শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০০৭

স্মৃতিভ্রংশ!


গুটিকয়েক বন্ধু ছাড়া স্কুল কলেজের বন্ধুদের তেমন খোঁজ খবর নেইনা, এমন অপবাদ আমার আড়ালে আবডালে সবসময়ই দেয়া হতো! কিন্তু এখন আর সে বদনাম নেই! কারণ ওদের খোঁজখবর না নিতে নিতে ওরা একরকম ভুলেই গেছে যে আরাফাত নামে কেউ একজন ছিলো!

অথচ বুয়েটের প্রতি অনুভূতিগুলো খুবই একচোখা-অদ্ভুত! এখানকার প্রায় সবকিছুই ভালো লাগে আমার! যে কাকটা আমার জন্য গাছের ডালে দাঁড়িয়ে তার ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করে... বিশেষ বিশেষ সময়ে তাকেও ভালো লাগে! ক্লাসের যে ছেলেটাকে দেখলেই হাতটা নিশপিশ করে উঠতো, পাস করে যাবার পর, তাকে দেখলেই বুকে জড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে, দোস্ত, তোকে খুব মিস করছি!

আর যে মেয়েটার সাথে ৮ সেমিস্টারে মাত্র দুবার কথা হয়েছে, এখন তার সংগে নেটে বা বাস্তবে দেখা হলেকন্যাদায়গ্রস্থ ক্লাসমেট হিসাবে তার কাছে আক্ষেপমিশ্রিত-দুঃখ প্রকাশ করি আর উপযাচক হয়ে তার জন্য ঘটকালি করে শুরু করে দেই!

কিন্তু মেয়েটা ভেবে বসলো, আমিই বুঝি ঘটক কাম পাত্র! তাই শঙ্কিত অথচ তড়িত জবাব দিলো, But the groom is not of my religion!

আমি তাকে আশ্বস্ত করি, I am not going to violate the innate right of my Hindu friends! There are lots of handsome Hindu guys around here who feel their heartbeats as they look at you! So it appears to a ‘Multiple Choice Question (MCQ)’ for you! Choose the best and right one!

কথাবার্তা এতক্ষণ ইংরেজিতেই হচ্ছিলো! কিন্তু ভাব প্রকাশে এবার বাংলার সাহায্য নিতেই হলো তাকে, কার পাল্লায় পড়লাম রে, বাপ!

তবুও এই রহস্যময় ঢাকা শহরের পথে প্রান্তরে খুলনার সেই হারিয়ে যাওয়া পরিচিত মুখগুলোর মধ্যে দুয়েকজনের সাথে কখনও-সখনও দেখা হয়ে যায় কিন্তু আমার দূর্বল স্মৃতিশক্তি তখনই খেই হারিয়ে ফেলে! যদুকে মধু ডাকে, মধুকে কদু আর কদুর জন্য বরাদ্দকৃত নাম থাকে যদু! কিংবা কোন নামই মনে থাকেনা! প্রায় ক্ষেত্রেই পুরনো বন্ধু আমার নাম ধরে সম্ভাষন জানালেও আমি ভাববাচ্যে কথা বলতে একপ্রকার বাধ্য হই! স্বভাবত কেউই আমার দূরাবস্থাকে আমলে না নিয়ে আমার সম্পর্কে ভাবে, ছেলেটা অহংকারে মাটি থেকে পৌণে তিন ইঞ্চি উপরে দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু আমি নিরুপায়! ইরান-তুরান-আফ্রিকার জাতীয় ইতিহাস আমার নখদর্পণে থাকলেও মানুষের নাম মাথা থেকে খুব সহজেই বাষ্পীভবণ হয়ে যায়!

এই তো সেদিনও, সাইফুরস, মৌচাক শাখায় কোচিং করতে গিয়ে... খুলনায় আমার সংগে কলেজে পড়া এক মেয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো! ভয়াবহ প্রমাদ গুনলাম! যথারীতি নামটা মনে নেই!

আমাকে দেখেই উচ্ছসিত হয়ে বললো, আরে! আরাফাত যে! কেমন আছো? কতদিন পর দেখা তোমার সাথে! ৬ বছর, না? খুলনায় যাওনা আর, আরাফাত?

স্মৃতিভ্রংশের আবর্তে পড়া আমার জবাবগুলো এরকম, এইতো, তুমি? হ্যাঁ, অনেক দিন পর খুলনায় যাইনা! আচ্ছা, ক্লাস শেষে কথা বলি!

ক্লাস শুরু হলো কিন্তু মনোযোগ গোল্লায় গেলো! কি নাম তার...নাম কি তার...! মাথার উপর হাতের তালু দিয়ে বিভিন্ন এংগেলে মৃদু আঘাত করেও মাথাটা খুললোনা! মরচে পড়া তালার মতোই আটকে থাকলো! অবশেষে স্মৃতিশক্তির সাহায্যে নাম উদ্ধার প্রকল্পে ব্যর্থ হয়ে চিন্তাশক্তির দ্বারস্থ হলাম! একেবারে নিচ্ছিদ্র পরিকল্পনা! বুয়েটেরই কোন এক বন্ধুকে মেয়েটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো…. এভাবে, এ হলো আমার বুয়েটের ফ্রেন্ড আর এ হলো আমার কলেজ ফ্রেন্ড এবার তোমরা পরস্পর পরিচিত হও! হমমম...নিজের নাম বলতে বাধ্য হবে মেয়েটা...এইবার! নিশ্চিত! এই চমতকার পরিকল্পনা নিজের মাথা থেকে বের হওয়ার খুশিতে নিজের পিঠ চাপড়ে নিজেরই বাহবা দিতে ইচ্ছা হচ্ছিলো!

কিন্তু...ক্লাস শেষে হাতের নাগালে বুয়েটের কাউকেই পেলাম না!

তাই সেদিন কোনরকম মেয়েটাকে পাশ কাটিয়ে বাসায় এসে বিভিন্ন সুত্র ধরে নাম উদ্ধারের চেষ্টায় নামলাম! এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না! এক দফা এক দাবী, বন্ধুদের নাম তুই মনে রাখবি! অনেকক্ষণ পর খুশিতে আলোকিত হয়ে উঠলাম! ইউরেকা ইউরেকা...বুম বুম চেকা চেকা!

পরের দিন ক্লাসে... আমিই আগে কাছে এগিয়ে গিয়ে দন্ত বিকশিত করে বললাম, কি খবর, দোলা? কেমন আছো?

জবাবটা ছিলো মর্মান্তিক, আমার নাম কেয়া!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন