শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০১০

কোন এক গাঁয়ের বধুর কথা শোনাই শোনো


গনসঙ্গীতশিল্পী কলিম শরাফী গত হয়েছেন ২ নভেম্বর, ২০১০ এ। সত্যি কথা বলতে, তাঁর গানের কথা আমার তেমন জানা নেই। শুধুমাত্র “পথে পথে দিলাম ছড়ায়া... ও আমার চক্ষু নাই” – এটাই শুধু মনে ভাসে। আজ (১১-১১-২০১০) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় তাঁর উপর একটা নিবন্ধ পড়ছিলাম। লিখেছেন কামাল লোহানী। এ ধরণের নিবন্ধ আমাকে খুব টানে। কিছুটা গল্প, কিছু কবিতা, আবার কিছু ইতিহাসের সাথে মিশিয়ে সমাজের রূপবর্ণনার চেষ্টা। যেমন, ভালো লাগে সচলায়নের সিরাত তথা মনোয়ার হোসেনের লেখাগুলি।

গান শুনতে ভালোই লাগে। মূলত ক্লাসিক্যাল গান, পুরনো হলে বেশি ভালো। (এক্ষেত্রে আরও একটি ক্লিশে বিতর্ক চলে আসতে পারে- পুরনো গান ভালো নাকি নতুন গান? আসলে, ভালো পুরনো গানগুলিই টিকে থাকে; মানোত্তীর্ণ নয়- এমন সব হারিয়ে যায় যথানিয়মে।) যদিও আমার গানের জ্ঞান ‘কোমল পানীয় বোতল ফেলে দেয়ার আগে যেটুকু তরল’ অবশিষ্ট থাকে সেটার মত। সলিল চৌধুরীর অনেক গান শুনেছি। চমৎকার সঙ্গীত আয়োজন করতেন। হেমন্ত মুখার্জি’র ‘কোন এক গাঁয়ের বধুর কথা’- গানটা আমার আগে থেকেই ভালো লাগতো। আজ আরও ভালো লেগে গেলো পিছনের গল্পটা শুনে।
সলিল চৌধুরী কলিম শরাফী’র জন্যই গানটি লিখে সুর দিয়েছিলেন। কিন্তু, মাঝে হেমন্তের পছন্দ হওয়ায় কলিম শরাফীর কাছে অনুমতি নিয়ে নিজেই গানখানি করেন! এ নিয়ে সলিল চৌধুরী নাকি খানিকটা অনুতপ্ত ছিলেন! 

***

কোন এক গাঁয়ের বধুর কথা শোনাই শোনো
রূপকথা নয় সে নয়
জীবনের মধুমাসের কুসুম ছিঁড়ে গাঁথা মালা শিশিরভেজা
কাহিনী শোনাই শোনো...
একটুখানি শ্যামল ঘেরা কুটিরে তার স্বপ্ন শত শত
দেখা দিত ধানের শীষের ইশারাতে
দিবাশেষে কিষাণ যখন আসতো ফিরে
ঘি মৌ-মৌ আমকাঠালের পিড়িটিতে বসতো তখন
সবখানি মন উজাড় করে দিতো তারে কিষাণী সেই
কাহিনী শোনাই শোনো ...

ঘুঘুডাকা ছায়ায় ঢাকা গ্রামখানি কোন মায়া ভরে
শ্রান্তজনে হাতছানিতে ডাকতো কাছে আদর করে
নীল শালুকে দোলন দিয়ে রঙ ফানুসে ভেসে
ঘুমপরী সে ঘুম পাড়াতো এসে কখন যাদু করে
ভোমরা যেত গুনগুনিয়ে ফোটা ফুলের পাশে
আকাশে বাতাসে সেথায় ছিলো পাকা ধানের বাসে বাসে সবার নিমন্ত্রণ
সেখানে বারো মাসে তেরো পাবন
আষাঢ় শ্রাবণ কি বৈশাখে গাঁয়ের বধুর শাখের ডাকে
লক্ষী এসে ভরে দিতো গোলা সবার ঘরে ঘরে
হায়রে কখন গেলো শমন অনাহারের বেশে দেশেতে সেই
কাহিনী শোনাই শোনো ...

ডাকিনী-যোগিনী, এলো শতনাগিনী, এলো পিশাচেরা এলো রে
শতপাকে বাঁধিয়া নাচে তাতা-তাধিয়া
কুটিলের মন্ত্রে শোষণের গেলো প্রাণ শত প্রাণ গেলো রে
মায়ার কুটিরে নিলো রস লুটিরে, মরুর রসনা এলোরে
ডাকিনী-যোগিনী, এলো শতনাগিনী, এলো পিশাচেরা এলো রে
হায় সেই মায়াঘেরা সন্ধ্যা
ডেকে যেত কত নিশিগন্ধ্যা
হায় বধু সুন্দরী কোথায় তোমার সেই মধুর জীবন মধুছন্দা  

হায় সেই সোনাভরা প্রান্তর
সোনালি স্বপন ভরা অন্তর
হায় সেই কিষাণের কিষাণীর জীবনের
ব্যাথার পাষাণ আমি বহি রে

আজও যদি তুমি কোন গাঁয়ে দেখো ভাঙা কুটিরেরও সারি।
যেন সেইখানে সে গাঁয়ের বধু আশা স্বপনেরও সমাধি।
***

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন