভেজা হয়ে গেলাম নিমেষেই!

ওখান থেকে মৌচাক গেলাম, ভিজে ভিজেই বলা যায়! কাউরানবাজারের বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য শেল্টার নিয়েছিলাম লোকাল বাসের ভিতর। সেটাই আমাকে নামিয়ে দিলো শাহবাগে! বাস থেকে নেমেই এক দৌড়ে বারডেমের ভিতর! কিছুক্ষণ বসে থেকে আবার মৌচাকের দিকে রিকশা করে! সাইফুরস এ যখন পৌছালাম, তখন আর শরীরে শুকনো জায়গা নেই! বলতেই পারেন, আরে বাপু! এত কষ্ট করে আজই যাবার কি দরকার ছিলো! পরে গেলেও তো চলতো! কথা ঠিক! কোন সময়ই ঠিক মত লক্ষ্যে পৌছাতে পারিনা, এমন বদনাম আমার। এই কারণেই ভেবেছিলাম যে করেই হোক, আজই আমাকে ভর্তি হতেই হবে ওখানে। কিন্তু কে জানতো এমন হবে!

রাত সাড়ে আটটায় যখন আজিমপুরের বাস ধরলাম তখন আমি ক্লান্ত-অবষন্ন! হঠাত করেই দেখি টিকিট চেকার! কিন্তু ততক্ষনে আমি টিকিট দলা পাকিয়ে ছিড়ে অর্ধেক ফেলে দিয়েছি! যাইহোক, চেকার সাহেব আমার ছেড়া টিকিটেই সন্তুষ্ট হলেন! বাঁচলাম! আজিমপুরে এসে আবার বৃষ্টি! এতই যখন ভিজলাম, আরেকটা না হয় ভিজি! ওখান থেকে হলের পথের আধাকিলো রাস্তা প্রচন্ড বৃষ্টিতে হেঁটেই চলে আসলাম!

তারপর কোন রকমে খেয়েদেয়েই দশটায় একটা আরামের ঘুম!

এখন রাতদুটোয় উঠে এই ব্লগটা লিখছি!

বুধবার, ১৩ জুন, ২০০৭

রোল-কল!(বুয়েটস্য স্মৃতি-গদ্য)

(সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ বুয়েট বিষয়ক ব্লগগুলো মূলত আমার নিজের জন্যই লেখা। অনেক দিন পর নিজেই যখন নিজের ব্লগ প্ড়বো, তখন খুব ভালো লাগবে! মনে পড়ে যাবে সবকিছু। তবুও কেউ যদি নিজ-উদ্যোগে এই নিরস ব্লগগুলো পড়ে থাকো , সেটা আমার জন্য বোনাস! )

স্কুল জীবনে সারাদিনে মাত্র একবার ই রোল কল হত, সকালে, প্রথম পিরিওডে। মাঝে মাঝে অবশ্য ক্লাসত্যাগী ছাত্রদের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখিয়ে টিফিন শেষে আরেক দফা হতো রোলকল। কিন্তু বুয়েট লাইফ এর প্রতি ক্লাসেই হয় রোল কল! তা নিয়েও হয় অনেক কাহিনী! রোল কল এর উত্তর দেবার ভঙগী একেক জনের একেকরকম। কারো সঙ্গেই কারো মেলেনা। কেউ আস্তে বলে, ইয়েস স্যার। আবার কেউ এত জোরে ইয়েস স্যার বলে যে, সেটা শুনে কানের সুড়ঙ্গটা একটু বড় হয়ে যায়! যাই হোক, আমাদের রোল তাশফিনা তৌফিক। ওকে অনেকেই আড়ালে আবডালে T-square বা টিটি ডাকে। আমরা অবশ্য ওকে বলতাম Indicator! Indicator যৌগ রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় ব্যবহার হয় যা বিক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার শেষ অথবা শুরু Indicate করে। আমাদের Indicator ও ক্লাসের গ্যাপে অন্য মেয়েদের থেকে সবসময়ই দূরত্ব বজায় রেখে বারান্দায় হাঁটাহাটিঁ করতো আর স্যার আসলেই এক নিমিষে ক্লাসে হাজির হয়ে যেত! যেন ‘teacher-presence-indicator’। ওকে ক্লাস এর দিকে আসতে দেখলেই আমরা ঝটপট সুবোধ বালকদের মত চুপচাপ ক্লাসে চলে আসতাম! ওর আবার নাম প্রেজেন্ট দেবার স্টাইলটা আলাদা, প্রেজেন্ট প্লিজ! একদিন বসুনিয়া স্যার একটু ঝাড়ি দিয়ে ওকে বললেন, তোমার নাম যিনি ডাকেন তিনি একজন স্যার । তাকে সম্মান দেয়া তোমার উচিৎ। ইয়েস স্যার বলবে! তারপর দুদিন ইয়েস স্যার কলরব! এবং সপ্তাহান্তে আবার প্রেজেন্ট প্লিজ!

আমাদের জয় এর রোল ফিফটি। ক্লাসের অনেকেই ওকে ভয় পেতো। আমাদের বুয়েট এ থাকা অবস্থায় স্টুডেন্টদের মাঝে সবচেয়ে বড় ধরণের মারামারি হয়েছে তার উদ্যোক্তা ও ! আর আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, নাম প্রেজেন্ট করার সময় ও প্রায় সময়ই অন্যমনষ্ক থাকতো, ফলে ঠিক সময়ে ওর নাম প্রেজেন্ট হতোনা। পরে, ও উঠে দাঁড়িয়ে বলতো, ফিফটি, স্যার! ঘন ঘন এই কান্ড ঘটার ফলে ওর নামই হয়ে গেল ফিফটি, স্যার!শেষে এমন অবস্থা হলো যে, ওর নাম প্রেজেন্ট দিতে মিস হয়ে গেলে বাকিরা একসাথে বলে উঠতো, ফিফটি, স্যার!

নাম প্রেজেন্ট দিতে মিস হলে রাশেদ বলতো, স্যার, থার্টি সিক্স, স্যার। আগে পিছে দুই বারই স্যার! ও বলে, নেক বারই ট্রাই করেছি, কিন্তু হয়না! আগে পিছে স্যারনা বললে মনে হয় স্যার নাম প্রেজেন্ট দেবেনা! রাশেদ আরেকটা মজার কাজ করতো। কোন কোন ক্লাসে নাম মুখে প্রেজেন্ট না দিয়ে রোল-শীটে সাইন করতে হয়। রাশেদ প্রায়ই বিশাল বড় করে নাম সাইন করে ওর আগের রোল পার্সার আলোটেড বক্সে ঢুকে পড়তো সন্দেহজনকভাবে! আরেকবার ইশতিয়াক এত আস্তে ইয়েস স্যার বলেছিল যে, জাকারিয়া স্যারের কানে ঠিক মত পৌছায়নি! স্যার ওকে দাঁড় করিয়ে বলেছিলেন, কি? ইয়েস স্যার নাকি নো স্যার?। আবার অদিতি ইয়েস, স্যার বললে একই সংগে পিছন থেকে কয়েকটা মনুষ্যরুপী বেড়াল সুর মেলাতো!

আরেকবার ইমন ক্লাসে ছিলোনা। ওর রোল প্রক্সি দেবার কথা ওর ইয়ার দোস্তদের! মালেক স্যার যখনই ডাকলেন, টুয়েন্টি সেভেন! তখনই ক্লাসের দুই প্রান্ত থেকে একসাথে ইয়েস স্যার! স্যার ভালো মানুষ, জিজ্ঞাসা করলেন, কয় জন? আর কোন সাড়া শব্দ নেই! আসলে ইমন প্রথমে শাপলাকে বলেছিলো প্রক্সি দেবার জন্য। কিন্তু শাপলা নিজেই আসবে কিনা এই নিশ্চয়তা না থাকায় ও আবার রাজীব কেও বলে গিয়েছিলো। কিন্তু শাপলা ক্লাসে হাজির হওয়ায় এই অনভিপ্রেত ঘটনা!