বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০০৭

নতুন অধ্যায়!

বুম!!!

হঠাত করেই যেন বড় হয়ে গেলাম! পড়াশুনায় একটা যতি। নতুন চাকরী এবং প্রথম চাকরী! আগের মুহুর্তগুলোর সব উত্তেজনা যোগদানের সঙেগ সঙেগই বোতলবন্দী হয়ে গেলো! এ যেন একটা সেমিস্টার শেষ করে আরেকটা সেমিস্টারের শুরু!

হলে থাকার সময় মাঝে মাঝে সকালের প্রথম সূর্যকে সালাম জানিয়ে ঘুমাতে যেতাম। আর এখন সূর্য ঊঠে আমাকে দেখে কপালে হাত ঠেকায়। এটুকুই পার্থক্য! মূল ঘটনা কিন্তু একই থাকলো, তাইনা? সকাল সকাল সুর্যিমামার সাথে কুশলাদি বিনিময় হয়ে যায়!

ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশী কষ্টে থাকে কারা বলুনতো? ছিন্নমূল আর বস্তিবাসীরা? হয়ত তারাই! কিন্তু তাদেরকে হিসাবের বাইরে নিলে সবচেয়ে কষ্টে দিন কাটে ব্যাচেলরদের! আমি এই গ্রুপের অন্যতম নবীন সদস্য! যখন পড়াশুনা করতাম তখন কোন গুরুদায়িত্ব এলে মুখ ঘুরিয়ে খুব সহজেই বলা যেতো... আমার ক্লাস আছে...কিংবা আরেকটু ভাব গাঢ় করে পরীক্ষা আছে...পড়তে পড়তে মাথা খারাপ! কিন্তু এখন সে অজুহাতের গুড়ে কিং ব্রাণ্ড সিমেন্ট! হল ছেড়ে উদ্বাস্তু হবার পজামাত করে মেসে থাকা শুরু হলো আমার বন্ধুদের। আমি একদিক দিয়ে একটু ভাগ্যবান! আমি পেলাম মামার বাসা! কিন্তু তৃপ্তির ঢেকুর আর তুলতে পারি কোথায়? মামা যে নিজেই ব্যাচেলর! নিজেকে নিয়েই হয়রান। তার উপর এখন আমি যেন পাঁচমণী ট্রাকে আঠারো-মণের বস্তা!

খুব সকালে দোকান থেকে পরোটা-ভাজি খেয়ে বেরিয়ে পড়ি। সকালে অফিসে যাওয়াটা বেশ আরামের। ঢাকা শহরকে তখন দিব্যি নিউইয়র্ক বলে চালিয়ে দেয়া যায়! ছিমছাম- নিরিবিলি-যানজটবিহীন ঢাকা দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়! দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আরো বেশী আশাবাদী হয়ে উঠি! রামপুরা থেকে উত্তরা- এই রুটে বাসের ওভারলোড! একটাতে উঠে পড়লেই আমার অফিস!

অফিসে আমি কি করি?

ঢুকেছি Trainee Engineer’ হিসাবে...প্রথমদিকের আসাইনমেন্টগুলো ঠিকঠাক করে দিতে পারলে...কমাস পর পার্মানেন্ট! আমরা ওখানে কম্পিউটারের সামনে বসে CAD এ ডিটেইলিং এর কাজ করি। যাদের এ ব্যাপারে খুব একটা ধারণা নেই তাদেরকে জ্ঞান দেবার লোভ আর সামলাতে পারলাম না! (জ্ঞান আর উপদেশ এদেশে এখনও ফ্রী সার্ভিস!)। একটা স্ট্রাকচার কে মাটির উপর সুস্থ্য-সবল ভাবে দড় করাতে গেলে অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে আসতে হয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে... জিওটেকনিক্যাল সার্ভে ... আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ... স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ... ডিটেইলিং ... কন্সট্রাকশন। আমাদের দেশে RCC-work বেশী, সেজন্য ডিটেইলিংটা তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়না। এ কাজটা ফিল্ডে Foreman ই করে ফেলতে পারে! আমাদের প্রতিষ্ঠান আমেরিকায় অবস্থিত স্টিল স্ট্রাকচারের ডিটেইলিং করে থাকে। দেশের কোন কাজ এখনও করেনি! ক্যালকুলেশনে এক ইঞ্চির ৮ ভাগের ১ ভাগ গোলমাল হলেও ১০০ তলা ভবন মুহুর্তেই নাই হয়ে যাবে! তাডিটেইলিং খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ! মানে আমরাও গুরুত্বপূর্ণ! হে হে হে!

অফিসের পরিবেশটা খুব ফ্রেন্ডলী...একটু বেশি-ই!

সবই ঠিক ছিলো শুধু...

চিলেকোঠায় খাটের উপর একটা বিছানা পাতা আছে! ওটা দেখলেই মনে হয় একটু ঘুমিয়ে নিই! মাঝে মাঝে চোখ খোলা রেখেই ঘুমে ঢুলতে থাকি! কোন পরমাসুন্দরী উপস্থিতি অগ্রাহ্য করা যায় খুব সহজেই ... কিন্তু দুপুরে খাবার পর নরম বিছানা দেখে না ঘুমিয়ে থাকা ......!

এ যে অসাধ্যসাধন চেষ্টা!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন