মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০০৭

বাস-সার্ভিস

অফিস শেষে উত্তরা থেকে রামপুরা যেতে অনেক রকম বাসই দাঁড়িয়ে থাকে আমাকে নেবার জন্য! আমিও প্রজাদের প্রার্থনা মোতাবেক প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে প্রশ্রয় দেই! ঊঠে পড়ি যেকোন একটা বাস সার্ভিসে!ফাল্গুনকিংবাশক্তিতে ঊঠলে আমার বেশ সুবিধা হয়। যদি অন্য কোন সার্ভিসে ঊঠি, তাহলে রামপুরায় এসে পড়লে... সিংহাসন থেকে রাস্তায় নামতে অনেক কষ্ট করতে হয়। কারণ, বাসের ভিতরে আমার মতই অনেকরাজাধিরাজঠাসাঠাসি করেস্বর্গসুখেমত্ত থাকেন। কেউ-ই কারো রাজ্যপরিধির সুচাগ্রপরিমান ভূমি ছাড় দিতে বে-মওকুফ! এই অবস্থায় গেট পর্যন্ত পৌছাতে পৌছাতেনাদিয়া কোমোনেচিকে স্মরণ করি! তাই ওই দুটো সার্ভিসই সই!

তবুও সিট খালি থাকলে ...তাশিকোতেও উঠে পড়ি।

তাশিকোর সুনাম সমস্ত রাস্তা জুড়েই! সিটগুলোও বেশ ভালো! কিন্তু এটি আমার চেয়ে আরো বেশি স্বাধীনতা প্রিয়! কাউন্টারে একবার থামলে আর নড়তেই চায়না। হেলপারের সুরেলা-আবেগী আহবানে যাত্রীর বান ঊঠে গাড়িতে! তবুও আরো যাত্রী ঊঠানোর জন্য হাহাকার! পিছন থেকে প্রায়ই যাত্রীদের প্রার্থনা শোনা যায়, “ড্রাইভার সাহেব, বাসা থেইক্যা ও যাত্রী ডাইক্যা নিয়া আসেন, আমরা আছি...ঘুমাইতেছিড্রাইভার স্বাচ্ছন্দ বোধ করে আরো! তবে খেলা একটু জমে উঠলেই... মাঝেমাঝেই পুলিশ এসে এই প্রার্থনানাদে যোগদান করে মজাটাই নষ্ট করে দেয়!

এই তো গত সপ্তাহেই...

তাশিকোর প্রতি রুচি হলো। সন্ধার পর...বাসটা সাঁইসাঁই করে ছুটে চলে দাড়ালো খিলখেতে! স্টপ্‌ড! জিরো পাওয়ারের চাঁদের আলোয় ড্রাইভারকে দেখলাম, প্রকৃতির ভিতরই কোথায় যেন হারিয়ে যেতে! When nature calls, everything halts! গাড়ির স্টার্ট বন্ধ! হেলপার নিজেও বাসায় থাকা যাত্রীদের ডাকতে ডাকতেটাইরেড’! প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম! ড্রাইভার অনন্তকাল লাপাত্তা! হেলপার হেলমেট-বর্মেরপ্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এসময়! অনেকক্ষণ পরেই চালকের চালিকা শক্তি ফিরে আসে! ড্রাইভিং সিটে এসে বসে সে!

শুরু হয়, “ওই মিয়া তোমার কি আক্কেল জ্ঞান নাই? এতগুলা যাত্রীরে আটকায় রাখছো?”

পাশের জনই ড্রাইভারের হয়ে পিচে ব্যাট করে, “ভাই, এইসবব্যাপারেও আর কি করবে? যাক, আর কিছু কইয়েন না। ব্যাটারে সাবধানে গাড়ি চালাইতে দেন!

তৃতীয় কন্ঠ, “... ‘ইয়ের বাচ্চারা গাড়ি নিয়ে বের হবার আগে ঠিকমত চেকাপ করে বের হয়না। কখন কি হয়ে যায় কে জানে? দেখছেন, আমরা কত রিস্ক নিয়ে যাতায়াত করি?”, পাশের যাত্রীর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা।

“... ‘বধুভ্রাতা’! তুই গাড়ি চেকাপ কইরা বাইর হসনাই ! ভালা কথা! তাই বইলা নিজেও কি চেকাপ হইয়া বের হইবিনা?” চতুর্মাত্রা পূর্ণ হয়।

বোধহয় ড্রাইভারের পূর্বপুরুষের সংগেডারউইনএর পূর্বপুরুষেরখাতিরছিলো একটু কম ।হয়তো তারা ছিলোভদ্রবংশীয়গন্ডার! তাই সে ছিলো চুপ। কিন্তু উস্তাদেরমনোকষ্টসহ্য করতে না পেরে গাড়ি নিজেই জবাব দিলো।

কুড়িল রেলগেটে এসে পিছনের একটা চাকা বিকল হলো!

৪৫ মিনিটের রামপুরার রাস্তা তখন অন্তত দেড় ঘন্টার ধাক্কা!

*****

অবধারিত প্রশ্ন...

লোকাল বাসে মহিলা সিটগুলো সামনে বামের দিকে থাকে কেন?”

*****

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন