সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০০৭

ল্যাবে একদিন !

পঞ্চম সেমিস্টারে Water Resource Engineering এর একটা ল্যাব-কোর্স করতে হয়। কাজ তেমন আহামরি কিছুনা। শুধু কতগুলো হাইড্রোলিক-স্ট্রাকচার এর কিছু Parameter এর মান বের করতে হয়। বেশ আরাম। আমার মত ফাঁকিবাজ যারা, তারা খুব সহজেই অন্যের ঘাড়ে পা দিয়ে পুরো কোর্সটা পার করে দিতে পারে! শুধু গ্রুপমেটদের একটু সহানুভুতি আদায় করে নিতে পারলেই হয়! আর বসদের ক্যালকুলেশন কপি করে জমা দিলেই চলে। ডিসকাসন অন টপিক? এর কাছ থেকে একটু, আর ওর কাছ থেকে বাকিটুকু, এভাবেই! স্যারদের মাথায় অতো বুদ্ধি আছে নাকি যে আমাকে ধরবে?

াই হোক, যেদিন Chezy’s C প্যারামিটার বের করলাম সেদিনের কথা-ই বলি! আমাদের মধ্যে শিখার সিজিপিএ খুব হাই! শিখা সম্পর্কে আমাদের মূল্যায়ন, “She possesses photographic memory”! ম্যানেজমেন্ট এর মত বাংলা ক্লাস-টেস্ট এ আমরা যেখানে কেউই ২০ এর মধ্যে ১০-১২ এর বেশি পেলামনা, সেখানে ও মুখস্থ জিনিস হুবহু উগড়ে দিয়ে ২০ ই পেয়ে বসলো! লাইন বাই লাইন মুখস্থ করেছি সেই ছোটো বেলায় ...আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে... তারপর যেনি? আমারও আছে ফোটোগ্রাফিক মেমোরি, কিন্তু সেই মেমোরি ধরে রাখার তেমন ভালো োটোগ্রাফিক ফিল্ম নেই!

আর পাটু ? শিখাকে ইনভার্স করলে যা পাওয়া যায়, তা-ই পাটু! ফার্স্ট বেঞ্চে বসলেও ঝিমায় মতান্তরে ঘুমায়! সকাল আটটার ক্লাস সারা বুয়েট লাইফে কতগুলো করেছে তা আঙ্গুল গুনেই বলে দেয়া যায়! ঘুম থেকে সকালে ওঠা কি যে কঠিন!

সেদিন ক্লাসে শিখাদের গ্রুপে এক্সপেরিমেন্ট শেষে Chezy’s C এর মান আসলো প্রায় ৪০০০ এর কাছাকাছি! যেখানে ‘Allowable Value ৪ থেকে ৫ , সেখানে ৪০০০ প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি-ই বলতে হবে! পাটু কখনই শিখার সাথে পেরে ওঠেনি । Tease করার এ সুবর্ণ সুযোগ ছাড়তে নারাজ সে। তোদের C এর মান যা এসেছে, তা দেখলে স্বয়ং Chezy আত্মহত্যা করতো। আ...হা...রে... বেচারা Chezy!

মনে হল শিখার গালে কে যেন একটা অদৃশ্য থাপ্পড় মেরে দিলো! কিন্তু আমাদের হাসি ঠেকানো-ই দায় হলো। শিখাকে এমন নাজেহাল অবস্থায় দেখতে পাওয়া যা-তা কথা নয়! কিন্তু পাটুর বিজয়রথ ওইটুকু-ই

পরবর্তী সংক্ষিপ্ত পর্যায়ক্রমিক ঘটনাবলীঃ

১. ক্রোধাগ্নিতে ক্রমশঃ সমুজ্জ্বল শিখাদেবী

২. চরমমাত্রায় ক্রোধারোহন

৩. বিষোদগারের প্রস্তুতি গ্রহন

৪. বিষোদগার বর্ষণ

৫. (শ্রোতাকূলের কর্ণকুহরে অদৃশ্য প্রলেপ লেপন)

৬. রাজাধিরাজ পাটু-সিংহের কৃতিত্বের সহিত রণে ভঙ্গ!

৭. শিখাদেবীর হৃত-রাজ্য পুনরুদ্ধার

৮. একাংকিকার যবনিকা পতন

শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০০৭

ফাইট দেয়া...

চোথা!

