শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০০৭

উদ্যোগ!



পাশ-টাশ করে সবাই কি করে? Job ঢোকে

সবার মত আমি চাকরীতে জয়েন করলাম সময়মত তবে আমার কাজটা অন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়ে একটু আলাদা আমেরিকা থেকে Email Attachment মাধ্যমে Project আসে, আর সেটা টাইমলি complete করে আমরা পাঠিয়ে দিই আবার ওখানে কাজের প্রেশার একেবারে কম নয়! যখন Project সাবমিশনের ডেডলাইন ঘনিয়ে আসে, তখন নাক-মুখ গুঁজে কাজ করি নিজের ডেস্কে! কিন্তু অন্য সময়?

অনেকের হাতে কাজ থাকলেও, এই অক্টোবর মাসে আমার কাজের চাপ একদমই নেই! সকালে অফিসে যাই ... সারাদিন ঝিমাই ... আড্ডা দেই ... ঝিমাই ... মাঝে মাঝে মোবাইল দিয়ে ইয়াহু মেসেঞ্জারে ঢুকি ... অফিসের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি ওইটাস্লোচলছে কিনা... এভাবেই চলছে! অবশ্য সময় কাটানোর জন্য অনেকের অন্য পদ্ধতি আছে... পিসিতেSnooker-147’ খেলা কিন্তু এই ব্যাপারটায়... অফিসে এনভাইরোনমেণ্টে আমার সাহসের ব্যারোমিটারটা খুব বেশি উপরে ওঠেনা! কিন্তু অবশেষে কাজ না পেয়ে আমিও... ‘কাঁছাখোলাঅর্থাৎ গেমারুদের দলে যোগ দেবার প্রস্তুতি নিলাম

আর্জি পেশ করলাম, "ভাই, আমি খেলবো!"

"যাও যাও, আগে বাছাই পর্ব পার হয়ে এসো তারপর আমাদের সাথে খেলতে এসো!" জবাবটা যিনি দিলেন, তিনি সবার কাছেই বিপুল ব্যবধানে হেরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন!

"প্লিইইইজ ...আপনি কত ভালো... মাত্র একবার খেলার সুযোগ দিন...", অযাচিত তেল মালিশ করি

সুযোগ মিললো! আর দুদিনের মধ্যেইDefending Champion’ কে "অফিস রেকর্ড" ব্যবধানে হারিয়ে দিলাম! কিন্তু ব্যাপারটা বোধহয় ভালো হলনা বাকি সবাই অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাকে বয়কট করলো Snooker-147 খেলা থেকে! আবার আমি বেকার!

তারপর?

আমারনমস্যসৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, "যে বাঙালী আড্ডা দিতে জানেনা, তার জন্ম পরিচয়কে আমি সন্দেহের চোখে দেখি"! তাই একপ্রকারবাধ্যহয়েই ... ধুমায়িত চায়ের কাপে আড্ডা জমাই আবার!

আমাদের মধ্যে অরুপ আবার Career নিয়ে খুবই চিন্তাশীল! সবরকম খবরাখবরই ওর কাছেবরফ দেয়া ইলিশেরমত টাটকা! কী করলে কী হবে...কোন চাকরীর বেতন ভালো...কোন কোর্সে কী সুবিধা... ইত্যাদি ইত্যাদি!

সেদিন হঠাত অরুপ কথা তোলে, "আসো আরাফাত, সবাই মিলে বাপের জায়গা জমি সব বিক্রি করে টাকা পয়সা দিয়ে একটা হাইফাই-লেটেস্ট-দামী Mercedes গাড়ি কিনি!"

"কিনে? তারপর?" আমি আশ্চর্য!

