বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০০৭

সাহায্যপ্রার্থী!

টংগী থেকে আজিমপুর।

আমার এ কদিনের আসা যাওয়ার রুট!

সরাসরি অনীক পরিবহনের বাসে চড়লেই সিটে বসে আরামেই একটা ঘুম দিয়ে চলে আসা যায়। কিন্তু আজ আবার গরম পড়েছে! তাই একটু শখ জাগলো এসি বাসে যাওয়ার! কিন্তু টংগীর স্টেশন-রোডে বেভকোর এসি বাসের কোন কাউন্টার নেই! ভাবলাম, লোকাল বাসে করেই উত্তরা নেমে ওখান থেকেই উঠি। জ্ঞ্যানী ব্যক্তিদের মত চিন্তা আর কাজের মিল রাখলাম! ২৭ নম্বর মুড়ির টিনে উঠে পড়লাম!

একটু পরেই একলোক উঠলো বাসে। সাহায্যপ্রার্থী। চল্লিশের কাছাকাছি বয়স। ডানহাতটা অকেজো। দড়িতে আটকানো কাপড়ের মত ঝুলছে দেহের একপাশে। মোটামুটি পরিপাটি জামাকাপড়। কথা বলা শুরু করলো সে। সোনালী ব্যাংকে কি যেন একটা ছোটখাটো চাকরী করতো লোকটা। কোন এক অজানা কারণে তার সুস্থ্য ডানহাতটা ক্রমে অবশ হয়ে যেতে থাকে। দেশে বিদেশে ভালো ভালো অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি তার। শেষে একেবারেই অকেজো হয়ে যায় ওটা। ব্যাংকের চাকরী শেষ! তাই অক্ষম হাতটাকেই নিয়তি মেনে নিয়ে সে বাসের হেলপারী করা শুরু করে। কিন্তু সেখানেও দূর্ভাগ্য! বাসের এক্সিডেন্টে সক্ষম বামহাতটার ও দুটো আঙ্গুল কাটা যায় তার। এখন সে একরকম অথর্ব জীবন যাপন করছে। ঘরে বউ আছে। ছেলেটা স্কুলে পড়ে। সবার সাহায্য চায় সে, ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য! তার কাছে থাকা চকোলেট কিনলেই সে খুশি, তাকে সাহায্য করা হবে। চকোলেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দেয় সে সবার দিকে। অঝোর ধারায় চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে তার। দেখলেই মায়া হয়! অনেকেই টাকা দেয় তাকে। চকোলেট নিতে অনুরোধ করে সে। কিন্তু বেশিরভাগ বাসযাত্রীই টাকার বিনিময়ে চকোলেট নিতে অনীহা প্রকাশ করে। আমিও কিছু টাকা দিলাম, কিন্তু একটা চকোলেট ও নিলাম!

টাকা নিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সে নেমে পড়লো বাস থেকে!

এখন প্রশ্ন হলো, লোকটার কথাগুলো কতটুকু সত্য? এই ঢাকা শহরে প্রায় প্রতিটা মোড়ে এক বা একাধিক সাহায্যপ্রার্থীর দেখা মিলবে। সবাই কি সত্যিকারের দূর্ভাগা?অবশ্যই নয়!

ধরে নিই, আমাদের এ লোকটা ও একটা জোচ্চোর!...

চমতকার অভিনয় করে আমাদেরকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করেই টাকাগুলো বাগিয়ে নিলো সে। চকোলেট বিক্রি করার জন্য এত কান্নাকাটি করার দরকার ছিলোনা! টপ গ্রেড অভিনেতা সে। মঞ্চে-নাটকে-সিনেমায় কত গুণী শিল্পীদের অভিনয় দেখে আমরা হাততালি দিই। গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকিট কিনি। লোকটা যদি প্রতারক ও হয়ে থাকে, তাহলে ধরেই নিলাম তার অভিনয় দেখেই আমরা তাকে সম্মানী দিলাম!!!

আমার হাত থেকে খসে পড়া কাগজের নোটটা বিফলে যায়নি তাহলে !

পুনশ্চঃ আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় লোকটা আসলে কেমন। তাকে দেখে আমার যা মনে হয়েছে সেটাই লিখে ফেললাম ঝটপট! সে সত্যিকারের অভাবী হলে, সৃষ্টিকর্তা তাকে সাহায্য করুন। আর প্রতারক হলে......!?

1 টি মন্তব্য: