শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০০৮

ছয়মিশালি ব্লগ!




*এক*

প্রায় বছরখানেক আগে পাশ করে গেলেও, নজরুল ইসলাম হলের মায়াটা কাটাতে পারিনি এখনও! চান্স পেলেই হলে চলে যাই হলে, আমার পুরনো রুমে। মনে হয়, দুয়েকটা সাবজেক্টে ল্যাগ খেয়ে আরো কিছুদিন ওখানে কাটাতে পারলে বেশ হত!

এক জুনিয়রের সংগে দেখা, ভাইয়া, কেমন আছেন?

ওয়াআলাইকুমুস-সালাম!, জবাব দিলাম!

“ওহ! স্লালামালেকুম, ভাইয়া! একটু লজ্জা পেলো বোধহয় ছেলেটা।

খোঁজখবর নিই ওর, কি অবস্থা তোমার?

অদূর ভবিষ্যতে মেধাবী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ আসতেছে!”করুণ স্বরে বলে ও!

মানে ভালো স্টুডেন্টের মুখে একথা বেমানান, “মানে?!”

শরীর খুব বেশি ভালোনা! কখন মরে-টরে যাই, তার ঠিক নেই! আর, জানেনই তো, ছাত্র অবস্থায় মরলেই মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যু!

আমি বলি, অ!

*দুই*

রিকশাওয়ালা কলিমুদ্দি রোজগার বেশ কম। কিন্তু ও একটু বেশিই খায়!

সবাই ওর দোষ দেখে, পেটুক!

শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক নাকি খুবই ভালো খেতে পারতেন।

তিনি ছিলেন ভোজনরসিক!

*তিন*

অনেকেই নিজের বাবাকে নিয়ে খুবই গর্বিত! বন্ধুদের কাছে নিজের বাবার এত প্রশংশা!

একসময় বলেই ফেলে, “My father is a hero!”

কিন্তু নিজের মা কে নিয়ে কেউই বলেনা, “My mother is a heroine!”

*চার*

একদিন বিকেলে মননকে দেখি মাঞ্জা মেরে কোথায় যেন যাচ্ছে?

কোথায় যাও?

টিউশনী তে

কোন ক্লাসের টিউশনি?

“HSC দেবে এবার

ছাত্র না স্টুডেন্ট?

স্টুডেন্ট!

একটু আগেই জিমওয়ার্ক সেরে বাথ নিয়ে সুগন্ধি মেখে ফ্রেশ হয়েছে সে!

*পাঁচ*

অপব্যবহার ... অপকীর্তি ... অপযশ ... অপবাদঅপসংস্কৃতি!

উফ! এত অপ!?

যেকোন বাংলা শব্দের আগে অপ বসলেই শব্দটার বারোটা বেজে যায়! নেগেটিভ সেন্স হয়ে যায় শব্দটা!

কিন্তু এমন একটা শব্দ আছে, যেটার আগে অপ উপসর্গ লাগালে শব্দটার অর্থটা আরো খোলতাই হয় মানে আরো ভালো হয়!

কে কে জানো, বল তো দেখি?

*ছয়*

ঠান্ডায় সব জমে গেছে!

মস্তিষ্কের কোষগুলোও জমে গেছে! এর চেয়ে ভালো কিছু বেরুলো না মাথা থেকে!

বৃষ্টিতে সব ধুয়ে গেছে!

মাথা থেকে সব বেরিয়ে গেছে! মাথাটা একদম ফাঁকা!

***

রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০০৮

বিয়ে!

আমার মেয়ে-ক্লাসমেট গুলোর একে একে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে! এই জানুয়ারীর প্রথমার্ধেই দুইজনের ‘ঘটনা’ ঘটে গেলো! আমার মন-টন বাসি তরকারীর মতই খুব খারাপ!

বিশেষ করে দ্বিতীয় ‘ওয়েডিং’ টার পর তো মনটা ভীষণ খারাপ!

নিশাতের বিয়ে ছিলো!

একজন আমার এই অবস্থা দেখে থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললো, “তুমি কি ওকে খুব পছন্দ করতে? এজন্য মন খারাপ?!”

আমি চমকে উঠি! এভাবে তো ভাবিনি! হায়রে, কী সব ভেবে বসে আছে সবাই! মন খারাপের কারণ যে অন্য! আগে বুয়েটে মেয়ে ভর্তি হত খুব কম! সবেধন নীলমনির মত! বড়ভাইরা ভয়েই তাকাতো না ‘ওনাদের’ দিকে! কোন এক ‘বুয়েটিয়ান’ বড়ভাই এর ডাইরীতে পড়েছি, তাদের ক্লাসমেট মেয়েগুলোকে “টিচারদের খাদ্য” বলে সম্মান দিতেন তারা! তারা নাকি পাস করেই যেকোন ফাস্ট-সেকেন্ড হওয়া ইয়ং টিচারের গলায় ‘আপোষে’ ঝুলে পড়তো! কিন্তু এখন মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বুয়েটে! পুরনো ফরমুলা ফলছে আবার ... “কোয়ান্টিটি বাড়লে কোয়ালিটি কমে”! তাই এখন আর সবার জন্য টিচার-পাত্র ‘সুলভ’ নয়! কিন্তু অনাবাসী পিএইচডি ধারীরা হাতের নাগালে এখনও! দেশে আসে ছুটিতে আর ‘ছোঁ’ মেরে নিয়ে যায়! আর ‘বেবাক মাইয়াগুলান’ এর নজর ও মাশাআল্লাহ খুবই উঁচা! বিয়ে করতে গেলে পিএইচডি পাত্র মোটামুটি প্রি-রিকুইজিট! আর আমার মত ক্লাসে ‘পোলাগুলান’ চাকরী বাকরী নিয়ে হয়রান! নিজেদের গার্লফ্রেন্ড গুলারে ঠিক মত গিফট দিতেও পারছেনা অনেকে! মেসের মিল-রেট বেড়ে গেছে। কারণ চালের দাম আকাশ পাড়ি দিয়ে এখন মহাশুন্যগামী! মানিব্যাগের ওজন যে কম! আমার অবশ্য ওইসব হাংগামা নাই! কিন্তু, আমারও যে পিএইচডি বিয়ে করতে ইচ্ছা হইতেছে একটু একটু! জ্ঞানের আলোয় ঘর আলো করে রাখবে সে! আলোকিত ঘরে ইলেক্ট্রিসিটি বিল কম! তাই, সম-অধিকারের এই যুগে ওরা পিএইচডি ‘hubby’ পেলে আমরা কেন পিএইচডি ‘honey’ পাইনা! so sad! একই ক্লাস থেকে পাস করে একই ডিগ্রী পেলাম সবাই! তারপরও...!?

দুপুরে ইশতিয়াক বেচারা ফোন দিয়েছিলো। বেচারা! তার জব ঢাকার বাইরে! এইখানে কি ঘটে সেই সবের সাথে আপটুডেট থাকতে পারেনা প্রায়ই! আমই ওর বিবিসি, “খবর কি কও”
বললাম, “মাইয়াগো বিয়া হইয়া যাইতেছে! আর আমাগো টাক পইড়া যাইতেছে”
ইশতি ও আমার মত একই গোয়ালের গরু! আমার দুঃখ ও বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে!
“কার কার বিয়ে হলো?”, অনুসন্ধিতসু ইশতিয়াক
সঠিক জবাব, “রোল ১ আর রোল ০০-৬০ এর!”
“হমম! বাকি মেয়েদের কি খবর? ওদের বিয়েটিয়ে হবেনা?” আরো গভীরতর অনুসন্ধান ওর!
“আহা! বিবাহ একপ্রকার সংক্রামক ব্যাধি বিশেষ! বাকিদেরও খুব শীঘ্রই হবে” মতামতের মোড়ক খুলি আমি!
“বিয়ের মড়ক লেগেছে!” ফোন রাখার আগে এই ব্যাপারে ইশতিয়াকের শেষ মন্তব্য!

এই ব্লগটা ৩৬০ এর ‘প্রয়াত-সৈনিক’ দের প্রতি উতসর্গকৃত !

শুক্রবার, ৪ জানুয়ারী, ২০০৮

রুটি



রাস্তাঘাটে বের হলেই মোড়ে মোড়ে দরবারে-মা-শেফা কিংবা খাজাবাবা আজমিরী এ ধরণের অনেক রকম সাইনবোর্ড ই নজরে পড়ে! কী হয় ওখানে? আবার বোরখাপরা মহিলারা বাসের জানালার ভিতর দিয়ে যাত্রীদের সিটের উপর ছুঁড়ে মারে অনেক কেরামতি- প্রতিশ্রুত কাগজগুলো! প্রথম প্রথম ভয় পেতাম খুব! তখন আবার বোমাবাজির মৌসুম ছিলো কিনা! তাই কাগজ ছুড়ে মারার ভঙগীতে চমকে উঠতাম, যেন গ্রেনেড ছুড়ে মারছে! বিচিত্র সব সমস্যার আরো বিচিত্র সমাধান ওইখানে! কিছুদিন গভীর আনালাইসিস করে দেখলাম, সবাই একই রকম সমস্যার সমাধান করে! শুধু ব্রান্ড আলাদা!

কেউ কেউ একবাক্যে সব বিশ্বাস করে।

আবার কেউ কেউ একবাক্যে সব অবিশ্বাস করে।

আমি পড়ি বিপদে! বিজ্ঞানের ছাত্র। বিজ্ঞানে এই সব বুজুরুগি বিশ্বাস করেনা। পুরাপুরি যে অবিশ্বাস করে, তা নয়। বিজ্ঞানের মধ্যেও ভাওতাবাজি আছে! ফুটনোট পাওয়া যায় বেশ। সাইকোলজীকাল ট্রিটমেন্ট কিংবা টেলিপ্যাথি...এইসব শব্দ/শব্দগুচ্ছের সহমূল সায়েন্স এর ভিতরই!

আমার পাশেই একজন থাকেন যিনি এ ধরণের কাজে proসিদ্ধ-হস্ত!

তথাস্তু..তার কাছেও এই ধরণের অনেক মক্কেল আসে! তিনি কি কি বিষয়ে এলেম দান করেন? যেসব বিষয়ের ক্যাপসুল-ট্যাবলেট বাজারে সুল্ভ না...সেই সব বিষয়েরই! তবে সেই সব লিস্টি ঊদগীরণ করে বিরক্তি উতপাদন করার সদিচ্ছা আপাতত আমার নাই এখন! সাম্প্রতিক একটা ঘটনা আমার কানে এলো। এক আম-পাবলিক তার কাছে এসেছে চোর ধরার জন্য! চোর ধরার সহজ সলুশন হলো, সন্দেহভাজন মানুষদের একটা তালিকা তৈরী...তারপর সেই তালিকায় দোআ তাবিজের প্রয়োগ! এবং থানা-পুলিশের-আদালতের গুরুভার লাঘবকরণ! জনাচল্লিশেক রুটি নিয়ে বাদী হাজির! চল্লিশ-সন্দেহভাজন! প্রত্যেকের ভাগে এক-পিস করে। রুটিগুলোর উপর কী সব যেন লেখা...! অকাট্য সমাধান...যে চোর, সে এই দোয়া-কালামের রুটি ফাস্টোকেলাস জ্যামজেলি দিয়েও গিলতে অক্ষম...!

দুদিন পর উনার হাতে নতুন মোবাইল...

চোর ধরা পড়েছে...এভাবেই...! ফলশ্রুতিতে সামান্য কিছু উপঢৌকণ দৃশ্যমান...!

***

ভাগ্যিস, ওই রুটি আমাকে খেতে বলা হয়নি!

আমার গলায় বেধে যেত নিশ্চিত!

আমি-ই হতাম চোর।

লোকে বলে, আমার নাকি রসকষ একটু কম! আমি অতিসাধারণ রাইস-ইটিং বাঙালী! স্বাভাবিক সময়েই আমার গলা দিয়ে মোলায়েম রুটি নিচে নামতে চায়না!

আর ওইরকম টেনশিত মুহুর্তে রুটি গিলতে হলে?!

ধর, বেটারে ধর!

কইষা বাইন্ধা চড়!

মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০০৭

"KISS"

সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। অফিসে যাই। ডিজাইন করি। ডিটেইল করি। এতদিন AutoCAD এ কাজ করতাম। কিন্তু এখন একটা নতুন সফটয়্যারে কাজ শুরু করেছি। SDS/2----STEEL DETAILING SYSTEM.

সফটওয়্যারটা ঠিক Windows-based নয়! এখনও DOS এর ভিতরেই এর মূল ব্যাপারগুলো। অন্যান্য গ্রাফিক্স সফটওয়্যারগুলো খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিলেও, এইটাকে মোটেও কব্জা করতে পারছিনা! আমার ‘কেরেস-ত্যাল’ অবস্থা দেখে বস বললো, কয়েকদিন এটাতে ‘গুতোগুতি’ করে একটু সুইফট হয়ে নাও! এরপর তোমাকে কাজ দেবো! এইটার আবার Cracked-ভার্শন কোথাও পাওয়া যায়না! Pen-drive এর মত Hard-key সবসময় USB পোর্টে না লাগিয়ে রাখলে তিনি মুখ খোলেননা! Hard-key টার দাম আবার ২২ লাখ টাকা মাত্র! তাই একটু ভয় ও লাগে নাড়াচাড়া করতে! আবার নেটওয়ার্কে কাজ করি বলে, মুহূর্তের DELETE প্রেস করে বসের সারা সপ্তাহের কাজ মুছে দিয়ে চাকরী খোওয়ানোর ভয় তো আছেই!

তাই অতিসাবধানে মাউস ক্লিক করি উইনডোতে! যেন মাউসটা ব্যাথা না পায় একটুও! অনেক নতুন জিনিষ শিখলাম সপ্তাহ খানেকের ভিতরেই! অনেক মেনুর ব্যবহার শিখলাম!

কিন্তু একটা টার্মে চোখ আটকে গেলো, “KISS!”

এটা আবার কি?

ক্লিক করেও কিছু বুঝলাম না! ইঞ্জিনিয়ারিং এ এসব তো কখনই শিখিনি!ছাদ ঢালাই দেবার আগে কি ইট-বালিতে চুমো-টুমো খেতে হয় নাকি? এইটাই প্রথম জব! তাই সাইটে তো কখনই যাইনি! কী জানি?

বসকে জিজ্ঞাসা করতে ঠিক একটা সাহস করেনা। কিন্তু সামনের মেনুতে যাবার আগেও ওই মেনুতেই চোখ আটকে থাকে!

বসকে তাই বলতেই হলো, “ইয়ে মানে...KISS মানে কি?”

বস এর তো চোখ কপালে আর ভয়ে ঢোক গিলতে গিয়ে আমার ‘Adam’s Apple’ টা প্রায় পেটের ভিতর!

“হায় হায় হায়... এসব তুমি কি বলছো?”

“না মানে ... শব্দটার অর্থ খুজে পাচ্ছিনা!”

“অর্থ খুঁজে না পেলে Dictionary দেখো। আমাকে Disturb করছো কেন?”

“ইয়ে মানে... দেখেছি, কিন্তু ওই অর্থের সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন মিল পাচ্ছিনা!”

“আররে! Youngman! এত বড় হয়েছো কি বাতাসে? জীবনে কি কোন মেয়ে -টেয়ে আসেনি? এই শব্দের অর্থ বোঝনা! So sad!”

আমি পুকুর থেকে ভু-মধ্যসাগরে পড়ি! জিব্রাল্টার প্রণালী দিয়ে আটলান্টিকে যেতে একটু বাকি!

অবশেষে তিনি বললেন, Keep It Simple Steel এর Acronym শব্দ হলো KISS!

“সব বুঝতে পেরেছি!” মাথা চুলকিয়ে একটা দেঁতো হাসি দিয়ে নিজের স্টেশনে ফিরে এসে আবার সফটওয়্যারটার কান চুলকাই!

রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৭

বিক্ষিপ্ত




মাঝে মাঝেই আমার মন খারাপ হয়। এমনি-ই। কোন সুনির্দিষ্ট কারণ নেই মন খারাপের। ব্যাপারটা আসলে মন খারাপ কিনা, তাই বুঝতে পারিনা। মনটা বিক্ষিপ্ত থাকে...কোন কিছুতেই ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারিনা। কিছুই ভালো লাগেনা। মেজাজ টাও খিঁচড়ে থাকে তখন! সবাইকে গালাগালি দিতে ইচ্ছে হয়! কিন্তু কখনও গালাগালি দেইনি কাউকে। এই জিনিষটা শেখা উচিত ছিলো বোধহয়! মনে হয় পৃথিবীতে যদি আর কেউ না থাকতো তবে বেশ হত! অদ্ভুত এক কনফিউজড স্টেট!

আজও সেই অবস্থা...

এই সময় তিতলী তে গাওয়া শ্রীকান্ত আচার্য্যের গাওয়া একটা গান আমাকে সঙ্গ দেয়। গানটা শেয়ার করলাম সবার জন্য!

****

মেঘ পিওনের ব্যাগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা

মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা।

মন খারাপের খবর আসে বন পাহাড়ের দেশে

চৌকোণ সব বাকসে , যেথায় যেমন থাক সে

মন খারাপের খবর পড়ে দারুণ ভালোবেসে...

মেঘের ব্যাগের ভিতর ম্যাপ রয়েছে মেঘ পিওনের পাড়ি

পাকদন্ডী পথ বেয়ে তার বাগান ঘেরা বাড়ি।

বাগান শেষে সদর দূয়ার, বারান্দাতে আরাম চেয়ার।

গালচে পারা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি

সেথায় এসে মেঘ পিওনের সমস্ত ব্যাগ খালি।

দেয়াল জুড়ে ছোট্ট রোদের ছায়া বিশালকায়

নিষ্পলকে ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছে ঠায়!

কিসের অপেক্ষায়...?

রোদের ছুরি ছায়ার শরীর কাটছে অবিরত, রোদের বুকের ভিতর ক্ষত!

সেই বুকের থেকে টুকটুকটুক নীল কুয়াশা ঝরে

আর মন খারাপের খবর আসে আকাশে মেঘ কোরে

সারা আকাশ জুড়ে...

মেঘের দেশে রোদের বাড়ি পাহাড় কিনারায়

যদি মেঘ পিওনের ডাকে, সেই ছায়ার হদিস থাকে

রোদের ফালি তাকিয়ে থাকে আকুল আকাঙ্ক্ষায়

কবে মেঘের পিঠে আসবে খবর বাড়ির বারান্দায়।

ছোট্ট বাগানটায়...

******

সবাই ভালো থেকো...

রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০০৭

৭৫


এটা আমার ৭৫ তম ব্লগ! (যখন ইয়াহু ৩৬০ সরগরম ছিলো, তখনকার ঘটনা)

কখনই ভাবিনি এতগুলো লেখা আমাকে দিয়ে সম্ভব! লেখালেখি করার শখ ছিলো। কিন্তু কাগজ কলমে কখনই তা হয়ে উঠেনি। আর সবার মত আমিও অল্পবয়সে অমর কবিতা-গল্প লেখার ট্রাই করেছি। কিন্তু কাগজের সংগে আমার হাতে থাকা কলমের তেমন সখ্যতা হয়নি কখনই! যেমন, পরীক্ষার হলে... ৩ ঘন্টা কষ্ট করে খাতায় কলম পেষা একটা পেইন। তবুও কলম চালাতে হয়েছে। কিন্তু অভ্র আসার পর থেকে এ হাত দিয়ে কিছু বেরিয়েছে (লক্ষণীয়, হাত দিয়ে...মাথা দিয়ে নয়!) থ্যাঙ্কস অভ্র!

যখন ছাত্র ছিলাম তখন মনে হত, ডেইলি একটা করে ব্লগ দেই। আর এখন চোখের সামনে কত না আকর্ষণীয় টপিকস ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু সময় করে লিখতে পারিনা! সময়টা বড় অদ্ভুত!

সবসময়ই চেষ্টা করেছি মৌলিক ব্লগ দেবার। কিন্তু আজ আর দেবোনা। আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর থেকেই চুরি করলাম। আমার দূর্ভাগ্য ... আমার জন্মের আগে থেকেই তিনি পরলোকে পায়চারী শুরু করেছেন। তার সেন্স অব হিউমার আমাকে প্রতি মুহুর্তে মোহিত করে। চেষ্টা করি, তার সব লেখা বুঝতে...কিন্তু আমার জ্ঞান সীমিত! তবুও চেষ্টা করি...তার কথা মতই...

যদ্যপি মোর গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়

তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়

***

তারপর চোখ বন্ধ করে বললেন...

চীনা-গুণী আচার্য সু তাঁর প্রামাণিক শাস্ত্রগ্রন্থে লিখেছেন, একদা চীন দেশের পেপিং শহরে অত্যাচার জর্জরিত স্বামীরা এক মহতী সভার আহবান করেন। সভার উদ্দেশ্য, কি প্রকারে নিপীড়িত স্বামী-কুলকে তাদের খান্ডার গৃহিণীদের হাত থেকে উদ্ধার করা যায়?

সভাপতির সম্মানিত আসনে বসানো হলো সবচেয়ে জাঁদরেল দাড়িওয়ালা অধ্যাপক মাওলীকে। ঝাড়া ষাটটি বছর তিনি তার দজ্জাল গিন্নীর হাতে অশেষ অত্যাচারে ভুঞ্জেছেন সে কথা সবারই জানা ছিলো।

ওজস্বিনী ভাষায় গম্ভীর কন্ঠে বজ্রনির্ঘোষে বক্তার পর বক্তা ঘন্টার পর ঘন্টা আপন আপন অভিজ্ঞতা বলে যেতে লাগলেন। স্ত্রীলোকের অত্যাচারে দেশ গেল, ঐতিহ্য গেল, ধর্ম গেল, সব গেল। চীন দেশ হটেনটটের মুল্লুকে পরিণত হতে চলল, এর একটা প্রতিকার করতেই হবে। ধন-প্রাণ, সর্বস্ব দিয়ে এ অত্যাচার ঠেকাতে হবে। এস ভাই, এক জোট হয়ে---

এমন সময় বাড়ির দারোয়ান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলল, হুজুররা এবার আসুন। আপনাদের গিন্নীরা কি করে এ সভার খবর পেয়ে ঝাঁটা, ছেড়া জুতো, ভাঙ্গা ছাতা ইত্যাদি যাবতীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এদিকে ধাওয়া করে আসছেন।

যেই না শোনা, আর যাবে কোথায়? জানলা দিয়ে, পেছনের দরজা দিয়ে, এমনকি ছাত ফুটো করে, দেয়াল কানা করে দে ছুট! দে ছুট! তিন সেকেন্ডে মিটিং বিলকুল সাফ--বিলকুল ঠান্ডা!

কেবলমাত্র সভাপতি বসে আসেন সে শান্ত গম্ভীর মুখ নিয়ে-- তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হন নি। দারোয়ান তাঁর কাছে ছুটে গিয়ে বারবার প্রণাম করে বলল, হুজুর যে সাহস দেখাচ্ছেন তাঁর সামনে চেঙ্গিস খানও তসলীম ঠুকতেন, কিন্তু এ তো সাহস নয়, এ হচ্ছে আত্মহত্যার শামিল। গৃহিণীদের প্রসেশনের সক্কলের পয়লা রয়েছেন আপনারই স্ত্রী। এখনো সময় আছে। আমি আপনাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।ভাপতি তবু চুপ। তখন দারোয়ান তাঁকে তুলে ধরতে গিয়ে দেখে তাঁর সর্বাঙ্গ ঠান্ডা। হার্টফেল করে মারা গিয়েছেন।

(পঞ্চতন্ত্র থেকে)

***

This is just a joke.

Take care, all!

***

মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০০৭

বাস-সার্ভিস

অফিস শেষে উত্তরা থেকে রামপুরা যেতে অনেক রকম বাসই দাঁড়িয়ে থাকে আমাকে নেবার জন্য! আমিও প্রজাদের প্রার্থনা মোতাবেক প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে প্রশ্রয় দেই! ঊঠে পড়ি যেকোন একটা বাস সার্ভিসে!ফাল্গুনকিংবাশক্তিতে ঊঠলে আমার বেশ সুবিধা হয়। যদি অন্য কোন সার্ভিসে ঊঠি, তাহলে রামপুরায় এসে পড়লে... সিংহাসন থেকে রাস্তায় নামতে অনেক কষ্ট করতে হয়। কারণ, বাসের ভিতরে আমার মতই অনেকরাজাধিরাজঠাসাঠাসি করেস্বর্গসুখেমত্ত থাকেন। কেউ-ই কারো রাজ্যপরিধির সুচাগ্রপরিমান ভূমি ছাড় দিতে বে-মওকুফ! এই অবস্থায় গেট পর্যন্ত পৌছাতে পৌছাতেনাদিয়া কোমোনেচিকে স্মরণ করি! তাই ওই দুটো সার্ভিসই সই!

তবুও সিট খালি থাকলে ...তাশিকোতেও উঠে পড়ি।

তাশিকোর সুনাম সমস্ত রাস্তা জুড়েই! সিটগুলোও বেশ ভালো! কিন্তু এটি আমার চেয়ে আরো বেশি স্বাধীনতা প্রিয়! কাউন্টারে একবার থামলে আর নড়তেই চায়না। হেলপারের সুরেলা-আবেগী আহবানে যাত্রীর বান ঊঠে গাড়িতে! তবুও আরো যাত্রী ঊঠানোর জন্য হাহাকার! পিছন থেকে প্রায়ই যাত্রীদের প্রার্থনা শোনা যায়, “ড্রাইভার সাহেব, বাসা থেইক্যা ও যাত্রী ডাইক্যা নিয়া আসেন, আমরা আছি...ঘুমাইতেছিড্রাইভার স্বাচ্ছন্দ বোধ করে আরো! তবে খেলা একটু জমে উঠলেই... মাঝেমাঝেই পুলিশ এসে এই প্রার্থনানাদে যোগদান করে মজাটাই নষ্ট করে দেয়!

এই তো গত সপ্তাহেই...

তাশিকোর প্রতি রুচি হলো। সন্ধার পর...বাসটা সাঁইসাঁই করে ছুটে চলে দাড়ালো খিলখেতে! স্টপ্‌ড! জিরো পাওয়ারের চাঁদের আলোয় ড্রাইভারকে দেখলাম, প্রকৃতির ভিতরই কোথায় যেন হারিয়ে যেতে! When nature calls, everything halts! গাড়ির স্টার্ট বন্ধ! হেলপার নিজেও বাসায় থাকা যাত্রীদের ডাকতে ডাকতেটাইরেড’! প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম! ড্রাইভার অনন্তকাল লাপাত্তা! হেলপার হেলমেট-বর্মেরপ্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এসময়! অনেকক্ষণ পরেই চালকের চালিকা শক্তি ফিরে আসে! ড্রাইভিং সিটে এসে বসে সে!

শুরু হয়, “ওই মিয়া তোমার কি আক্কেল জ্ঞান নাই? এতগুলা যাত্রীরে আটকায় রাখছো?”

পাশের জনই ড্রাইভারের হয়ে পিচে ব্যাট করে, “ভাই, এইসবব্যাপারেও আর কি করবে? যাক, আর কিছু কইয়েন না। ব্যাটারে সাবধানে গাড়ি চালাইতে দেন!

তৃতীয় কন্ঠ, “... ‘ইয়ের বাচ্চারা গাড়ি নিয়ে বের হবার আগে ঠিকমত চেকাপ করে বের হয়না। কখন কি হয়ে যায় কে জানে? দেখছেন, আমরা কত রিস্ক নিয়ে যাতায়াত করি?”, পাশের যাত্রীর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা।

“... ‘বধুভ্রাতা’! তুই গাড়ি চেকাপ কইরা বাইর হসনাই ! ভালা কথা! তাই বইলা নিজেও কি চেকাপ হইয়া বের হইবিনা?” চতুর্মাত্রা পূর্ণ হয়।

বোধহয় ড্রাইভারের পূর্বপুরুষের সংগেডারউইনএর পূর্বপুরুষেরখাতিরছিলো একটু কম ।হয়তো তারা ছিলোভদ্রবংশীয়গন্ডার! তাই সে ছিলো চুপ। কিন্তু উস্তাদেরমনোকষ্টসহ্য করতে না পেরে গাড়ি নিজেই জবাব দিলো।

কুড়িল রেলগেটে এসে পিছনের একটা চাকা বিকল হলো!

৪৫ মিনিটের রামপুরার রাস্তা তখন অন্তত দেড় ঘন্টার ধাক্কা!

*****

অবধারিত প্রশ্ন...

লোকাল বাসে মহিলা সিটগুলো সামনে বামের দিকে থাকে কেন?”

*****