বুয়েটে এসেই এই শব্দটা শরীরে একটা ইলেকট্রিক শক দিলো! এত চমৎকার পরিবেশে এমন একটা অশ্লীল শব্দ! অবলীলায় সবাই বলছে কিন্তু আমার দাঁতকপাটি! আমার ইতস্তত ভাব দেখে অবশেষে এক জ্ঞানী ব্যক্তি আমাকে অভিধান খোলার উপদেশ দিলেন। সেখানে পেলাম, চোথা শব্দের অর্থ নোট, লিখিত ডকুমেন্টস ইত্যাদি। আর বুয়েটিয় ভাষায় বলতে গেলে ... চোথা হইলো এমন এক বস্তু যাহা ভালো ছাত্ররা উতপাদন করিয়া থাকে এবং তাহা গলাধঃকরণ করিয়া নিম্নস্তরের ছাত্ররা পাশ করিয়া থাকে! এরপর বুয়েট লাইফ এক্কেবারে ঝরঝরা! হয়ে উঠলাম একজন গর্বিত চোথাবাজ! পরীক্ষায় পাশ করতে চাও? চমতকার কিছু চোথা বাগাও! চোথা...দি সিক্রেট অফ মাই এনার্জী!

এরকম আরেকটা ভার্সাটাইল শব্দ ফাইট দেয়া!

এক পাকিস্তানী ছাত্রের কথা শুনেছি । ছেলেটা থাকতো আহসানউল্লাহ হলে। কোন এক বিকালে নজরুল ইসলাম হলে বিশেষ কারণে গিয়েছিলো তার ইয়ার দোস্তের কাছে। এমন সময় সুদূর পাকিস্তান থেকে মায়ের ফোন। তখন তো আর মোবাইল ফোন ছিলোনা। তাই নিচে নেমে গেটের কাছে রাখা ফোন ধরলো রুমমেট। নির্বিকার চিত্তে সে জানিয়ে দিলো... ওমর গেছে নজরুল ইসলাম হলে। কি করতে? ওহ! ও তো ফাইট দিতে গেছে! একটু পরেই চলে আসবে! ওমরের মায়ের জান ধড়াস! সুদুর বাংলাদেশে গিয়ে ছেলে ফাইট দিচ্ছে মানে ডুইং মারামারি, মেকিং মিসটেক! সংগে সংগে পাকিস্তান হাই কমিশনে ফোন...সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিসে ফোন ...সেখান থেকে একগাদা পুলিশ নিয়ে নজরুল ইসলাম হলে কর্তৃপক্ষের সদলবলে আগমন...তারপর? সবাই আবিষ্কার করলো ওমর তার বন্ধুর সাথে ফাইট দিচ্ছে!

ওমরের মা কি আর জানতো যে বুয়েটে ফাইট দেয়া মানে সিরিয়াসভাবে পড়াশুনা করা! পরীক্ষা সামনে...ফাইট দেয়া ছাড়া তো আর উপায় নেই!

গ্রামীণফোনের ডিজুস একবার সবার মাথা খেয়ে ফেললো। ২ টাকায় সারারাত কথা! রাত ১২ টা বাজলেই... এ-টে-ন-শ-ন...কানে ফোন! মুড়ি মুড়কির মত কমবেশী সবাই ডিজুসের সিমকার্ড কিনে ফেললো! করিডোরের কোনায়...ছাদের উপর...বিছানার চাদরের নিচে...বাগানে ফুলগাছের তলায়...সবাই নিজ নিজ সুকন্ঠীর সাথে ফাইট দিতো! এতোদিনে ফাইট দেয়ার আরেকটা মিনিং পাওয়া গেলো! তখন আমি কোথায় ছিলাম?! আমি ছিলাম দর্শক! সবাই যদি খেলতে থাকে তাহলে কি চলে? দর্শক তো থাকতেই হবে!

শেষ করি আরেকটা ঘটনা কথা বলে।

নববিবাহিত এক বড়ভাই বুধবার রাতে ব্যাগ গোছাচ্ছিলো। ও! তোমরা বুঝি জানোনা? বুয়েটে বৃহস্পতি আর শুক্রবার একাডেমিক ছুটি। তাই অনেকেই বুধবার রাতে বাসায় যায়। বড়ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো একজন, ভাই কোথায় যাচ্ছেন? বড়ভাই একটু লজ্জা মেশানো মুচকি হাসি দিয়ে বললো, শ্বশুর বাড়ি যাই। একটু ফাইট দিয়ে আসি!

সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০০৭

বিজাতীয় ভাষা শিখতে গিয়ে...

বছর তিনেক আগে হঠাত মাথায় ভুত চাপলো...শখ হলো যেকোন একটা বিজাতীয় ভাষা শেখার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Institute of Modern Language বিভিন্ন ভাষার কোর্স অফার করে! ওদের বিল্ডিংটার করিডোর দিয়ে হাঁটলে নানারকম কিচির-মিচির শোনা যায়। কিন্তু কোন ভাষায় পদ্য লিখবো, সেটাই ঠিক করতে পারলাম না। সবাই বললো, ফ্রেঞ্চ শেখো। কানাডা গেলে কাজে লাগবে। কিন্তু নাকিসুরে উচ্চারণ আমার পছন্দ নয়। শেষে নিজের নামটাও উচ্চারণ করতে হবে...আঁরাঁফাঁ(ত)। (শুনেছি, এর নাকি উচ্চারণ নেই। অনেকটা এর মত উচ্চারণ!)। আমার বন্ধু মনি অঁলিয়স ফ্রঁসেস এ ফ্রেঞ্চ শিখতো। ফ্রেঞ্চকে বেনিফিট অফ ডাউট দিতে গিয়ে বুয়েটের এক ফাইনাল পরীক্ষায় একটা ভাইটাল-উইকেট হারিয়ে ফেললো! জীবনে প্রথম বারের মত ফেল ওর! তাই ফ্রেঞ্চ-ভীতিটা আমার ছিলোই। জার্মান ভাষাকেও অনেক গুটেনটাগ করতে বললো। কিন্তু জার্মান বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা নেই, আছে লটারী। রিস্ক নিলাম না আর। কি করি?? আমাদের এনভায়রনমেন্ট ল্যাবে একটা যন্ত্রের গায়ে জাপানী ভাষায় কিসব আবোল-তাবোল লেখা। খুব জানতে ইচ্ছে করতো কি লেখা ওইখানে। তাই ভর্তি-ফর্মে শেষ মুহুর্তে জাপানিজকেই আত্মীকরণ করলাম! আমার দেখাদেখি ইশতিয়াক ও!

লা লা লা লা...মেরা জুতা হ্যায় জাপানী...লা লা লা!

তুমুল উত্তেজনা নিয়ে ক্লাস শুরু করলাম। এমনিতেই আমার বাংলা জ্ঞানের অবস্থা তথৈবচ। কোথায় আর কোথায় , এ প্রশ্নে প্রায়ই হোঁচট খাই। আর দুয়েকলাইন ইংলিশ ঝেড়ে চেক করতে হয়, সামনের পাটির দাঁতগুলো যথাস্থানে আছে কিনা! তবুও নিহোং-গো(জাপানীজ) এর ব্যাপারে আমি আশাবাদী! দেশি একজন টিচারই ক্লাস নেন। আরো ভরসা পেলাম! প্রথম প্রথম যা পড়াতেন সবই পারতাম! কিন্তু আস্তে আস্তে ব্যাপারটা ট্রাজেডিক হয়ে উঠতে লাগলো! যে ভাষায় ১৮০০০ বর্ণ মতান্তরে আরো বেশি, সেই ভাষা আয়ত্ত করা যা তা কথা না! ৩ সপ্তাহের ভিতর ইশতিয়াক জাপানী ভাষাকেই সায়োনারা জানিয়ে ফেললো! আমি তবুও কষ্ট সয়ে চালিয়ে গেলাম!

আমাদের স্যার যতটা পড়ান তার চেয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে আলাপেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন! স্যার ছিলেন লীগ-পন্থী আর প্রতিটা ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ক্লাসে একজন ছাত্রদল-নেতা ও উপস্থিত ছিলেন! ফলে সবসময় যা হয় তা-ই হত! প্রায় প্রতিদিন ই আলোচনা দীর্ঘায়িত হতে হতে ক্লাসের অনেকটা সময় খেয়ে ফেলতো! আমরা উপস্থিত আমজনতা দুই-জ্ঞানী ব্যাক্তির জ্ঞানগর্ভ আলোচনা চিবুকে হাত রেখে শুনতাম! এছাড়া জ্যোতিষশাস্ত্রে স্যারের অসীম কৌতুহল! সাগ্রহে-সানন্দে ঘোষণা করলেন, তিনি হাত দেখতে পারেন। সংগে সংগে তার অনেক শিষ্য জমে গেলো! এক অত্যুতসাহী ছাত্র বলেই ফেললো, স্যার, আমার হাতটা একটু দেখে দিন!। এই অনুরোধে স্যারের মুখে হাজার পাওয়ারের টিউবলাইট জ্বলে উঠলো! প্রাইমারী স্কুলে মাস্টারমশাই পিটুনি দেবার আগে যেভাবে হাত বাড়িয়ে রাখতে বলতেন, সেভাবেই সবাই হাতের তালু এগিয়ে দিলো স্যারের দিকে! কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাগ্যগণনা-লাকভেল্কি-তুকতাক সবসময়ই এড়িয়ে চলি! তাই আমার মুঠি বন্ধ!

স্যার একেকজনের হাত দেখেন আর বিভিন্ন সৌভাগ্যসূচক কথা বলেন! সম্ভাব্য বিপদের রক্ষাকবচের কথাও বলে ফেলেন বিনা পারিশ্রমিকে! একজন জিজ্ঞেস করলো, সবচেয়ে ভালো হাত কোনটা? বিশেষজ্ঞ মতামত এলো ... যার ডানহাতের তালুতে ইংরেজী ‘M’ স্পষ্ট আর দীর্ঘ। (M for Money??!) অনেকের হাতে ‘M’ এর বদলে ‘N’ আছে! তারা কলম দিয়ে তখনই ‘M’ এঁকে ফেললো!

সবশেষে আমার পালা! আমি তখনও বজ্রমুষ্ঠি! স্যার হাত দেখতে চাইলে আমি গাইগুঁই করতে থাকি! পিছন থেকে একজন সাহস দিলো, আরে ভাই, এটা স্রেফ ফান। দেখান না আপনার হাতটা! বজ্রমুষ্ঠি শিথিল হলো আমার! হাতের তালু দেখে স্যারের চোখ ছানাবড়া!(ছানাটা ভেজাল উপকরণে তৈরী নয়!) এত স্পষ্ট ‘M’ নাকি তিনি নাকি আগে কখনই দেখেননি! (আমি অবশ্য বুদ্ধি হবার পর থেকে দেখে আসছি! এজন্যই বোধহয় বলে, অভিজ্ঞতা হয় পর্যবেক্ষণে, বয়সে নয়!)। সবাই দেখতে এলো আমার হাতের তালু! এমনকি যেসব মেয়েরা সবসময় ভাব নিয়ে ক্লাসে আসতো, তারাও সেদিন যেচে কথা বলতে এলো আমার সাথে!

আহ! কী শুভক্ষণ!


পাদটীকাঃ

১. কোর্সটা আমি কমপ্লিট করতে পারিনি। তাই আমার জাপানীজ জ্ঞান আপনার মতোই!

২। জ্যোতিষশাস্ত্রে কারো অনুরাগ থাকলে আমার কথায় আহত হবেননা! প্লিইইইইজ! এই ব্যাপারে অবিশ্বাস আমার একান্ত ব্যক্তিগত।

শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০০৭

Application of a Joke!

আগে Joke টা- বলি...

Santa Singh is flying from Moscow to Delhi. To his surprise, sitting right beside him is Gary Kasporov, the world Chess Champion. Santa has always been in awe of Chess players, and immediately starts up a conversation with Gary about the nuances of the Game etc.

Says Gary:- "How would You like to Play me for $ 500/ US"?
Santa: "But you're too damn good".
Gary: "how about if I play left handed"?


Then I might have a chance ... thinks Santa, and accepts.

Kasparov, checkmates our Sardar in 8 moves .......

Santa is still scratching his head, as he leaves the airplane.


Upon Reaching Amritsar, Santa tells Banta about the game he had with Kasparov.


Banta: “You're an absolute fool Santa”


Santa: “why?”

Banta: “You great fool, Gary Kasparov is a lefty, no wonder he beat you left handed”.

(জোকটা না বুঝলে আবার পড়ুন! পরে নিচের অংশটুকু পড়ুন)

একদিন দুপুরে খুব শখ করে দাড়িওয়ালা-চ্যাটিং-বস তামিমকে এই জোকটা বলছিলাম। এক একটা লাইন বলি আর তামিম হেসেই অস্থির। পুরো জোকটা শেষ হতেই তামিম খুব খুশি, দাঁত বের করে হাসতে লাগলো! সোজা বাংলায় বললে কেলাতে লাগলো। আচমকা গম্ভীর হয়ে তখনি আমি বললাম, এতে হাসার কি হলো, এতে তো হাসার কিছু নেই। অকারণে হাসছো কেন? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?সঙ্গে সঙ্গে তামিমের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো আর বললো, আমি আসলে হাসছি না, আমার মুখের ‘shape’ টা- হাসি হাসি!

এবার আমাদের হাসির পালা !

শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০০৭

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিক্রিয়া! (বুয়েটস্য স্মৃতি-গদ্য)

(সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ বুয়েট বিষয়ক ব্লগগুলো মূলত আমার নিজের জন্যই লেখা। অনেক দিন পর নিজেই যখন নিজের ব্লগ প্ড়বো, তখন খুব ভালো লাগবে! মনে পড়ে যাবে সবকিছু। তবুও কেউ যদি নিজ-উদ্যোগে এই নিরস ব্লগগুলো পড়ে থাকো , সেটা আমার জন্য বোনাস! )

লেভেল ২ টার্ম ২ তে নতুন যে ক্লাসরুমটা পেলাম সেটা একদম সিঁড়ির কাছে। স্যার একটু ঘুরলেই পিছনের দরজা দিয়ে বের হওয়া যায় খুব সহজেই। আর পিছনের দরজা খোলা থাকলে তো কথাই নেই। কত হুর-পরী সেই দরজার সামনে দিয়ে চলে যায়, সেসব হিসাব ও রাখতে হয়! অবশ্য আগেই বলে নিই, এই কথাটা আমার না! হুর-পরী সামলাবার যোগ্যতা আমার কোনোকালেই ছিলনা। বয়স নেই আর, তাই ভবিষ্যতেও হবার চান্স নাই আর!

এই টার্মে নতুন উদ্ভাবণ, কাগজ-নির্মিত-ক্ষেপনাস্ত্র, যেগুলো সোজা পিছন থেকে ফার্স্ট বেঞ্চে মেয়েদের দিকে ধাবিত হয়! প্রায় অব্যর্থ মিসাইল। ওইসময় ভারত আর পাকিস্তান মিসাইল নিয়ে খুব বেশী গবেষণা করছিল বলেই কিনা এই মিসাইল এর উদ্ভাবণ আমাদের ক্লাসেও! আস্তে আস্তে মিসাইল মারা ক্লাসের মহোৎসবে পরিনত হল। এবার টার্গেট শুধু মেয়েরা না, ফার্স্ট বেঞ্চের ভালো (!) ছেলেগুলোও! এমনকি নিজেদের ভিতরও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে মারা হত মিসাইল! এমন অবস্থা হলো, দুয়েকটা মিসাইল মিস-গাইডেড হয়ে স্যারের পায়ের কাছে পড়লেও মিসাইলম্যানরা থোড়াই কেয়ার করতো! অস্বীকার করা অন্যায়, আমার মত আপাদমস্তক ভালো(!) ছেলেও দু’য়েকবার ট্রাই করে দেখেছে! আমার এইম ভালোনা, তাই এই মহৎ উদ্যোগ থেকে ইস্তফা দিলাম প্রাথমিক পর্যায়েই! কিন্তু এই সুক্ষ ‘আর্ট’ চলতে লাগলো মিসাইল-শিল্পীদের হাত ধরে! ‘আর্ট’ ই বলতে হবে! কারণ ‘আর্ট’ এর দোহাই দিলে যেকোন বিষয়-ই ‘জায়েজ’ হয়ে যায়! সেদিনও পত্রিকায় দেখলাম, কোন এক ফটোগ্রাফার এগারোহাজার ‘দিগম্বর’ জোগাড় করেছেন ‘শৈল্পিক’ ফটো তুলবেন বলে! পত্রিকাওয়ালারা ফটোগ্রাফারের ভুয়সী প্রসংসা করেছেন, চমৎকার এক ‘আর্ট’ উপহার দেয়ার জন্য!

যাই হোক, একদিন পলিন, যে ‘মিসাইল-প্রক্ষেপণে’ ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট, একবার মিসাইল মেরে বসলো শিখার গায়ে! যে যতই মিসাইল মারুক না কেন, শিখাকে আভোইড করা ছিলো প্রাইমারি রুল! কিন্তু কোন সাহসে শিখাকেই টার্গেট করলো ও!? এরপর? শিখা পিছন দিকে একটু ঘোরা মাত্রই পিছনের দরজা দিয়ে পলিনের তৎক্ষনাৎ পলায়ন! সেদিন আর ক্লাসে আসেনি পলিন!

পরে জিজ্ঞেস করলাম, “পলিন, কি ব্যাপার? পালালে কেন? ছেলে হয়ে একটা অবলা নারীর ভয়ে পালালে!!” পলিনের সদুত্তর, “ঘাড়ে আমার মাথা একটা-ই!” বললাম, “তাহলে মারতে গেলে কেন?” ও করুণ মুখে বললো, “আমি তো মেয়েদের গায়ে মারতে চেয়েছিলাম, শিখাকে না!”

এখনও বুঝিনা, ক্লাসের ছেলেরা শিখাকে কেন এত ভয় পেতো? ও তো বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ! অনেক ব্যাপারে ওর কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি আমি।

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০০৭

ভাঙা কাঁচ!


বিছানার পাশের জানালার কাচঁটা ভেঙে গেছে অনেকদিন। নিজের বাড়ি নয় এটা। আবার ভাড়াবাড়ি ও না, যে বাড়িওয়ালার কান ঝালাপালা করে দেবো অভিযোগে অভিযোগে! এখনও হলেই থাকি। তাই সব দ্বায়িত্ব আমাদের হল-অফিসের। তারা-ই মাঝে মাঝে সার্ভে করে যায়, কোথাও কোন সমস্যা আছে কিনা দেখতে! শীঘ্রই হল ছেড়ে চলে যাবো । তাই এসব মেরামত কাজের ব্যাপারে খুব একটা উতসাহ নেই আর। কিন্তু কাঁচ-মেরামতকারী লোকটা পীড়াপিড়ি করতে লাগলো। যত বেশী কাজ করবে, সেই কাজ দেখিয়ে হল অফিস থেকে তত পয়সা পাবে সে। শুধু শুধু আরেকটা লোকের ভাত মেরে কি হবে!? রাজি হলাম।

তুমুল আগ্রহ আর উদ্যোমে কাজ শুরু করলো সে। জানালাটা আমার বিছানা লাগোয়া। তাই কাঁচ-মেরামতের হাতিয়ারগুলো আমার পরিপাটি বিছানার উপরই রাখলো! বিছানার উপর দাঁড়িয়ে অমোচনীয় পদস্বাক্ষর রেখে ঘটনাটা আরো স্মরণীয় করে ফেললো সে! যাইহোক, অনেক চেষ্টা তদবির আর যন্ত্রপাতির ক্যাঁচক্যাঁচানি শেষে অবশেষে একটা নতুন কাঁচ বসলো আমার জানালায়! বলুন, আলহামদুলিল্লাহ!

তার এই মহান প্রয়াসের সাইড-ইফেক্ট গুলোও জানা দরকার। সেগুলো হলো, আমার বিছানার উপর তার ব্যাগ থেকে ঝরে পড়া ময়লা, কীর্তিমান পদচারণার প্রভাব আর বিভিন্ন সাইজের কাঁচের টুকরা! নতুন লাগানো কাঁচটাকে শিল্পরসিক এর দৃষ্টি দিয়ে দেখছিলো সে! পিছন থেকে তাকে অভিনন্দন জানালাম। কিন্তু বিপদ ঘটলো এবারই। আমার দিকে ঘুরে কৃতজ্ঞতার একটা স্নিগ্ধ হাসি দিতে গিয়ে... তার হাতে থাকা রেতিটা বেশ জোরের সাথেই লাগলো নতুন লাগানো কাঁচে! ফলাফল পরিষ্কার! নতুন লাগানো কাঁচটাও ভেঙ্গে গেলো! বলুন, ইন্নালিল্লাহ...!

প্রথমে একটু ভড়কে গেলেও পরে বেশ অবিচল ভাবেই বললো সে, কাছে আর কাঁচ নেই। এটা আপাতত এরকমই থাক। পরে দেখা যাবে! এই বলে সে তল্পিতল্পা নিয়ে হাঁটা ধরলো!


আর আমি?
পুরনো ভাঙ্গা কাঁচের বদলে নতুন ভাঙ্গা কাঁচ পেলাম!


ডি.এল রায়কে মনে পড়ে গেলো......


নতুন কিছু করো, একটা নতুন কিছু করো।

................................................

................................................

আর কিছু না পারো, তবে......