শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০০৮
আজকের ডায়রী
টিউব লাইট এর দুধ-সাদা আলো জ্বলতে থাকে। জ্বলুক। কোন কোন দিন মাঝরাতে ঘুম ভাঙেগ। বিরক্ত চোখে আলোটাকে জন্ম জন্মান্তরের শত্রু মনে হয়। আলুথালু বেশে নীলচে-সবুজ মশারীর দেয়ালের নিচ দিয়ে উঠে আলোটাকে হত্যা করি। ভালো লাগে। তারপর আবার সেই ঘুম। কে যেন বলেছিলো, “ঘুমাতে এত ভালো লাগে কেন? না জানি, চিরদিনের ঘুম কতই না মজার।” মাঝে মাঝে কথাটার সত্যাসত্য নির্ণয়ের সাধ জাগে। শোনা কথায় কান দিতে নেই যে! কখনও শত্রুর মত সামনে ভেসে থাকা আলোটাকে নিজ হাতে বধ করতে ইচ্ছা জাগেনা। কিংবা সহজ ভাষায় বললে, মাঝরাতে আর ঘুম ভাঙেনা। কৃত্রিম আলোটা প্রভাত সূর্যের সংগে তেজ দেখাতে চায়। কিন্তু পারেনা। পারতে দেইনা। খট করে নিভিয়ে দিই।
এখন কবিগুরুর ‘গল্পগুচ্ছ’ পড়ছি আবার। তাঁর প্রতিটা শব্দের দ্যুতি আমাকে আলোকিত করে। নগন্য এই আমার পক্ষে তার লেখার আলোচনা-সমালোচনা করা তো অতিদূরের ব্যাপার, প্রশংসা করাও একপ্রকার নিকৃষ্টতম ধৃষ্টতার সমতুল্য। একটা মানুষ সারাটা জীবন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে নিজ লেখার মাধ্যমে মানব চিত্তকে আলোড়িত করে গেছেন, এখনও করছেন। ভাবতেও শিহরণ জাগে। তার নামে গোঁড়ামী প্রসূত অপবাদ শুনলে কপালের পাশের অনুভুতির শিরাটা দপ দপ করে আন্দোলিত হয়। মুষ্টি অনমনীয় হয় দূর্বিনীত আক্রোশে। বলা হয়, ধনী পরিবারের সন্তানের পক্ষে খুবই সম্ভব ছিলো সাহিত্য রচনায় বাঁধনহীন নিমগ্ন থাকা। খাওয়া পরার তেমন চিন্তা ছিলোনা তাঁর। জীবনটাকে উপভোগ করেছেন আর লিখেছেন। খুবই সহজ হিসাব! সমকালীন কিংবা পরবর্তীকালের অনেক সাহিত্য-পথিকের মত জীবন সংগ্রামের ময়দানে তাকে নামতে হয়নি। তিনি একান্ত সময় কাটানোর ছলেইই তার কলমের নিবে ছত্র লিখে দিন গেছে তাঁর! শুনলে হাসি পায়। কান্নাও পায়। রবীন্দ্র সমসাময়িক অনেকেই ছিলেন অর্থবিত্তে সমকক্ষ কিংবা আরো অনেক বেশি। তাদের ক’জন আমাদের মানসপটে বিরাজমান আজও? তাদেরও তো সে সুযোগ ছিলো। কিন্তু কবিগুরু আছেন, থাকবেন। তাঁর নিজের সৃষ্টিতে, কীর্তিতে।
তাঁর সবগুলো কাহিনী বিন্যাস-ই যে কালোত্তীর্ণ, সেটা বলা নিরপেক্ষতার পরিচয় হবেনা। কিন্তু আগের মত আবার বলছি, তাঁর ব্যবহৃত প্রতিটা শব্দের আলোকছটা নক্ষত্রের চেয়েও প্রখর। গল্পের মাঝে মাঝে নিজস্ব জীবনবোধ থেকে উতসারিত কিছু শব্দ, কিছু বাক্য আমাকে বজ্রাহতের মত চমকে দেয়। কাহিনী পিছে পড়ে রয়। মনচক্ষু খুঁজে বেড়ায় এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা সেসব মুক্তার খনি।
কাল একটা গল্প পড়ছিলাম। প্রথম কয়েক ছত্র পড়েই পড়েই উপসংহারের ধরণ কল্পনা করে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু সেটা আমার ক্ষতিবৃদ্ধির কারণ নয়। আদতে কোন ক্ষতি-ই নেই এখানে। একটা প্যারাতে চোখ আটকে গেলো...
“একটা পাখিকে সুবিধামত ডালের উপর বসিয়া থাকিতে দেখিলেই শিকারীর ইচ্ছা করে তাহাকে গুলি বসাইয়া দিতে, পাহাড়ের গায়ে প্রস্তর পতনোন্মুখ থাকিতে দেখিলেই বালকের ইচ্ছা করে এক লাথি মারিয়া তাহাকে গড়াইয়া ফেলিতে - যে জিনিষটা প্রতি মুহূর্তে পড়ি-পড়ি করিতেছে, অথচ কোনো একটা কিছুতে সংলগ্ন হইয়া আছে, তাহাকে ফেলিয়া দিলেই তবে যেন তাহার সম্পূর্ণতা সাধন এবং দর্শকের মনে তৃপ্তিলাভ হয়।”
আজ এই পর্যন্তই।
অনেক দিন কিছু লেখা হয়না। শুধুমাত্র লেখার আনন্দেই লিখে ফেললাম এতটুকু!
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০০৮
VISA

মোটামুটি নিষ্পাপ আচরণ। এফেয়ার করতে খুব একটা প্রবলেম হলোনা ওর। মেয়েও আমাদেরই ক্লাসের। সোনায় সোহাগা! পরিনতি ভালোই। সরাসরি পারিবারিক ভাবে বিবাহ! প্রেমের কাহিনীতে ভিলেন না থাকলে কী চলে? এইখানে ভিলেন হলো, মেয়েটার পাওয়া জাপানী স্কলারশিপ। যে নারীর স্বামী বিদেশে ত্থাকে... ব্যকরণ বইতে এর একটা এককথায় প্রকাশ আছে... প্রষিতভর্তৃকা! মফিজ হলো 'প্রষিতভর্তৃক’! (জানিনা, আদৌ এরকম শব্দ বাংলা ভাষায় আছে কিনা!) বাংলা সিনেমার ‘টেরাজিডি' কে হার মানিয়ে নববধু ঈদের আনন্দ-সকালে কান্নাকাটি করে উড়াল দিলো সূর্যোদয়ের দেশে। দিলো অনেক প্রতিশ্রুতি। তোমাকে শীঘ্রই নিয়ে যাবো... ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিশ্বাসভঙ্গের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে? উহু! নাহ!
মেয়েটা কাগজপত্র সবই পাঠালো। কিন্তু বাগড়া দিলো জাপানী এমবাসী! সব ডকুমেন্টস ঠিক আছে। তবে প্রতিদিনই নতুন নতুন কাগজপত্রের আবদার করে তারা। ব্যাংক স্টেটমেন্ট, নিকাহনামা এইরকম উল্টোসোজা যাবতীয় সিলমোহরযুক্ত কাগজ দেখানোর পরও তাদের খায়েশ মেটেনা! সর্বশেষ বার বলেছে, বিয়ের আগে তোমার বউ এর সংগে কিভাবে পরিচয় হয়েছে, সেটার উপর একটা রচনা লিখে জমা দাও! ফার্স্টক্লাস গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করে দিতে হবে কিন্তু!
কাল সন্ধ্যায় বেচারাকে দেখালাম, কাগজ কলম নিয়ে বসেছে!
উপদেশ দিই, “কষ্ট করে লিখে আর কী করবি? অন্তরঙ্গ ভিডিও দেখাইয়া দে ওদের!”
“ওইটা তো বিয়ার পর। কিন্তু এবার তো চাইছে, বিয়ার আগের কাহিনী!”
“তাইলে আর কী করবি? রেফারেন্স হিসাবে আমার ফোন নাম্বার দিস ওদের! ফোন করলে বলবো, সন্ধার পর তোদের প্রায়ই আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছি!”
হা হা হা!
বেচারা আজ দুপুরে গেছে আবার এমবাসীতে...।
দেখি কী হয় এবার...!
বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০০৮
Free-Rice
www.freerice.com
if you visit, everything will be clear as crystal. Try?
মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০০৮
লস!

কয়েক দিন আগে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে ব্লাড ডোনেট করতে গিয়েছিলাম। এই নিয়ে মোটে নয় বার হলো! :(
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০০৮
সম্মতি না অসম্মতি?
“জ্ঞান থাকতে ওই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা। তাই জ্ঞান হারাইছিলাম...”
অনেক আগে একটা ধারাবাহিক নাটকে এক গ্রাম্য লোকের মুখে এই ডায়ালগটা শুনেছিলাম।
ধন্ধে পড়ে গেছি, এই বাক্যটা বিয়েতে সম্মতি না অসম্মতি?
আবার অফিস...

-
জামাল ভাইয়ের বঊ মানে আমাদের জামালভাবী ঘরে বসে থাকতে থাকতে একটু টায়ার্ড। তাই বাড়তি কাজ হিসাবে তিনি শুরু করেছেন ফতুয়ার ডিজাইন।
ফর্মুলা অনুযায়ী প্রথম ফতুয়াটা অবশ্যই জামাল ভাইয়েরই হওয়া উচিত। আর সেটাই তিনি অফিসে পরে এসেছেন!
ফতুয়াটা ভালোই। হাতের কাজের প্রশংসা কুড়োচ্ছে দেদারসে ওটা! আমাদের মুখে বউয়ের প্রশংসা শুনে জামাল ভাই নিজেই ফুলে যাচ্ছেন! (কানে কানে একটা কথা বলে রাখি, একটু বয়স্করা টি-শার্ট অথবা ফতুয়া পড়লে, তাদের ভুড়িটা সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। সেই জন্যই ফুলে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক! )
ফতুয়াটা আসলেই দেখতে ভালো। যার যা প্রাপ্য সেটা দিতে আমি কখনই কার্পণ্য করিনা, “ওহ জামাল ভাই! ফতুয়াতে আপনাকে দারুন লাগছে! মনে হচ্ছে আপনার বয়স পাক্কা তিন দিন কমে গেছে!”
জামাল ভাই আমার উপর একটু বিরক্ত হলেন মনে হয়, “মাত্র তিনদিন?! ভেবেছিলাম বলবেন, ১০ বছর!”
মাঈনুল ভাই তাকে খুশি করার জন্য ঝটপট বললেন, “জোস! আপনি যেই স্টাইলে দাঁড়িয়েছেন... যেন একটা scare-crow!”
আশ্চর্যজনকভাবে শব্দটার অর্থ তিনি জানেন না! তাই ইংরেজী প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে আরেকটা পোজ দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এবার কেমন লাগছে?”
“কঠিন! আপনাকে এবার ফুরফুরে মেজাজের Traffic-Police এর মতই লাগছে!” ... এবার ইংরেজীটা তিনি ঠিকই বুঝলেন।
আর আবার বিরক্ত হলেন আমার উপর!
***
গণ অসন্তোষের কারণে কোথায় যেন পুলিশকে মোলায়েম লাঠিচার্জ করতেই হয়েছিলো। তাতেও যখন কাজ হলোনা, তখন ভরসা রাবার বুলেট ! ঘটনা একটু ভয়াবহ!
তাই পরেরদিন স্থানীয় সংবাদপত্রে জব্বর একখানা হেডলাইন জায়গা করে নিলো,
“পুলিশের গুতে তিনজন আহত!”
চারিদিকে হৈচৈ... ব্যাপার কি? এবার ঘটনা একটু আকর্ষণীয়!
পরেরদিন পত্রিকায় সংশোধনী দিতেই হলো,
“পাছার ভুলের কারণে গুলি ‘গু’ হয়ে যাওয়ায় আমরা দুঃখিত।”
তৃতীয় সংশোধনীতে কি এসেছিলো সেটা আর জানা যায়নি!
[প্রকৃত শব্দদ্বয় যে ‘গুলি’ ও ‘ছাপা’, সেটা বলাই বাহুল্য!]
***
রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০০৮
অবসর
বাসায় ফিরে একটু আত্মস্থ হয়ে চেখভ পড়ছিলাম। বাংলা অনুবাদে। গল্পগুলো বেশ ঝরঝরা,সাধারণ। ভালোই লাগে পড়তে। পুরনো দিনের রাশিয়ান দৈনন্দিন জীবন। আমাদের চেয়ে বেশ আলাদা। তবুও মিশে গিয়েছিলাম খানেকক্ষণের জন্য। তারপরই ডুবে গেলাম আমার চিরপ্রিয় সৈয়দ মুজতবা আলী-তে। হালকা রস মিশিয়ে জীবনের নিগূঢ়তম সত্যগুলো কেমন যেন মূর্ত হয়ে ওঠে তার লেখায়। মুগ্ধতার কখনও শেষ হয়না আমার।
হুবহু, সেখান থেকেই তুলে দিলাম কিছু অংশ।
***
রুশ কবি পুশকিনের রচিত একটি কবিতার সারমর্ম এই-
‘হে ভগবান, আমার প্রতিবেশীর যদি ধনজনের অন্ত না থাকে, তার গোলাঘর যদি বারো মাস ভর্তি থাকে, তার সদাশয় সচ্চরিত্র ছেলেমেয়ে যদি বাড়ি আলো করে রয়, তার খ্যাতি প্রতিপত্তি যদি দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে, তবুও তাতে আমার কণামাত্র লোভ নেই, কিন্তু তার দাসীটি যদি সুন্দরী হয় তবে- তবে, হে ভগবান, আমাকে মাপ করো, সে অবস্থায় আমার চিত্ত-চাঞ্চল্য হয়।’
পুশকিন সুশিক্ষিত, সুপুরুষ ছিলেন এবং খানদানী ঘরের ছেলে ছিলেন।, কাজেই তার ‘চিত্তদৌর্বল্য’ কি প্রকারের সেকথা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হয়না। এইবারে সবাই চোখ বন্ধ করে ভেবে নিন কোন্ জিনিষের প্রতি কার দূর্বলতা আছে।
আমি নিজে বলতে পারি, সাততলা বাড়ি, ঢাউস মোটরগাড়ি, সাহিত্যিক প্রতিপত্তি, রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এ সবের প্রতি আমার কণামাত্র লোভ নেই।
আমার লোভ কেবল একটি জিনিষের প্রতি- অবসর। যখনই দেখি, লোকটার দু’পয়সা আছে অর্থাৎ পেটের দায়ে তাকে দিনের বেশির ভাগ সময় এবং সর্বপ্রকারের শক্তি এবং ক্ষমতা বিক্রি করে দিতে হচ্ছেনা, তখন তাকে আমি হিংসে করি। এখানে আমি বিলাস ব্যসনের কথা ভাবছিনে।, পেটের ভাত ‘-’র কাপড় হলেই হল।
অবসর বলতে কুঁড়েমির কথা ও ভাবছিনে। আমার মনে হয়, প্রকৃত ভদ্রজন অবসর পেলে আপন শক্তির সত্য বিকাশ করার সুযোগ পায় এবং তাতে করে সমাজের কল্যাণলাভ হয়।
***
কিন্তু ব্যাস্ত সময়ে অবসর মেলে কই?
আজকে না হয় আচমকা পেয়ে গিয়েছিলাম সেটা।
আজকে দিনটা হয়তো একটু বেশিই লাকি।