"কিনে বিজনেস শুরু করি", অরুপ বলে

"একটা গাড়ি কিনে গাড়ির ব্যবসা?" আমি আরো সন্দিহান

"ধুর, তুমি কিছুই বোঝনা! গাড়ি কিনে ভাড়া দেবো যারা নতুন বিয়ে করতে যাবে, তাদের কাছে গিয়ে বলবো...", অরুপের চোখে সোনালী ভবিষ্যতের আভা, "ভাই, জীবনে তো বিয়ে একবারই করবেন ফাটাফাটি রকম একটা গাড়ি চড়ে বিয়েতে গেলে কেমন হয়? নেন ভাই নেন, আমার এই Mercedes গাড়ি বুড়ো বয়সে নাতি নাতনীর কাছে গল্প করতে পারবেন! ...আমাকে একটু খুশি করে দিলেই চলবে...!"

এই কথা শুনেই আমার আশা-ভরসার ল্যাম্পুর তেল শেষ হয়ে যায় নিমেষে!

"আরে, তুমি বুঝলেনা!" অরুপ হতাশ হয়, "আমি বলে রাখলাম, আজ থেকে বছর পর ঢাকা শহরে কেউ না কেউ এই ধান্ধায় নেমে অনেক টাকা কামাবে! তখন তুমি বলবে ... ইশ! এই অরুপ একদিন তোমাকে একজন সফল বিজনেসম্যান হবার বুদ্ধি বাতলে দিয়েছিলো তখন... It’s too late! "

কিংবা আবার গত পরশু বিকালে...

"নাহ, আরাফাত! চাকরী-বাকরী করে কিছুই হবেনা Business is the root of all উন্নতি! এমন ব্যবসা করতে হবে, যেন নিজের পকেটেও পয়সা আসে, আবার দেশ-দশের উপকারেও আসে "

এইবার আমি একটু উতসাহ বোধ করি!

"আমাদের দেখে লোকে বলবে, দেখো দেখো !!...আমাদের সোনার ছেলেরা...আমাদের অরুপ...আমাদের আরাফাত...আমাদের প্রমথেশ...আমাদের......!"

আমাদের নিচতলার রুমটাতে দোতলারচিরসুখীজনরহিম ভাই এর অনুপ্রবেশে অরুপের স্বরভঙ্গ ঘটে! কিন্তু এবারবাঁশঝাড়-সমান উচ্চতারউতসাহ আমার মধ্যে, "রহিম ভাই! যোগ দেবেন নাকি আমাদের সাথে?"

"কি করতে চাও?" রহিম ভাইয়ের আগ্রহের মাত্রাটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা

"এমন কিছু করতে চাই যেন ..."

"দেশের আর দেশের মানুষের উপকার হয়?" কথা কেড়ে নেন রহিম ভাই!

খুশিতে সাড়ে আটখানা হয়ে উঠি, "ঠিক, আপনি তো না বলতেই আমার মনের কথা ধরতে পেরেছেন আপনি আসলে মেগা-BOSS! বলেন তো কি করা যায়?" এবার উতসাহের মাত্রাটা আকাশের প্লেনটা ছুঁয়ে যায়!

"সত্যিই মহতী কিছু করতে চাও?" রহিম ভাইয়ের সন্দেহ দেখে আবার শংকিত হই

"হ্যাঁ", আমি পজিটিভ

"তাহলে মরে যাও!", এক ঝটকায় রহিম ভাই আমাদের হৃদয় ভেঙেগ দেন, "তোমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ভালোই ধারণা আছে কিছুই করতে পারবেনা! বরং তার চেয়ে মরে গেলে, বেঁচে যাওয়া অক্সিজেন-খাবার দিয়ে আরো কিছু লোক ভালো ভাবে বাঁচতে পারবে! এটাই হবে দেশের আর সমাজের জন্য তোমাদের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ!"

আশার বেলুনটা চুপসে যায় তখনই

কিন্তু...বেলুনটা কষ্ট করে আবার ফুলিয়েছি আমরা...বিশেষ করে অরুপ...! But we are short of ideas, right now! আছে কি তেমন যুতসই আইডিয়া তোমার কাছে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন