বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০০৭

অমুক বিরিয়ানী হাউস!


খাওয়া দাওয়াতে আর আগের মত রুচি পাচ্ছিনা। হলের ডাইনিং এ যখন খেতাম, তখন ডাইনিংকে শাপ-শাপান্ত করেই ডাইনিং এর দরজা দিয়ে ঢুকতাম! এক পিস মাছ অথবা মাংসের টুকরার সংগে আনলিমিটেড ভাত। ভালোর মধ্যে যা ছিলো, সেটা হলো ডাল! ওটা তখনও নিটোল-স্বচ্ছ-পানির ফোয়ারাতে পরিণত হয়নি। তাই রক্ষা! ডাইনিংকে আর দোষ দিয়ে কি হবে। এই দূর্মুল্যের বাজারে প্রতিবেলায় ১১ টাকা দিয়ে পেট পুরে খেতে পারার কথা একেবারে নিম্নবিত্তরাও চিন্তা করতে পারেনা এখন।

যাইহোক, গড়িয়ে গড়িয়ে বুয়েট-লাইফ শেষ হয়ে গেলো একদিন। ডাইনিং এ আমাদের পদচারণা এখন নিষিদ্ধ । ক্যান্টিনে খেতে যাবার পথে কাঁচের জানালার ভিতর দিয়ে সাজানো থালা-বাটি-ভাত-তরকারী চোখে পড়ে। ইস...ওখানে ফ্রী খেয়েছি, কতকাল! এখন ক্যান্টিনে খেতে গেলে সুড়সুড় করে পকেট থেকে টাকা বেরিয়ে যায়! এমন না যে, ক্যান্টিনে হররোজ মোগলাই খানা খাই আর রাজা উজির মারিডাইনিং এ যা খেতাম এখানেও তা-ই খাই, শুধু নিজের ইচ্ছেমত ভ্যারাইটি আনা যায় প্রতিদিনের খাবারে । মাঝেমাঝে একঘেয়েমি কাটাতে তেহারী-কাচ্চি-বিরিয়ানি-গ্রিল চিকেন এসবের দোকানে হামলা করি। স্বাদে একটু বৈচিত্র আসে!

ওদিকে, কতিপয় জ্ঞানী ব্যক্তি সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়ায় বসে বসে রসালাপ করেন। বেশিরভাগই প্রাক্তণ বুয়েট ছাত্র। সারাদিন যে যার কাজ শেষ করে চলে আসেন এখানে। অপকর্মসমুহ ই তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয়! হঠাত করেই তাদের মনে হল, দেশের জন্য কিছু একটা করা দরকার। তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ নিয়েও আপাতত ঝাঁপিয়ে পড়া স্থগিত রাখলেন!তবে এক গ্রুপ অগ্রণী ভুমিকা পালন করেই খুলে ফেললেন অমুক বিরিয়ানী হাউস। সেটার কথাই বলতে যাচ্ছি।

ভাবলাম, এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি না করে এদেরকেই উতসাহ দেই, ওদের নতুন খোলা দোকানে ভুরিভোজ করে! ও!দোকান পরিচালনার সম্পুর্ণ দ্বায়িত্ব তাদেরই পরিচিত এক পাড়াতো ভাইয়ের, তারা ফাইনান্সার মাত্র! তেহারী অর্ডার দিলাম। অনেকক্ষণ কোন খোঁজ নেই। কি অর্ডার দিয়েছিলাম সেটা ভুলে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তেই তেহারী এলো, সমসাময়িক কালে অর্ডার দেয়া কোক আসেনি। মশলাবিহীন আঠালো পোলাও এর উপর তিন-পিস মাংসের টুকরা সঙ্গীহীনতার লজ্জায় মুখ লুকানোর চেষ্টা করছে! ঘ্রাণং অর্ধ ভোজনং! কিন্তু তেহারীটার ঘ্রাণ নেই, তাই প্লেট শেষ করে উঠার পরও অর্ধেক পেট খালি পড়ে রইলো! কোন রকমে টাকা দিয়েই বের হলাম দোকান থেকে। বলতেই হলো, “The worst তেহারি ever!!”

তবে একটা বিশাল লাভ হয়েছে! এরপর থেকে যা-ই খাইনা কেন তা-ই ভালো লাগে! কোন কিছুতে অরুচি এলে মনকে বলি, চল, ওই তেহারি খেয়ে আসি! সঙ্গে সঙ্গে রুচি ফিরে আসে! ক্যাফেটেরিয়ার তেহারী গলা দিয়ে নামতো না আগে, এখন গিয়ে নিশ্চিন্তে ওটা অর্ডার দিতে পারি! নো প্রবলেম টু সোয়ালো!

খাওয়া দাওয়াতে আর কোন সমস্যা নেই এখন আমার!

পুনশ্চঃ কারো গুডউইল নষ্ট করার জন্য এই ব্লগটা লেখা হয়নি। অভিজ্ঞতার সামান্য প্রকাশ মাত্র! ওরা যদি ঠিকঠাক মত সার্ভ করতে পারে, তাহলে আবার আমাকে সবান্ধব দেখা যাবে ওদের ওখানে! তবে নির্ভরযোগ্য গুজবে প্রকাশ, উদ্যোক্তা-মহোদয়গণ নিজেরাই ওখানে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আমার আর কি দোষ!?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন